Friday, March 29, 2024
No menu items!
Homeরোজাকোরআন ও হাদিসের আলোকে সিয়াম (রোজা) এর ফজিলত।

কোরআন ও হাদিসের আলোকে সিয়াম (রোজা) এর ফজিলত।

রমযনের রোযা ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। ঈমান, নামায ও যাকাতের পরই রোযার স্থান। রোযার আরবি শব্দ সওম, যার আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। পরিভাষায় সওম বলা হয়-প্রত্যেক সজ্ঞান, বালেগ মুসলমান নর-নারীর সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযার নিয়তে পানাহার, স্ত্রী সহবাস ও রোযাভঙ্গকারী সকল কাজ থেকে বিরত থাকা। সুতরাং রমযান মাসের চাঁদ উদিত হলেই প্রত্যেক সুস্থ, মুকীম প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং হায়েয-নেফাসমুক্ত প্রাপ্তবয়স্কা নারীর উপর পূর্ণ রমযান রোযা রাখা ফরয। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟﺼِّﻴَﺎﻡُ ﻛَﻤَﺎ ﻛُﺘِﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﻠِﻜُﻢْ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗَﺘَّﻘُﻮﻥَ

(তরজমা) হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার।-সূরা বাকারা (২) : ১৮৩ অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন-

ﻓَﻤَﻦْ ﺷَﻬِﺪَ ﻣِﻨْﻜُﻢُ ﺍﻟﺸَّﻬْﺮَ ﻓَﻠْﻴَﺼُﻤْﻪُ

(তরজমা) সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে, সে যেন অবশ্যই রোযা রাখে।- সূরা বাকারা (২) : ১৮৫ হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

ﺇﺫﺍ ﺭﺃﻳﺘﻢ ﺍﻟﻬﻼﻝ ﻓﺼﻮﻣﻮﺍ ﻭﺇﺫﺍ ﺭﺃﻳﺘﻤﻮﻩ ﻓﺎﻓﻄﺮﻭﺍ، ﻓﺈﻥ ﻏﻢ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﻓﺼﻮﻣﻮﺍ ﺛﻼﺛﻴﻦ ، ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ : ﺻﻮﻣﻮﺍ ﻟﺮﺅﻳﺘﻪ ﻭﺃﻓﻄﺮﻭﺍ ﻟﺮﻭﻳﺘﻪ، ﻓﺈﻥ ﻋﻢ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﻓﺎﻛﻤﻠﻮﺍ ﺍﻟﻌﺪﺩ.

যখন তোমরা (রমযানের) চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোযা রাখবে আর যখন (শাওয়ালের) চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোযা বন্ধ করবে। আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে ত্রিশ দিন রোযা রাখবে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৯০৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১০৮০ (১৭-১৮)

উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস এবং এ বিষয়ক অন্যান্য দলীলের আলোকে প্রমাণিত যে, রমযান মাসের রোযা রাখা ফরয, ইসলামের আবশ্যক বিধানরূপে রোযা পালন করা ও বিশ্বাস করাও ফরয। তাছাড়া কোনো শরয়ী ওযর ছাড়া কোন মুসলমান যদি রমযান মাসের একটি রোযাও ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ করে তাহলে সে বড় পাপী ও জঘন্য অপরাধীরূপে গণ্য হবে। দ্বীনের মৌলিক বিধান লঙ্ঘনকারী ও ঈমান-ইসলামের ভিত্তি বিনষ্টকারী হিসেবে পরিগণিত হবে। হাদীস শরীফে ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা ত্যাগকারী ও ভঙ্গকারীর জন্য কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবু উমামা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

ﺑﻴﻨﻤﺎ ﺃﻧﺎ ﻧﺎﺋﻢ ﺃﺗﺎﻧﻲ ﺭﺟﻼﻥ ﻓﺄﺧﺬﺍ ﺑﻀﺒﻌﻲ ﻓﺄﺗﻴﺎﺑﻲ ﺟﺒﻼ ﻭﻋﺮﺍ ﻓﻘﺎﻻ : ﺍﺻﻌﺪ؛ ﻓﻘﻠﺖ : ﺇﻧﻲ ﻻ ﺃﻃﻴﻘﻪ . ﻓﻘﺎﻻ : ﺳﻨﺴﻬﻠﻪ ﻟﻚ، ﻓﺼﻌﺪﺕ ﺣﺘﻰ ﺇﺫﺍ ﻛﻨﺖ ﻓﻲ ﺳﻮﺍﺀ ﺍﻟﺠﺒﻞ ﺇﺫﺍ ﺑﺄﺻﻮﺍﺕ ﺷﺪﻳﺪﺓ، ﻗﻠﺖ : ﻣﺎ ﻫﺬﻩ ﺍﻷﺻﻮﺍﺕ؟ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﻫﺬﺍ ﻋﻮﺍﺀ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻨﺎﺭ، ﺛﻢ ﺍﻧﻄﻠﻖ ﺑﻲ، ﻓﺈﺫﺍ ﺃﻧﺎ ﺑﻘﻮﻡ ﻣﻌﻠﻘﻴﻦ ﺑﻌﺮﺍﻗﻴﺒﻬﻢ، ﻣﺸﻘﻘﺔ ﺍﺷﺪﺍﻗﻬﻢ، ﺗﺴﻴﻞ ﺍﺷﺪﺍﻗﻬﻢ ﺩﻣﺎ . ﻗﺎﻝ : ﻗﻠﺖ : ﻣﻦ ﻫﺆﻻﺀ : ﻗﺎﻝ : ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻳﻔﻄﺮﻭﻥ ﻗﺒﻞ ﺗﺤﻠﺔ ﺻﻮﻣﻬﻢ . ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺴﺘﺪﺭﻙ ﻭﻗﺎﻝ : ﺻﺤﻴﺢ ﻋﻠﻰ ﺷﺮﻁ ﻣﺴﻠﻢ، ﻭﻭﺍﻓﻘﻪ ﺍﻟﺬﻫﺒﻲ، ﻭﺫﻛﺮﻩ ﺍﻟﻬﻴﺜﻤﻰ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺠﻤﻊ ‏( 240 ‏) ، ﻭﻗﺎﻝ : ﺭﺟﺎﻟﻪ ﺭﺟﺎﻝ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ

আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে দেখলাম আমার নিকট দুই ব্যক্তি আগমন করল। তারা আমার বাহুদ্বয় ধরে আমাকে এক দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে এল। তারপর আমাকে বলল, আপনি পাহাড়ের উপর উঠুন। আমি বললাম, আমি তো উঠতে পারব না। তারা বলল, আমরা আপনাকে সহজ করে দিব। আমি উপরে উঠলাম। যখন পাহাড়ের সমতলে পৌঁছালাম, হঠাৎ ভয়ঙ্কর আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি বললাম, এ সব কিসের আওয়াজ? তারা বলল, এটা জাহান্নামীদের আর্তনাদ। তারপর তারা আমাকে নিয়ে এগিয়ে চলল। হঠাৎ কিছু লোক দেখতে পেলাম, যাদেরকে তাদের পায়ের মাংসপেশী দ্বারা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এবং তাদের মুখের দুই প্রান্ত ছিড়ে ফেলা হয়েছে এবং তা থেকে রক্ত ঝরছে। আমি বললাম, এরা কারা? তারা বলল, যারা ইফতারের সময় হওয়ার আগেই রোযা ভেঙ্গে ফেলে।-সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ১৯৮৬; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৭৪৪৮; সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস : ৩২৮৬; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস-১৬০৯; তবারানী, হাদীস : ৭৬৬৬ রমযান মাসের একদিন রোযা না রাখলে মানুষ শুধু গুনাহগারই হয় না, ঐ রোযার পরিবর্তে আজীবন রোযা রাখলেও রমযানের এক রোযার যে মর্যাদা ও কল্যাণ, যে অনন্ত রহমত ও খায়ের-বরকত তা কখনো লাভ করতে পারবে না এবং কোনোভাবেই এর যথার্থ ক্ষতিপূরণ আদায় হবে না। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন,

ﻣﻦ ﺍﻓﻄﺮ ﻳﻮﻣﺎ ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻣﺘﻌﻤﺪﺍ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﺳﻔﺮ ﻭﻻ ﻣﺮﺽ ﻟﻢ ﻳﻘﻀﻪ ﺍﺑﺪﺍ، ﻭﺍﻥ ﺻﺎﻡ ﺍﻟﺪﻫﺮ ﻛﻠﻪ، … ﻭﻗﺪ ﺫﻛﺮﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﺗﻌﻠﻴﻘﺎ ﺑﺼﻴﻐﺔ ﺍﻟﺠﺰﻡ ﺣﻴﺚ ﻗﺎﻝ : ﻭﺑﻪ ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ، ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﻣﺤﻤﺪ ﻋﻮﺍﻣﻪ : ﻭﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻣﻮﻗﻮﻑ ﻟﻔﻈﺎ ﻭﻣﺮﻓﻮﻉ ﺣﻜﻤﺎ

যে ব্যক্তি অসুস্থতা ও সফর ব্যতীত ইচ্ছাকৃতভাবে রমযানের একটি রোযাও ভঙ্গ করে, সে আজীবন রোযা রাখলেও ঐ রোযার হক আদায় হবে না।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৯৮৯৩; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস : ৭৪৭৬; সহীহ বুখারী ৪/১৬০ হযরত আলী রা. বলেন-

ﻣﻦ ﺍﻓﻄﺮ ﻳﻮﻣﺎ ﻣﻦ ﺭﺿﻤﺎﻥ ﻣﺘﻌﻤﺪﺍ ﻟﻢ ﻳﻘﻀﻪ ﺃﺑﺪﺍ ﻃﻮﻝ ﺍﻟﺪﻫﺮ .

যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে রমযান মাসের একটি রোযা ভঙ্গ করবে, সে আজীবন সেই রোযার (ক্ষতিপূরণ) আদায় করতে পারবে না।- মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৯৮৭৮ হাদীস শরীফে বর্ণিত রোযার কিছু ফযীলত ও বৈশিষ্ট্য এখানে উল্লেখ করা হলো : .

১. রোযার প্রতিদান

রোযার প্রতিদান আল্লাহ রাববুল আলামীন নিজেই দিবেন এবং বিনা হিসাবে দিবেন . প্রত্যেক নেক আমলের নির্ধারিত সওয়াব ও প্রতিদান রয়েছে, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমলকারীকে পুরস্কৃত করবেন। কিন্তু রোযার বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ রোযার বিষয়ে আছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে এক অনন্য ঘোষণা। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

ﻛﻞ ﻋﻤﻞ ﺍﺑﻦ ﺁﺩﻡ ﻳﻀﺎﻋﻒ ﺍﻟﺤﺴﻨﺔ ﺑﻌﺸﺮ ﺃﻣﺜﺎﻟﻬﺎ ﺇﻟﻰ ﺳﺒﻌﻤﺎﺋﺔ ﺿﻌﻒ، ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ : ﺍﻻ ﺍﻟﺼﻮﻡ ﻓﺈﻧﻪ ﻟﻰ ﻭﺍﻧﺎ ﺃﺟﺰﻯ ﺑﻪ ﻳﺪﻉ ﺷﻬﻮﺗﻪ ﻭﻃﻌﺎﻣﻪ ﻣﻦ ﺃﺟﻠﻰ .

মানুষের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকীর সওয়াব দশ গুণ থেকে সাতাশ গুণ পর্যন্ত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, কিন্তু রোযা আলাদা। কেননা তা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর বিনিময় প্রদান করব। বান্দা একমাত্র আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৫১ (১৬৪); মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৯৭১৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৮৯৮৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৬৩৮

অন্য বর্ণনায় আছে-

ﻋﻦ ﺃﺑﻰ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ : ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻠﻪ : ﻳﺘﺮﻙ ﻃﻌﺎﻣﻪ ﻭﺷﺮﺍﺑﻪ ﻭﺷﻬﻮﺗﻪ ﻣﻦ ﺃﺟﻠﻰ، ﺍﻟﺼﻴﺎﻡ ﻟﻰ ﻭﺍﻧﺎ ﺍﺟﺰﻯ ﺑﻪ، ﻭﺍﻟﺤﺴﻨﺔ ﺑﻌﺸﺮ ﺍﻣﺜﺎﻟﻬﺎ .

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেন, বান্দা একমাত্র আমার জন্য তার পানাহার ও কামাচার বর্জন করে, রোযা আমার জন্যই, আমি নিজেই তার পুরস্কার দিব আর (অন্যান্য) নেক আমলের বিনিময় হচ্ছে তার দশগুণ।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৮৯৪; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৯৯৯৯;

মুয়াত্তা মালেক ১/৩১০ রোযা বিষয়ে-অন্য বর্ণনায়-আললাহ তাআলা বলেন, ‘‘প্রত্যেক ইবাদতই ইবাদতকারী ব্যক্তির জন্য, পক্ষান্তরে রোযা আমার জন্য। আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব। (সহীহ বুখারী হাদীস-১৯০৪) এ কথার তাৎপর্য হল, যদিও প্রকৃতপক্ষে সকল ইবাদতই আল্লাহর জন্য, তার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যেই হয়ে থাকে। তবুও রোযা ও অন্যান্য ইবাদতের মধ্যে একটি বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। তা হল-অন্যান্য সকল ইবাদতের কাঠামোগত ক্রিয়াকলাপ, আকার-আকৃতি ও নিয়ম পদ্ধতি এমন যে, তাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য ছাড়াও ইবাদতকারীর নফসের স্বাদ গ্রহণের সুযোগ বিদ্যমান থাকে। মুখে প্রকাশ না করলেও অনেক সময় তার অন্তরে রিয়া তথা লোক দেখানো ভাব সৃষ্টি হতে পারে। তার অনুভূতির অন্তরালে এ ধরনের ভাব লুকিয়ে থাকে। তা সে অনুভব করতে না পারলেও তার ভিতরে অবচেতনভাবে বিদ্যমান থাকে। ফলে সেখানে নফসের প্রভাব এসে যায়। পক্ষান্তরে রোযা এমন এক পদ্ধতিগত ইবাদত, তার-আকার-আকৃতি এরূপ যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্য ব্যতীত ইবাদতকারীর নফসের স্বাদ গ্রহণের বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। রোযাদার ব্যক্তি নিজ মুখে রোযার বিষয়টি প্রকাশ না করলে সাধারণত তা আলেমুল গায়েব আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কারো নিকট প্রকাশিত হওয়ার মত নয়। তাই রোযার ক্ষেত্রে মাওলার সন্তুষ্টির বিষয়টি একনিষ্ঠভাবে প্রতিভাত হয়। একারণেই রোযা ও অন্যান্য ইবাদতের মাঝে এরূপ বিস্তর ব্যবধান। রোযার এত বড় ফযীলতের কারণ এটাও হতে পারে যে, রোযা ধৈর্য্যের ফলস্বরূপ। আর ধৈর্য্যধারণকারীদের জন্য আল্লাহ তাআলার সুসংবাদ হল-

ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳُﻮَﻓَّﻰ ﺍﻟﺼَّﺎﺑِﺮُﻭﻥَ ﺃَﺟْﺮَﻫُﻢْ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﺣِﺴَﺎﺏٍ

ধৈর্য্যধারণকারীগণই অগণিত সওয়াবের অধিকারী হবে।-সূরা যুমার (৩৯) : ১০ সব মাখলুকের স্রষ্টা, বিশ্বজাহানের প্রতিপালক, আল্লাহ তাআলা নিজেই যখন এর পুরস্কার দিবেন, তখন কী পরিমাণ দিবেন? ইমাম আওযায়ী রাহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেছেন- আল্লাহ যে রোযাদারকে প্রতিদান দিবেন, তা মাপা হবে না, ওজন করা হবে না অর্থাৎ বিনা হিসাবেই দিবেন। .

২. আল্লাহ তাআলা রোযাদারকে কেয়ামতের দিন পানি পান করাবেন .

হযরত আবু মুসা রা. হতে বর্ণিত,

ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﺒﺎﺭﻙ ﻭﺗﻌﺎﻟﻰ ﻗﻀﻰ ﻋﻠﻰ ﻧﻔﺴﻪ ﺃﻧﻪ ﻣﻦ ﺍﻋﻄﺶ ﻧﻔﺴﻪ ﻟﻪ ﻓﻲ ﺻﺎﺋﻒ ﺳﻘﺎﻩ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻌﻄﺶ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺰﺍﺭ، ﻭﺫﻛﺮﻩ ﺍﻟﻬﻴﺜﻤﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺠﻤﻊ ‏( 5095 ‏) ، ﻭﻗﺎﻝ : ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺰﺍﺭ، ﻭﺭﺟﺎﻟﻪ ﻣﻮﺛﻘﻮﻥ . ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﻤﻨﺬﺭﻱ ﻓﻲ ﺍﻟﺘﺮﻏﻴﺐ ‏( 1478 ‏) ، : ﺇﺳﻨﺎﺩﻩ ﺣﺴﻦ، ﺍﻥ ﺷﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ .

আল্লাহ রাববুল আলামীন নিজের উপর অবধারিত করে নিয়েছেন, যে ব্যক্তি তার সন্তুষ্টির জণ্য গ্রীষ্মকালে (রোযার কারণে) পিপাসার্ত থেকেছে, তিনি তাকে তৃষ্ণার দিন (কিয়ামতের দিন) পানি পান করাবেন।-মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ১০৩৯; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস : ৫০৯৫ হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ : ﺍﻟﺼﻴﺎﻡ ﻟﻰ ﻭﺍﻧﺎ ﺍﺟﺰﻯ ﺑﻪ … ﻓﺎﻥ ﻟﻬﻢ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﺣﻮﺿﺎ ﻣﺎ ﻳﺮﺩﻩ ﻏﻴﺮ ﺍﻟﺼﺎﺋﻢ ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺰﺍﺭ ﻭﺫﻛﺮﻩ ﺍﻟﻬﻴﺜﻤﻲ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺠﻤﻊ، ‏( 5093 ‏) ، ﻭﻗﺎﻝ : ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺰﺍﺭ، ﻭﺭﺟﺎﻟﻪ ﻣﻮﺛﻘﻮﻥ .

আল্লাহ তাআলা বলেন, রোযা আমার জন্য, আমি নিজেই এর প্রতিদান দিব। কেয়ামতের দিন রোযাদারদের জন্য একটি বিশেষ পানির হাউজ থাকবে, যেখানে রোযাদার ব্যতীত অন্য কারো আগমন ঘটবে না।-মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ৮১১৫; মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস : ৫০৯৩ .

৩. রোযা হল জান্নাত লাভের পথ .

ﻋﻦ ﺣﺬﻳﻔﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﺍﺳﻨﺪﺕ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﻟﻰ ﺻﺪﺭﻱ، ﻓﻘﺎﻝ : ﻣﻦ ﻗﺎﻝ : ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﺧﺘﻢ ﻟﻪ ﺑﻬﺎ ﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ، ﻭﻣﻦ ﺻﺎﻡ ﻳﻮﻣﺎ ﺍﺑﺘﻐﺎﺀ ﻭﺟﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺧﺘﻢ ﻟﻪ ﺑﻪ، ﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ، ﻭﻣﻦ ﺗﺼﺪﻕ ﺑﺼﺪﻗﺔ ﺧﺘﻢ ﻟﻪ ﺑﻬﺎ، ﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ، ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺣﻤﺪ، ﻭﺫﻛﺮﻩ ﺍﻟﻬﻴﺜﻤﻰ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺠﻤﻊ ‏( 11935 ‏) ﻭﻗﺎﻝ : ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺣﻤﺪ ﻭﺭﺟﺎﻟﻪ ﺭﺟﺎﻝ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﻏﻴﺮ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﻣﺴﻠﻢ ﺍﻟﺒﺘﻰ ﻭﻫﻮ ﺛﻘﺔ، ﻓﺎﻟﺤﺪﻳﺚ ﺻﺤﻴﺢ ﻛﻤﺎ ﻗﺎﻟﻪ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﺍﺣﻤﺪ ﺷﺎﻛﺮ ﻭﺍﻟﺸﻴﺦ ﺷﻌﻴﺐ ﺍﻻﺭﻧﺆﻭﻁ .

হযরত হুযায়ফা রা. বলেন, আমি আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার বুকের সাথে মিলিয়ে নিলাম, তারপর তিনি বললেন, যে ব্যক্তি লাইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলে মৃত্যুবরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় একদিন রোযা রাখবে, পরে তার মৃত্যু হয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো দান-সদকা করে তারপর তার মৃত্যু হয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৩৩২৪; মুসনাদে বাযযার, হা.২৮৫৪

ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺃﻣﺎﻣﺔ ﻗﺎﻝ : ﺃﺗﻴﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ، ﻓﻘﻠﺖ : ﻣﺮﻧﻲ ﺑﻌﻤﻞ ﻳﺪﺧﻠﻨﻲ ﺍﻟﺠﻨﺔ، ﻗﺎﻝ : ﻋﻠﻴﻚ ﺑﺎﻟﺼﻮﻡ، ﻓﺎﻧﻪ ﻻ ﻋﺪﻝ ﻟﻪ، ﺛﻢ ﺃﺗﻴﺘﻪ ﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ، ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻲ : ﻋﻠﻴﻚ ﺑﺎﻟﺼﻴﺎﻡ .

হযরত আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে আগমন করে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে এমন একটি আমল বলে দিন, যার দ্বারা আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব। তিনি বলেন, তুমি রোযা রাখ, কেননা এর সমতুল্য কিছু নেই। আমি পুনরায় তার নিকট এসে একই কথা বললাম। তিনি বললেন, তুমি রোযা রাখ।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২২১৪৯; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ১৮৯৩; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৪২৬; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ২৫৩০ .

৪. রোযাদারগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে ‘রাইয়ান’ নামক বিশেষ দরজা দিয়ে .

হযরত সাহল ইবনে সা’দ রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

ﺇﻥ ﻓﻰ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺑﺎﺑﺎ ﻳﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﺍﻟﺮﻳَّﺎﻥ ﻳﺪﺧﻞ ﻣﻨﻪ ﺍﻟﺼﺎﺋﻤﻮﻥ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ، ﻻ ﻳﺪﺧﻞ ﻣﻨﻪ ﺃﺣﺪ ﻏﻴﺮﻫﻢ، ﻳﻘﺎﻝ : ﺍﻳﻦ ﺍﻟﺼﺎﺋﻤﻮﻥ ﻓﻴﻘﻮﻣﻮﻥ، ﻻ ﻳﺪﺧﻞ ﻣﻨﻪ ﺃﺣﺪ ﻏﻴﺮﻫﻢ، ﻓﺎﺫﺍ ﺩﺧﻠﻮﺍ ﺍﻏﻠﻖ، ﻓﻠﻢ ﻳﺪﺧﻞ ﻣﻨﻪ ﺍﺣﺪ .

জান্নাতে একটি দরজা আছে, যার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে কেবল রোযাদার ব্যক্তিরাই প্রবেশ করবে। অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা করা হবে- কোথায় সেই সৌভাগ্যবান রোযাদারগণ? তখন তারা উঠে দাড়াবে। তারা ব্যতীত কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অতঃপর রোযাদারগণ যখন প্রবেশ করবে, তখন তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে কেউ ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৮৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৫২; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২২৮১৮

হযরত সাহল ইবেন সা’দ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

ﺍﻥ ﻟﻠﺼﺎﺋﻤﻴﻦ ﺑﺎﺑﺎ ﻓﻰ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻳﻘﺎﻝ ﻟﻪ : ﺍﻟﺮﻳﺎﻥ، ﻻ ﻳﺪﺧﻞ ﻣﻨﻪ ﻏﻴﺮﻫﻢ ﺍﺫﺍ ﺩﺧﻞ ﺁﺧﺮﻫﻢ ﺍﻏﻠﻖ، ﻭﻣﻦ ﺩﺧﻞ ﻣﻨﻪ ﺷﺮﺏ، ﻭﻣﻦ ﺷﺮﺏ ﻣﻨﻪ ﻟﻢ ﻳﻈﻤﺄ ﺍﺑﺪًﺍ . ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ : ﻫﺬﺍ ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ ﺻﺤﻴﺢ ﻏﺮﻳﺐ .

জান্নাতে রোযাদার ব্যক্তিদের জন্য একটি বিশেষ দরজা আছে, যার নাম রাইয়ান। রোযাদারগণ ছাড়া অন্য কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। যখন সর্বশেষ রোযাদার ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করবে, তখন সেই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, সে (জান্নাতের পানীয়) পান করবে। আর যে পান করবে, সে কখনো পিপাসার্ত হবে না।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২২৮৪২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস : ১৯০২; সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৭৬৫; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ২৫৪৪

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

ﻟﻜﻞ ﺍﻫﻞ ﻋﻤﻞ ﺑﺎﺏ ﻣﻦ ﺍﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻳﺪﻋﻮﻥ ﻣﻨﻪ ﺑﺬﻟﻚ ﺍﻟﻌﻤﻞ، ﻭﻻﻫﻞ ﺍﻟﺼﻴﺎﻡ ﺑﺎﺏ ﻳﺪﻋﻮﻥ ﻣﻨﻪ، ﻳﻘﺎﻝ ﻟﻪ : ﺍﻟﺮﻳﺎﻥ، ﻓﻘﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ، ﻫﻞ ﺍﺣﺪ ﻳﺪﻋﻰ ﻣﻦ ﺗﻠﻚ ﺍﻷﺑﻮﺍﺏ ﻛﻠﻬﺎ؟ ﻗﺎﻝ : ﻧﻌﻢ، ﻭﺍﺭﺟﻮ ﺃﻥ ﺗﻜﻮﻥ ﻣﻨﻬﻢ ﻳﺎ ﺍﺑﺎ ﺑﻜﺮ

، প্রত্যেক প্রকারের নেক আমলকারীর জন্য জান্নাতে একটি করে বিশেষ দরজা থাকবে, যার যে আমলের প্রতি অধিক অনুরাগ ছিল তাকে সে দরজা দিয়ে আহবান করা হবে। রোযাদারদের জন্যও একটি বিশেষ দরজা থাকবে, যা দিয়ে তাদেরকে ডাকা হবে, তার নাম হবে ‘রাইয়ান’। আবু বকর রা. বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এমন কেউ কি হবেন, যাকে সকল দরজা থেকে আহবান করা হবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমি আশা রাখি তুমিও তাদের একজন হবে।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৯৮০০; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস : ৩২৬২৮ এ সম্পর্কে বুখারী-মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে,

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

ﻣﻦ ﺃﻧﻔﻖ ﺯﻭﺟﻴﻦ ﻓﻲ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻧﻮﺩﻱ ﻣﻦ ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺠﻨﺔ : ﻳﺎ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻫﺬﺍ ﺧﻴﺮ، ﻓﻤﻦ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺩﻋﻲ ﻣﻦ ﺑﺎﺏ ﺍﻟﺼﻼﺓ، ﻭﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺠﻬﺎﺩ ﺩﻋﻲ ﻣﻦ ﺑﺎﺏ ﺍﻟﺠﻬﺎﺩ، ﻭﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺼﻴﺎﻡ ﺩﻋﻲ ﻣﻦ ﺑﺎﺏ ﺍﻟﺮﻳﺎﻥ، ﻭﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺼﺪﻗﺔ ﺩﻋﻲ ﻣﻦ ﺑﺎﺏ ﺍﻟﺼﺪﻗﺔ، ﻓﻘﺎﻝ ﺃﺑﻮ ﺑﻜﺮ : ﺑﺄﺑﻲ ﺃﻧﺖ ﻭﺃﻣﻲ، ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ! ﻣﺎ ﻋﻠﻰ ﻣﻦ ﺩﻋﻲ ﻣﻦ ﺗﻠﻚ ﺍﻷﺑﻮﺍﺏ ﻣﻦ ﺿﺮﻭﺭﺓ ﻓﻬﻞ ﻳﺪﻋﻰ ﺃﺣﺪ ﻣﻦ ﺗﻠﻚ ﺍﻷﺑﻮﺍﺏ ﻛﻠﻬﺎ؟ ﻗﺎﻝ : ﻧﻌﻢ، ﻭﺃﺭﺟﻮ ﺃﻥ ﺗﻜﻮﻥ ﻣﻨﻬﻢ

. (সহীহ বুখারী, হাদীস-১৮৯৬, ৩৬৬৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১০২৭ (৮৫-৮৬); মুসনাদে আহমাদ, হাদীস-৭৬৩৩; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস -৩০৯) .

৫. রোযা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল ও দুর্গ .

হযরত জাবির রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

ﻗﺎﻝ ﺭﺑﻨﺎ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ : ﺍﻟﺼﻴﺎﻡ ﺟﻨﺔ ﻳﺴﺘﺠﻦ ﺑﻬﺎ ﺍﻟﻌﺒﺪ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻭﻫﻮ ﻟﻰ ﻭﺍﻧﺎ ﺃﺟﺰﻯ ﺑﻪ . ﻭﻫﺬﺍ ﺣﺪﻳﺚ ﺻﺤﻴﺢ ﺑﻄﺮﻗﻪ ﻭﺷﻮﺍﻫﺪﻩ، ﻗﺎﻟﻪ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﺷﻌﻴﺐ ﺍﻻﺭﻧﺆﻭﻁ

আমাদের মহান রব ইরশাদ করেছেন- রোযা হল ঢাল। বান্দা এর দ্বারা নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। রোযা আমার জন্য আর আমিই এর পুরস্কার দিব।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৪৬৬৯; শুয়াবুল ঈমান বাইহাকী, হাদীস : ৩৫৭০

উসমান ইবনে আবিল আস রা. বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

ﺍﻟﺼﻴﺎﻡ ﺟﻨﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻛﺠﻨﺔ ﺍﺣﺪﻛﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﺘﺎﻝ

، রোযা হল জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী ঢাল, যুদ্ধক্ষেত্রে তোমাদের (শত্রুর আঘাত হতে রক্ষাকারী) ঢালের মত।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৬২৭৮; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২১২৫; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৬৪৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৬৩৯ হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

ﺍﻟﺼﻴﺎﻡ ﺟﻨﺔ، ﻭﺣﺼﻦ ﺣﺼﻴﻦ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ

রোযা হল (জাহান্নাম থেকে পরিত্রান লাভের) ঢাল এবং সুরক্ষিত দুর্গ।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস-৯২২৫; বাইহাকী, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস-৩৫৭১ .

৬. রোযা কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে .

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

ﺍﻟﺼﻴﺎﻡ ﻭﺍﻟﻘﺮﺁﻥ ﻳﺸﻔﻌﺎﻥ ﻟﻠﻌﺒﺪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ، ﻳﻘﻮﻝ ﺍﻟﺼﻴﺎﻡ : ﺍﻯ ﺭﺏ ﻣﻨﻌﺘﻪ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ﻭﺍﻟﺸﻬﻮﺓ ﻓﺸﻔﻌﻨﻰ ﻓﻴﻪ، ﻭﻳﻘﻮﻝ ﺍﻟﻘﺮﺁﻥ : ﻣﻨﻌﺘﻪ ﺍﻟﻨﻮﻡ ﺑﺎﻟﻠﻴﻞ، ﻓﺸﻔﻌﻨﻰ ﻓﻴﻪ، ﻗﺎﻝ : ﻓﻴﺸﻔﻌﺎﻥ ﻟﻪ . ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ، ﻭﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺴﺘﺪﺭﻙ ﻭﻗﺎﻝ : ﺻﺤﻴﺢ ﻋﻠﻰ ﺷﺮﻁ ﻣﺴﻠﻢ، ﻭﻭﺍﻓﻘﻪ ﺍﻟﺬﻫﺒﻲ، ﻭﺫﻛﺮﻩ ﺍﻟﻬﻴﺜﻤﻲ ﻓﻰ ﺍﻟﻤﺠﻤﻊ، ﻭﻗﺎﻝ : ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﻭﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻰ ﻓﻰ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ، ﻭﺭﺟﺎﻝ ﺍﻟﻄﺒﺮﺍﻧﻰ ﺭﺟﺎﻝ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ .

রোযা ও কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, হে রব! আমি তাকে খাদ্য ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি, (অর্থাৎ না ঘুমিয়ে সে তেলাওয়াত করেছে) অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অতঃপর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৬৬২৬; মুসতাদরাকে হাকিম, হাদীস : ২০৮০; বাইহাকী শুয়াবুল ঈমান, হাদীস : ১৯৯৪ .

৭. রোযাদারের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায় .

হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

ﻣﻦ ﺻﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺍﻳﻤﺎﻧﺎ ﻭﺍﺣﺘﺴﺎﺑﺎ ﻏﻔﺮ ﻟﻪ ﻣﺎ ﺗﻘﺪﻡ ﻣﻦ ﺫﻧﺒﻪ

، যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমযান মাসের রোযা রাখবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।- সহীহ বুখারী, হাদীস : ৩৮, ২০১৪; সহীহ মুসলিম ৭৬০(১৬৫); মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭১৭০; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৮৯৬৮

হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ ﻓﺮﺽ ﺻﻴﺎﻡ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﺳﻨﻨﺖ ﻗﻴﺎﻣﻪ، ﻓﻤﻦ ﺻﺎﻣﻪ ﻭﻗﺎﻣﻪ ﺍﻳﻤﺎﻧﺎ ﻭﺍﺣﺘﺴﺎﺑﺎ ﺧﺮﺝ ﻣﻦ ﺍﻟﺬﻧﻮﺏ ﻛﻴﻮﻡ ﻭﻟﺪﺗﻪ ﺃﻣﻪ .

আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর রমযানের রোযা ফরয করেছেন, আর আমি কিয়ামুল লাইল অর্থাৎ তারাবীহ’র নামাযকে সুন্নত করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমযানের সিয়াম ও কিয়াম আদায় করবে, সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে যাবে যেদিন সে মায়ের গর্ভ থেকে সদ্যভূমিষ্ঠ হয়েছিল।-মুসনাদ ে আহমদ, হাদীস-১৬৬০, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদীস-৭৭৮৭, মুসনাদে বাযযার, হাদীস-১০৪৮, সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস-২২০১, সুনানে নাসায়ী, হাদীস-২৫১৮ .

৮. রোযা গুনাহের কাফফারা .

রোযা গুনাহের কাফফারা হওয়া কুরআনের আয়াতের মাধ্যমে প্রমাণিত I আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন প্রকার গুনাহের কাফফারা স্বরূপ রোযার বিধান নাযিল করেছেন। যেমন ইহরাম অবস্থায় (অসুস্থতা বা মাথার কষ্টের কারণে) মাথা মুন্ডানোর কাফফারা স্বরূপ (২:১৯৬), কোন যিম্মী বা চুক্তিবদ্ধ কাফেরকে ভুলক্রমে হত্যার কাফফারা স্বরূপ (৪:৯২), কসমের কাফফারা স্বরূপ (৫:৮৯) এবং যিহারের কাফফারা স্বরূপ (৫৮:৩-৪); আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বিভিন্ন মেয়াদে রোযার হুকুম দেওয়া হয়েছে। তাই সহজেই বোধগম্য যে, রোযা বান্দার পাপসমূহকে ধুয়ে-মুছে রোযাদারকে পরিশুদ্ধ করে। হযরত হুযায়ফা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

ﻓﺘﻨﺔ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻓﻰ ﺍﻫﻠﻪ ﻭﻣﺎﻟﻪ ﻭﻧﻔﺴﻪ ﻭﻭﻟﺪﻩ ﻭﺟﺎﺭﻩ ﺗﻜﻔﺮﻫﺎ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺼﻴﺎﻡ ﻭﺍﻟﺼﺪﻗﺔ ﻭﺍﻷﻣﺮ ﺑﺎﻟﻤﻌﺮﻭﻑ ﻭﺍﻟﻨﻬﻰ ﻋﻦ ﺍﻟﻤﻨﻜﺮ .

মানুষের জন্য তার পরিবার, ধন-সম্পদ, তার আত্মা, সন্তান-সন্ততি ও প্রতিবেশী ফিতনা স্বরূপ। তার কাফফারা হল নামায, রোযা, দান-সদকাহ, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫২৫, ১৮৬৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৮৯২-২৬, মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৩২৮০, সুনানে তিরমিযী, হা. ২২৫৮ .

৯.রোযাদারের মুখের গন্ধ মিশকের চেয়েও সুগন্ধিযুক্ত .

হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

ﻭﺍﻟﺬﻯ ﻧﻔﺲ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻴﺪﻩ ﻟﺨﻠﻮﻑ ﻓﻢ ﺍﻟﺼﺎﺋﻢ ﺍﻃﻴﺐ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺭﻳﺢ ﺍﻟﻤﺴﻚ

، সেই সত্তার শপথ, যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন, রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের সুগন্ধির চেয়েও অধিক সুগন্ধিময়।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৯০৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৫১ (১৬৩); মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৭১৭৪; সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ২৫২৩; সুনানে ইবনে মাজাহ- ১৬৩৮ .

১০. রোযাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত .

হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

ﻟﻠﺼﺎﺋﻢ ﻓﺮﺣﺘﺎﻥ ﻳﻔﺮﺣﻬﻤﺎ ﺍﺫﺍ ﺍﻓﻄﺮ ﻓﺮﺡ، ﻭﺍﺫﺍ ﻟﻘﻰ ﺭﺑﻪ ﻓﺮﺡ ﺑﺼﻮﻣﻪ، ﻭﻓﻰ ﺭﻭﺍﻳﺔ : ﺍﺫﺍ ﻟﻘﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﺠﺰﺍﻩ ﻓﺮﺡ

، রোযাদারের জন্য দুটি আনন্দের মুহূর্ত রয়েছে, যখন সে আনন্দিত হবে। এক. যখন সে ইফতার করে তখন ইফতারের কারণে আনন্দ পায়। দুই. যখন সে তার রবের সাথে মিলিত হবে তখন তার রোযার কারণে আনন্দিত হবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যখন সে আল্লাহর সাথে মিলিত হবে, আর তিনি তাকে পুরস্কার দিবেন, তখন সে আনন্দিত হবে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৯০৪, ১৮৯৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৫১ (১৬৩, ১৬৪, ১৬৫); মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৯৪২৯, ৭১৭৪; সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৭৬৬

১১. রোযাদার পরকালে সিদ্দীকীন ও শহীদগণের দলভুক্ত থাকবে .

হযরত আমর ইবনে মুররা আলজুহানী রা. হতে বর্ণিত,

ﺟﺎﺀ ﺭﺟﻞ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻘﺎﻝ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ! ﺃﺭﺍﻳﺖ ﺍﻥ ﺷﻬﺪﺕ ﺍﻥ ﻻ ﺍﻟﻪ ﺍﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺍﻧﻚ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﺻﻠﻴﺖ ﺍﻟﺼﻠﻮﺍﺕ ﺍﻟﺨﻤﺲ ﻭﺍﺩﻳﺖ ﺍﻟﺰﻛﺎﺓ ﻭﺻﻤﺖ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻗﻤﺘﻪ ﻓﻤﻤﻦ ﺃﻧﺎ؟ ﻗﺎﻝ : ﻣﻦ ﺍﻟﺼﺪﻳﻘﻴﻦ ﻭﺍﻟﺸﻬﺪﺍﺀ

، এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যদি একথার সাক্ষ্য দিই যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই এবং অবশ্যই আপনি আল্লাহর রাসূল, আর আমি যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করি, যাকাত প্রদান করি, রমযান মাসের সিয়াম ও কিয়াম (তারাবীহসহ অন্যান্য নফল) আদায় করি তাহলে আমি কাদের দলভুক্ত হব? তিনি বললেন, সিদ্দীকীন ও শহীদগণের দলভুক্ত হবে।-মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ২৫, সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২২১২, সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৪২৯ .

১২. রোযাদারের দুআ কবুল হয় .

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

ﺇﻥ ﻟﻠﺼﺎﺋﻢ ﻋﻨﺪ ﻓﻄﺮﻩ ﻟﺪﻋﻮﺓ ﻣﺎ ﺗﺮﺩ . ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺒﻮﺻﻴﺮﻯ : ﺍﺳﻨﺎﺩﻩ ﺻﺤﻴﺢ

. ইফতারের সময় রোযাদার যখন দুআ করে, তখন তার দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (অর্থাৎ তার দুআ কবুল হয়)।-সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৭৫৩ হযরত আবু হুরায়রা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

ﺛﻼﺛﺔ ﻻ ﺗﺮﺩ ﺩﻋﻮﺗﻬﻢ ﺍﻻﻣﺎﻡ ﺍﻟﻌﺎﺩﻝ، ﻭﺍﻟﺼﺎﺋﻢ ﺣﺘﻰ ﻳﻔﻄﺮ، ﻭﺩﻋﻮﺓ ﺍﻟﻤﻈﻠﻮﻡ، ﺗﺤﻤﻞ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻐﻤﺎﻡ، ﻭﺗﻔﺘﺢ ﻟﻬﺎ ﺍﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺴﻤﺎﻭﺍﺕ، ﻭﻳﻘﻮﻝ ﺍﻟﺮﺏ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ : ﻭﻋﺰﺗﻰ ﻻﻧﺼﺮﻧﻚ ﻭﻟﻮ ﺑﻌﺪ ﺣﻴﻦ . ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ : ﻫﺬﺍ ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ

. তিন ব্যক্তির দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না (অর্থাৎ তাদের দুআ কবুল করা হয়) ন্যায়পরায়ন শাসকের দুআ; রোযাদার ব্যক্তির দুআ ইফতারের সময় পর্যন্ত ও মজলুমের দুআ। তাদের দুআ মেঘমালার উপরে উঠিয়ে নেওয়া হয় এবং এর জন্য সব আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। তখন আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, আমার ইয্যতের কসম! বিলম্বে হলেও অবশ্যই আমি তোমাকে সাহায্য করব।-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৮০৪৩; সুনানে তিরমিযী, হাদীস : ৩৫৯৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৭৫২; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৪২৮

হযরত আবু হুরায়রা রা. র্বণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

ﺍﻟﺼﺎﺋﻢ ﻻ ﺗﺮﺩ ﺩﻋﻮﺗﻪ ، ﻭﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺍﺳﻨﺎﺩﻩ ﺣﺴﻦ ﻗﺎﻟﻪ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﻣﺤﻤﺪ ﻋﻮﺍﻣﺔ

রোযাদারের দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৮৯৯৫ .

১৩. রোযা হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দেয় .

ﺻﻮﻡ ﺷﻬﺮ ﺍﻟﺼﺒﺮ ﻭﺛﻼﺛﺔ ﺃﻳﺎﻡ ﻣﻦ ﻛﻞ ﺷﻬﺮ ﻳﺬﻫﺒﻦ ﻭﺣﺮ ﺍﻟﺼﺪﺭ، ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﻤﻨﺬﺭﻯ : ﻭﺭﺟﺎﻟﻪ ﺭﺟﺎﻝ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ، ﻭﺭﻭﺍﻩ ﺍﺣﻤﺪ ﻭﺍﺑﻦ ﺣﺒﺎﻥ ﻭﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻰ ﺍﻟﺜﻼﺛﺔ ﻣﻦ ﺣﺪﻳﺚ ﺍﻷﻋﺮﺍﺑﻰ ﻭﻟﻢ ﻳﺴﻤﻮﻩ، ‏( ﺍﻯ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ )

হযরত ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সবরের মাসের (রমযান মাস) রোযা এবং প্রতি মাসের তিন দিনের (আইয়্যামে বীয) রোযা অন্তরের হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দেয়। -মুসনাদে বাযযার, হাদীস : ১০৫৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৩০৭০; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৬৫২৩ .

১৪. আল্লাহর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম .

ﻋﻦ ﺃﺑﻰ ﺃﻣﺎﻣﺔ ﻗﺎﻝ : ﻗﻠﺖ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ! ﻣﺮﻧﻰ ﺑﻌﻤﻞ ﻗﺎﻝ : ﻋﻠﻴﻚ ﺑﺎﻟﺼﻮﻡ ﻓﺈﻧﻪ ﻻ ﻋﺪﻝ ﻟﻪ ﻗﻠﺖ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ! ﻣﺮﻧﻰ ﺑﻌﻤﻞ ﻗﺎﻝ : ﻋﻠﻴﻚ ﺑﺎﻟﺼﻮﻡ، ﻓﺎﻧﻪ ﻻ ﻋﺪ

. হযরত আবু উমামা রা. বর্ণনা করেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে কোনো আমলের আদেশ করুন। তিনি বললেন, তুমি রোযা রাখ, কেননা এর সমতুল্য কিছু নেই। আমি পুনরায় বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে কোনো নেক আমলের কথা বলুন, তিনি বললেন, তুমি রোযা রাখ, কেননা এর কোনো সমতুল্য কিছু নেই।-সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ১৮৯৩; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২২১৪০; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৪২৫; সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস : ২৫৩৩

ﻋﻦ ﺃﺑﻰ ﺃﻣﺎﻣﺔ ﺍﻟﺒﺎﻫﻠﻰ ﻗﺎﻝ : ﻗﻠﺖ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺮﻧﻰ ﺑﺄﻣﺮ ﻳﻨﻔﻌﻨﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻪ، ﻗﺎﻝ : ﻋﻠﻴﻚ ﺑﺎﻟﺼﻮﻡ ﻓﺎﻧﻪ ﻻ ﻣﺜﻞ ﻟﻪ . ﻫﺬﺍ ﺣﺪﻳﺚ ﺍﺳﻨﺎﺩﻩ ﺻﺤﻴﺢ ﻋﻠﻰ ﺷﺮﻁ ﻣﺴﻠﻢ ﻗﺎﻟﻪ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﺷﻌﻴﺐ ﻭﻛﺬﺍ ﻗﺎﻟﻪ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﺃﺣﻤﺪ ﺷﺎﻛﺮ

. হযরত আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে এমন কোনো আমলের আদেশ করুন, যার দ্বারা আল্লাহ তাআলা আমাকে উপকৃত করবেন। তিনি বললেন, তুমি রোযা রাখ, কেননা তার তুলনা হয় না।-সুনানে নাসায়ী, হাদীস : ২৫৩১; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২২১৪১; বাইহাকী, শুয়াবুল ঈমান ৩৮৯৩ তাবারানী, হাদীস : ৭৪৬৩ রমযান হল খালেস ইবাদতের মৌসুম। তাই এ মাসের সময়গুলো যতটা শুধু আল্লাহর সাথে কাটানো যায় ততটা ভালো। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে হাদীস অনুযায়ী আমল করার ও উক্ত ফযীলত লাভ করার তাওফীক দান করুন। আমীন। ইয়া রাববাল আলামীন।

মুফতি নাজমুল হাসান সাকিব
মুফতি নাজমুল হাসান সাকিব
নাম: নাজমুল হাসান সাকিব পিতা: মুজিবুর রহমান স্থায়ী ঠিকানা: বাহেরবালী, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ। বর্তমান ঠিকানা: বসুন্ধরা, বারিধারা, ঢাকা ১২২৯ পড়াশোনাঃ- বাহেরবালী দারুল উলূম নূমানিয়া মাদরাসা, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ। (নূরানী টু হেদায়াতুন্নাহ্) জামিয়াতুস সালাম মদিনাবাগ, মুগদা, সবুজবাগ, ঢাকা। (কাফিয়া-শরহে বেকায়া) মারকাজুল উলূম আল-ইসলামিয়া মান্ডা, মুগদা, সবুজবাগ, ঢাকা। (আরবী স্নাতক ৪র্থ বর্ষ) মদিনাতুল উলূম বসুন্ধরা মাদরাসা ( হেদায়া) মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা। (এম এ- মাস্টার্স) আল মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশ। (ইসলামি আইন ও গবেষণা বিভাগ) পেশা: লেখালেখি ও পড়াশোনা। (ভবিষ্যত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এখনো অধ্যায়ণরত)।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments