ইসলামী শিষ্টাচার-চতুর্থ পর্বঃ-

ইসলামী শিষ্টাচার-চতুর্থ পর্বঃ-

৮. অনুমতি পার্থনার সময় দৃষ্টি অবনত রাখা….
যখন আপনি কোন লোকের ঘরে প্রবেশ করার জন্য অনুমতি চাইবেন তখন নিজ দৃষ্টি অবনত রাখবেন। যাতে অপনার দৃষ্টি গৃহের অভ্যন্তরে লজ্জাজনক কোন বিষয়ের উপরে না পড়ে ।কেননা এটি একটি চারিত্রিক দোষ।
ইমাম আবু দাউদ ও তাবারানী হযরত সাদ ইবনে উবাদা রা. সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন,

عن سعد بن عبادة رضي الله عنه جاء رجل فقام علي باب النبي صلى ألله عليه وسلم يستأذن مستقبل الباب فقال له النبي صلى ألله عليه وسلم : هكذا . عنك هكذا . ثم قال له فإنما الاستاذان من أجل النظر …

অর্থাৎ, জনৈক ব্যক্তি মহানবী স. এর দরজার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলো। তখন নবী কারীম স. তাকে ধরে অন্যদিকে ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, এভাবে দাঁড়াও। তিনি তাকে দরজার বরাবর স্থান থেকে সামান্য দূরে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশ দিলেন। এরপর তাকে বললেন, অনুমতি চাওয়ার বিধান রাখা হয়েছে প্রধানত দৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্যই।

  • তবরানী: 3/391, হাদিস নং ৫২৫৪. আবু দাউদ: 2/704

ইমাম বুখারী রহ. তদীয় গ্রন্থ আল আবাদুল মুফরাদে সওবান রা. সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসুল স. বলেছেন _
عن ثوبان عن رسول الله صلى ألله عليه وسلم أنه قال: لا يحل لامريء ان ينظر في جوف بيت امرىء حتي يستأذن فإن نظر فقد دخل –

অর্থাৎ অনুমতি চাওয়ার পূর্বে ঘরের অভ্যন্তরে দৃষ্টিপাত করা কোন ব্যাক্তির জন্য বৈধ নয় । আর যদি অনুমতি প্রার্থনার পূর্বেই গৃহের অভ্যন্তরে দৃষ্টিপাত করে তাহলে আইনত সে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করেছে বলেই ধরে নেওয়া হবে । অথচ এই বিষয়টি তার জন্য হারাম ছিল।

  • বুখারী আদাবুল মুফরাদ 296, হাদিস নং ১১২৫

ইমাম বুখারী আল আদাবুল মুফরাদে এবং ইমাম আবু দাউদ ও তিরমিজির স্ব-স্ব গ্রন্থে হযরত আবু হুরাইরা রা. সূত্রে উল্লেখ করেন । তিনি বলেন রাসুল স. বলেছেন-

عن أبي هريرة أن النبي صلى ألله عليه وسلم قال: 《اذا دخل البصر فلا اذن》

অর্থাৎ, যখন দৃষ্টি পড়ে তখন তার জন্য অনুমতি নেই ।
আদাবুল মুফরাদ 292, আবু দাউদ 2/73, তিরমিযী 2/100

ইমাম বুখারী রহ. হযরত আম্মার রা. সুত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, উমর রা. বলেছেন-

من ملأ عينيه من قاعة بيت قبل أن يؤذن له ، فقد فسق …

যে ব্যক্তি তাকে অনুমতি দেয়ার পূর্বে তার গৃহের অভ্যন্তরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল, সে অন্যায় কাজ করলো।
আদাবুল মুফরাদ 239, হাদিস নং 1124

ইমাম বুখারী ও মুসলিম সহ অন্যরা সাহল ইবনে সাদ রা. হতে বর্ণনা করেন যে, জনৈক ব্যক্তি মহানবী সা. এর বেড়ার ছিদ্র সমূহের কোন একটি ছিদ্র দিয়ে উঁকি মারল। আর তখন নবিজীর হাতে একটি শলাকা ছিল যা দ্বারা তিনি মাথা মোবারক চুলকাচ্ছিলেন। তার এহেন কর্ম দেখে রাসূল সা. বললেন,
হযরত সাহল বিন সাদ রা. এর সূত্রে বর্ণিত,

عن سهل بن سعد قال إطلع رجل من حجر في حجر النبي صلى ألله عليه وسلم ومع النبي صلى ألله عليه وسلم مدرى يحك به رأسه فقال: لو أعلم أنك تنظر لطنعت به في عينك إنما جعل الاستئذان من أجل الصبر…

আমি যদি জানতাম যে, তুমি উঁকি মেরে দেখছ, তাহলে এই শলাকা দ্বারা তোমার চক্ষু ফুড়ে দিতাম। জেনে রাখো! অনুমতির বিধান রাখা হয়েছে প্রধানত দৃষ্টি সংরক্ষণের জন্যই।
সহীহ বুখারী শরীফ 2/922, সহীহ মুসলিম শরীফ 2/212

৯. জুতা রাখার সংশ্লিষ্ট আদব সমূহ….
যখন আপনি আপনার ভাইয়ের ঘরে কিংবা নিজের ঘরে প্রবেশ করবেন, তখন সেখানে প্রবেশ করা ও বের হওয়ার সময় ভদ্রতা বজায় রাখবেন। দৃষ্টি অবনত রাখবেন। মৃদু আওয়াজে কথা বলবেন। নির্দিষ্ট স্থানে জুতা রাখবেন। অন্যদের জুতার সাথে আপনার জুতা সারিবদ্ধ করে রাখবেন। এদিক-সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখবেন না। স্যাণ্ডেল ও জুতা পরার সুন্নত নিয়ম মেনে চলবেন। প্রথমে ডান পায়ের জুতা পরিধান করবেন, এরপর বাম পায়ের জুতা। জুতা খোলার সময় প্রথমে বাম পায়ের জুতা খুলবেন, এরপর ডান পায়ের জুতা খুলবেন। দোজাহানের সর্দার আল্লাহর রাসূল সা, বলেন-
হযরত আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত:

عن ابي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى ألله عليه وسلم قال : إذا انتعل أحدكم فليبدأ باليمين وإذا نزع فليبدأ بالشمال ليكن اليمني أولهما تنعل واخرهما تنزع-

অর্থাৎ, আপনাদের কেউ যখন জুতা পরেন, তখন সে যেন ডান পা দ্বারা আগে শুরু করেন। আর যখন জুতা কেউ খুলেন, তখন সে যেন বাম পা দ্বারা শুরু করেন। অর্থাৎ, জুতা পরিধান করার সময় ডান পা যেন আগে হয়। আর জুতা খোলার সময় যেন বাম পা আগে হয়।

  • মুসলিম শরীফ, হাদিস নং 5616

আপনার অথবা আপনার অন্য ভাইৎ৩র ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে আপনার জুতা ভাল করে দেখে নিন। তাতে যদি রাস্তার কোন ময়লা অবর্জনা লেগে থাকে, তাহলে মাটিতে ঘষে তা পরিস্কার করে নিন। যাতে এতে কোন কষ্টদায়ক জিনিস অবশিষ্ট না থাকে। কেননা ইসলাম হচ্ছে পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যের ধর্ম।

আমাদের ফেসবুক পেজে এ যুক্ত হয়ে থাকতে পারেন এবং আমাদের কন্টেন্ট ভিডিও আকারে পেতে

আমাদের ইউটিউব চ্যানেল টি সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারেন।

ইসলামের নীতিমালা – মানব ও জিন সৃষ্টির উদ্দেশ্য

Previous articleইসলামী শিষ্টাচার-তৃতীয় পর্বঃ-
Next articleইসলামী শিষ্টাচার-পঞ্চম পর্বঃ-
মুফতি নাজমুল হাসান সাকিব
নাম: নাজমুল হাসান সাকিব পিতা: মুজিবুর রহমান স্থায়ী ঠিকানা: বাহেরবালী, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ। বর্তমান ঠিকানা: বসুন্ধরা, বারিধারা, ঢাকা ১২২৯ পড়াশোনাঃ- বাহেরবালী দারুল উলূম নূমানিয়া মাদরাসা, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ। (নূরানী টু হেদায়াতুন্নাহ্) জামিয়াতুস সালাম মদিনাবাগ, মুগদা, সবুজবাগ, ঢাকা। (কাফিয়া-শরহে বেকায়া) মারকাজুল উলূম আল-ইসলামিয়া মান্ডা, মুগদা, সবুজবাগ, ঢাকা। (আরবী স্নাতক ৪র্থ বর্ষ) মদিনাতুল উলূম বসুন্ধরা মাদরাসা ( হেদায়া) মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা। (এম এ- মাস্টার্স) আল মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশ। (ইসলামি আইন ও গবেষণা বিভাগ) পেশা: লেখালেখি ও পড়াশোনা। (ভবিষ্যত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এখনো অধ্যায়ণরত)।