Saturday, November 16, 2024
No menu items!
Homeসিরাতুন নবী (সা.)সিংহের গর্জন

সিংহের গর্জন

রাসুলের দূত হত্যা ও তার শাস্তি
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোম সম্রাটের পক্ষ থেকে বুশরার গভর্নর শুরাহবীল ইবনে আমর গাসসানি বরাবর পত্র দিয়ে প্রেরণ করেছিলেন সাহাবী হারিস ইবনে উমাইর আজাদী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে। শুরাহবীল তাকে প্রথমে বেঁধে রাখল অতঃপর তরবারি দিয়ে তার ঘাড় উড়িয়ে দিল।দূত যত মারাত্মক সংবাদই বহন করে নিয়ে যাক না কেন-

পৃথিবীর রাজা বাদশা ও সম্রাটদের দূত কখনোই হত্যার নীতি ছিল না। বস্তুত এটা ছিল এমন একটি অপরাধ যার শাস্তি না দিয়ে পারা যায় না।য় কারণ এটা গোটা পৃথিবীর সমস্ত দূত ও পত্রবাহক কে চরম বিপদ আর সংখ্যার অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিল। পাশাপাশি পত্রফলক ও তাঁর প্রেরিত বার্তার বিরুদ্ধেও এটা ছিল একটা চরম বেয়াদবী। আর তাই এই বেয়াদব কে শিক্ষা দেওয়াটা তখন জরুরি হয়ে পড়েছিল। যাতে করে ভবিষ্যতে পত্রবাহকদের জীবন আর কোনদিন এমন সর্বনাশ নেমে না আসে। পাশাপাশি এই ধরনের দুঃখজনক ট্রাজেডির আর জেনো পুনবায়ন না হয়।

রুমের মাটিতে সর্বপ্রথম মুসলিম বাহিনী

রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এই দুঃখজনক সংবাদ পৌঁছামাত্রই তিনি বুশরার দিকে একটি বাহিনী পাঠানোর মনস্থ করলেন। এটা ছিল হিজরতের অষ্টম বর্ষের জুমাদাল উলা মাসের ঘটনা। সাহাবায়ে কেরাম প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। তারের সংখ্যা ছিল তিন হাজার। তাদের আমির হিসেবে নির্ধারণ করলেন তার গোলাম যায়েদ বিন হারেসা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে। অথচ সেই বাহিনীতে বড় বড় মুহাজির ও আনসার সাহাবায়ে কেরাম শরিক হয়েছিলেন।

রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে- যদি যায়েদ বিন হারেসা শহীদ হয়ে যায়, তবে জাফর বিন আবু তালেব আমির হবে। আর যদি জাফর বিন আবু তালেব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু শহীদ হয়ে যায় তবে আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু আমির হবে। যখন তাদের যাত্রা সময় হলো লোকেরা এসে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর আমীরগণ কে বিদায় সালাম জানালেন। আর তাদের সামনে ছিল কষ্ট সংকুল একটি প্রলম্বিত সুদীর্ঘ পথ। তৎকালীন সর্বাধুনিক সমরাস্ত্রে সুসজ্জিত দৈত্যকায় দুশমনের বিশাল বাহিনী।


মুসলিম বাহিনী মদিনা থেকে বের হয়ে মাআন নামক স্থানে এসে যাত্রাবিরতি দিল। সেখানে তাদের কাছে এসে সংবাদ পৌঁছল যে, এক লক্ষ রোমান সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী নিয়ে সম্রাট হিরাক্লিয়াস বলকাতে রয়েছেন। তাছাড়া লখম, জুযাম, বলকাইন, বহরা, বালী ইত্যাদি আরব কবিলার অসংখ্য সৈন্যও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। তখন মুসলিম বাহিনী পরামর্শে মধ্য দিয়ে মাআইনেই দুদিন কাটিয়ে দিলেন। পরিশেষে তারা সিদ্ধান্ত নিলেন- আমরা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পত্র লিখে পুরো ব্যাপারটি জানিয়ে দিব। হয়তো তিনি আমাদেরকে আরো সৈন্য দিবেন নয়তো আমাদেরকে আগে বাড়ার নির্দেশ দিবেন। তখন আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করব।

আমরা জনগন কিংবা অস্ত্র বলে যুদ্ধ করি না

তখন আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু লোকদেরকে জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে তুললেন। তিনি বললেন, হে আমার কওম! তোমরা কি এখন সেই জিনিস কে অপছন্দ করছো যার তালাশেই তোমরা বের হয়েছো? তোমরা কি শাহাদাত চাচ্ছ না? মনে রেখো- আমরাতো অস্ত্রগল কিংবা জনগণের দোহাই দিয়ে যুদ্ধ করি না। বরং আমরা যুদ্ধ করি এই দীন দিয়ে আল্লাহ তা’আলা যার দ্বারা আমাদেরকে ইজ্জত দিয়েছেন। তাই তোমরা সামনের দিকে বাড়ো । তাতে দুই ভালোর একটা তো অর্জিত হবে। মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী। তখন মুসলিম বাহিনী আবার সামনে এগিয়ে চলল।

সিংহের গর্জন
যখন মুসলিম বাহিনী বলকার কাছাকাছি পৌঁছলো, তখন তারা জানতে পারল যে, রোমান ও আরব সৈন্যরা বলকার মাসারিফ নামক একটি গ্রামে অবতরণ করেছে। মুসলমানদের আগমনের সংবাদ পেয়ে শত্রুবাহিনী সামনে অগ্রসর হল। মুসলমানরা তখন মুতা নামক একটি গ্রামে নিজেদের অবস্থান নিলেন। বস্তুত এখানেই সংঘটিত হয়েছিল সেই ঐতিহাসিক যুদ্ধ।


জায়েদ বিন হারেস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর বেঁধে দেওয়া পতাকা নিয়ে যুদ্ধ করতে করতে এক পর্যায়ে শাহাদাতের পেয়ালায় ঠোঁট লাগালেন। বর্শা তার শরীর চালনিরর মত ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে জাফর বিন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পতাকা হাতে তুলে নিলেন এবং যুদ্ধ চালিয়ে যেতে লাগলেন। যুদ্ধ যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছলো তখন তিনি ঘোড়া থেকে লাফ দিয়ে নীচে নেমে ঘোড়ার পা কেটে দিয়ে আবার মাটিতেই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে লাগলেন।

এক পর্যায়ে তার ডান হাত কেটে গেল। তিনি বাম হাত দিয়ে পতাকা উচু করে ধরলেন। পরিশেষে এক পর্যায়ে তিনি শহীদ হয়ে জান্নাতের পথ ধরলেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র তেত্রিশ বছর। মুসলমানরা পরবর্তীতে তার বুক, কাধ ও অন্যান্য জায়গায় সর্বমোট নব্বইটি আঘাত লক্ষ করেছিলেন। তার কোন উঠেছিল তরবারির, কোনটি ছিল বর্শার। বাকি সবগুলোই ছিল সামনের দিক দিয়ে। এর দ্বারা বুঝা যায় তিনি পেছনে সরে যাওয়ার আদৌ কোনো চিন্তাই করে নি। কিভাবে তিনি শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করলেন। বস্তুত জীবন ও জিন্দেগীর প্রতি তিনি মোটেও লালায়িত ছিলেন না। তিনি লালায়িত ছিলেন ওই শাহাদাতের প্রতি। পরিশেষে তার মনের তামান্না পূর্ণ হল। শত্রু আর দুনিয়ার সৌন্দর্যের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে সর্বোত্তম বন্ধুর পথে শান্ত জীবন বিলিয়ে দিয়ে এক অনন্ত জীবনের পথে যাত্রা করলেন।


জাফর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু শহীদ হয়ে গেলে আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু সামনে অগ্রসর হয়ে পতাকা হাতে তুলে নিলেন। তিনি তার ঘোড়া থেকে মাটিতে অবতরণ করলেন। তখন তার এক চাচাতো ভাই একখানি গোশত ওয়ালা হাড় নিয়ে এসে বলল, এর দ্বারা একটু শক্তি সঞ্চয় করুন। এতদিন আপনি প্রচুর কষ্ট করেছেন। তখন তিনি সেটা হাতে নিলেন এবং অল্প একটু খেলেন। অতঃপর সেটা ফেলে দিয়ে হাতে তরবারি উঠিয়ে নিয়ে যুদ্ধের মধ্যে ঢুকে গেলেন। এবং শাহাদত বরণ করলেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments