বিদআত শব্দটি আরবী البدع শব্দ থেকে গৃহীত হয়েছে। এর অর্থ হল পূর্বের কোন দৃষ্টান্ত ও নমুনা ছাড়াই কোন কিছু সৃষ্টি ও উদ্ভাবন করা। যেমন আল্লাহ বলেছেন, بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضঅর্থঃ পূর্বের কোন নমুনা ব্যতীত আল্লাহ তায়া’লা আকাশ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন।(সূরা বাক্বারাঃ ১১৭)তিনি আরো বলেন: قُلْ مَا كُنْتُ بِدْعًا مِنْ الرُّسُلِ
“হে নবী! আপনি বলে দিন, আমি প্রথম রাসূল নই। (সূরা আহ্ক্বাফঃ ৯) অর্থাৎ মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে আমিই প্রথম রেসালাতের দায়িত্ব নিয়ে আসিনি বরং আমার পূর্বে আরো অনেক রাসূল আগমণ করেছেন।”
ইসলামের পরিভাষায় বিদয়াত বলা হয় দ্বীনের মধ্যে এমন বিষয় তৈরী করা, যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও খোলাফায়ে রাশেদার যুগে ছিলনা বরং পরবর্তীতে উদ্ভাবন করা হয়েছে।
বিদআতের প্রকারভেদ
বিদআত প্রথমতঃ দু’প্রকারঃ- (১) পার্থিব বিষয়ে বিদআত (২) দ্বীনের ক্ষেত্রে বিদআত।
পার্থিব বিষয়ে বিদআতের অপর নাম নতুন আবিষ্কৃত বিষয়। এ প্রকার বিদআত বৈধ। কেননা দুনিয়ার সাথে সম্পর্কশীল সকল বিষয়ের ব্যাপারে মূলনীতি হল তা বৈধ। তবে শর্ত হল তাতে শরঈ কোন নিষেধ না থাকা। দ্বীনের ক্ষেত্রে বিদআত তথা নতুন কিছু উদ্ভাবন করা হারাম। কারণ দ্বীনের ব্যাপারে মূলনীতি হল তা অহীর উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ দ্বীনের সমস্ত বিধান কুরআন ও সুন্নাহ থেকে গ্রহণ করতে হবে। রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ
অর্থঃ যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে নতুন বিষয় তৈরী করবে যা তার অন-র্ভূক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত হবে। তিনি আরও বলেন,
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ
অর্থঃ যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করবে, যে বিষয়ে আমাদের অনুমোদন নেই, তা আমলকারীর উপর প্রত্যাখ্যাত হবে।দ্বীনের ব্যাপারে বিদআতের প্রকারভেদঃ
দ্বীনের মধ্যে বিদআত দু’প্রকার
(১) বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিদআত এবং (২) আমলের ক্ষেত্রে বিদআত।
১) বিশ্বাসের ভিতরে বিদআত। যেমন যাহমীয়া, মু’তাযেলা, রাফেযী এবং অন্যান্য সকল বাতিল ফির্কার আকীদা সমূহ।
২) আমলের ক্ষেত্রে বিদআত। যেমন আল্লাহ আদেশ দেন নি, এমন বিষয়ের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করা। এটা আবার কয়েক প্রকার হয়ে থাকে। যেমনঃ- (১) নতুন কোন ইবাদত আবিষ্কার করা, (২) শরীয়ত সম্মত ইবাদতের মধ্যে বৃদ্ধি করা, (৩)শরীয়ত সম্মত ইবাদত বিদআতী নিয়মে পালন করা এবং (৪) শরীয়ত সম্মত ইবাদতকে সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট করা, যা শরীয়তে নির্ধারিত নয়।
প্রথম প্রকারঃ
এমন নতুন ইবাদত আবিষ্কার করা, ইসলামী শরীয়তের মাঝে যার কোন ভিত্তি নেই। যেমন নতুন কোন নামায, রোজা এবং ঈদে মীলাদুন্ নবী ও অন্যান্য নামে বিভিন্ন ঈদের প্রচলন করা।
দ্বিতীয় প্রকারঃ
শরীয়ত সম্মত ইবাদতের মধ্যে কিছু বৃদ্ধি করা অথবা হ্রাস করা। যেমন কোন ব্যক্তি আছর কিংবা যোহরের নামায এক রাকাত বাড়িয়ে অথবা কমিয়ে আদায় করল।
তৃতীয় প্রকারঃ
শরীয়ত সম্মত ইবাদাত বিদআতী নিয়মে পালন করা। যেমন হাদীছে বর্ণিত জিকিরের বাক্যগুলি দলবদ্ধভাবে সংগীতাকারে। উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করা। কিংবা ইবাদত পালনে নফসের উপর এমন কষ্ট দেয়া, যা রাসূল (সাঃ)এর সুন্নাতের বিরোধী।
চতুর্থ প্রকারঃ
শরীয়ত সম্মত ইবাদতকে এমন সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করে আদায় করা, যা শরীয়ত নির্ধারণ করেনি। যেমন শাবান মাসের ১৫তারিখ দিনের বেলা রোজা রাখা এবং রাতে নির্দিষ্ট নামায আদায় করা। মূলতঃ রোজা ও নামায শরীয়ত সম্মত ইবাদত। কিন্তু ইহাকে নির্দিষ্ট সময়ের সাথে খাছ করার কোন দলীল নেই। রোজা নির্দিষ্ট মাস এবং নামায নির্দিষ্ট সময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। প্রতিটি ইবাদত তার নির্ধারিত সময়ে আদায় করতে হবে। কিন্তু শাবান মাসের ১৫তারিখে দিনের বেলা রোজা রাখা এবং সারা রাত নফল নামায আদায় করা নিশ্চিতভাবে বিদআত। কারণ এ সম্পর্কে কোন সহীহ দলীল নেই।
দ্বীনের মধ্যে বিদআতের বিধানঃ
দ্বীনের ব্যাপারে সকল প্রকার বিদআতই হারাম ও গোমরাহী। কেননা রাসূল (সাঃ) বলেছেন,
وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَة
অর্থঃ তোমরা দ্বীনের মাঝে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা থেকে বিরত থাকবে, কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতের পরিণাম গোমরাহী বা ভ্রষ্টতা। রাসূল (সাঃ) বলেন,
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ
অর্থঃ যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন নতুন বিষয় তৈরী করবে, যা তার অন-র্গত নয়, তা প্রত্যাখ্যত হবে। তিনি আরও বলেন,
مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ
অর্থঃ যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করবে, যার মধ্যে আমাদের আদেশ নেই, তা আমলকারীর উপর প্রত্যাখ্যাত হবে।
উপরের হাদীছগুলোর মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় যে, দ্বীনের মধ্যে প্রতিটি নতুন বিষয়ই বিদআত।
আর প্রতিটি বিদয়াতই হারাম ও গোমরাহী। তবে এ হারাম বিদআতের প্রকারভেদ অনুযায়ী বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। বিদয়াতের কিছু কিছু প্রকার প্রকাশ্য কুফরীরই নামান্তর। যেমন কবরবাসীদের নৈকট্য হাসিলের উদ্দেশ্যে কবরের চতুর্দিকে কাবা ঘরের তাওয়াফের ন্যায় তাওয়াফ করা, কবরের উদ্দেশ্যে পশু যবাই করা, নযর-মান্নত পেশ করা, কবরবাসীর কাছে দু’আ করা, তাদের কাছে আশ্রয় চাওয়া ইত্যাদি। এমন কিছু বিদয়াতও রয়েছে, যা শির্ক না হলেও মানুষকে শির্কের দিকে নিয়ে যায়। যেমন কবরের উপর গম্বুজ তৈরী করা, কবর উঁচু করা, পাকা করা, কবরের উপর লিখা, কবরের কাছে নামায আদায় করা, দু’আ করা ইত্যাদি। এমন কিছু বিদআতও আছে, যা শির্ক বা তার মাধ্যমও নয়, তবে সঠিক আকিদার পরিপন্থী ও বহির্ভুত। যেমন খারেজী, ক্বাদরীয়াও মুর্জিয়াদের আকিদাহ সমূহ। তাছাড়া এমন কিছু বিদআত রয়েছে, যা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত যেমন বৈরাগী হয়ে সংসার ত্যাগ করা, সূর্যের উত্তাপে দাড়িয়ে রোজা পালন করা এবং যৌন উত্তেজনা দমন করার জন্য খাসী হয়ে যাওয়া।
প্রচলিত কিছু বিদয়াত
নিম্নে উল্লেকৃত বিষয় গুলো আপকে মাসায়েল আওর ঊনকে হল,রাহে সুন্নাত, আহসানুল ফাতাওয়া নামক কিতাব থেকে গ্রহন করা হয়েছে। ঃ কোন বুজুর্গের মাজারে ধুমধামের সাথে মিলন মেলা ও উরস করা ,কাওয়ালি জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা । মৃতের কুলখানি চল্লিশা পালন করা। কবরের উপর চাদর বা ফুল দেয়া ,কবর পাকা করা ,কবর কে গম্বুজ বানান,আযান ইকামতে রাসুল (সাঃ) এর নাম এলে বৃদ্দা আঙ্গুলে চুমা খাওয়া ,আযানের পর হাত উঠিয়ে দুয়া করা।
প্রচলিত কুফরি বাক্য
কথা প্রসঙ্গে অনেকেই বলে থাকেন যদি তুমি এটা বলতে বা এটা করতে তাহলে কি ‘মহা ভারত অশুদ্ব হয়ে যেত’ এবিষয়ে কম বেশি আমরা সবাই অবহিত যে মহা ভারত মানুষের হাতে রচিত হিন্দু ধর্মের দুটি পুরণিক মহাকাব্যে গ্রন্থের অন্যতম হচ্ছে মহাভারত একে কোরআনের ন্যায় ঐশী কিতাব ও নির্ভুল মনে করা ভুল, কেননা হিন্দু পণ্ডিতগন এগ্রন্থটি কে কাল্পনিক যুদ্ববিগ্রহ, রসাত্বক ও অলীক গল্পে ভরপুর করে রেখেছে সুতারাং একে শুদ্ব বলা ও মনে করা সঠিক নয়।তাই মুসলমানদের জন্য মহা ভারত অশুদ্ব হয়ে যাবে বলা অনুচিত ঃ কথার ছলে অনেক ভদ্র লোক বলে থাকে ’’মানি ইজদ্যা সেকেন্ড গড’ একথা টি কুফুরী বাক্যের আন্তরভুক্ত, কেননা খোদা একজনই তিনি সমস্ত গুণাবলির অধিকারী এবং তিনি বান্দাকে রিযিক দান করেন সুতারাং টাকা পয়সা কে দ্বিতীয় খোদা বলার কোন অবকাশ নেই। (সুরা লোকমান আয়াত নং ১৩ ,আল বাহরুর রায়েক, খাইরুল ফাতওয়া)
ঃ আবার কেহ বলে থাকেন ,ওপরে আল্লাহ্ নিচে আপনি এমন কথা বলা যাবে না কেননা, এধরনের কথা দ্বারা ঈমান চলে যাওয়ার প্রবল আশংকা থাকে তাই এমন কথা থেকে বিরত থাকা জুরুরী।(সুরা বাকারা আয়াতনং ১১৫)
ঃকোরআনের ৩০ হাজার জাহেরী ৬০ হাজার বাতেনী এদাবীটি সমপূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কারন কোরআন ও হাদিসে এর কোন প্রমান নেই । বস্তুত যারা কালাম ৯০ হাজার বলে দাবী করে তারা ইসলামের নামদারী একটি ভ্রান্ত ও বাতিল দল, এ দল টি কে শিয়া মুসলমান বলা হয়, তারা বহু আজগুবি কথা বলে থাকে, তারা দাবী করে নবী করীম সাঃ হযরত আলী (রাঃ) কে বাতিনী কালাম শিক্ষা দিয়েছেন এসব কথা একেবারেই মিথ্যা ও বানোয়াট এর কোন ভিত্তি নেই। হযরত আলী (রাঃ) কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি পরিষ্কার ভাষায় বলেন, যে কোরআন সকলের কাছে আছে ঐ কোরআনের বাহিরে আমার কাছে কোন কালাম নেই।,আমাদের দেশে তাসাওফের ব্যবসায়ি এক দল ভন্ড পীর ফকীর বলে তাকে আলেমরা বাতেনি কালাম সম্পর্কে কিছু জানে না,অথচ ভন্ড পীরদের একথার কোন সনদ নেই। আর সনদ ছাড়া দ্বীনের কোন কথা ধর্তব্য হয় না। (খাইরুল ফাতওয়া ১/২৯৩,আছারুল হাদিস১৩১)