Friday, April 19, 2024
No menu items!
Homeফাজায়েল ও মাসায়েলনারীদের জন্যনারীদের গোপন মাসায়েল

নারীদের গোপন মাসায়েল

মাসিক নেফাসও ইস্তেহাযা

মাসিকে পরিচয়ঃ প্রতিমাসে বালেগা মেয়েদের লজ্জাস্থান দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে যে  রক্তস্রাব হয় তাকে হায়েয বা মাসিক বলে, আবার কেহ একে মিস ও বলে থাকেন।  কোরআন ও হাদিসে এই রক্ত কে নাপাক বলা হয়েছে। ৯বছরের আগে এই রক্ত দেখা দেয় না,আর যদি আসে তবে তা রোগের কারনে বলে গন্য করা হবে,আর ৫৫ বৎসর বয়সের পর সাধারনত হায়ে্যের রক্ত আসে না।

মাসীকের সময়সীমা  

মাসিকের সর্ব নিম্ন সময় তিন দিন তিন রাত,এবং উপরে দশ দিন দশ রাত মাসিকের দিনগুলোতে সর্বদা রক্ত আসা জরুরি না বরং নিয়ম মত রক্ত আসার পর অভ্যাসের দিন গুলোতে দশ দিন দশ রাতের ভিতরে মাঝে মধ্যে দুই চার ঘণ্টা বা এক দিন বা আধা দিন রক্ত বন্ধ থেকে আবার এলে ও সেই মাঝখানের সময়কে হায়েযের তথা মাসিকের সময় বলে ধরা হবে।

মাসিক চলাকালীন নামায রোযা

মাসিক চলাকালিন সময়ে নামায পড়া,রোযা রাখা নিষেধ।তবে নামায ও রোযার মাঝে এতটুকু পার্থক্য,নামায পরিপূর্ণ্যভাবে মাফ হয়ে যায়।আর কখনো কাযা করতে হয় না। কিন্ত রোযা সাময়িক ভাবে মাফ হলে ও মাসিকের রক্ত বন্দ্ব হলে পূনরায় রোযা কাযা করতে হবে।

এক দুই দিন মাসিকের রক্ত স্রাব হওয়ার পর রক্ত আসা বন্দ্ব হলে গোসল করা ওয়াজিব হয় না। অজু করে নামাজ পড়তে থাকবে,কেননা মাসিকের সর্বনিম্ন সময় তিন দিন তিন রাত, তিন দিন তিন রাতের কম স্রাব হলে তা মাসিক বলে গণ্য হবে  না,তবে পনের দিনের কম সময়ে পবিত্র হলে সাথে সাথেই সহবাস করা সঠিক হবে না কেননা যদি ১৫দিনের মধে আবার রক্ত স্রাব শুরু হয় তাহলে প্রমাণিত হবে সেই সময় টা মাসিকের সময় ছিল।         

মাসিক চলাকালীন সহবাসের মাসায়েল

মাসিক চলাকালিন সময়ে সহবাস জায়েয নেই,সহবাস ছাড়া আর সবকিছুই জায়েয। মাসিক চলাকালিন সময়ে স্ত্রীর নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত স্থান ব্যাবহার করা  সাধারনত নিষেদ।এবং সহবাস করা হারাম। নাভির উপর থেকে মাথা প্রযন্ত অন্যান্য স্থানে হাত লাগান ও চুমো দেওয়া যাবে। 

স্বামী যদি মিলিত হতে চায় এবং মিলনের জন্য জোড় জবরদস্তি করে তখন কাপড়ের উপর দিয়ে স্ত্রীর সাথে মিলিত হতে পারবে। তখন স্ত্রীর জন্য কর্তব্য হবে স্বামী কে নরম ভাষায় বুঝিয়ে মিলন থেকে বিরত রাখা। হেকিমি মতে এ অবস্থায় সহবাস করা স্বাস্থের পক্ষে ক্ষতিকর।যদি পরিপূর্ণ্য ১০দিন ১০রাত মাসিক স্রাব হয় এবং মাসিকের রক্ত বন্দ্ব হওয়ার পর অলসতা বশত স্ত্রী গোসল না করে,তাহলে গোসলের পূর্বেও সহবাস করা জায়েয হবে।

পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে করণীয়৷

হায়েয অবস্থায় জেনেশুনে স্ত্রী সহবাস করা হারাম। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, তারা আপনাকে হায়েয সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলে দিন, তা অপবিত্রতা। অতএব তোমরা হায়েযের সময় স্ত্রীদের থেকে পৃথক থাক এবং তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। যতক্ষণ না তারা পবিত্র হয়।

সূরা বাকারা : ২২২

সুতরাং প্রথমত আপনি আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা-ইস্তিগফার করুন। তাছাড়া হায়েযের শুরুর দিকে সহবাস হলে এক দীনার আর শেষ দিকে হলে অর্ধ দীনার সদকা করার কথা কোনো কোনো হাদীসে বর্ণিত

হয়েছে। তাই এক্ষেত্রে তাওবা-ইস্তিগফারের পাশাপাশি উপরোক্ত নিয়মে সদকা করে দেওয়া উত্তম হবে। প্রকাশ থাকে যে, দীনার একটি স্বর্ণমুদ্রা। যা বর্তমান হিসেবে ৪.৩৭৪ গ্রাম সমপরিমাণ স্বর্ণ।

জামে তিরমিযী, হাদীস ১৩৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ২২০১; বাযলুল মাজহূদ ২/২৭৮; আলবাহরুর রায়েক ১/১৯৭; ফাতহুল কাদীর ১/১৪৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৯৮৷

পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব চলাকালে গিলাফ বা কাপড় দিয়ে কুরআন শরীফ স্পর্শ করা৷

ঋতুকালে বা অপবিত্র অবস্থায় কুরআন মজীদ স্পর্শ করা নাজায়েয। হ্যাঁ, এ অবস্থায় কুরআন মজীদ ধরার প্রয়োজন হলে গিলাফ বা অন্য কোনো পবিত্র কাপড় দিয়ে ধরা যাবে। তবে পরিহিত বস্ত্রের আঁচল বা তার অন্য কোনো অংশ দ্বারা স্পর্শ করা উচিত নয়। -আলমুহীতুল বুরহানী ১/৪০২; রদ্দুল মুহতার ১/২৯৩; আলবাহরুর রায়েক ১/২০১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৯৷ উত্তর প্রদানে মুফতী মেরাজ তাহসীন। 

পিরিয়ড বা ঋতুস্রাবগ্রস্থা নারীর কোন অঙ্গ স্পর্শ করা 

মেয়েদের পিরিয়ডের সময় তাকে স্পর্শ করতে পারবে  এবং তার স্বামীর জন্য নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত সমস্ত অঙ্গ স্পর্শ করা জায়েজ। 

পিরিয়ডগ্রস্থা মেয়েকে স্পর্শ করা যাবে তাকে স্পর্শ করার দ্বারা নাপাক হবে না৷

আর স্বামীর জন্য স্ত্রীর সাথে সম্পর্কের তিন সূরত।

যথা-

১- সহবাস করা। এটি নিঃসন্দেহে হারাম।

২-নাভির উপরের অংশ এবং হাটুর নিচের অংশ স্পর্শ করা জায়েজ। তাতেও কোন মতভেদ নেই।

৩- নাভির নিচ থেকে হাটু পর্যন্ত স্পর্শ করা কাপড়ের উপর দিয়ে।

এটিও জায়েজ আছে। কোন সমস্যা নেই।

তবে নাভির নিচ থেকে হাটু পর্যন্ত কাপড় ছাড়া স্পর্শ করা।তাতে মতভেদ আছে। কারো কারো মতে সহবাস না করলে জায়েজ আছে। বাকি ইমাম আবূ হানীফা রহঃ, ইমাম শাফেয়ী রহঃ, ইমাম মালিক রহঃ সহ অধিকাংশ আলেমদের মতে তা জায়েজ নয়।

তাই কাপড় ছাড়া তা পরিহার করা আবশ্যক৷

দলিলঃ

আউজাযুল মাসালিক ১/৩২৬; ফতওয়ায়ে শামী ১/৪৮৬; ফতওয়াযে হিন্দিয়া ১/৩৯; বাহরুর রায়েক ১/১৯৮৷

নেফাস কাকে বলে

সন্তান প্রসবের পর স্ত্রী লোকের যোনি থেকে যে রক্ত স্রাব হয়,তাকে নেফাস বলে, অনেকে একে ৪০ দিনের পিরিয়ড ও বলে থাকে।

নেফাসের সময়সীমা

নেফাসের সর্বোউচ্চ সময় ৪০দিন, চল্লিশ দিনের পর রক্ত বের হলে নেফাসের রক্ত বলে গণ্য হবে না। বরং ইস্তেহাযা বা রোগ হিসেবে ধরা হবে। নেফাসের সর্বনিম্ন কোন সময় সীমা নেই,দুই চার ঘণ্টা ও হতে পারে,যে কোন সময় রক্ত আসা বন্দ্ব হতে পারে।

এমন কি সন্তান প্রসবের পর রক্ত একেবারে না আসা ও সম্ভব।সন্তান প্রসবের পর রক্ত বের না হলে ও প্রসতীর উপর গোসল ফরজ। ৪০দিনের কম সময়ের মধ্যে রক্ত স্রাব বন্দ্ব হলে গোসল করে নিতে হবে। নিজেকে পাক মনে করে নামায পড়া আরাম্ভ করবে। নেফাস গ্রস্ত অবস্থায় সহবাসও হাটু থেকে নাভি পর্যন্ত স্থান থেকে লজ্জত গ্রহন করা জায়েয নেই। তবে এক সাথে খানা পিনাও শয্যাগ্রহণ জায়েয।(তোহফায়ে খাওয়াতিন)   

ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে ঋতুস্রাব বন্ধ করা  

রমযান মাসে কোনো মহিলা ওষুধ খেয়ে স্রাব বন্ধ রাখলে ওই দিনগুলোতেও তাকে রোযা রাখতে হবে। তার এ রোযাগুলো ত্রুটিযুক্ত হবে না; বরং পূর্ণ সহীহ বলেই গণ্য হবে।

উল্লেখ্য, ঋতুস্রাব মহিলাদের স্বভাবজাত বিষয়। এ অবস্থায় রোযা না রাখার বিধান রয়েছে এবং এর পরিবর্তে অন্য সময় রোযা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং রমযানে স্রাব বন্ধকারী ওষুধ ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। কেননা রমযানে স্রাবের কারণে রোযা না রাখলেও শরীয়তের কোনো বিধান লঙ্ঘন হয় না। উপরন্তু ঔষধ ব্যবহারে কোনো কোনো ক্ষেত্রে শারীরিক ক্ষতির আশংকা থাকে। তাই এ থেকে বিরত থাকাই উচিত।-জামিউ আহ্কামিন নিসা ১/১৯৮; ফাতাওয়া রহীমিয়া ৮/১৩৬

ঋতুস্রাবের দিনগুলোতে কোরআনও বিভিন্ন মাসনুন দুআ পড়া 

মাসিক স্রাবের দিনগুলোতে নারীগণ দুআ-দরূদ, যিকির-আযকার, তাসবীহ-ইস্তিগফার সবই করতে পারবে। তবে এ অবস্থায় কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করা যাবে না। এক বর্ণনায় এসেছে,

عَنْ مَعْمَرٍ قَالَ: سَأَلْتُ الزُّهْرِيَّ، عَنِ الْحَائِضِ وَالْجُنُبِ أَيَذْكُرَانِ اللَّهَ؟ قَالَ: نَعَمْ، قُلْتُ: أَفَيَقْرَآنِ الْقُرْآنَ؟ قَالَ: لَا.

মা‘মার রাহ. বলেন, আমি যুহরী রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ঋতুমতী নারী ও যার উপর গোসল ফরয হয়েছে সে আল্লাহর যিকির করতে পারবে? তিনি বললেন, হাঁ, পারবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কুরআন তিলাওয়াত করতে পারবে? তিনি বললেন, না। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৩০২

عَنْ إِبْرَاهِيمَ قَالَ: الْحَائِضُ وَالْجُنُبُ يَذْكُرَانِ اللَّهَ وَيُسَمِّيَانِ.

ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন, ঋতুমতী নারী ও যার উপর গোসল ফরয হয়েছে সে আল্লাহর যিকির করতে পারবে এবং বিসমিল্লাহও পড়তে পারবে।

-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৩০৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৮; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/১৬৫; হাশিয়াতুত তহতাবী আলাল মারাকী ৭৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৯৩

ঋতুমতী মহিলার কি ইহরাম বাঁধার আগে গোসল করা

ঋতুমতী মহিলারও ইহরামের আগে গোসল করা মুস্তাহাব। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো নারী হায়েয বা নেফাস অবস্থায় মীকাতে পৌঁছলে গোসল করবে। এরপর ইহরাম গ্রহণ করবে। অতপর হজ্বের যাবতীয় কাজ করতে থাকবে শুধু বাইতুল্লাহর তাওয়াফ ছাড়া।   সুনানে আবু দাউদ ১/২৪৩; গুনইয়াতুন নাসিক পৃ. ৬৯

রসিকতার ছলে স্ত্রীকে আপু বলে ডাক

নিজ স্ত্রীকে বোন বা আপু বলে ডাকা মাকরূহ। হাদীস শরীফে এসেছে, 

عَنْ أَبِي تَمِيمَةَ الْهُجَيْمِيِّ، أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِامْرَأَتِهِ: يَا أُخَيَّةُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أُخْتُكَ هِيَ؟ فَكَرِهَ ذَلِكَ وَنَهَى عَنْهُ.

এক লোক তার স্ত্রীকে বোন বলে ডাকলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনতে পেয়ে তা অপছন্দ করেন এবং তাকে এভাবে ডাকতে নিষেধ করেছেন। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২২০৪

তবে কেউ এমন বলে ফেললে এর কারণে বৈবাহিক সম্পর্কের কোনো ক্ষতি হবে না।-ফাতহুল কাদীর ৪/৯১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫০৭; রদ্দুল মুহতার ৩/৪৭০  । উত্তর দিয়েছেন : মাসিক আল-কাওসার ।  

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments