Tuesday, April 16, 2024
No menu items!
Homeফাজায়েল ও মাসায়েলকুরবানীর অর্থ ও তার প্রচলন: কুরবানীর প্রকারভেদ।

কুরবানীর অর্থ ও তার প্রচলন: কুরবানীর প্রকারভেদ।

  • কুরবানীর অর্থ ও তার প্রচলন:

আরবী ‘কুরবান’ শব্দটি ফারসী বা ঊর্দূতে ‘কুরবানী’ রূপে পরিচিত হয়েছে, যার অর্থ ‘নৈকট্য’। আর ‘কুরবান’ শব্দটি ‘কুরবাতুন’ শব্দ থেকে উৎপন্ন। আরবী ‘কুরবাতুন’ এবং ‘কুরবান’ উভয় শব্দের শাব্দিক অর্থ নিকটবর্তী হওয়া, কারো নৈকট্য লাভ করা প্রভৃতি। ইসলামী পরিভাষায় ‘কুরবানী’ ঐ মাধ্যমকে বলা হয়, যার দ্বারা আল্লাহ রাববুল আলামীনের নৈকট্য অর্জন ও তার ইবাদতের জন্য পশু যবেহ করা হয়। (মাজদুদ্দীন ফীরোযাবাদী, আল-ক্বামূসুল মুহীত্ব, পৃ. ১৫৮; মুফরাদাত লি ইমাম রাগিব ৩/২৮৭; তাফসীরে কাশশাফ, ১/৩৩৩; রায়যাবী, ১/২২২।


আরবীতে ‘কুরবানী’ শব্দটি ব্যবহৃত হয় না। তাই কুরআনে ‘কুরবানী’র বদলে ‘কুরবান’ শব্দটি মোট তিন জায়গায় ব্যবহৃত হয়েছে যেমন১. নং সূরা আল ‘ইমরানের ১৮৩ নং আয়াত, ২. নং সূরা মায়িদা’র ২৭ নং আয়াত এবং ৩. নং সূরা আহক্বাফের ২৮ নং আয়াত। অনুরূপভাবে হাদীসেও ‘কুরবানী’ শন্দটি ব্যবহৃত না হয়ে তার পনিবর্তে ‘উযহিয়্যাহ’ এবং ‘যাহিয়্যাহ’ প্রভৃতি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। ‘উযহিয়্যাহ’ কুরবানীর দিনসমূহে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উদ্দেশ্যে যবেহ যোগ্য উট, গরু, ছাগল বা ভেড়াকে বলা হয়। এ শব্দটি ‘যুহা’ শব্দ থেকে গৃহীত যার অর্থ ‘পূর্বাহ্ণ’। যেহেতু কুরবানী যরেহ করার উত্তম সময় হলো ১০যিলহজ্জের (ঈদের দিনের) পূর্বাহ্ণকাল, তাই ঐ সামঞ্জস্যের জন্য তাকে ‘উযহিয়্যাহ’ বলা হয়েছে। এটিকে আবার ‘যাহিয়্যাহ’ বা ‘আযহা’ও বলা হয়। আর ‘আযহাহ’ এর বহুবচন হলো ‘আযহা’, যার সাথে সম্পর্ক জুড়ে ঈদের নাম হয়েছে ‘ঈদুল আযহা’। বলা বাহুল্য, ঈদুযযোহা কথাটি ঠিক নয়।


মূলত ফারসী, হিন্দী, উর্দূ ও বাংলা ভাষায় আরবি ‘কুরবান’ শব্দটি ‘কুরবানী’ অর্থে ব্যহৃত হয়। বাংলার মুসলিমরাও ‘কুরবানী’ শব্দটির সাথে বেশ পরিচিত।
বর্তমানে আমাদের নিকটে কুরবানীর পশুকেই বিশেষভাবে ‘কুরবান’ বলা হয়।
(তাফসীরে আল-মানার, ৬/৩৪২) পরিশেষে ঐ যবেহকৃত পশুকেই ‘কুরবান’ বলা হয়, যা লোকেরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য পেশ করে থাকে। (তাফসীরে মাযহারী, ২/১৮৮)
ভারতীয় উপমাহাদেশ তথা ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে কুরবানী বলতে বোঝায় যিলহজ্জ মাসের ১০ (দশ) থেকে ১২ (বারো) বা ১৩ তের) তারিখ আসর পর্যন্ত আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে উট, গরু, বকরী ও ভেড়া প্রভৃতির মধ্য হতে কোনো এক পশুকে যবেহ করা।

  • কুরবানীর প্রকারভেদ:

আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু যবেহ করা তিন প্রকার হতে পারে:
১. হাদী ২. কুরবানী ৩. আক্বীকাহ
তাই ঈদুল আযহার দিনগুলোতে নির্দিষ্ট প্রকারের গৃহপালিত পশু আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য যবেহ করাকে কুরবানী বলা হয়।

ইসলামী শরীয়তে এটি ইবাদত হিসেবে সিদ্ধ, যা কুরআর, হাদীস ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্যমত দ্বারা প্রমানিত। কুরআন মজীদে যেমন এসেছে

﴿ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَٱنۡحَرۡ ٢ ﴾ [الكوثر: ٢]

‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর ও পশু কুরবানী কর।’ [সূরা কাওসার (১০৮):২]।

﴿ قُلۡ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحۡيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٦٢ لَا شَرِيكَ لَهُۥۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرۡتُ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُسۡلِمِينَ ١٦٣ ﴾ [الانعام: ١٦٢، ١٦٣]

‘বল, আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তার কোন শরিক নেই এবং আমি এর জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম।’ [সূরা আন‘আম: ১৬২-১৬৩]।
আল্লাহর রাসূল (সা.) সে আদেশ যথাযথভাবে পালন করেছেন। সুতরাং তিনি (সা.) ছিলেন অধিক সালাত ক্বায়েমকরী ও অধিক কুরবানীদাতা।

হাদীসে এসেছে-

عن البراء بن عازب رضى الله عنه أن النبى صلى الله عليه وسلم قال: « من ذبح بعد الصلاة فقد تم نسكه وأصاب سنة المسلمين »

বারা ইবনে আযিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ঈদের সালাতের পর কুরবানীর পশু যবেহ করল তার কুরবানী পরিপূর্ণ হলো ও সে মুসলিমদের আদর্শ সঠিকভাবে পালন করল।’ (বুখারী, হাদীস নং ৫৫৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৬১)।

عن أنس بن مالك رضي الله عنه قال: «ضحى النبي صلى الله عليه وسلم بكبشين أملحين ذبحهما بيده وسمى وكبر ووضع رجله على صفاحهما »

আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল (সা.) নিজ হতে দুটি সাদা-কালো বর্ণের দুম্বা কুরবানী করেছেন। তিনি বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবর বলেছেন। তিনি পা দিয়ে দুটো কাঁধের পাশ চেপে রাখেন। (বুখারী-৫৫৬৫, সহীহ মুসলিম-১৯৬৬) তবে বুখারীতে ‘সাদা-কালো’ শব্দের পূর্বে ‘শিংওয়ালা’ কথাটি উল্লেখ আছে।

রাসূল (সা.) কোনো বছর কুরবানী ত্যাগ করতেন না। (যাদুল মা‘আদ, ২/৩১৭) ইবনু উমর (রা.) বলেন , ‘নবী (সা.) দশ বছর মদীনায় অবস্থানকলে কুরবানী করেছেন। (মুসনাদ আহমাদ, তিরমিযী) যেমন তিনি তার কর্ম দ্বারা কুরবান করতে উম্মতকে অনুপ্রাণীত করেছেন, তেমনি তিনি তার বাক দ্বারাও উদ্বুদ্ধ ও তাকীদ করেছেন।

সংগ্রহে___________________
মাওলানা মাসউদুর রহমান
শিক্ষক: জামিয়া রাহমানিয়া ক্বওমী মাদ্রাসা জোকারপাড়া, জামালপুর সদর, জামালপুর
ইমেইল: [email protected]

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments