Thursday, April 25, 2024
No menu items!
Homeসাহাবিদের জীবনীকুরআন-সুন্নাহর আলোকে হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) এর মান-মর্যাদা।

কুরআন-সুন্নাহর আলোকে হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) এর মান-মর্যাদা।

কুরআন-সুন্নাহর আলোকে হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) এর মান-মর্যাদা।

কুরআন-সুন্নাহর আলোকে হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) এর মান-মর্যাদা।

আরবি(الصحبة) ‘সুহবত’ শব্দ থেকে (الصحابى)‘সাহাবি’ শব্দটি এসেছে। আভিধানিক অর্থ সঙ্গী, সাথী, সহচর।
-(লিসানুল আরব ২/৭_৯)

ইসলামী পরিভাষায় ‘সাহাবা’ শব্দটি দ্বারা রসুলুল্লাহ (সা.)-এর মহান সঙ্গী-সাথীদের বোঝায়। আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) ‘আল-ইসাবা ফি তাময়িযিস সাহাবা’ গ্রন্থে সাহাবির পরিচয় দিতে গিয়ে লেখেন:-
أن الصحابي من لقي النبي صلى الله عليه وسلم مؤمنًا به، ومات على الإسلام
‘সাহাবি সেই ব্যক্তি, যিনি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ইমান সহকারে তাঁর সাক্ষাৎ লাভ করেছেন এবং ইসলামের ওপরই ইন্তেকাল করেছেন।
-(আল ইসাবা ১/২-৩)

সাহাবিগণ সত্য-ন্যায়ের মাপকাঠি। তাদের পরস্পরের মধ্যে মর্যাদা হিসেবে স্তর-ভেদ থাকতে পারে, কিন্তু পরবর্তী যুগের কোন মুসলমান, যত বড় জ্ঞানী, গুণী ও সাধক হোন না কেন, কেউই একজন সাহাবির মর্যাদাও লাভ করতে পারেন না।
হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) ই রসুল (সা.) ও তাঁর উম্মতের মধ্যে প্রথম মধ্যসূত্র। পরবর্তী উম্মত আল্লাহর কালাম পবিত্র কোরআন, কোরআনের ব্যাখ্যা, আল্লাহর রসুলের পরিচয়, তাঁর শিক্ষা, আদর্শ, মোটকথা দীনের সব কিছুই একমাত্র তাঁদেরই সূত্রে, তাঁদেরই মাধ্যমে জানতে পেরেছেন। সুতরাং এই প্রথম সূত্র উপেক্ষা করলে, বাদ দিলে অথবা তাঁদের প্রতি অবিশ্বাস সৃষ্টি হলে দীন, শরিয়তের মূল ভিত্তিই ধসে পড়বে। কোরআন ও হাদিসের প্রতি অবিশ্বাস দানা বেঁধে ওঠে।
হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিকে সত্যে পরিণত করেছেন। তাঁরা গোটা মুসলিম জাতির কর্ণধার এবং মুমিনের ঈমান ও আমলের মডেল স্বরূপ। তাঁদের ধন-সম্পদ, কষ্ট-ক্লেশ এবং প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে সারাবিশ্বে ইসলাম পৌঁছেছে। তাঁদের জিহাদ এবং রক্তের বিনিময়ে দ্বীনের আলো ছড়িয়েছে এবং কুফর ও শিরকের অন্ধকার দূরীভূত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাঁর হাবীব স. এর সহচার্যের জন্য তাঁদেরকে নির্বাচন করেছেন এবং তাঁর নবীর রেছালাতের পয়গাম প্রচার-প্রশারের জন্য তাঁদের নিযুক্ত করেছেন। তাঁরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁদের দ্বীনকে খাঁটি করেছেন। আল্লাহর রাস্তায় যে বিপদ-আপদ ঘটেছিল, সে কারণে তাঁরা দুর্বল হননি। মর্যাদার ক্ষেত্রে, হযরত আম্বিয়ায়ে কেরাম (আঃ) এর পর, হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) রয়েছেন সবচেয়ে উঁচুস্থানে। হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) যদিও নিষ্পাপ নন, আল্লাহ প্রদত্ত হেকমতে তাঁদের দ্বারা বিভিন্ন গুনাহ সংঘটিত হলেও, আল্লাহ তাআলা সেগুলো মাফ করে দিয়েছেন।

-:হাদিসের আলোকে হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) এর মর্যাদা:-
১..হযরত ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, রসূল (স.) ইরশাদ করেন:-
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : خير أمتي قرني ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم
অর্থাৎ আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তিবর্গ হচ্ছেন, যারা আমার যুগে রয়েছে। অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মাত। (তথা তাবেয়ীগনের যুগ) অতঃপর তাদের পরবর্তী যুগের উম্মাত। (অর্থাৎ, তাবয়ে তাবেয়ীনের যুগ)

  • (বুখারী শরীফ ৩/৩৩৫ হাদিস নং ৩৪৫০, মুসলিম শরীফ হাদিস নং ৪৭৩১)
    ২..হযরত উমর রা. থেকে বর্ণিত রাসূল স. ইরশাদ করেন:-
    اكرموا أصحابى فإنهم خياركم
    অর্থাৎ-তোমরা আমার সাহাবীগণকে সম্মান করো। কেননা তাঁরা তোমাদের মধ্যৈ উত্তম মানব।
    -(তাখরিজু মিশকাতিল মাসাবীহ হাদিস নং ৫৯৫৭, মুসনাদে আহমাদ, খ.১, পৃ.১১২,)
    ইরবায ইবনে সারিয়া(রাঃ)হতে বর্ণিত যে,রাসুলুল্লাহ(সাঃ)ইরশাদ করেছেন:-
    قال النبى صلى الله عليه وسلم: عليكم بسنتى وسنة خلفاء الراشدين المهدين
    অর্থঃ তোমরা আমার সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরো এবং হিদায়াতপ্রাপ্ত খোলাফায়ে রাশেদীন রা. এর সুন্নাতকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো।
    –(আবু দাউদ হা. ৪৬০৭, তিরমিযী ২৮৯১, ইবনে মাজাহ [ভূমিকা, ৪২], মুসনাদে আহমদ হা.১৭৬০৬, মুসনাদে বাযযার,ইবনে হিব্বান,মুসতাদরাক লিল-হাকিম,তারীখে দিমাশক লি-ইবনে আসাকির, আল-মু’জামুল কাবীর, হা. ৬২৩, আল-আওসাত, আল-কাবীর লিত্তাবরানী)
    ৩. রাসূল স. ইরশাদ করেন,
    لا تزالون بخير ما دام فيكم من رآني وصحبني، والله لا تزالون بخير ما دام فيكم من رأي من رآني وصاحبني
    অর্থ: তোমরা ততোদিন পর্যন্ত কল্যাণের মাঝে থাকবে, যতোদিন তোমাদের মাঝে এমন লোক বিদ্যমান থাকবে, যারা আমাকে দেখেছে এবং আমার সংস্পর্শে থেকেছে। আল্লাহর শপথ, তোমরা কল্যানের মাঝে থাকবে, যতোদিন পর্যন্ত তোমাদের মাঝে এমন লোক থাকবে, যারা আমার সাহাবী ও সংস্পর্শ অবলম্বনকারীদেরকে দেখেছে।
    -(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, খ.১২, পৃ.১৭৮, ত্ববরানী ফিল কাবির, খ.২২, পৃ.৮৫, ফাতহুল বারী, খ.৫, পৃ.৭)
    ৪.রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন:-
    فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا، مَا أَدْرَكَ مُدَّ أَحَدِهِمْ، وَلَا نَصِيفَهُ
    অর্থাৎ সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন, যদি তোমাদের মধ্যে কেউ উহুদ পাহাড় বরাবর স্বর্ণ ব্যয় করে, তাহলেও তাঁদের কারোর এক মুদ অথবা অর্ধ মুদ্দের সমান হবে না।
  • [সহীহ মুসলিম শরীফ,হাদীস নং-২৫৪০]
    এ হাদীস পস্কিার প্রমান করে, সাহাবাগণ আল্লাহর কাছে কত মর্যাদাবান। কত শ্রেষ্ঠ। অন্যরা উহুদ পাহাড় পরিমাণ নেক কাজ করলেও সাহাবাগণের অর্ধেক মুদ পরিমাণ নেক কাজের মুকাবিলা করতে পারে না।
    ৫.রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:-
    ثُمَّ قَالَ: لَمَشْهَدُ رَجُلٍ مِنْهُمْ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَغْبَرُّ فِيهِ وَجْهُهُ، خَيْرٌ مِنْ عَمَلِ أَحَدِكُمْ عُمُرَهُ، وَلَوْ عُمِّرَ عُمُرَ نُوحٍ
    অর্থাৎ অতঃপর বললেন, তাঁদের (সাহাবাগণের) কোনো একজনের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্য লাভের আমল, যে সাহচর্যের আমলে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাও তোমাদের কোনো ব্যক্তির সারা জীবনের আমলের চেয়ে উত্তম, যদিও সে নূহ (আঃ)-এর মতো দীর্ঘ হায়াত পায়।
    -[সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৬৫০]
    এ হাদীসে সমস্ত সাহাবাগণের মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে। একজন সাহাবী যিনি নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্য পেয়েছেন, যদিও তার সাহচর্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্তুষ্ট নাও হয়ে থাকেন, তবু সেই সাহাবী সাড়ে নয়শত বছর যাবত ইবাদতকারী ব্যক্তি থেকে উত্তম।
    ৬.
    ابْنُ عُمَرَ يَقُولُ: «لَا تَسُبُّوا أَصْحَابَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمُقَامُ أَحَدِهِمْ سَاعَةً، خَيْرٌ مِنْ عَمَلِ أَحَدِكُمْ عُمُرَهُ

অর্থাৎ ইবনে উমর রাঃ বলেন, তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবাগণের সমালোচনা করো না, (গালি দিও না) তাঁদের এক মুহুর্তের সৎকাজ, তোমাদের সারা জীবনের সৎকাজের চেয়ে উত্তম।
-[সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৪৬, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩৩০৮২]

এসকল বর্ণনা থেকে হযরত সাহাবায়ে কেরাম রবি আল্লাহ তায়ালা আনহুমগণের মান মর্যাদা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক বোঝ দান করুন এবং তদনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

মুফতি মোজাম্মেল হক রহমানী
ফাযেলঃ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা।
সিনিয়র উস্তাদঃ মদিনাতুল উলূম বসুন্ধরা, ঢাকা।

মুফতি নাজমুল হাসান সাকিব
মুফতি নাজমুল হাসান সাকিব
নাম: নাজমুল হাসান সাকিব পিতা: মুজিবুর রহমান স্থায়ী ঠিকানা: বাহেরবালী, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ। বর্তমান ঠিকানা: বসুন্ধরা, বারিধারা, ঢাকা ১২২৯ পড়াশোনাঃ- বাহেরবালী দারুল উলূম নূমানিয়া মাদরাসা, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ। (নূরানী টু হেদায়াতুন্নাহ্) জামিয়াতুস সালাম মদিনাবাগ, মুগদা, সবুজবাগ, ঢাকা। (কাফিয়া-শরহে বেকায়া) মারকাজুল উলূম আল-ইসলামিয়া মান্ডা, মুগদা, সবুজবাগ, ঢাকা। (আরবী স্নাতক ৪র্থ বর্ষ) মদিনাতুল উলূম বসুন্ধরা মাদরাসা ( হেদায়া) মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা। (এম এ- মাস্টার্স) আল মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশ। (ইসলামি আইন ও গবেষণা বিভাগ) পেশা: লেখালেখি ও পড়াশোনা। (ভবিষ্যত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এখনো অধ্যায়ণরত)।
RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments