Thursday, April 25, 2024
No menu items!
Homeসিরাতুন নবী (সা.)বদর যুদ্ধের গুরুত্ব ও তাৎপর্য - সিরাতুন নবী (সাঃ)

বদর যুদ্ধের গুরুত্ব ও তাৎপর্য – সিরাতুন নবী (সাঃ)

দ্বিতীয় হিজরীর রমযান মাসে সংঘটিত হয়েছিল গযওয়ায়ে বদরে কুবরা ( তথা বদর প্রান্তেরের বৃহত্তম যুদ্ধ) । এটাই ছিল সেই ঐতিহাসিক যুদ্ধ যা মুসলিম জাতির ভবিষ্যৎ নিরাপদ ও নিশ্চিত করেছিল; ইসলামি দাওয়াতের কণ্টকাকীর্ণ পথ সুগম ও সহজ করেছিল। আর যার ওপর নির্ভরশীল ছিল গোটা মানবতার আদর্শিক ও আধ্যাতিক গন্তব্য।
এ কারণেই পরবর্তী সময়ে ইসলামি সমর ইতিহাসের পারতে পারতে সে যতগুলো সফলতা আর বিজয়ের বরমাল্য ভূষিত হয়েছিল, এক লা- শারীক ইলাহ আর রিসালাতে মুস্তফার কালিমা খচিত ঝান্ডা পৃথিবীর যতগুলো ভূখণ্ডের আকাশে সগর্বে উড়েছিল- তারা সবাই বদর প্রান্তরের সেই প্রকাশ্য বিজয়ের কাছে ঋণী হয়ে আছে। আর কারণেই আল্লাহ তা’লা এ যুদ্ধের নাম রেখেছেন ‘ফয়সালার দিন’ কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে-

যদি তোমাদের বিশ্বাস থাকে আল্লাহর ওপর এবং সে বিষয়ের ওপর যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি ফয়সালার দিন, যেদিন সম্মুখীন হয়ে যায় উভয় সেনাদল। [ সূরা আনফালঃ৪১]


যুদ্ধের পটভূমি : রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে সংবাদ এসে পৌঁছল, কুরাইশের একটি বিশাল বানিজ্যিক কাফেলা আবু সুফিয়ান ইবনে হরবের নেতৃত্বে সিরিয়া থেকে ফিরে আসছে। সেখানে রয়েছে তাদের বহু দিনের কামাই- প্রচুর ধন-সম্পদ আর মুল্যবান ব্যবসায়িক সারো-সামান। মনে রাখতে হবেন, এটা ছিল সেই সময়ের কথা- যখন ইসলামের অনুসারী মুসলমান আর শীরক পূজারী সেই কুরাইশদের মাঝে সংঘাত আর সংঘর্ষের ছাইচাপা আগুন থেকে জ্বলে উঠছিল।

ইসলামের বিরুদ্ধে যে কোনো সুযোগে কোমর বেধে রণাঙ্গনে নেমে আসত, আল্লাহর পথে বাঁধা দিতে আর মুসলমানদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করার লক্ষে তাদের পথে বড় বড় খুঁটি দিতে তারা এতটুকু ত্রুটি করেছিল না। ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ক্ষেত্রে, মুসলমানদেরকে বেহাল দশার বাগাড়ে ঠেলে ফেলার ক্ষেত্রে তারা দিনরাত তাদের সকল শক্ত-সামর্থ্য, উপায়-উপকরণ আর অর্থ সম্পত্তি দেদারসে ঢেলে যাচ্ছিল। ইতোমধ্যে তাদের সেনাবাহিনী মদিনা সীমান্তের প্রতি হাত বাড়িয়ে ছিল, মদিনার চারণভূমিতে এসে হুলুস্থুল কান্ড বাধিয়ে গিয়েছিল।


পাশাপাশি রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছে ছিল যে, এ বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন আবু সুফিয়ান (তখনো তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি)। তিনি ছিলেন তখন ইসলামের বিরুদ্ধে সকল দুশমনি আর ষড়যন্ত্রের গুরুঠাকুর। তাই রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সঙ্গে সঙ্গে সাহাবায়ে কেরামের একটি বাহিনী প্রস্তুত করলেন। বাকি এখানে যেহেতু কোনো সশস্ত্র সংগ্রামের ব্যাপার ছিল না; তাই এ সেনা অভিযানের জন্য বড় কোনো আহ্বান আয়োজন করা হয়নি।


অপরদিকে রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এ বাহিনী প্রেরণের সংবাদ আবু সুফিয়ানের কানে গিয়ে পড়ল তিনি তৎক্ষনাৎ মুসলিম বাহিনী থেকে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কুরাইশদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে ঝড়ো গতিতে এজ দূত পাঠিয়ে দিলেন। দূতের মিখে অনাকাঙ্ক্ষিত এ বিপদের কথা শোনে সকলে কান খাড়া করল। চরম উন্মাদনায় ফেটে পড়ে দ্রুত এক বিশাল বাহিনী প্রস্তুত করে ফেলল। কুরাইশের নেতৃস্থানীয় একজনও এ বাহিনী থেকে পাশ কাটিয়ে পেছনে বসে রইল না। আশেপাশের কবিলাগুলোও এসে তাদের দলে ভিড়ল। হাতে গনা কয়েকটি কুরাইশ শাখাগোত্র কেবল তাদের সঙ্গে এলোনা। এভাবে অতি অল্প সময়ে এক বিশাল বাহিনী মক্কা থেকে বের হলো। মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে প্রত্যকের দাত কড়মড় করছিল। নাক আর কান দিয়ে হিংসার ধোঁয়া বের হচ্ছিল। রাগে আর ক্রোধে সবাই ঠোঁট কাড়াচ্ছিল।

আনসারদের কুরবানির স্পৃহা ও আনুগত্যের উপমা

রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরাইশদের যাত্রার খবর পাওয়া মাত্রই নেতৃস্থানীয় সাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শ করতে বসে গেলেন।
এ ক্ষেত্রে তার লক্ষ্যবস্তু ও মনােযোগের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন মদীনার আনসারগণ। কেননা তারা কেবল মদিনার ভেতরে বসে লড়াই ও সংঘাতের ক্ষেত্রে সাহায্য সহযােগিতা করার ওপর বাইয়াত হয়েছিলেন। এ কারণে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইচ্ছা ছিল যখন মদীনা থেকে বেরিয়ে লড়াই করা তাই তিনি আনসারদের মনোবাঞ্ছা ও খাহেশ জানতে আগ্রহী ছিলেন। পরামর্শের শুরুতে ব্যাপকভাবে সকলের নিকট রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় অভিরুচির কথা জানালে মুহাজিরগণ সাদরে সম্মতি জানালেন।এবং বিনয়ের মস্তক দরবারে রিসালাতে অবনত করে দিলেন।


অতঃপর তিনি দ্বিতীয়বার আবার তাদের অভিলাষ কী তা জানতে চাইলে মুহাজিরগণ আবার তাদের আগ্রহ উদ্দীপনার কথা তুলে ধরলেন।
কিন্তু রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মন যেহেতু ভিন্ন কিছু চাচ্ছিল তাই তিনি তৃতীয়বার আবার তাদের কাছে পরামর্শ চাইলেন। তখন আনসারগণ বুঝে ফেললেন, আল্লাহর রাসূলের সম্বােধন মূলত তাদেরকে লক্ষ্য করেই। তাই তাদের নেতা সা’দ বিন মুয়ায রা, তৎক্ষণাৎ দাড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার সম্বােধন সম্ভবত আমাদেরকে লক্ষ্য করেই হবে ।
আনসারগণ মদীনার বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করে কি না এ নিয়ে বােধহয় আপনি শঙ্কিত। আমিই তাদের পক্ষ থেকে সবকিছু বলব। তাদের সকলের জবাব


আমিই দিব। ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার যেদিকে খুশি সে দিকে যাত্রা করুন।
যাকে ইচ্ছা আপনি সঙ্গে রাখুন। আর যাকে ইচ্ছা আপনি রেখে যান। আমাদের
ধন-সম্পদ থেকে আপনি যা চান সানন্দে গ্রহণ করুন। আমাদেরকে আপনি যা ইচ্ছা দান করুন। তবে আমাদের থেকে আপনার না নেওয়া জিনিসগুলাের তুলনায় নেওয়া জিনিসগুলােই অধিকতর পছন্দনীয় ও সুখকর মনে হবে। কোনাে ব্যাপারে আপনার সিদ্ধান্তই আমাদের চূড়ান্ত ও সর্বশেষ সিদ্ধান্ত । আল্লাহর কসম! আপনি যদি বারকুল গিমাদ পর্যন্ত চলে যান তবে আমরাও আপনার সঙ্গে যাব। আল্লাহর কসম! যদি আমাদের সামনে এই তরঙ্গাকুল কল্লোলসংকুল
সমুদ্রও অন্তরায় হয় তবে আমরা আপনার সঙ্গে তার বুকে ঝাঁপ দিব।

মিক্বদাদ রা. বললেন, মূসা আ. এর কওম যেমন তাকে বলেছিল আপনি এবং আপনার রব দু’জনে যুদ্ধ করুন গিয়ে; আমরা এখানেই বসে আছি আমরা কখনোই আপনাকে এরুপ বলব না; বরং আমরা আপনার ডানে, বামে, সামনে, পিছনে সর্বদিকে, যুদ্ধ করবো।

তখন রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চন্দ্রবদনে পুলকের ঝিলিক খেলে গেল। আপন সাহাবায়ে কেরাম তাঁর প্রতি এ গভীর অনুরাগ আর তাঁর নির্দেশের প্রতি এ পরম অবনত শির দেখে তার অন্তরাত্মা অনির্বচনীয় আনন্দরসে অপ্লুত হয়ে উঠল। তিনি বললেন তোমরা যাত্রা শুরু কর! সুসংবাদ গ্রহণ কর!!

নোট: ইতিহাস জানার কোনো বিকল্প নাই। ইতিহাস থেকে আমরা অনেক কিছু জানি, অনেক কিছু শিখি। আবার অনেক মহা মানবের জীবন ইতিহাস পড়ে তৃপ্তির ঢেকুর ফেলি। কিন্তু আমরা কি কখনো চিন্তা করেছি যে, হয়তো আমরা সাময়িক মজা অনুভব করি কিন্তু তার থেকে কোনো ফায়দা আমাদের হচ্ছে না। কিন্তু আমরা এমন একজন মহা মানবের জীবন আলোচনা করেছি যা, ফায়দা থেকে খালি খালি নাই। দ্বীন শিক্ষা ডট কমের পক্ষ থেকে আমরা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনি থেকে যুদ্ধের কিছু ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সংক্ষিপ্ত আকারে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যদি কোনো ধরনের ভূল-ভ্রান্তি হয় আশাকরি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

প্রিয় পাঠক আমরা রাসূলে সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এত পরিমাণ লম্বা করিনাই যাতেকরে পড়ে আপনারা বিরক্ত হন, আবার এত পরিমাণ সংক্ষিপ্তও করিনাই যাতে বিষয়টি পড়ে মনের মধ্যে তৃপ্তি না আসে। সর্বদিকে বিবেচনা করেই আমরা লেখাটাকে মধ্যম পন্থায় লিখেছি। আরও জেনে খুশি হবেন যে, আমরা এই লেখাটা যেই গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করেছি আর তা হল;

আস সিরাতুন নববীয়্যাহ

মুল লেখক:
আবুল হাসান আলী নদবী র.

অনুবাদ করেছেন :
মীযান বিন হারুন দামাত বারকাতুহুম

খুব সুন্দর এবং জাদুকরী লেখা। যখন পড়া শুরু করবেন আশাকরি ভালো লাগবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments