Wednesday, April 24, 2024
No menu items!
Homeইসলামি শিষ্টাচারসালামের ক্ষেত্রে অনৈসলামিক সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ। পর্ব-৬

সালামের ক্ষেত্রে অনৈসলামিক সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ। পর্ব-৬

এক নযরে সালাম

এক. সালাম প্রদান করা সুন্নত আর সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব।

দুই. সালামের জন্য পূর্ব পরিচিত, পূর্ব সাক্ষাৎ, এবং আত্মীয়তার সম্পর্কের কোন প্রয়োজন নাই। পরস্পর ভ্রাতৃত্ব সম্পর্কের কারণেই এক মুসলমান অন্য মুসলমানকে সালাম দেয়া উচিৎ।

তিন. মজলিসে আগমণ ও প্রত্যাগমণকারী মজলিসে আসা এবং যাওয়ার সময় সালাম করবে। মজলিসের পক্ষে একজনের উত্তর-ই যথেষ্ট।

চার. বড় দল ছোট দলকে, আরোহী পায়দলকে, বয়সে ছোট নিজের চেয়ে বড়কে সালাম করবে।

পাঁচ. সালামের জন্য হস্ত উত্তোলন করা, অবনত শিরে সালাম করা এবং বিশেষ সম্মানবোধে সালাম করা ইসলামী নীতি বহির্ভূত। কেননা, সালাম হচ্ছে সম্বোধিত ব্যক্তির জন্য বিশেষ দোয়া। এজন্য শুধু স্বাভাবিক ও সাবলীল আওয়াজে “আসসালামু আলাইকুম” বলাই যথেষ্ট।

ছয়. সালামের উত্তরে কেবল “ওয়ালাইকুম” বলা যথেষ্ট নয়; বরং পরিস্কার ভাষায় অন্ততঃ পক্ষে “ওয়ালাইকুম আসসালামু” বলা বাঞ্ছনীয়। তবে এর সাথে “ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু” বলা উত্তম।

সাত. “আলাইকাস সালাম” মৃত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে বলা হয়ে থাকে বা السام عليكم আসসামু আলাইকুম বলা অনুচিত। কেননা আলাইকাস সালাম মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে বলা হয়ে থাকে। আর আসসামু আলাইকুম একটি বদদোয়া যার অর্থ হচ্ছে তোমার ধ্বংস হোক।

আট. সম্মান প্রদর্শনার্থে করজোড় ভাবে দাড়ানো অথবা অবনত শিরে হাঁটু গেড়ে প্রতিপক্ষের পায়ে হাত বুলানো যেমনটি এখনো গ্রাম্য প্রথা হিসেবে প্রচলিত রয়েছে। এটি একটি সম্পুর্ণ ভ্রান্ত ও নিরেট হিন্দুয়ানী প্রথা। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে মাতাপিতা, শিক্ষক এবং আধ্যাত্মিক গুরুকে যদিও এজাতীয় সম্মানে ভুষিত করা বৈধ আছে; তথাপি প্রকাশ্যে রাজপথে তাদের বেলায়ও এজাতীয় সম্মান করা অনুচিত। কেনন এর দ্বারা সমূহ বিভ্রান্তি ছড়ানোর আশংকা রয়েছে। সর্বসাধারণকে বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত রাখার লক্ষ্যে এজাতীয় কাজ পরিহার করা অপরিহার্য। আর গ্রাম্য প্রচলিত সম্মানী সিষ্টেম প্রত্যক্ষ শিরিকী রুপ। কেননা গ্রাম্য প্রথা হল সেখানকার অসহায় – দরিদ্র, বৃদ্ধ, যুবক, পুরুষ-মহিলা সকলেই সম্পাদশালী জমিদারদের সামনে নিজেদের মাথা ঠুঁকে দেয়। তাদের সম্মানার্থে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। দৃশ্যতঃ ট সম্মান দুনিয়ার সম্পদের সম্মান, প্রাচুর্যের সম্মান। দুনিয়াদারদের এজাতীয় সম্মান ইসলামে জায়েয নেই।

নয়. মুসলমানের যে কোনো কাজে কাফের মুশরিকদের অনুসরণ, অনুকরণ ও সাদৃশ্যতা পরিলক্ষিত হলে তা শরীয়ত বিরোধী হিসেবে বিবেচিত হয়। সুতরাং ইসলামের নির্দেশ অনুসারে সালামের ক্ষেত্রে মুসলমানদের “আসসালামু আলাইকুম” বলাই উচিৎ। অন্যকোন শব্দ বা বাক্য বলে কিংবা পন্থা পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে নয়।

দশ. আদাব আরয করছি, সম্মান প্রদর্শন করছি, অভিবাদন জানাচ্ছি, পূজা-অর্চনা পেশ করছি, কুর্ণিশ ও আনুগত্য প্রকাশ করছি, গুডমর্নিং, গুডনাইট এ-সবই হচ্ছে ইসলাম বিরোধী পন্থা ও পদ্ধতি।

এগার. কোনো মজলিস বা মাহফিলের বিশেষ কোনো ব্যক্তির উদ্দেশ্যে সালাম করা অনুচিত। কোনো কোনো মানুষ বিশেষ ব্যক্তির উদ্দেশ্যে সালাম প্রদান করে থাকে, এটা ঠিক নয়; বরং মহলিসে উপস্থিত হলে সকলের উদ্দেশ্যে সালাম প্রদান করা উচিৎ।

বার. মহিলাদের মাঝে প্রচলন আছে যে, সালামের পর কপালে হাত স্থাপন করা অপরিহার্য। এটি ভ্রান্ত ধারণা। শরীয়ত এজাতীয় কোনো অপরিহার্যতা আরোপ করেনি; এটি একটি নিরেট অনৈসলামিক অপসংস্কৃতি। সালাম হল একটি দোয়া। আর এটি মুখে উচ্চারণ করাই যথেষ্ট।

তের. যে স্থান ও সময়ে ইশারা ইংগিতে সালাম দেয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ব,সে স্থান ও সময়ে হাত উঠিয়ে ইশারা ইংগিতে সালাম করা যেতে পারে; তবে সে সময়েও মুখে আসসালামু আলাইকুম বলা জরুরি।

চৌদ্দ. সাইকেল, রিক্সা, হোন্ডা, বা গাড়ীতে কিংবা যে কোনো দ্রুতগামী যানবাহনে যাতায়াতকালে ইশারা ইংগিতে সালাম দেয়া যেতে পারে। তাছাড়া অবস্থানজারী ব্যক্তিও ইশারায় এজাতীয় যাতায়াতকারীকে সালাম দিতে পারে। কেননা, দূরত্ব ও দ্রুতগামীতার কারণে কারণে শুধু মুখে সালাম দিলে তা অনুধাবন না করাও যেতে পারে। এজন্য সালাম বিনিময় অনুধাবনের জন্য এ পদ্ধতি বৈধ হিসেবে বিবেচিত। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় সালাম প্রদানের সময় হাত কপাল পর্যন্ত উত্তোলন করা ইসলামী সংস্কৃতির পরিপন্থী কাজ।

পনের. কোনো কোনো মানুষ সালাম এবং সালামের জবাবে শুধু মাথা হেলিয়ে ইশারার মাধ্যমে দেয়ার চেষ্টা করে থাকে, এ কাজটিও সালাম হিসেবে বিবেচিত হবে না; বরং এটি একটি অনৈসলামিক কুসংস্কার।

ষোল. মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাতায়াতকালে পথিমধ্যে খেলাধূলারত শিশু কিশোরদের সালাম প্রদান করতেন। [আবু দাউদ শরীফ]
প্রকৃত অর্থে সালাম হল দোয়া। আর মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের ছোট-বড় সকলের জন্য দোয়া করবেন এটাই স্বাভাবিক। কেনন, তিনি তো মানবজাতির সবচেয়ে বড় রহমত স্বরুপ এবং সবচেয়ে বেশী দয়াবান হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন।
এ হাদিসটির দ্বারা একথা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, বয়সী ব্যক্তি বয়সে ছোটদের সালাম করতে পারে। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই মহান আদর্শ ও সুন্নতের উপর আমলের জন্য এগিয়ে আসা প্রতিটি মুসলমানদের নৈতিক দায়িত্ব।

আমাদের এই লেখাটি পাকিস্তানের সিদ্দিকী ট্রাষ্ট কর্তৃক প্রকাশিত মাওলানা মনসুরুজ্জামান সিদ্দীকীর একটি উর্দু রেসালা)

বাংলা অনুবাদ করেছেন, দেশবরেণ্য আলেমে দ্বীন
মুফতি ফজলুল হক আমিনী(রহঃ)। এই লেখাটি উৎসর্গ তার রুহের মাগফিরাত কামনায়।
আল্লাহ তা’লা হযরতকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করেন।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments