হজ্জ ও ওমরাহ্ পর্ব -২
এটি সম্পূর্ন প্রথম লেখাটির সাথে সম্পৃক্ত। সুতরাং বিষয়টা স্পষ্ট ভাবে বুঝতে হলে আপনাকে প্রথম লেখাটিও পড়তে হবে।
দ্রঃ বিষয়টা যেহেতু প্রথম লেখার সাথে সম্পৃক্ত তাই পূণরায় কোন ভূমিকা কায়েম না করে সরাসরি ই লেখা শুরু করলাম।
যাইহোক, কেউ কেউ আবার মনে করে আছেন যে, একটা জমি কিনতে হবে, জমি না কিনে জ্জ করি কিভাবে, বাড়ি করা দরকার, বাড়ি না করে হজ্জ করি কিভাবে। এভাবে জমি কিনতে, বাড়ি করতে টাকা-পয়সা শেষ হয়ে যায়, তারপর আর হজ্জ করা হয়না। একবার যদি হজ্জ ফরয হয়ে যায়, এরপর কোন কারণে তার কাছে টাকা-পয়সা নাও থাকে, অর্থ শূন্য হয়ে যায়, তাহলেও কিন্তু ঐ ফরযটা তার জিম্মায় থেকেই যায়। ঐ ফরয আদায় করতে না পারলে পাপ নিয়েই থাকে কবরে যেতে হবে।
এই অজুহাত দিয়ে রক্ষা পাওয়া যাবে না যে, আমার টাকা-পয়সা ফুরিয়ে গিয়েছিল, পরে আর হজ্জ করার মত টাকা-পয়সা হাতে আসেনি, তাই আমার কোন দোষ নেই। হজ্জ ফরয হয়ে গেলে জমি কেনা আগে নয়, হজ্জ করা আগে। হজ্জ ফরয হয়ে গেলে বাড়ি করা আগে নয়, হজ্জ করা আগে। জমি কেনা হোক বা না হোক, ঘর করা হোক বা না হোক, বাড়ি করা হোক বা না হোক, হজ্জ ফরয হয়ে গেলে হজ্জ আদায় করেই নিতে হবে। জমি না কেনা হলে, বাড়ি না করা হলে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে না, কিন্তু ফরয হজ্জ আদায় না করলে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে এবং আঁটকে যেতে হবে।
অনেক ভাই এই ভুল ধারণার শিকার যে, আমার মা-বাবা হজ্জ করেননি আমি কিভাবে হজ্জ করব। এই ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে তারা হজ্জ করছেন না। মনে করুন! মা-বাপ যদি মালদার না হন, তাদের উপর যদি যাকাত ফরয না হয়, কিংবা যাকাত ফরয হওয়া সত্ত্বেও তারা যাকাত না দেন, তাহলে কি আমার উপর যাকাত ফরয হলেও আমি যাকাত না দিয়ে থাকব? মাতা-পিতার মাল নেই একারণে তাদের উপর যাকাত ফরয হয়না। কিন্তু আমার মাল থাকলে আমার উপর যাকাত ফরয হবে। এখানে মাতা-পিতার উপরে যাকাত ফরয হল না আমার উপর যাকাত ফরয হল কি করে?
তদ্রুপ আমার মাল থাকলে আমার উপর হজ্জ ফরয হবে, মাতা-পিতার মাল না থাকলে মাতা-পিতার উপরে হজ্জ ফরয হবে না। অতএব, তারা হজ্জ করেনি বলে আমি হজ্জ করতে পারব না এটা বোকামীর যুক্তি। একজনের ইবাদতকে আরেক জনের ইবাদতের সাথে এরকম ঝুলিয়ে রাখা যাবে না যে, অমুকে না করলে আমি করব না। অমুকে নামায পড়ে না বলে কি আমিও না পড়ে থাকবো? আমার ফরয আমাকেই আদায় করতে হবে। এ সমস্ত ভুল ধারণার কারণে হজ্জ না করলে মুক্তি পাওয়া যাবে না।
অনেকের এরকম ওয়াছওয়াছা হয় যে, হজ্জের জন্য এতগুলো টাকা খরচ করে ফেলব, এটা দিয়ে আরও কিছু দিন একটা ব্যবসা- বানিজ্য করি, তারপর লাভ হবে, সেই লাভের টাকা দিয়ে হজ্জ করব। দেখা গেল টাকার মায়ার তিনি হজ্জকে পিছিয়ে দিচ্ছেন। অনেকে তো টাকা কমে যাওয়ার মায়ার কোন দিনই হজ্জ করতে যাচ্ছেন না। এসব লোকদেরকে মনে রাখতে হবে হজ্জ ওমরাহ্ করলে টাকা- পয়সা কমে না বরং বাড়ে। হজ্জ ওমরাহ্ করলে অভাব দেখা দেয় না বরং এর বরকতে অভাব দূর হয়! হাদীছে এসেছে নবী করীম সাঃ বলেন,
تابعوا بين الحج والعمرة فإنهما يتفقان الفقر والذنوب ، (ترمذي، نسائي، وابن ماجة)
অর্থাৎ, তোমরা লাগাতার হজ্জ ওমরাহ্ করতে থাক, একের পর এক হজ্জ ওমরাহ্ থাক। এই হজ্জ ওমরাহ্ তোমাদের পাপও মোচন করবে অভাবও মোচন করবে। এ হাদীছ থেকে পরিষ্কার বোঝা গেল হজ্জ ওমরাহ্ করলে অর্থ কমবে না বরং বাড়বে, অভাব আসবে না বরং অভাব মোচন হবে দুনিয়াতে এরকম বহু আল্লাহর বান্দা আছেন যারা প্রতি বছর হজ্জ করেন, ওমরাহ্ করেন। আলহামদুলিল্লাহ প্রতি বছরে তাদের অর্থের ব্যবস্থা হয়ে যায়। তাদের অভাব বাড়ে না বরং কমে তাদের টাকা- পয়সা কমে না বরং বাড়ে। হাদীসের কথা তো মিথ্যা নয়। আর আকীদা-বিশ্বাসে যদি দূর্বলতা থাকে তাহলে ভিন্ন কথা। কিন্তু রাসূল সা. এর কথায় বিশ্বাস করে আমল শুরু করলে ইনশাআল্লাহ্ আল্লাহ হজ্জ ওমরা আদায়কারী ব্যক্তির সম্পদে বরকত দান করবেন। সম্পদে বরকত হওয়ার কথা যদি নাও থাকত, তবুও হজ্জের যে ফায়দার কথা বলা হয়েছে তার জন্য লক্ষ কেন কোটি টাকা ব্যয় করতেও দ্বিধা আসার কথা নয়। হাদীসে পাকে বলা হয়েছে,
من حج لله فلم يرفث ولم يفسق رجع كيوم ولدته امه – (متفق عليه)
অর্থাৎ, যখন কেউ আল্লাহর উদ্দেশ্যে গোনাহ মুক্ত হজ্জ করে সেই হজ্জ থেকে ফিরে আসে,সে যেন মায়ের পেট থেকে সদ্য ভুমিষ্ট সন্তানের মত নিস্পাপ ও নিঃকলুষ হয়ে ফিরে আসে। এ হাদীসের দিকে নজর রাখলে যাদেরকে আল্লাহ সামর্থ দিয়েছেন তারা ফরজ হজ্জ আদায় করে থাকলেও গোনাহ মুক্ত হয়ে যাওয়ার জন্য প্রতি বছরই তাদের হজ্জে যাওয়ার কথা। প্রতি বছরই হজ্জ করে আসবে আর গোনাহ থেকে মুক্ত হয়ে আসবে। যে সম্পদ ব্যয় হবে আল্লাহ পাক বরকত দান করবেন। তাই যাদের উপর হজ্জ ফরজ হয়েছে, সব রকম ওয়াছওয়াছা, সব রকম দ্বিধা দ্বন্দ্ব সব রকম ভ্রান্ত ধারনা ছেড়ে দিয়ে তারা হজ্জের নিয়ত করে নেই।
হজ্জের নিয়ত করতে গেলে আরও অনেক রকম মনের বাঁধা আসতে পারে। মনে হতে পারে বর্তমানে আমার নানান রকম অসুবিধা,ফ্যামিলির এই অসুবিধা সেই অসুবিধা, আমার বা অমুকের ঐই রোগ সেই রোগ, বা আমার ঘর দেখার কেউ নেই,বাচ্চা-কাচ্চা দেখার কেউ নেই। এরকম নানান অসুবিধার সাইড সামনে আসতে পারে। কিন্তু আমারা চিন্তা করে দেখতে পারি আমাদের কারও যদি বিদেশে যাওয়ার বিরাট একটা সুযোগ এসে যায়,তাহলে কি এই জাতীয় ওযর বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে? তখন কি এই চিন্তা বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে যে, ছেলে মেয়েকে দেখবে কে, ঘর সামলাবে কে, পরিবারকে দেখবে কে, তখনতো সব কিছু ম্যানেজ করে নিতে পারব। শুধু দ্বীনের কাজে যেতে হলে তখন আর ম্যানেজ করার উপায় থাকে না। তখন সব রকম অসহায়ত্ব সামনে এসে হাজির হয়।
আসলে এগুলো হল মনের দূর্বলতা। মানুষ যখন কোন কাজের পাকা-পোক্ত নিয়ত করে ফেলে, তখন তার সব ব্যবস্থা সে করতে পারে। এটা আমাকে করতেই হবে এই মনোভাব যখন এসে যাবে, তখন কি কি অসুবিধা আছে, কিভাবে সেগুলো দূর করা যায়, তার চিন্তা ফিকিরও ভিতরে এসে যাবে। মানুষ যখন কোন কাজের এরকম মনোভাবে চলে আসে যে, আমাকে করতেই হবে, তখন সব ব্যবস্থাও তার হয়েই যায়। আল্লাহ পাকই করে দেন। আল্লাহর কাজের পাক্কা নিয়ত করলে অবশ্যই আল্লাহ সব কিছু ব্যবস্থা করে দিবেন।
দ্রঃ লেখা লম্বা হয়ে যাচ্ছে। তাই আর লম্বা না করে এখানেই শেষ করলাম।
হজ্জ ও ওমরাহ্ পর্ব -২ ভালো করে বুঝতে হলে আপনাকে অবশ্যই প্রথম পর্ব পড়ার সাথে-সাথে হজ্জ ও ওমরাহ্ পর্ব -৩ ও আপনাকে পড়তে হবে।
চলবে,