ইসলামী শিষ্টাচার-পঞ্চম পর্বঃ-

ইসলামী শিষ্টাচার-পঞ্চম পর্বঃ-

১০. মেহমানদের বসার স্থান….
বসার জায়গা নিয়ে আপনি আপনার ভাই, বন্ধু অথবা মেযবানের সাথে কোনরুপ বিতর্কে লিপ্ত হবেন না । বরং তিনি আপনাকে যেখানে বসতে দেন সেখানে বসে পড়েন, অন্য কোথাও বসার চেষ্টা করবেন না। যদি ইচ্ছামত বসতে চান তাহলে হয়তো আপনার অজান্তে এমন স্থানে বসে পড়বেন যেখান থেকে বাড়ির মহিলাদের দেখা যায়।

কিংবা লজ্জাজনক কোন বিষয় দৃষ্টিগোচর হয় অথবা বসার নির্দিষ্ট স্থানে না বসার কারণে গৃহের অধিবাসীরা চরম অসুবিধার সম্মুখীন হয়। সুতরাং আপনার মেযবান যেখানে বসার ব্যবস্থা করেন সেখানেই বসে যাওয়া আপনার জন্য উত্তম হবে।

আপনার মেযবান যা দ্বারা আপনাকে অপ্যায়ন করেন, তা আনন্দচিত্রে গ্রহন করা উচিত। মহান সাহাবী আদী ইবনে হাতেম তাঈ রা. এর ইসলাম গ্রহন করার ঘটনায় বর্ণিত আছে যে,

أنه قدم علي النبي صلى ألله عليه وسلم، فاكرمه بالجلوس علي وسادة، وجلس رسول الله صلى ألله عليه وسلم علي الأرض. قال عدي: ثم مضى بي رسول الله صلى ألله عليه وسلم، حتي إذا دخل بيته ، تناول وسادة من أم محشورة ليفا ، فقذفها إلي فقال: اجلس علي هذه قلت: بل أنت فجلس عليها. قال: بل أنت ، فجلست عليها ، وجلس رسول الله صلى ألله عليه وسلم بالأرض 《البداية والنهاية》

তিনি নবী কারীম সা. এর নিকট আসলে মহানবী সা. তাকে গদির উপর বসিয়ে সম্মানিত করেছিলেন আর নিজে মাটির উপর বসেছিলেন। হযরত আদী বলেন, আমি যখন ইসলাম গ্রহন করে মদিনায় আসলাম, তখন হযরত মুহাম্মদ সা. নিজে ঘরে প্রবেশ করা পর্যন্ত পুরো সময়টাই আমাকে নিয়ে আলাপচারিতায় মশগুল ছিলেন।

এরপর তিনি ঘরে এসে আঁশ ভর্তি একটি চামড়ার গদি এনে আমাকে দিয়ে বললেন, এর উপর বস। তখন আমি বললাম ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি বরং বসুন! তখন মহানবী সা. বললেন, তুমিই বস। এরপর আমি তাতে বসলাম, আর রাসূল সা. মাটির উপর বসলেন। -ইবনে কাসীর র. এই হাদীসটি আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে উল্লেখ করেছেন।

একদা ইবনে সীরীনের সাথে খারেজা ইবনে মারেদ সাক্ষাত করতে গেলেন। গিয়ে দেখেন ইবনে সীরীন মাটির উপর হেলান দিয়ে বসে আছেন। তখন তিনি ইবনে সীরীনের সাথে মাটিতেই বসে পরার ইচ্ছা পোষণ করে তাকে বললেন, আপনি নিজের জন্য যা পছন্দ করেছেন, আমিও তা আমার জন্য পছন্দ করলাম।
তখন ইবনে সীরীন বললেন, আমি আমার ঘরে তোমার জন্য এটা পছন্দ করি না, যা আমার জন্য পছন্দ করি। সুতরাং আমি যেখানে বলি সেখানেই বসুন। আর ঘরের মালিক যেখানে বসে আপনি সেখানে বসবেন না। তবে আপনাকে যদি বসার জন্য বলেন, তাহলে বসতে পারেন।
ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত সাইয়্যিদুনা মুহাম্মদ সা. বলেছেন-

عن ابي مسعود الأنصاري قال قال رسول الله صلى ألله عليه وسلم : 《ولا يؤمن الرجل في سلطانه ولا يقعد في بيته علي تكرمته إلا بإذنه 》

অর্থাৎ, কোন ব্যক্তি যেন অপর কোন ব্যক্তির প্রভাব প্রতিপক্তি তথা তার বাসস্থান ও বল প্রয়োগের স্থানে নিরাপদ না হয়। এবং ঘর মালিকের অনুমতি ছাড়া যেন তার জন্য নির্দিষ্ট স্থান অথবা আসনে না বসে।
মুসলিম শরীফ -1/236

১১. মেহমানের জন্য যা যা বর্জনীয়…
যখন আপনি আপনার ভাই অথবা বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গেলেন আর তিনি আপনাকে তার ঘরে বসালেন অথবা শোবার ব্যবস্থা করে দিলেন তখন আপনি গোয়েন্দার ন্যায় অনুসন্দান করবেন না। বরং উপবেশন ও শয়নের সময় আপনার দৃষ্টিকে অবনত রাখুন। এদিক সেদিক তাকাবেন না।

আপনার যা যা প্রয়োজন তার মাঝেই আপনার চোখকে সীমাবব্ধ রাখুন। সংরক্ষিত ধন-ভাণ্ডার. ট্রাংক, ব্রিফকেস, টাকার থালি ও অন্যকোন বস্তু খুলবেন না । কেননা এ গুলি অভদ্রতার নিদর্শন ও ইসলামী শিষ্টাচার পরিপন্থী কাজ। বরং তা হচ্ছে আপনার বন্ধু কর্তৃক অর্পিত আমানতের খেয়ানত এবং সে আপনাকে যে মর্যাদা প্রদান করেছে, তার অবমূল্যায়ন!

সুতরাং সাক্ষাত করার পূর্বে সাক্ষাতের রীতি-নীতি ও আদব জেনে নিন। সুন্দর ব্যবহার করুন। চাল-চলন ও আচরণকে শালীন করুন। এতে মেযবানের নিকট আপনার মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। আর আল্লাহ তা’আলা আপনাকে রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। তিনি আপনার ভাল-মন্দের অভিভাবক হবেন।

আমাদের ফেসবুক পেজে এ যুক্ত হয়ে থাকতে পারেন এবং আমাদের কন্টেন্ট ভিডিও আকারে পেতে

আমাদের ইউটিউব চ্যানেল টি সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারেন।

ইসলামী শিষ্টাচার-চতুর্থ পর্বঃ

Previous articleইসলামী শিষ্টাচার-চতুর্থ পর্বঃ-
Next articleসালামের ক্ষেত্রে অনৈসলামিক সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ। পর্ব-৭
মুফতি নাজমুল হাসান সাকিব
নাম: নাজমুল হাসান সাকিব পিতা: মুজিবুর রহমান স্থায়ী ঠিকানা: বাহেরবালী, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ। বর্তমান ঠিকানা: বসুন্ধরা, বারিধারা, ঢাকা ১২২৯ পড়াশোনাঃ- বাহেরবালী দারুল উলূম নূমানিয়া মাদরাসা, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ। (নূরানী টু হেদায়াতুন্নাহ্) জামিয়াতুস সালাম মদিনাবাগ, মুগদা, সবুজবাগ, ঢাকা। (কাফিয়া-শরহে বেকায়া) মারকাজুল উলূম আল-ইসলামিয়া মান্ডা, মুগদা, সবুজবাগ, ঢাকা। (আরবী স্নাতক ৪র্থ বর্ষ) মদিনাতুল উলূম বসুন্ধরা মাদরাসা ( হেদায়া) মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা। (এম এ- মাস্টার্স) আল মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশ। (ইসলামি আইন ও গবেষণা বিভাগ) পেশা: লেখালেখি ও পড়াশোনা। (ভবিষ্যত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এখনো অধ্যায়ণরত)।