Saturday, November 16, 2024
No menu items!
Homeহজ্জ ও ওমরাহকাদের উপর হজ্জ ফরজ..? এবং হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত কি..?

কাদের উপর হজ্জ ফরজ..? এবং হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত কি..?

  • কাদের উপর হজ্জ ফরজ..?
  • এবং হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত কি ?

পবিত্র হজ্জ হচ্ছে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের (রুকন) মধ্যে একটি অন্যতম স্তম্ভ।
আল্লাহ তায়া’লা পবিত্র কুরআন কারিমে সুস্পষ্ট ভাষায় সামর্থ বান মুসলিম প্রাপ্ত বয়স্ক নর-নারীর উপর জীবনে একবার এ ইবাদতটি পালন করা ফরজ করিয়া দিয়েছেন।
আল্লাহ তায়া’লা পবিত্র কুরআন কারিমে ইরশাদ করেন,
فِیۡہِ اٰیٰتٌۢ بَیِّنٰتٌ مَّقَامُ اِبۡرٰہِیۡمَ ۬ۚ وَ مَنۡ دَخَلَہٗ کَانَ اٰمِنًا ؕ وَ لِلّٰہِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡہِ سَبِیۡلًا ؕ وَ مَنۡ کَفَرَ فَاِنَّ اللّٰہَ غَنِیٌّ عَنِ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۹۷
অর্থঃ-
এর মধ্যে প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহ বিদ্যমান রয়েছে, মাকামে ইবরাহীম উক্ত নিদর্শনসমূহের অন্যতম। আর যে এর মধ্যে প্রবেশ করে সে নিরাপত্তা প্রাপ্ত হয় এবং আল্লাহর উদ্দেশে এই গৃহের হাজ্জ করা সেই সব মানুষের কর্তব্য যারা সফর করার আর্থিক সামর্থ্য রাখে এবং যদি কেহ অস্বীকার করে তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ সমগ্র বিশ্ববাসী হতে প্রত্যাশামুক্ত।
(সুরা আলি ইমরান)

আর্থিক সামর্থ্যঃ- অর্থাৎ পরিবার-পরিজন, চাকর-বাকরদের ভরনপোষণ নিশ্চিত করে কোন ব্যক্তির নিকট হজ্জে যাওয়া-আসা ও পথের খরচ থাকলে তাহলে তার উপর হজ্জ ফরজ।

বাসস্থানঃ- প্রয়োজনীয় গৃহ সামগ্রী, পোষাক-পরিচ্ছদ, ব্যবহারিত বাহন,পরিবার-পরিজন, চাকর-বাকরের যাবতীয় ব্যয় চালনার জন্য নূন্যতম কৃষি জমি অথবা নূন্যতম ব্যবসা, অথবা চাকরীর পর অতিরিক্ত যে সম্পত্তি থাকে তা থেকে হজ্জের ব্যয় নির্বাহ সম্ভব হলেই হজ্জ ফরজ হবে।

হজ্জের মাধ্যমে মুসলমানদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনের সৌভাগ্যের দোওয়ার খুলে যায়, ইহরাম বাধা গায়ে হাজীর লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ( হে রাব্বে কারিম হাজির আমি তোমার দরবারে হাজির) এ ধমনি মুলত আল্লাহর নির্দেশিত ইবরাহীম (আঃ) এর আহমানের সাড়া দিয়ে এগিয়ে যায়।

আল্লাহ তায়া’লা পবিত্র কুরআন কারিমে ইরশাদ করেন,
وَ اَذِّنۡ فِی النَّاسِ بِالۡحَجِّ یَاۡتُوۡکَ رِجَالًا وَّ عَلٰی کُلِّ ضَامِرٍ یَّاۡتِیۡنَ مِنۡ کُلِّ فَجٍّ عَمِیۡقٍ ﴿ۙ۲۷
অর্থঃ-
এবং মানুষের কাছে হাজ্জের ঘোষণা করে দাও, তারা তোমার কাছে আসবে পদব্রজে ও সর্ব প্রকার ক্ষীণকায় উষ্ট্রসমূহের পিঠে, তারা আসবে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে। (সুরা হজ্জ)

لِّیَشۡہَدُوۡا مَنَافِعَ لَہُمۡ وَ یَذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰہِ فِیۡۤ اَیَّامٍ مَّعۡلُوۡمٰتٍ عَلٰی مَا رَزَقَہُمۡ مِّنۡۢ بَہِیۡمَۃِ الۡاَنۡعَامِ ۚ فَکُلُوۡا مِنۡہَا وَ اَطۡعِمُوا الۡبَآئِسَ الۡفَقِیۡرَ ﴿۫۲۸
অর্থঃ-
যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলিতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুস্পদ জন্তু হতে যা রিয্ক হিসাবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনগুলিতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে পারে; অতঃপর তোমরা এটা হতে আহার কর এবং দুস্থ, অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।(সুরা হজ্জ)

এ আয়াতে হজ্জের ব্যপক উপকারিতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
পবিত্র ক্বাবায় হজ্জ আদায় করা ইসলামের অন্যতম একটি স্তম্ভ(রুকন)বা ভিত্তি।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّداً رَسُولُ اللهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَحَجِّ البَيْتِ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ». متفقٌ عَلَيْهِ
বাংলা অনুবাদঃ-
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি জিনিসের উপর স্থাপিত আছে।
(১) এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা’বূদ (উপাস্য) নেই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর প্রেরিত মহাপুরুষ,
(২) নামায কায়েম করা,
(৩) যাকাত প্রদান করা,
(৪) বায়তুল্লাহর হজ করা এবং
(৫) মাহে রমযানের সিয়াম (রোযা) পালন করা। [বুখারি ৮, মুসলিম ১৬, তিরমিযি ২৬০৯, ইবন মাজাহ ৫০০১, আহমদ ৪৭৮৩, ৫৬৩৯, ৫৬৫৯, ৫৬৭৯, ৬২৬৫]

হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত পাঁচটি


(১) মুসলমান হওয়াঃ- মুসলমানের বিপরীত হচ্ছে কুফফার( অর্থাৎ কাফেরগন) সুতরাং কাফেরদের উপর হজ্জ ফরজ নয়।
কাফের যদি হজ্জ আদায় ও করে তাহলে তার হজ্জ কবুল হবেনা।
(২) সাবালক হওয়াঃ- যে ব্যক্তি সাবালক হয়নি তার উপর হজ্জ ফরজ নয়। সুতরাং যদি নাবালক ব্যক্তি হজ্জ আদায় করে তাহলে তার হজ্জ নফল হজ্জ হিসাবে গন্য হবে।
যখন সে সাবালক হবে তখন ফরজ হজ্জ আদায় করবে, কারণ সে সাবালক হওয়ার আগে যে হজ্জ করেছে এরদ্বারা ফরজ হজ্জ আদায় হয়নি।
(৩) বিবেক-বুদ্ধিমান হওয়াঃ- এর বিপরীত হচ্ছে পাগল উন্মাদ, সুতরাং পাগলের উপর হজ্জ ফরজ নয়। এবং পাগলকে হজ্জ পালন করতে হবেনা।
(৪) স্বাধীন হওয়াঃ- ক্রীতদাস-দাসীদের উপর হজ্জ ফরজ নয়। সুতরাং যদি সে হজ্জ আদায় করে তাহলে তার হজ্জ নফল হিসাবে গন্য হবে। যদি সে স্বাধীন হয়ে যায় তাহলে পূনরায় ফরজ হজ্জ আদায় করবে।
কারণ দাস-দাসী থাকাকালীন সময়ে সে যে হজ্জ করিয়াছে সেটার দ্বারা ফরজ হজ্জ আদায় হবেনা।
তবে কিছু কিছু আ’লেমগন বলেছেন, যে যদি ক্রীতদাস-দাসী তার মালিকের অনুমতি নিয়ে হজ্জ আদায় করে তাহলে সে হজ্জ দ্বারা তার ফরজ হজ্জ আদায় হয়ে যাবে।
এটাই গ্রহণ যোগ্য মত।
(৫) শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য থাকাঃ- মহিলাদের জন্য অতিরিক্ত সামর্থ্য হল, হজ্জের সাথী হিসাবে কোন মোহরেম ব্যক্তি থাকা। যদি মহিলাদের কোন মোহরেম ব্যক্তি না পাওয়া যায় তাহলে তার উপর হজ্জ ফরজ নয়। সে মোহরেমের জন্য অপেক্ষা করবে মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত।

আল্লাহ তায়া’লা আমাদেরকে এই আলোচনার উপর আমল করার তাওফিক দান করুক। (আমিন)

লেখকঃ-
এইচ, এম, ওমর ফারুক

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments