নবী মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ আল্লাহর প্রেরিত শেষ নবী, তার পরে আর কোনো নবীর দুনিয়াতে আগমন হবে না সেই হিসেবে তার প্রতি গভীর ভালবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নবীর দেখানো পথ ও পদ্ধতি অনুসরণ করলে মুক্তি মিলবে পরকালে আর সেই পথে চললে আল্লাহর রহমত প্রাপ্তির অন্যতম উপায় হবে সেটা করা চাই নবীর দেয়া শিক্ষা অনুসারে যা হাদিস ও সীরাতের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে।
হাদিসের কিতাবগুলো মানবজাতীর জন্য বড় একটা সম্ভার যাতে মানবজাতীর জীবন পরিচালনার সমস্ত কিছু লিপিবদ্ধ যেমন নবীজি এক হাদিসে বলেন, আমি তোমাদের পিতা সমতুল্য তোমাদের যে কেহ ইস্তেঞ্জায় আসে সে যেন তিনটি পাথর তালাশ করে।
নবীজি তার প্রিয় সাহাবীদের পেশাব পায়খানা থেকে শুরু করে ছোট বড় সকল বিষয়ের দিক নির্দেশনা ও শিক্ষা দিয়ে গেছেন যা জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রয়োজন হতে পারে। নবীজি ও তার সাহাবীদের কাজ গুলো সুস্পষ্ট হাদিস দ্বারা প্রমাণিত আর এ হাদিস গুলো আমাদের জীবন চলার পাথেয়।
আম্মাজান হযরত আয়েশা রাঃ বলেন রাসুল ( সাঃ) এরশাদ করেন
ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻗﺎﻟﺖ : ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ( ﻣﻦ ﺃﺣﺪﺙ ﻓﻲ ﺃﻣﺮﻧﺎ ﻫﺬﺍ ﻣﺎ ﻟﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﻓﻬﻮ
ﺭﺩ ) .
আমাদের দ্বীনের মাঝে যে ব্যক্তি নতুন কিছু আবিস্কার করল যা তাতে নেই তাহলে তা পরিত্যক্ত, সহীহ বুখারী হাদিস নং২৫৫০, মুসলিম – ৪৫৮৯,
বিদয়াত চিনার উপায় কি?
বিদয়াতের পরিচয়- যে সব কাজ সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ী- তাবে তাবেয়ীগণ কেহ করেনি বরং দ্বীনের নামে পরবর্তিতে আবিষ্কার হয়েছে ইবাদাত মনে করে তা করাই হচ্ছে বিদয়াত।(মাসায়েলে শিরক ও বিদয়াত)
হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত হাদিস দ্বারা স্পষ্ট হয়, নবীজি বিদয়াত ও নব আবিষ্কআরকে ত্যাগ করার আদেশ করেছেন।
উল্লেখিত হাদিসে তিনটি শর্ত পাওয়া গেলে নব আবিষ্কআরকে ত্যাগ করা জরুরী
একঃ- যেটি নতুন আবিষ্কার তা সম্পুর্ণ নতুন হতে হবে যার কোন প্রমাণ নবী ও সাহাবী যুগে ছিলো না, সেটা পরিত্যাগ করার আদেশ করেছেন উল্লেখিত হাদিসে ।
দুইঃ- ধর্মীয় বিষয় হওয়া। সুতরাং ধর্মীয় বিষয় ছাড়া বিদয়াত হবে না যেমন বাতি, ফ্যান এসব বিদয়াত নয়,কারন তা ধর্মীয় না।
তিনঃ ধর্মের মাঝে নব আবিষ্কার হওয়া,
ধর্মের জন্য হলে ক্ষতি নেই। কারন ধর্মে মাঝে নতুন আবিস্কার মানে হল ইহা নেকীর কাজ, যেমন সুন্নাত নফল ওয়াজিব । আর ধর্মের জন্য হলে সেটা মূলত সওয়াবের কাজ নয়, বরং সওয়াবের কাজের সহায়ক। যেমন মসজিদে বা মাদরাসায় শিক্ষার একাডেমিক পদ্ধতি চালু করা যা নববী যুগে ছিলনা। পরবর্তীতে আবিস্কার করা হয়েছে প্রয়োজন হিসাবে।
একাডেমিক পদ্ধতিটি দ্বীনের মাঝে নতুন আবিস্কার নয়, বরং দ্বীনী কাজের জন্য সহায়ক হিসেবে আবিস্কার করা হয়েছে। অর্থাৎ দ্বীন শিখার সহায়ক। আর দ্বীন শিখাটা সওয়াবের কাজ। কিন্তু পদ্দতিটি মূলত সওয়াবের কাজ নয় বরং সহায়ক। মিলাদ কিয়াম বিদআত। কারণ এটি নতুন আবিস্কৃত। নববী যুগ বা সাহাবা যুগে ছিল না। সেই সাথে এটিকে দ্বীন মনে করা হয়, সওয়াবের কাজ মনে করা হয় তাই এটি বিদআত।
নবীজির জন্ম ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করা নেকি ও সওয়াবের কাজ, তবে কিছু লোক এটাকে ঈদে মিলাদুন্নবী নামে যে অনুষ্টান করে থাকে তা কোর আন-হাদিস সাহাবায়ে কেরাম তাবেয়ি তাবেতাবেয়ী কার থেকে প্রমাণিত না।
সুতরাং যা নবীজির সাহাবায়ে কেরাম তাবেয়ি তাবেতাবেয়ীগণ থেকে প্রমাণিত নয় তা পরিত্যক্ত।
নবীজির যুগে দুই ঈদ ছিলো যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত ঈদের নামে তৃতীয় কোনো ঈদ ইসলামে নেই।
ইসলামে দুই ঈদ বহু হাদীস দ্বারা প্রমানিত৷ যা নবীজি ও সাহাবা কেরামের যুগ থেকে পালিত হয়ে আসছে৷ এছাড়া তৃতীয় কোন ঈদ ইসলামে প্রমানিত নয়৷
৬০৪ হিজরিতে বাদশা আবু সাঈদ মুজাফফর উদ্দীন সে তার দরবারী আলেম আবুল খাত্তাব ও উমর ইবনে দিহইয়ার মাধ্যমে প্রচলিত ঈদে মিলাদুন্নবীর আবিষ্কার করে। পরবর্তিতে অজ্ঞ ও অশিক্ষিত লোকেরা শরীয়ত বিরোধী বহু কর্মকান্ড এতে সংযুক্ত করে যার কিছুই কোরআন হাদিসে নেই।
যারা ঈদে মিলাদুন্নবীকে জায়েয বলে প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করে তারা প্রমাণ হিসেবে নিম্নের আয়াত ও হাদিসকে দলিল রুপে পেশ করে। যথা- আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সুরা ইউনুসের ৫৮ নং আয়াতে এরশাদ করেন,
” ﻗﻝ ﺑﻔﻀﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻭ ﺑﺮﺣﻤﺘﻪ ﻓﺒﺬﺍﻟﻚ ﻓﻠﻴﻔﺮﺣﻮﺍ ﻫﻮ ﺧﻴﺮﻣﻤﺎ ﻳﺠﻤﻌﻮﻥ
তরজমা – হে নবী বলুন তাঁর অনুগ্রহ ও করুণায়; সুতরাং এ নিয়েই তাদের আনন্দিত হওয়া উচিত এটা তারা যা সঞ্চয় করছে তা হতে অধিক উত্তম।
” ﻋَﻦْ ﺍَﺑِﻰ ﻗَﺘَﺪَﺓَ ﺍﻻَﻧْﺼﺎَﺭِﻯ ﺭَﺿِﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋَﻨﻪُ ﺍَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ
ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ سئل ﻋَﻦْ ﺻَﻮْﻡِ ﻳَﻮْﻡ ﺍﻻِﺛْﻨَﻴْﻦِ ﻗَاﻞَ
ﺫَﺍﻙَ ﻳَﻮْﻡٌ ﻭُﻟِﺪْﺕُ ﻓِﻴْﻪِ ﺑُﻌِﺜْﺖُ ﺍَﻭْﺍُﻧْﺰِﻝَ ﻋَﻠَﻰَّ ﻓِﻴْﻪِ –
তরজমা- হযরত আবু কাতাদা (রা) থেকে বর্ণিত আছে রাসুল ( সাঃ) কে সোমবারের রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে, উত্তরে তিনি বলেন এই দিনে আমার জন্ম ও প্রেরিত হওয়া দিবস এবং পবিত্র কোরআন শরীফ এই দিনে আমার উপর নাযিল হয়েছে ৷
উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস থেকে তারা ঈদে মিলাদুন্নবীর অস্তিত্ব প্রমান করতে চায়।
যদিও সাহাবায়ে কেরাম তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ীগণ কেহ এসব আয়াত, হাদীস থেকে মিলাদুন্নবী বুঝেন নি৷ বহু বছর অতিবাহিত হওয়ার পর তথাকথিত নামধারী সুন্নিরা মিলাদুন্নবী প্রমান করতে চায়৷ ইহা কত বড় অজ্ঞ হলে করতে পারে একবার আন্দাজ করুন৷
উল্লেখিত আয়াতে কোরআন দিয়ে মুফাচ্ছিরীনগন অনুগ্রহ ও নেয়ামতের ব্যাখ্যা করেছেন আবার কেহ নবীজির কথাও উল্যেখ করেছেন৷ রাসুল সাঃ এর আগমন উম্মতের জন্য নেয়ামত ৷ তাই তার শুকরিয়া ও তার জীবন চরিত আলোচনা করে অনুসর করা জরুরী৷
নবীজি যেভাবে বলেছেন যেভাবে করেছেন সেভাবে হতে হবে সেভাবে করতে হবে মনগড়া বানানো পদ্ধতি অবলম্ভন করলে নবীজির ভালবাসা তো দূরের কথা নবীজির চরম শত্রুতে পরিনত হবে৷
উল্লেখিত হাদীসে সোমবারে রোজা পালনের কথা জিজ্ঞেস করা হলে নবীজি সাঃ সোমবারে জন্মগ্রহন করেছেন৷ এতে ঈদ উজ্জাপন করার কথা কোথায় রয়েছে? বরং রোজা তো সরাসরি ঈদের বিপরিত তাই দুই ঈদের দিন রোজা রাখা নিষেধ৷ তোমরা কেমন নবীর আশেক হলে নবীজি যেদিন রোজা রেখেছে সেদিন তোমরা ঈদ উজ্জাপন করো! যা সম্পুর্ন রোজার বিপরিত৷
পরিশেষে বলতে চাই বর্তমান দেশজোরে প্রচলিত ঈদে মিলাদুন্নবী যা সম্পুর্ন শরীয়ত পরিপন্থী, ইসলামে নতুন আবিস্কৃত আমল যা সম্পুর্ন হারাম৷ প্রত্যেকের জন্য পরিহার করা অপরিহার্য।