নামায দ্বীনের অন্যতম একটি স্তম্ভ। নামাযকে যথাযথভাবে সুন্নত অনুযায়ী আদায় করা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব। আমরা কোনো চিন্তা ফিকির ছাড়াই নামাযের আরকান যেমন বুঝে আসে, তেমনি আদায় করে যাচ্ছি। এ কথার খেয়াল আমরা কখনোই করছি না যে, সেইসব আরকান সুন্নত তরীকায় আদায় হয়েছে কিনা? একারণেই আমাদের নামায সুন্নতের নূর এবং বরকত থেকে বন্চিত থেকে যায়। অথচ এই আরকানগুলো যথাযথভাবে আদায় করার জন্য না অতিরিক্ত সময় ব্যায় করতে হয়, আর না কোনো বেশী কষ্ট স্বীকার করতে হয়। কেবল মাত্র একটু সতর্কতার ব্যাপার। ব্যস্! এতটুকুই যথেষ্ট। আমরা যদি সামান্য সতর্কতা অবলম্বন করে সঠিক পদ্ধতিটি জেনে ও শিখে নেই, তাহলে এখনো আমরা যে সময়ে নামায আদায়ে ব্যায় করছি, তখনও কিন্তু ঠিক ততটুকু সময়ের মাঝেই সেই নামাযটি সুন্নত মোতাবেক আদয় হয়ে যাবে। আর তার সাওয়াব, প্রতিদান এবং নূর বরকতও পূর্বের নামাযের চেয়ে হবে বহুগুণ বেশী।
হযরত সাহাবায়ে কেরাম নামাযের প্রতিটি আমল খুব সতর্কভাবে সুন্নত অনুযায়ী সম্পাদনে ছিলেন সদা তৎপর। তাঁরা পরস্পর সুন্নতের খুটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করতেন। জেনে নিতেন একজন অপরজন থেকে। তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন সুন্নতের বাস্তব নমুনা।নামায ইসলামের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং বরকতময় ফরিযা, যা মহান রব্বুল আলামীন আল্লাহ তা’লা মিরাজের রজনীতে হুযুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিশেষ উপহার হিসেবে প্রদান করেছেন। এ নামাযকেই অবহিত করা হয়েছে বেহেশতের কুঞ্জী হিসাবে। নামাযের উপমা হল-
একব্যক্তি কাউকে অপ্যায়নের জন্য আমন্ত্রণ জানাল। খাবারের টেবিলটিও পরিপাটি করে সাজাল। এরপর ঐব্যক্তি অতিথিকে বলল- এই দেখুন! ময়দা, চাউল রেডি আছে, গোস্ত এবং আনুষাঙ্গিক সবকিছুই রাখা আছে। এককথায় সবকিছুই প্রস্তুত। পাঠক! আপনিই বলুন, অতিথি কি খাবার খেতে পারবে? এগুলো ঠিকঠাকভাবে রান্না-বান্না না করে দিলে কি তা খাওয়া সম্ভব?
নামাযের ব্যাপারটা ঠিক তেমনি। একটু সামান্য লক্ষ করলেই বুঝা যাবে যে, মাশাল্লাহ আপনার অযূ, গোসল সব ঠিকঠাক আছে। কাপর জায়গা পবিত্র। ঠিক কিবলার দিকে রুখ করে দাড়াতেও ভুল হয়নাই আপনার। কিরাত তিলাওয়াতও সহিহ্ শুদ্ধ। কিন্তু যথাযথভাবে তার আরকান আদায় হচ্ছে না। রুকু, সিজদা এবং অন্যান্য আরকানগুলো শরীয়ত নির্দেশিত পন্থায় পালিত হচ্ছে না। পাঠক আপনিই বলুন! আল্লাহ তা’লার দরবারে এর গ্রহণ যোগ্যতা কতটুকু হতে পারে? এখানে যেমনিভাবে বলা যায় যে, এই খানা অতিথির খাওয়ার যোগ্য হয়নি, ঠিক তেমনিভাবে এই নামাযও আল্লাহ তা’লার দরবারে গ্রহণ যোগ্য হয়নি।
এজন্য প্রত্যেক মুসলমানের অপরিহার্য দায়িত্ব হচ্ছে, নামাযের গুরুত্ব দেয়া। সতর্কতার সাথে নামায আদায় করা, যেন নামাযী মাত্র অনুভব করতে পারে যে, সে নামাযে কি পড়ছে এবং কি করছে? সঠিক সহিহভাবে নামায আদায় করলে মুসলমানরা মনযিলে মকসূদে পৌছতে সক্ষম হবে। আল্লাহ তা’লা তাদের উপর রহমত ও করুণার বারি বর্ষাবেন। তাই আসুন আমরা নামায আদায়ের সঠিক পদ্ধতিটি জেনে নিয়ে আল্লাহ তা’লার রেযা ও সন্তুষ্টি অর্জন করি।
নামাযের মাসায়েলের উপর এ যাবৎ ছোট বড় বহু গ্রন্থই প্রকাশিত হয়েছে। এখানে নামাযের সব মাসায়েল বর্ণনা মুখ্য উদ্দেশ্য নয়; বরং এই লেখায় নামাযের রুকনগুলো সুন্নত মোতাবেক আদায়ের প্রকৃত রুপ কি হবে? তারই গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এবং সতর্ক করা হয়েছে, সেইসব ভূল ও দোষ-ত্রুটি সম্পর্কে, যেগুলো আজকাল হর-হামেশাই ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। লেখায় বর্ণিত বিষয়গুলোর প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রেখে আমল করলে বাহ্যিক দৃষ্টিতে নামায সুন্নত মোতাবেক আদয় হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আর তখন একজন মুসলমান মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তা’লার দরবারে কমপক্ষে এই আরযিটুকু পেশ করতে হিম্মত পাব।
তোমার বন্ধুর হে প্রভূ! ধারণ করে এসেছি আমি আকৃতি
সাদৃশ্য ধারণ করে এসেছি, তুমি করে দাও তাকে হাকিকি
এই সংক্ষিপ্ত অনুলিখনে নামাযের মসনূন তরীকা এবং নামাযেকে তার যাবতীয় আদাবসহ আদায় করার সঠিক ও সহিহ পদ্ধতি তুলে ধরার প্রায়াস চালানো হয়েছে। আল্লাহ তা’লা এই লেখাকে আমাদের সকলের জন্য উপকারী করে দিন এবং সেই অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন!
[ পাকিস্তানের সিদ্দিকী ট্রাষ্টের পক্ষ থেকে জাস্টিস আল্লামা তাকী উসমানীর একটি ছোট রিসালা “নামায পড়ুন সুন্নত মোতাবেক” থেকে সংগ্রহীত ]
বাংলা অনুবাদ করেছেন মরহুম মুফতি ফজলুল হক আমিনি রহ.