Thursday, April 25, 2024
No menu items!
Homeইসলামের স্তরনামাযবিতর নামায পড়ার তরীকা

বিতর নামায পড়ার তরীকা

ক. বিতর নামায তিন রাকাত

১. আবু সালামা (রহ) হযরত আয়েশা (রা) কে জিজ্ঞেস করেন:

كيف كانت صلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم في رمضان؟ فقالت ما كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يزيد في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة، يصلي أربعا فلا تسئل عن حسنهن وطولهن، ثم يصلي أربعا فلا تسئل عن حسنهن وطولهن، ثم يصلي ثلاثا. قالت عائشة فقلت يارسول الله أتنام قبل أن توتر؟ فقال: يا عائشة إن عيني تنامان ولا ينام قلبي.

وقال أبو عمر ابن عبد البر أيضا فى الاستذكار (২/১০০) في معنى قوله في حديث هذا الباب: أربعا ثم أربعا ثم ثلاثا وجه رابع: وهو أنه كان ينام بعد الأربع ثم ينام بعد الأربع ثم يقوم فيوتر بثلاث.

অর্থ: ‘রমযানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায কেমন ছিল? হযরত আয়শা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে এবং রমযানের বাইরে এগারো রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন। এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না! এরপর আরও চার রাকাত পড়তেন। এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কেও প্রশ্ন করো না! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন’। [সহীহ বুখারী হা.১১৪৭ সহীহ মুসলিম হা.৭৩৮]

এ হাদীসের বিশ্লেষণ করে ইমাম ইবনু আব্দিলবার রহ. বলেন: “তিনি চার রাকাত পড়ে ঘুমাতেন। তারপর আবার চার রাকাত পড়ে ঘুমাতেন। অতঃপর উঠে তিন রাকাত বিতর পড়েতন”। [আল ইস্তিয্কার ২/১০০]

২. আব্দুল্লাহ ইবনে আবী কাইস বলেন আমি হযরত আয়েশা রা. কে জিজ্ঞেস করলাম: ‘নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরে কত রাকাত পড়তেন? তিনি উত্তরে বলেন: চার ও তিন, ছয় ও তিন, আট ও তিন এবং দশ ও তিন। তিনি বিতরে সাত রাকাতের কম এবং তেরো রাকাতের অধিক পড়তেন না’। হাদীসের আরবী পাঠ নিম্নরূপ:

بكم كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يوتر؟ قالت كان يوتر بأربع وثلاث، وست وثلاث، وثمان وثلاث، وعشر وثلاث، ولم يكن يوتر بأنقص من سبع ولا بأكثر من ثلاث عشرة .

[সুনানে আবী দাউদ ১/১৯৩ হা.১৩৬২ শরহু মা‘আনিল আসার ১/২০১ মুসনাদে আহমদ ৬/১৪৯ হা.২৫১৫৯ আয়নী ও শুআইব আরনাউত এটিকে সহীহ বলেছেন]

ইমাম বুখারী রহ. এর উস্তাদ ইসহাক ইবনে রাহুয়াহ্ বলেন ‘এ ধরণের হাদীসগুলোতে বিতরসহ রাতের পুরো নামাযকেই বিত্র শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে’। [সুনানে তিরমিযী হা. ৪৫৭ নং হাদীস পরবর্তী বক্তব্য দ্রষ্টব্য]

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. উপরোল্লিখিত হাদীসটি সম্পর্কে লেখেন:‘আমার জানামতে এটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বাধিক সহীহ রেওয়ায়াত। এবিষয়ে হযরত আয়েশা রা. বর্ণিত হাদীসের বর্ণনাকারীদের মাঝে যে বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়, এর দ্বারা সে সবের মাঝে সমন্বয় করা যায়’। [ফাতহুল বারী ৩/২৫] 

আর এ হাদীসে সর্বাবস্থায় তিন রাকাত পৃথকভাবে পড়ার কথা উল্লিখিত হয়েছে, সুতরাং স্পষ্টতই বুঝা যায় এটিই প্রকৃত বিতর।

৩. সা‘দ ইবনে হিশাম হযরত আয়েশা সূত্রে বর্ণনা করেন:

أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان إذا صلى العشاء دخل المنزل، ثم صلى ركعتين، ثم صلى بعدهما ركعتين أطول منهما، ثم أوتر بثلاث لا يفصل فيهن، ثم صلى ركعتين وهو جالس يركع وهو جالس ويسجد وهو قاعد جالس. 

অর্থ: ‘ইশার নামায শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশ করে দুই রাকাত নামায পড়তেন। অতঃপর আরো দুই রাকাত পড়তেন যা পূর্বাপেক্ষা দীর্ঘ হত। তারপর তিন রাকাতে বিত্র পড়তেন। তাতে মাঝে (অর্থাৎ দুই রাকাত শেষে) সালাম ফেরাতেন না। [মুসনাদে আহমদ হা.২৫২২৩] এর সনদ হাসান।

৪. হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন:

كَان رسول اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّى من اللَّيْلِ ثَمَان رَكَعَاتٍ ويُوتِرُ بِثَلاثٍ، وَيُصَلِّى رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ صَلاةِ الفَجْرِ.

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে আট রাকাত নামায পড়তেন। অতপর তিন রাকাত বিত্র পড়তেন এবং ফজরের নামাযের পূর্বে আরো দুই রাকাত নামায আদায় করতেন’। [সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯ হা.১৭০৭ তহাবী ১/২০২ আল্লামা আয়নী রহ. বলেন: এটি সহীহ মুলিমের মানোত্তীর্ণ, নুখাবুল আফকার ৩/২৫১]

৫. শা‘বী রহ. বলেন: আমি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. কে জিজ্ঞেস করেছি: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের নামায কত রাকাত ছিল?

سألتُ عبدَ الله بن عباس وعبدَ الله بن عمر عن صلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم بالليل، فقالا ثلاث عشرة ركعة، منها ثمان، ويوتر بثلاث، وركعتين بعد الفجر. 

‘তাঁরা উভয়ে বলেন: (তিনি রাতে) মোট তের রাকাত (নামায পড়তেন)। প্রথমে আট রাকাত। অতঃপর তিন রাকাত বিত্র পড়তেন। আর ফজরের ওয়াক্ত হয়ে গেলে দুই রাকাত (ফজরের সুন্নত) আদায় করতেন। [সুনানে নাসায়ী আল-কুবরা হা. ৪০৮, ১৩৫৭ সুনানে ইবনে মাজাহ হা.১৩৬১ তহাবী ১/১৯৭ এর সনদ সহীহ, নুখাবুল আফকার ৩/২১১ সালাতুল বিত্র পৃ.২৬০]

৬. আলী ইবনে আব্দুল্লাহ তাঁর পিতা ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন:

عن رسول الله صلى الله عليه وسلم : أَنَّه قَامَ من اللَّيْلِ فَاسْتَنَّ، ثم صَلَّى رَكْعَتَيْنِ، ثم نَامَ، ثُمَّ قَامَ فَاسْتَنَّ ثم تَوَضَّأَ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى صَلَّى سِتًّا، ثم أَوْتَرَ بِثَلاَثٍ وَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ. 

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে শয্যা থেকে উঠলেন। এরপর মিসওয়াক করলেন অযু করলেন এবং দুই রাকাত নামায পড়লেন। এভাবে দুইদুই করে ছয় রাকাত পূর্ণ করলেন। অতঃপর তিন রাকাত বিত্র পড়লেন। সবশেষে আরও দুই রাকাত নামায পড়লেন। [সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯ হা.১৭০৪ মুসনাদে আহমদ ১/৩৫০ হা.৩২৭১ তহাবী শরীফ ১/২০১-২০২ শ্ুআইব আরনাউত বলেন: এর সনদ শক্তিশালী, মুসলিম শরীফের শর্ত অনুযায়ী]

সহীহ মুসলিম শরীফের বর্ণনায় রয়েছে:

ثم قام فصلى ركعتين فأطال فيهما القيام والركوع والسجود ثم انصرف فنام حتى نفخ ثم فعل ذلك ثلاث مرات ست ركعات كل ذلك يستاك ويتوضأ ويقرأ هؤلاء الآيات ثم أوتر بثلاث.

‘অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে তিন বারে ছয় রাকাত নামায আদায় করলেন। প্রতি বারই মিসওয়াক ও অযু করেছেন এবং উপরিউক্ত আয়াতগুলো পড়েছেন। সবশেষে তিন রাকাত বিত্র পড়েছেন। [সহীহ মুসলিম ১/২৬১ হা.৭৬৩ সহীহ আবু আওয়ানা ২/৩২১]

সা‘দ ইবনে হিশাম হযরত ইবনে আব্বাসকে বিত্র নামায সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে আয়েশা রা. এর কাছে পাঠান। আর বলে দেন: তিনি কি বলেন আমাকেও জানাবে। অতঃপর সা‘দ ইবনে হিশাম ফিরে এসে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরলেন। ইবনে আব্বাস রা. বললেন: তুমি সত্যি বলেছ। সুযোগ থাকলে আমি সরাসরি হযরত আয়েশা রা. এর কাছ থেকে এ হাদীসটি শুনে আসতাম। [সহীহ মুসলিম হা.৭৪৬] এতে স্পষ্ট হয়ে গেল রাসূলের বিত্র নামাযের বিবরণে হযরত আয়শা ও ইবনে আব্বাস উভয়ে একমত। হযরত আয়শা রা. এর বর্ণনায় যে অস্পষ্টতা রয়েছে তা ইবনে আব্বাস রা. এর বর্ণনায় স্পষ্ট হয়ে গেল। অর্থাৎ নয় রাকাত নামাযের শেষ তিন রাকাত হল বিতর এবং আয়শা থেকে বর্ণিত সাদ ইবনে হিশামের হাদীসে অষ্টম রাকাতে বসা ও সালাম না ফিরিয়ে উঠে পরা, এটি মূলত তিন রাকাত বিতরের দ্বিতীয় রাকাত।

তিনটি সূরা দিয়ে তিন রাকাত বিতর

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিত্র পড়তেন এবং তিন রাকাতে তিনটি সূরা তিলাওয়াত করতেন। যা সহীহ সনদে দশো সাহাবী থেকে হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। নমুনা স্বরূপ কয়েকটি বর্ণনা তুলে ধরছি

১. হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. বলেন:

أن رسول الله صلى الله عليه و سلم كان يوتر بثلاث ركعات، كان يقرأ في الأولى بــ سبح اسم ربك الأعلى، وفي الثانية بـ قل يا أيها الكافرون، وفي الثالثة بـ قل هو الله أحد، ويقنت قبل الركوع، فإذا فرغ قال عند فراغه سبحان الملك القدوس ثلاث مرات يطيل في آخرهن. وفي رواية (رقم ১৭০১) : ولا يسلم إلا فى آخرهن ويقول يعنى بعد التسليم : سبحان الملك القدوس ثلاثا،

অর্থ: ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাতে বিত্র পড়তেন। প্রথম রাকাতে সূরা আ‘লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন, তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ পড়তেন। এবং রুকুর পূর্বে দুআ কুনূত পড়তেন। …’। একই হাদীসের অপর বর্ণনায়: ‘আর কেবল শেষ রাকাতেই সালাম ফিরাতেন’।

[সুনানে নাসায়ী ১/১৯১ হা.১৬৯৯ মুশকিলুল আছার ১১/৩৬৮ হাদীসটি সহীহ : আল্লামা আইনী, ইবনুল কাত্তান ও শায়খ শুআইব আরনাউত দ্র. আলওয়াহামু-ওয়াল ঈহাম ৩/৩৮৩। স্বয়ং আলবানী সাহেবও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন: র্ইওয়াউল গালীল ২/১৬৭]

২. সায়ীদ ইবনে জুবাইর রা. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন:

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يوتر بثلاثٍ، يقرأ في الأولى سبح اسم ربك الأعلى، وفي الثانية قل يا أيها الكافرون، وفي الثالثة قل هو الله أحد.

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিত্র পড়তেন। প্রথম রাকাতে সূরা আ‘লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ পড়তেন। [সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯ হা.১৪২৭ সুনানে তিরমিযী হা. ৪৬২ সুনানে দারিমী হা.১৫৮৯ ইবনে আবীশাইবা ৪/৫১২ হা.৬৯৫১ মুসনাদে আহমদ হা.২৭৭৬ শুআইব আরনাউত বলেন: হাদীসটি সহীহ, ইমাম নববী বলেছেন, এ হাদীস সহীহ]

৩. হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আব্যা রা.বর্ণনা করেন:

أنه صلى مع النبي صلى الله عليه و سلم الوترَ، فقرأ في الأولى بـ سبح اسم ربك الأعلى، وفي الثانية قل يا أيها الكافرون، وفي الثالثة قل هو الله أحد، فلما فرغ قال سبحان الملك القدوس ثلاثا يمدُّ صوته بالثالثة.

‘তিনি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বিত্র পড়েছেন। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম রাকাতে সূরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ পড়েছেন। …।

[তহাবী ১/২০৫ হফেজ বদরুদদীন আইনী রহ. বলেছেন: এর সকল বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য, নুখাবুল আফকার ৩/২৭১, মুসনাদে আবীহানীফা:জামেউল মাসানীদ ১/৪১৪ সুনানে নাসায়ী হা.১৭৩৩ মুসনাদে আহমদ হা. ১৫৩৫৪ ইবনে আবী শাইবা ৪/৫১০ হা. ৬৯৪৪ কিতাবুলআছার ১/৩২৬ শুআইব আরনাউত ও শায়খ মুহাম্মদ আওয়ামা এর সনদকে সহীহ বলেছেন। ইবনে হাজার আসকালানী র. আত-তালখীছুল হাবীরে বলেন:إسناده حسن ‘এই সনদ হাসান’]

উপরিউক্ত তিনটি বর্ণনাই নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিসগণের মতে সহীহ। তাতে এ বিষয়ে কোনরূপ অস্পষ্টতা নেই যে, নবীজী তিন রাকাত বিতর পড়তেন। আর রাকাতগুলোর বিবরণে স্পষ্টই উল্লেখ আছে: প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয়। অতঃপর অধিকাংশ সাহাবা-তাবেয়ীন এভাবেই তিন রাকাতে বিতর পড়তেন। এ বিষয়ে ইমাম তিরমিযী রহ. সুনানে তিরমিযীতে সুস্পষ্টভাবে বলেন:

والذي اختاره أكثرُ أهل العلم من أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم، ومن بعدهم أن يقرأ : بـ سبح اسم ربك الأعلى، وقل يا أيها الكافرون، وقل هو الله أحد، يقرأ في كل ركعة من ذلك بسورةٍ.

“সাহাবায়ে কেরাম ও পরবর্তী জ্ঞানীদের অধিকাংশই (বিতরে) সূরা আ‘লা’ কাফিরুন ও এখলাছ পড়াকেই গ্রহণ করেছেন। (তিন রাকাতের) প্রতি রাকাতে একটি করে সূরা পড়বে।” [সুনানে তিরমিযী-বিতরে কেরাত পাঠ অধ্যায়]

অনুরূপ ১৯ জন সাহাবী থেকে তিন রাকাত বিতরে তিন সূরা পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। [কাশফুস সিতর পৃ. ৪৭ আল হিদায়া ফি তাখরীজি আহাদীসিল বিদায়া ৪/১৪৮]

সাহাবা-তাবেয়ীদের তিন রাকাত বিতর

সাহাবা-তাবেয়ীগণও তিন রাকাত বিত্র পড়তেন। নিম্নে কিছু আছার তুলে ধরা হল:

১. হযরত উমর রা. বলেন:

ما أحب أنى تركتُ الوتر بِثَلاَثٍ وأنَّ لي حُمر النَّعم. 

‘আমি তিন রাকাতে বিত্র পড়া ছাড়তে কখনোই পছন্দ করি না, যদিও এর বিপরীতে আমাকে লাল উট উপহার দেওয়া হয়’। [কিতাবুল আছার :জামেউল মাসানীদ ১/৪১৭ মুয়াত্তা মুহাম্মদ পৃ.১৪৯ কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মদীনাহ ১/১৩৫]

২. যাযান রহ. বলেন:

أَنَّ عليا كان يُوتِرُ بثلاثٍ. 

হযরত আলী রা. তিন রাকাতে বিত্র পড়তেন। [ইবনে আবী শাইবা ৪/৪৯১ হা.৬৯১৪ মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৩/৩৪ হা.৪৬৯৯]

৩. আব্দুল মালিক ইবনে উমাইর রহ. বলেন:

كان ابن مسعود يُوتِرُ بِثَلاَثٍ. 

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. তিন রাকাতে বিত্র পড়তেন। [ইবনে আবী শাইবা ৪/৪৯১ হা.৬৮৯৪ আল মুজামুল কবীর:মাজমাউয যাওয়ায়েদ ২/৫০৩]

৪. হযরত সাইব ইবনে ইয়াযীদ র. বলেন:

أن أبي بن كعب كان يوتر بثلاث.

হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. তিন রাকাতে বিত্র পড়তেন। এর সনদ সহীহ [মুসাননাফে আব্দুর রাযযাক ৩/২৬ হা.৪৬৬১]

৫. সায়ীদ ইবনে জুবাইর বলেন:

لما أمر عمر بن الخطاب أبي بن كعب أن يقوم بالناس في رمضان، كان يوتر بهم فيقرأ في الركعة الأولى : إنا أنزلناه في ليلة القدر، وفي الثانية : قل يا أيها الكافرون، وفي الثالثة : قل هو الله أحد.

হযরত উমর রা. যখন হযরত উবাই ইবনে কা‘ব রা. কে রমযানে (তারাবীহ ও বিত্র এর) ইমামতির আদেশ করলেন, তখন তিনি বিত্র নামাযের প্রথম রাকাতে সূরা কাদর, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কাফিরুন ও তৃতীয় রাকাতে সূরা ইখলাছ। [সালাতুল বিত্র লিল মারওয়াযী:পৃ.২৭৯]

৬. হুমাইদ রহ. বলেন:

عن أنس رضي الله عنه قال: الوتر ثلاث ركعات، وكان يوتر بثلاث ركعات. 

হযরত আনাস রা. বলেছেন: বিত্র নামায তিন রাকাত। তিনি নিজেও তিন রাকাতে বিত্র পড়তেন। [ইবনে আবী শাইবা ৪/৪৯১ হা.৬৮৯৩ তহাবী ১/২০২ সালাতুল বিত্র লিল মারওয়াযী: পৃ.২৬৪ এর সনদ সহীহ: আদদিরায়াহ, নুখাবুল আফকার ৩/২৮১]

৭. আবু গালিব রহ. বলেন:

كان أَبو أُمامة يُوتِرُ بِثَلاَثِ رَكَعَاتٍ. 

হযরত আবু উমামা রা.তিন রাকাতে বিত্র পড়তেন। [ইবনে আবী শাইবা ৪/ ৪৯১হা.৬৮৯৬ তাহাবী শরীফ ১/২০২]

৮. আবু মানসূর বলেন:

قال : سألتُ عبدَ الله بن عباس رضي الله عنهما عن الوتر، فقال: ثلاثٌ.

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. কে জিজ্ঞেস করেছি: বিত্র কয় রাকাত? তিনি বললেন: তিন রাকাত। [তহাবী ১/২০৩]

অনুরূপ তাবেয়ীদের মধ্যে সায়ীদ ইবনে যুবাইর, আলকামা, ইবরাহীম নাখায়ী, জাবের ইবনে যায়েদ, হাসান, ইবনে সীরীন, কাতাদাহ, বাকর ইবনে আব্দুল্লাহ আলমুযানী, মুয়াবিয়া ইবনে কুররা, ইয়াস ইবনে মুয়াবিয়া প্রমুখ থেকেও তিন রাকাত বিত্র পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। এমনকি হযরত সুফ্ইয়ান ছাউরী র. তাঁর অনুসরণীয় পূর্বসূরি মহা মনীষীদের তিন রাকাত বিত্র পড়ার কথা উল্লেখ করে বলেন: ‘তাঁরা তিন রাকাত বিত্রে তিনটি সুনির্দিষ্ট সূরা পড়াকে মুস্তাহাব মনে করতেন।

মুফতি নাজমুল হাসান সাকিব
মুফতি নাজমুল হাসান সাকিব
নাম: নাজমুল হাসান সাকিব পিতা: মুজিবুর রহমান স্থায়ী ঠিকানা: বাহেরবালী, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ। বর্তমান ঠিকানা: বসুন্ধরা, বারিধারা, ঢাকা ১২২৯ পড়াশোনাঃ- বাহেরবালী দারুল উলূম নূমানিয়া মাদরাসা, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ। (নূরানী টু হেদায়াতুন্নাহ্) জামিয়াতুস সালাম মদিনাবাগ, মুগদা, সবুজবাগ, ঢাকা। (কাফিয়া-শরহে বেকায়া) মারকাজুল উলূম আল-ইসলামিয়া মান্ডা, মুগদা, সবুজবাগ, ঢাকা। (আরবী স্নাতক ৪র্থ বর্ষ) মদিনাতুল উলূম বসুন্ধরা মাদরাসা ( হেদায়া) মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা। (এম এ- মাস্টার্স) আল মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশ। (ইসলামি আইন ও গবেষণা বিভাগ) পেশা: লেখালেখি ও পড়াশোনা। (ভবিষ্যত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এখনো অধ্যায়ণরত)।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments