বদলি হজ্ব সংক্রান্ত জরুরি মাসআলা এক থেকে বিশ পর্যন্ত আমরা প্রথম পর্বে দিয়েছি। এই পর্বে আমরা একুশ থেকে সাইত্রিশ পর্যন্ত দিবো। আশাকরি নিজেরা উপকৃত হবেন, অন্যকেও সহযোগিতা করবেন।
বদলি হজ্ব সংক্রান্ত জরুরি মাসআলাঃ নাম্বার-২১
মৃত ব্যক্তি যদি নির্দিষ্ট কাউকে দিয়ে তার বদলী হজ্ব করানোর অসিয়ত করে থাকে যে, অমুক আমার বদলী হজ্ব করবে, অন্য কেউ করতে পারবে না, তাহলে অন্য কাউকে দিয়ে তার বদলী হজ্ব করানো জায়েয নয়। আর যদি অসিয়তের সময় কারো নাম বললেও অন্য কাউকে দিয়ে করাতে নিষেধ না করে থাকে অর্থাৎ শুধু এতটুকু বলেছে যে, অমুককে দিয়ে আমার বদলী হজ্ব করাবে, এক্ষেত্রে উত্তম হল ঐ নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে দিয়েই হজ্ব করানো। তবে ঐ ব্যক্তি যদি রাজি না হয় বা কোনো কারণে করতে সক্ষম না হয় তাহলে অন্য কাউকে দিয়েও করাতে পারবে।
তদ্রূপ ঐ ব্যক্তির অসম্মতি বা অক্ষমতা ছাড়াও যদি তাকে না পাঠিয়ে অন্য কাউকে পাঠায় তাহলেও মৃতের ফরয হজ্ব আদায় হয়ে যাবে।
[আলবাহরুল আমীক ৪/২৩৮৭; মানাসিক ৪৫১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬০০; গুনইয়াতুন নাসিক ৩২৮]
বদলি হজ্ব সংক্রান্ত জরুরি মাসআলাঃ নাম্বার-২২
মৃত ব্যক্তি যদি শুধু এটুকু অসিয়ত করে যে, আমার পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করাবে, কিন্তু কোনো প্রতিনিধি নিয়োগ করেনি তাহলে সকল ওয়ারিশ একত্র হয়ে পরামর্শক্রমে যেকোনো ব্যক্তিকে বদলী হজ্বের জন্য পাঠাতে পারবে। এতে মৃতের ফরয হজ্ব আদায় হয়ে যাবে।
[মানাসিক ৫৫১; গুনইয়াতুন নাসিক ৩২৮]
বদলি হজ্ব সংক্রান্ত জরুরি মাসআলাঃ নাম্বার-২৩
যদি কোনো বদলী হজ্বকারী তাওয়াফে যিয়ারত না করেই দেশে চলে আসে তাহলে এ কারণে হজ্ব বাতিল হবে না। তবে তাকে নিজের খরচে মক্কা মুকাররমায় গিয়ে অবশ্যই তাওয়াফে যিয়ারত করতে হবে। অন্য কাউকে দিয়ে তা করানোর সুযোগ নেই।
[মানাসিক ৪৫১]
বদলি হজ্ব সংক্রান্ত জরুরি মাসআলাঃ নাম্বার-২৪
বদলী হজ্বকারী শুধু এক হজ্বের ইহরাম করবে। তার জন্য একত্রে দুই হজ্বের নিয়তে ইহরাম করা-একটি প্রেরণকারীর পক্ষ থেকে আর অপরটি নিজের জন্য-এটি জায়েয নয় এবং এর দ্বারা প্রেরণকারীর হজ্ব আদায় হবে না। তবে নিজের নিয়তে যে হজ্বের ইহরাম করেছে তা যদি ছেড়ে দেয় তাহলে প্রেরকের বদলী হজ্ব আদায় হবে।
বদলি হজ্ব সংক্রান্ত জরুরি মাসআলাঃ নাম্বার-২৫
বদলী হজ্বকারী নির্দিষ্ট এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে ইহরাম করবে। একই হজ্বের ইহরাম দুই ব্যক্তির পক্ষ থেকে করা জায়েয নয়। যদি এমনটি করে তাহলে দু’জনের কারো হজ্ব আদায় হবে না। এটি আদায়কারীর নিজের হজ্ব হবে। সুতরাং ঐ দুই ব্যক্তি যদি তাদের পক্ষ থেকে হজ্ব করার জন্য তাকে টাকা দিয়ে থাকে তাহলে তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে।[মানাসিক ৪৪৬; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬০৭, ৬০১; গুনয়াইতুন নাসিক ৩২৫, ৩২৭]
বদলি হজ্ব সংক্রান্ত জরুরি মাসআলাঃ নাম্বার-২৬
বদলি হজ্ব আদায়কারী ইহরাম করবে প্রেরণকারীর মীকাত থেকে। অর্থাৎ প্রেরণকারীর দেশ থেকে মক্কা মুকাররমা যেতে যে মীকাত পরে সেখান থেকে বদলী হজ্বের ইহরাম করবে। যেমন-বাংলাদেশ থেকে সরাসরি মক্কাগামী হজ্বযাত্রীদের জন্য মীকাত হল ‘কারনুল মানাযিল’ ও ‘যাতু ইরক’। এই স্থানদ্বয় অতিক্রমের আগেই ইহরাম করতে হবে। সতর্কতার জন্য বিমানে ওঠার আগে কিংবা বিমানে উঠেই ইহরাম করে নেওয়া ভালো।
[মানাসিক ৪৪২; রদ্দুল মুহতার ২/৬০০; গুনইয়াতুন নাসিক ৩৩২]
বদলি হজ্ব সংক্রান্ত জরুরি মাসআলাঃ নাম্বার-২৭
প্রেরিত ব্যক্তি প্রেরণকারীর আদেশের উল্টো করবে না। যেমন-প্রেরক হজ্বে ইফরাদ করার আদেশ করেছে, কিন্তু আদায়কারী প্রথমে নিজের জন্য উমরাহ করেছে। তারপর প্রেরকের পক্ষ থেকে হজ্ব করেছে। এমনটি করলে প্রেরকের হজ্ব আদায় হবে না। আর আদায়কারীকে অবশ্যই প্রেরকের টাকা ফেরত দিতে হবে।
[মানাসিক ৪৪৪; রদ্দুল মুহতার ২/৬০০; ]
বদলি হজ্ব সংক্রান্ত জরুরি মাসআলাঃ নাম্বার-২৮
কেউ কেউ ঈসালে ছওয়াবের উদ্দেশ্যে করা হজ্বকেও বদলী হজ্ব বলে থাকে। স্মরণ রাখতে হবে, এটি পারিভাষিক বদলী হজ্ব নয়। বদলী হজ্ব শরীয়তের একটি বিশেষ পরিভাষা।
ঈসালে ছওয়াবের হজ্ব আর বদলী হজ্ব দুটো এক নয়। বদলী হজ্ব হল নিজে হজ্ব আদায়ে অক্ষম কোনো ব্যক্তি জীবদ্দশায় কাউকে হজ্বের খরচ দিয়ে তার পক্ষ থেকে ফরয হজ্ব আদায়ের জন্য প্রেরণ করা বা মৃত্যুর সময় তার ফরয হজ্ব আদায়ের অসিয়ত করে যাওয়ার ফলে তার পক্ষ থেকে আদায়কৃত হজ্ব।
আর নিজ খরচে কারো পক্ষ থেকে হজ্ব করলে বা করালে সেটিকে পারিভাষিক অর্থে বদলী হজ্ব বলা হয় না। এতে বদলী হজ্বের বিশেষ বিধানগুলো লক্ষণীয় নয়। এটি হল মুলত ঈসালে ছওয়াবের হজ্ব। এক্ষেত্রে হজ্ব আদায়ের সময়ই ঐ ব্যক্তির নিয়তে আদায় করা যায়। আবার আদায়ের পরও তাকে ছওয়াব পৌঁছানোর নিয়ত করা যায়। উভয় ক্ষেত্রেই ঐ ব্যক্তি এর ছওয়াব পেয়ে যাবেন।
বদলি হজ্ব সংক্রান্ত জরুরি মাসআলাঃ নাম্বার-২৯
কেউ কেউ ঈসালে ছওয়াবের উদ্দেশ্যে করা হজ্বকেও বদলী হজ্ব বলে থাকে। স্মরণ রাখতে হবে, এটি পারিভাষিক বদলী হজ্ব নয়। বদলী হজ্ব শরীয়তের একটি বিশেষ পরিভাষা।
ঈসালে ছওয়াবের হজ্ব আর বদলী হজ্ব দুটো এক নয়। বদলী হজ্ব হল নিজে হজ্ব আদায়ে অক্ষম কোনো ব্যক্তি জীবদ্দশায় কাউকে হজ্বের খরচ দিয়ে তার পক্ষ থেকে ফরয হজ্ব আদায়ের জন্য প্রেরণ করা বা মৃত্যুর সময় তার ফরয হজ্ব আদায়ের অসিয়ত করে যাওয়ার ফলে তার পক্ষ থেকে আদায়কৃত হজ্ব।
আর নিজ খরচে কারো পক্ষ থেকে হজ্ব করলে বা করালে সেটিকে পারিভাষিক অর্থে বদলী হজ্ব বলা হয় না। এতে বদলী হজ্বের বিশেষ বিধানগুলো লক্ষণীয় নয়। এটি হল মুলত ঈসালে ছওয়াবের হজ্ব। এক্ষেত্রে হজ্ব আদায়ের সময়ই ঐ ব্যক্তির নিয়তে আদায় করা যায়। আবার আদায়ের পরও তাকে ছওয়াব পৌঁছানোর নিয়ত করা যায়। উভয় ক্ষেত্রেই ঐ ব্যক্তি এর ছওয়াব পেয়ে যাবেন।
বদলি হজ্ব সংক্রান্ত জরুরি মাসআলাঃ নাম্বার-৩০
প্রেরক অনুমতি দিলে বদলীকারীর জন্য তামাত্তু বা কিরান হজ্ব করাও জায়েয। তদ্রূপ বিশেষভাবে ইফরাদ হজ্ব করার নির্দেশ না দিলে; সে ক্ষেত্রেও কিরান ও তামাত্তু যে কোনোটি করা জায়েয। হানাফী মুতাআখখিরীন ফকীহগণের অনেকে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, প্রেরকের অনুমতি থাকলে বদলীকারী কিরান ও তামাত্তু যে কোনোটি করতে পারবে, ইফরাদ হজ্ব করা জরুরি নয়। যেমন-আল্লামা ফখরুদ্দীন হাসান ইবনে মানসুর আলউযজান্দী রাহ. (মৃত্যু : ৫৯২ হি.), আল্লামা রহমতুল্লাহ সিন্ধী রাহ. (মৃত্যু : ৯৯৩ হি.), আল্লামা আলাউদ্দীন হাসকাফী রাহ. (মৃত্যু : ১০৮৮ হি.), আল্লামা কাযী হুসাইন ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল গনী হানাফী রাহ. (মৃত্যু : ১৩৬৬ হি.) প্রমুখ। এছাড়া উপমহাদেশের বড় বড় অনেক মুফতী ছাহেব এই ফতোয়া দিয়েছেন। যেমন-মুফতী কেফায়েতুল্লাহ দেহলভী রাহ., মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ., মুফতী যফর আহমদ উছমানী রাহ., মুফতী রশীদ আহমদ লুধিয়ানবী রাহ., শাইখুল ইসলাম মুফতী তকী উছমানী দা.বা. প্রমুখ।
এছাড়াও রিয়াদস্থ গবেষণা ও ইফতাবোর্ড এবং ভারতের ইসলামী ফিকহ একাডেমীর সিদ্ধান্তও অনুরূপ।
[দেখুন : ফাতাওয়া খানিয়া ১/৩০৭; লুবাবুল মানাসিক ৪৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৬১১; ইরশাদুস সারী ৬৪৭; কেফায়েতুল মুফতী ৪/৩৪৫; জাওয়াহিরুল ফিকহ ১/৫০৮; ইমদাদুল আহকাম ২/৫২৩; ফাতাওয়া উছমানী ২/২২২; ফাতাওয়াল লাজনাহ আদ্দাইমাহ ১১/৮২]
বদলি হজ্ব সংক্রান্ত জরুরি মাসআলাঃ নাম্বার-৩১
বদলী হজ্ব এমন লোককে দিয়ে করানো উচিত, যিনি নিজের ফরয হজ্ব আদায় করেছেন। যে ব্যক্তি নিজের হজ্ব আদায় করেনি সে যদি এমন হয় যে, তার উপর হজ্ব ফরয নয় তাহলে তাকে দিয়েও বদলী করানো জায়েয আছে। তবে তা মাকরূহ তানযীহি। আর যদি তার উপর হজ্ব ফরয হয়ে থাকে, কিন্তু সে এখনও তা আদায় করেনি তাহলে তার জন্য বদলী হজ্ব করা মাকরূহ তাহরীমী তথা নাজায়েয। তবে কেউ এমন ব্যক্তির দ্বারা বদলী হজ্ব করালে প্রেরণকারীর হজ্ব আদায় হয়ে যাবে। পুনরায় তাকে বদলী করাতে হবে না।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে হজ্বের ইহরাম করার সময়-
لَبَّيْكَ عَنْ شُبْرُمَةَ
(শুবরুমার পক্ষ থেকে লাববাইক) এভাবে বলতে শুনে বললেন, ‘শুবরুমা কে?’ লোকটি বলল, ‘আমার ভাই (বর্ণনাকারী বলেন) অথবা বলল, আমার নিকটাত্মীয় এক লোক।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি কি নিজের হজ্ব করেছ?’সে বলল, ‘না।’ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আগে তোমার নিজের হজ্ব কর তারপর শুবরুমার পক্ষ থেকে কর।[সুনানে আবু দাউদ ১/২৫২]
হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত আছে-
كان لا يرى بأسا أن يحج الصرورة عن الرجل.
যে ব্যক্তি নিজের হজ্ব করেনি যে অন্যের পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করাকে তিনি দোষের বিষয় মনে করতেন না।
বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত মুজাহিদ, হাসান বসরী ও সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব রাহ.ও এমনই মনে করতেন। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/১৮৯]
[ দেখুন : মাবসূত, সারাখসী ৪/১৫১; আলবাহরুল আমীক ৪/২২৬৩; ফাতহুল কাদীর ৩/৭৯; রদ্দুল মুহতার ২/৬০৩]
বদলি হজ্ব সংক্রান্ত জরুরি মাসআলাঃ নাম্বার-৩২
কাউকে এমনিই নেক কাজের নিয়তে হজ্ব করাতে চাইলে বা হজ্ব আদায়ে আর্থিক সহায়তা করতে চাইলে এমন ব্যক্তিকে করানো উত্তম, যিনি এখনও হজ্ব করেননি।
[মাবসূত, সারাখসী ৪/১৫২; আলবাহরুল আমীক ৪/২২৬৮; গুনইয়াতুন নাসিক ৩৩৯]
বদলি হজ্ব সংক্রান্ত জরুরি মাসআলাঃ নাম্বার-৩৩
কোনো কোনো কিতাবে আছে যার উপর হজ্ব ফরয হয়নি এমন ব্যক্তি বদলী হজ্বে গেলে কাবা শরীফ দেখার দ্বারা তার নিজের উপর হজ্ব ফরয হয়ে যায়। যদিও সে গরীব হোক না কেন। সুতরাং তার জন্য জরুরি, হজ্বের পর পরবর্তী বছর হজ্বের সময় পর্যন্ত মক্কায় অবস্থান করা এবং হজ্বের নির্দিষ্ট সময় নিজের ফরয হজ্ব আদায় করা। যদি দেশে চলে আসে তাহলে পুনরায় নিজের ফরয হজ্ব আদায়ের উদ্দেশে মক্কা মুকাররমা যাওয়া জরুরি।
এ বক্তব্য ঠিক নয়। বিশুদ্ধ মতানুসারে এমন গরীব ব্যক্তি বদলী হজ্ব করতে গিয়ে বাইতুল্লাহ শরীফ দেখার দ্বারা তার উপর হজ্ব ফরয হয় না। কেননা, সে অন্যের পক্ষ থেকে হজ্বের ইহরাম বাঁধার কারণে তৎক্ষণাৎ নিজের জন্য হজ্ব করতে সক্ষম নয়। আর পরবর্তী বছর হজ্বের সময় আসা পর্যন্ত তার পক্ষে সেখানে অবস্থান করা সম্ভব নয়। আবার স্বদেশে চলে আসার পর পুনরায় হজ্বের জন্য যাওয়ারও তার আর্থিক সামর্থ্য নেই।
এইজন্য মুহাক্কিক উলামায়ে কেরাম উক্ত বক্তব্যটি প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং এ ধরনের গরীব বদলীকারীর উপর বাইতুল্লাহ শরীফ দেখার দ্বারা হজ্ব ফরয না হওয়ার ফতোয়া দিয়েছেন।
[রদ্দুল মুহতার ২/৬০৪; গুনইয়াতুন নাসিক ৩৩৮; জাওয়াহিরুল ফিকহ ১/৫০৭; ফাতাওয়া উছমানী ২/২২২]
বদলি হজ্ব সংক্রান্ত জরুরি মাসআলাঃ নাম্বার-৩৪
অন্যের বদলী হজ্ব করার দ্বারা নিজের ফরয হজ্ব আদায় হয় না। সুতরাং বদলী আদায়কারীর উপর হজ্ব ফরয হলে তাকে পৃথকভাবে নিজের ফরয হজ্ব আদায় করতে হবে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে ইহরাম করার সময়-
لَبَّيْكَ عَنْ شُبْرُمَةَ
(শুবরুমার পক্ষ থেকে লাববাইক) এভাবে বলতে শুনলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, শুবরুমা কে? সে বলল, আমার ভাই বা (বলেছে) আমার এক আত্মীয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি নিজের হজ্ব করেছ? সে বলল না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আগে তোমার নিজের হজ্ব কর। তারপর শুবরুমার পক্ষ থেকে হজ্ব কর। [সুনানে আবু দাউদ ১/২৫২]
যদি অন্যের পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করার দ্বারা নিজের ফরয হজ্বও আদায় হয়ে যেত তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে আগে নিজের হজ্ব করতে বলতেন না। [আরো দেখুন : মাবসূত, সারাখসী ৪/১৪৭; ফাতহুল কাদীর ৩/৬৮; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/২৭৮; আলবাহরুল আমীক ৪/২২৫২]
বদলি হজ্ব সংক্রান্ত জরুরি মাসআলাঃ নাম্বার-৩৫
উমরাহর বদলী করাও জায়েয আছে।
হযরত আবু রাযীন আলউকায়লী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার বাবা অতিশয় বৃদ্ধ মানুষ। তিনি হজ্ব ও উমরাহ করতে সক্ষম নয়। (আমি কী করতে পারি?)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার বাবার পক্ষ থেকে তুমি হজ্ব ও উমরাহ আদায় কর।
[জামে তিরমিযী ১/১১২) দেখুন : গুনইয়াতুন নাসিক ৩২০]
বদলি হজ্ব সংক্রান্ত জরুরি মাসআলাঃ নাম্বার-৩৬
মান্নত হজ্বের বদলী করা জায়েয। অর্থাৎ কেউ হজ্ব বা উমরার মান্নত করেছে, কিন্তু স্বয়ং তা আদায় করতে সক্ষম নয় বা আদায়ের আগেই তার মৃত্যু এসে গেছে তাহলে সে কারো দ্বারা এর বদলী করিয়ে নিবে বা বদলী করানোর অসিয়ত করে যাবে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,
জুহাইনা গোত্রের এক নারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল,
আমার মা হজ্বের মান্নত করেছিলেন। কিন্তু হজ্ব আদায়ের আগেই তিনি মারা গেছেন। এখন আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্ব করতে পারব?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
তুমি তার পক্ষ থেকে হজ্ব কর। যদি তোমার মায়ের কোনো অনাদায়ী ঋণ থাকত তাহলে তুমি কি তা পরিশোধ করতে না?
আল্লাহর ঋণও আদায় কর। আল্লাহর ঋণ আরো বেশি আদায়যোগ্য। [সহীহ বুখারী ১/২৫০]
বদলি হজ্ব সংক্রান্ত জরুরি মাসআলাঃ নাম্বার-৩৭
যে ব্যক্তি নিজের ফরয হজ্ব আদায় করে ফেলেছে তার জন্য নফল হজ্ব করার চেয়ে উত্তম হল, অন্য কারো ফরয হজ্বের বদলী করা।
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মৃতের পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করলে সেও মৃতের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে।
[মাজমাউয যাওয়াইদ ৩/৬১৪; আলমুজামুল আওসাতের বরাতে]
হযরত হাসান বসরী রাহ. বলেন, ‘যে ব্যক্তি কারো পক্ষ থেকে বদলী হজ্ব করবে তার জন্যও ঐ ব্যক্তির সমপরিমাণ সওয়াবের আশা করা যায়।’
হযরত সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ. বলেন-
إن الله لواسع لهما جميعا
(মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৮/৭১১) দেখুন : আলবাহরুল আমীক ৪/২২৫৭; গুনইয়াতুন নাসিক ৩৩৭
আমাদের ফেসবুক পেজে এ যুক্ত হয়ে থাকতে পারেন এবং আমাদের কন্টেন্ট ভিডিও আকারে পেতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল টি সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারেন।