সমসাময়িক একটি বিষয় নিয়ে কিছুদিন যাবত, মিডিয়া জগতে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সে বিষয়টি হলো, তারাবীহ নামাযে কোরআনে কারীম দেখে পড়া যাবে কিনা? আসুন সে বিষয়টি নিয়ে আমরা একটু পর্যালোচনা করি। মুলত কোরআন-সুন্নাহ ও ফিকহে হানাফি অনুযায়ী নামাযে কোরআন দেখে দেখে পড়লে নামায হবেনা। এ ব্যপারে ফাতহুল কাদিরে ইবনুল হুমাম রঃ উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম আবু হানিফার মতে, ইমাম সাহেব যদি তারাবীহ নামাযে কোরআন দেখে দেখে পড়ে তাহলে তার নামায ফাসেদ হয়ে যাবে।
আর সাহেবাইন অর্থাৎ ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ রঃ বলেন যে, তার নামায হয়ে যাবে, মাকরূহ এর সাথে। কারণ সে একটি ইবাদতের সাথে আরকটি ইবাদতকে সংযুক্ত করেছে তাতে সমস্যা নাই। তবে সাহেবাইনের মতে সেটা মাকরূহ হবে কারণ সে আহলে কিতাব অর্থাৎ ইয়াহুদী-খৃষ্টানের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করেছে। আর ইয়াহুদী-খৃষ্টানরা তাওরাত, যাবুর দেখে দেখে পড়তো, তারা মুখস্থ করতে পারতোনা।
ফেকহীর ফতোয়ার কিতাবে মুতলাক মাকরূহ মানে মাকরূহে তাহরীমা। আর সাহেবাইনের মতে নামাজটা মাকরূহ এর সাথে হবে। আর মাকরূহ হওয়া মানে নামাযে কোনো সাওয়াবি হবেনা, আর আমরা তো নামায পড়বো সাওয়াবের জন্য।যদি নামাযে সাওয়াবি না হয়, তাহলে সে নামাযের কোনো দরকার নাই।
ইমাম আবু হানিফার মতে, যে ব্যক্তি নামাযে কোরআনে কারীম দেখে দেখে পড়লো, সে নামাযে আমলে কাসির করলো। যেমনঃ-
১. কোরআনে কারীম তাকে হাতে রাখতে হলো।
২. কোরআনকে দেখে পড়া।
৩. কোরআনের পৃষ্ঠা উল্টানো।
এই তিনটি আমলে কলিল মিলে আমলে কাসির হয়ে যায়। আর যদি নামাযে আমলে কাসির হয়, তাহল সে নাময ফাসেদ হয়ে যায়।
ইমাম শাফেয়ী রঃ এর মত হলো, যদি নামাযে কোরআন দেখে পড়ে তাহলে তার নামায হয়ে যাবে, তার নামায ফাসেদ হবেনা। কিন্তু হানাফি মতাদর্শে যারা বড় হয়েছে, তাদের নিকট তো শাফেয়ী মাজাহাবের মতামত গ্রহণযোগ্য হবেনা।
আর শাফেয়ীগণ যেই হাদিসটির মাধ্যমে দলিল পেশ করে থাকেন সেটি হলো, রমযান মাসে আয়েশা রাঃ এর গোলাম যাকওয়ানের ব্যপারে। এই যাকওয়ানের ব্যাপারে এসেছে, তিনি রমযানে তারবীহ এর নামাযে কোরআন দেখে দেখে পড়তেন। আসলে এই হাদিসটির ব্যাপারে হাদিস বিশারদগণ ব্যাখ্যা করেছেন যে, তিনি প্রতি নামাযের আগে কেরাত দেখে নিতেন। অতঃপর যখন নামায শেষ হতো তখন পুনরায় প্রয়োজন মাফিক দেখে নিতেন। এই হাদিস দ্বারা এই বিষয়টি প্রমাণ করেনা যে, তিনি নামাযে দেখে পড়তেন। তাহলে আমরা বুঝতে পারলাম যে, তিনি দেখে পড়তেনা।।
ইমাম আবু হানিফার আরকটি মত হলো, যে ব্যক্তি কোরআনুল কারীম হাতে নিয়ে দেখে দেখে পড়লে নামায, নামাযে সে কোরআন থেকে তালিম নিল অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি নামায পড়ছে, সে সুরা-কেরাত কিছুই জানেনা, পাশে দাড়িয়ে আরেক ব্যক্তি সুরা পড়লো, সে শিখে শিখে নামায পড়লো, এটা যেমন নামায হবেনা ঠিক সে কোরআনে কারীম দেখে দেখে পড়লে সে তাই করলো অর্থাৎ কোরআন থেকে শিখলো তারপর পড়লো। কিন্তু নামাযের সময় এই কাজটি আমলে কাসির বলে গণ্য হবে।
তাই নামায ফাসেদ হয়ে যাবে।
আর যাকওয়ানের যেই হাদিসটি সেটি হলো সাজ। অর্থাৎ আল্লাহর রাসুল কোরআন দেখে নামায পড়েননি, সাহাবায়ে কেরাম কোরআন দেখে নামায পড়াননি।
পরবর্তীতে হযরত ওমর রাঃ হযরত ক’বকে দিয়ে তারাবীহ নামায পড়িয়েছেন। কারণ কা’বের সবচেয়ে বেশি মুখস্থ ছিলো। যদি কোরআন দেখে দেখে পড়লে নামায চলতো, তাহলে ওমর বলে দিতেন, তোমাদের যাদের পড়ার মতো যোগ্যতা আছে, তোমরা তারাবীতে কোরআন দেখে দেখে পড়ে নাও।
হযরত কা’বের নেতৃত্ব জামাত তিনি করতেননা।
তাহলে বুঝাগেল আল্লাহর রাসুলের সুন্নতের খেলাফ, সাহাবিদের সুন্নতের খেলাফ। বিশেষ করে খোলাফায়ে রাশেদীনের মধ্যে ওমরের যামানায় এত সাহাবি উপস্থিত ছিলেন, তাদের সুন্নতের খেলাফ।
হযরত যাকওয়ান কর্তৃক হাদিসটি সাজ, আর সাজ হাদিস কখনো দলিল হিসেবে সাব্যস্ত হয়না।
অতএব ইমামে আজম আবু হানিফার ফতোয়াটিই সঠিক। আর উপরোল্লিখিত ইমামে আজম আবু হানিফার মতের উপরই ফতোয়া।
তাই আসুন সমাজে বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে আমরা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দেই