Friday, November 22, 2024
No menu items!
Homeঈমান ও আমলছানা কোনটি পড়া উত্তম?

ছানা কোনটি পড়া উত্তম?

হাদীস শরীফে একাধিক ছানার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে ইমাম আবূ হানীফা র. ও ইমাম আহমাদ র. দুজনেরই মত হলো, নামাযে তাকবীর (আল্লাহু আকবার ) বলার পর এভাবে ছানা পড়া উত্তম:

سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولا إله غيرك

এমতের পক্ষে প্রমাণগুলো নিম্নে প্রদত্ত হলো:

১. আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, وسبح بحمد ربك حين تقوم অর্থ: যখন তুমি দাঁড়িয়ে যাবে, তখন তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করবে। (সূরা তূর, ৪৮)

দাহহাক র. বলেছেন, উক্ত আয়াতের মর্ম হলো নামাযে এই ছানা পাঠ করা:

سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولا إله غيرك

ইবনুল জাওযী, যাদুল মাসীর ৪খ. ১৮২পৃ.।

ইমাম তিরমিযী র. লিখেছেন, والعمل على هذا عند أكثر أهل العلم من التابعين وغيرهم অর্থাৎ তাবেয়ীন ও অন্যান্য আলেমগণের অধিকাংশের আমল হলো- এই ছানা পাঠ করা।

২. হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেছেন,

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا افتتح الصلاة قال: سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولا إله غيرك، أخرجه النسائي(٨٩٩،٩٠٠) والترمذي (٢٤٢) وأبو داود (٧٧٥) وابن ماجه(٨٠٤)، كلهم من طريق جعفر بن سليمان عن علي بن علي عن أبي المتوكل عنه

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শুরু করার সময় বলতেন,

سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولا إله غيرك

নাসায়ী শরীফ, হাদীস নং ৮৯৯,৯০০; তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং ২৪২; আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৭৭৫; ইবনে মাজা শরীফ, হাদীস নং ৮০৪। হাদীসটি সহীহ।

৩. হযরত আয়েশা রা. বলেন,

كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا افتتح الصلاة قال سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولا إله غيرك أخرجه الترمذي من طريق أبي معاوية عن حارثة بن أبي الرجال عن عمرة عنها، وحارثة قد تكلم فيه من قبل حفظه قاله الترمذي (٢٤٣) وأخرجه أبو داود من طريق طلق بن غنام عن عبد السلام بن حرب الملائي عن بديل بن ميسرة عن أبي الجوزاء عنها(٧٧٦)

অর্থ: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায শুরু করতেন তখন বলতেনسبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولا إله غيرك

তিরমিযী শরীফ, হাদীস নং ২৪৩; আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৭৭৬। আবূ দাউদের সনদ বা সূত্রকে আল্লামা আহমাদ শাকের র. তিরমিযী শরীফের টীকায় সহীহ বলেছেন।

৪. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেছেন,

كان رسول الله يعلمنا إذا استفتحنا الصلاة أن نقول: سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولا إله غيرك وكان عمر بن الخطاب يفعل ذلك وكان عمر يعلمنا ويقول كان رسول الله يقوله. أخرجه الطبراني في الأوسط (١٠٢٦) فيه علي بن عباس وهو ضعيف، قال ابن عدي مع ضعفه يكتب حديثه

অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে শিখিয়েছেন, আমরা যখন নামায শুরু করি, তখন যেন বলি,

سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولا إله غيرك

উমর ইবনুল খাত্তাব রা.ও এমনটি করতেন। তিনি আমাদেরকে শেখাতেন এবং বলতেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এভাবে বলতেন। তাবারানী, আল-আওসাত, হাদীস নং ১০২৬।

এর সনদে আলী ইবনে আব্বাস আছে। তিনি দুর্বল। ইবনে আদী বলেছেন, দুর্বলতা সত্ত্বেও তার হাদীস লেখা বা সংগ্রহ করা যায়।

৫. হযরত আনাস রা. বর্ণনা করেন,

عن أنس عن النبي صلى الله عليه و سلم أنه كان إذا كبر رفع يديه حتى يحاذي أذنيه يقول سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولا إله غيرك. أخرجه الطبراني في الأوسط (٣٠٣٩) والدارقطني : ١٠/٣٠٠، قال الهيثمي في مجمع الزوائد: رجاله موثقون. ٢/ ٢٢٨تعليق-١

অর্থ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনالله أكبر বলতেন তখন উভয় কান বরাবর হাত উঠাতেন। আর বলতেন,

سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولا إله غيرك

তাবারানী, আল-আওসাত, হাদীস নং ৩০৩৯। হায়ছামী বলেছেন, এর বর্ণনাকারীগণকে বিশ্বস্ত বলা হয়েছে।

তবে এতে আইয ইবনে শুরাইহ নামে একজন রাবী আছেন। আবু হাতেম রাযী তার সম্পর্কে বলেছেন, তার হাদীসে কিছু দুর্বলতা আছে। কিন্তু এর আরেকটি সনদ বা সুত্র আছে আবু ইয়ালা’র মুসনাদে (৩৭৩৫) ও দারাকুতনীতে (১/৩০০)। এর একজন বর্ণনাকারী হুসাইন ইবনে আসওয়াদ সম্পর্কে কিছু বিতর্ক রয়েছে। তবে তার বিশ্বস্ত হওয়াই অগ্রগণ্য। এর অপর একটি সনদ বা সুত্র আছে তাবারানীর আদদুআ গ্রন্থে। ঐ সনদ সহীহ বা কমপক্ষে হাসান।

৬. আবদা র. থেকে বর্ণিত:

أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ كَانَ يَجْهَرُ بِهَؤُلاَءِ الْكَلِمَاتِ يَقُولُ سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ. أخرجه مسلم(٣٩٩) باب حُجَّةِ مَنْ قَالَ لاَ يَجْهَرُ بِالْبَسْمَلَةِ. ورواه الدارقطني وفيه: يسمعنا ذلك ويعلمنا، ١/٣٠١

অর্থ: হযরত উমর রা. এই কালিমাগুলো উচ্চস্বরে পড়তেন

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ و تَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ

মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৩৯৯

দারাকুতনীও এটি উদ্ধৃত করেছেন, সেখানে একথাও আছে, তিনি আমাদেরকে শোনাতেন এবং শেখাতেন। (১ খ, ৩০১ পৃ.)

قال الشافعي رحمها الله في رسالة أصول الفقه حول تشهد عمر رض: فكان الذي نذهب إليه أن عمر لا يعلّم الناس على المنبر ببن ظهراني أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم إلا على ما علمهم النبي صلى الله عليه وسلم (رقم ৭৪০)

অর্থাৎ ইমাম শাফেয়ী তার উসূলুল ফিকহ গ্রন্থে উমর রা. এর তাশাহহুদ সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমরা মনে করি হযরত উমর রা. সাহাবীগণের সামনে মিম্বরে বসে মানুষকে কেবল তাই শিখিয়েছেন যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে শিখিয়ে গিয়েছিলেন। (নং ৭৪০) ইমাম শাফেয়ীর একথাটি হুবহু এই ছানার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হয়।

ইমাম মাজদুদ্দীন ইবনে তায়মিয়া র. তাঁর মুনতাকাল আখবার গ্রন্থে লিখেছেন,

وجهر به أحيانا بمحضر من الصحابة ليتعلمه الناس مع أن السنة إخفاؤه وهذا يدل على أنه الأفضل وأنه الذي كان النبي صلى الله عليه وسلم يداوم غالبا

অর্থাৎ হযরত উমর রা. সাহাবায়ে কেরামের উপস্থিতিতে কখনও কখনও মানুষকে শেখাবার জন্য উচ্চস্বরে এই ছানা পাঠ করতেন। অথচ সুন্নত হলো ছানা অনুচ্চস্বরে পড়া। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, নামাযে এই ছানা পড়াই উত্তম। এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় এই ছানা পাঠ করতেন। (২খ, ২১২পৃ)

হযরত উমর রা. থেকে বিশুদ্ধ সুত্রে এই ছানা পড়া বর্ণিত হওয়ার কারণে এটি ‘ইসতিফতাহে উমর’ বা উমর রা. এর ছানা বলে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এজন্য ইমাম আহমদ রহ. বলেছেন,نحن نذهب إلى استفتاح عمر অর্থাৎ আমরা উমর রা. এর ইসতিফতাহ বা ছানা পাঠকেই অবলম্বন করি। (দ্র. মাসাইলে আহমদ লি আবু দাউদ; মাসাইলে আহমদ লি আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ, নং ২৭০)

৭. ইবনে জুরায়জ র. বলেছেন,

حدثني من أصدق عن أبي بكر ، وعن عمر ،وعن عثمان ، وعن ابن مسعود : أنهم كانوا إذا استفتحوا قالوا: سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولا إله غيرك

অর্থ: আবু বকর রা. উমর রা. উছমান রা. ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. সম্পর্কে এমন এক ব্যক্তি আমার নিকট বর্ণনা করেছেন, যাকে আমি সত্যবাদী মনে করি।তাঁরা যখন নামায শুরু করতেন, তখন পড়তেন:

سبحانك اللهم وبحمدك وتبارك اسمك وتعالى جدك ولا إله غيرك

মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদীস নং ২৫৫৮, তাবারানী, আল-কাবীর, হাদীস নং ৯১৯৮।

শাওকানী র. নায়লুল আওতার গ্রন্থে লিখেছেন, ইমাম সাঈদ ইবনে মানসূর র. তাঁর সুনান গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, আবু বকর সিদ্দীক রা.ও এই ছানা পড়তেন। দারাকুতনী র. হযরত উছমান রা. সম্পর্কে এবং ইবনুল মুনযির র. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. সম্পর্কে অনুরূপ উল্লেখ করেছেন। (দ্র, ২খ, ২১১পৃ)

মুফতি নাজমুল হাসান সাকিব
মুফতি নাজমুল হাসান সাকিব
নাম: নাজমুল হাসান সাকিব পিতা: মুজিবুর রহমান স্থায়ী ঠিকানা: বাহেরবালী, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ। বর্তমান ঠিকানা: বসুন্ধরা, বারিধারা, ঢাকা ১২২৯ পড়াশোনাঃ- বাহেরবালী দারুল উলূম নূমানিয়া মাদরাসা, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ। (নূরানী টু হেদায়াতুন্নাহ্) জামিয়াতুস সালাম মদিনাবাগ, মুগদা, সবুজবাগ, ঢাকা। (কাফিয়া-শরহে বেকায়া) মারকাজুল উলূম আল-ইসলামিয়া মান্ডা, মুগদা, সবুজবাগ, ঢাকা। (আরবী স্নাতক ৪র্থ বর্ষ) মদিনাতুল উলূম বসুন্ধরা মাদরাসা ( হেদায়া) মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা। (এম এ- মাস্টার্স) আল মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশ। (ইসলামি আইন ও গবেষণা বিভাগ) পেশা: লেখালেখি ও পড়াশোনা। (ভবিষ্যত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এখনো অধ্যায়ণরত)।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments