Friday, March 29, 2024
No menu items!
Homeসাহাবিদের জীবনীহযরত সাহাবায়ে কেরাম রাদিঃ এর মর্যাদার মাপকাঠি হচ্ছে কোরআন-সুন্নাহ।

হযরত সাহাবায়ে কেরাম রাদিঃ এর মর্যাদার মাপকাঠি হচ্ছে কোরআন-সুন্নাহ।

হযরত সাহাবায়ে কেরাম রাদিঃ এর মর্যাদার মাপকাঠি হচ্ছে কোরআন-সুন্নাহ।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদা হচ্ছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর আর কেউ নিষ্পাপ নয়। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি আম্বিয়ায়ে কেরাম (আঃ) এর জামাত ব্যতীত অন্য কাউকে নিষ্পাপ দাবি করে, তাহলে সে তার দাবিতে যুঠা এবং মিথ্যুক। এজন্য আম্বিয়ায়ে কেরাম এর জামাত ব্যতীত অন্য যে কোনো ব্যক্তি থেকে ভুল-শুদ্ধ, ভালো-মন্দ উভয়ই প্রকাশ হওয়া সম্ভব। তবে আল্লাহ তায়ালার এমন কিছু নেক বান্দা রয়েছে যাদের থেকে ভালো ও কল্যাণকর কাজকর্ম বেশি প্রকাশ পায়। এজন্য তাদেরকে নেককার, পুণ্যবান ও আল্লাহর অলি প্রভৃতি সম্মানিত নামে স্মরণ করা হয়। এর উদ্দেশ্য আদৌ এটা নয় যে, তাঁরা কোন সময় হোঁচট খাবে না, তাঁরা গুনাহ থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র।

তাঁদের বিপরীতে একদল হতভাগা রয়েছে, যারা গুনাহ-পাপের সমষ্টি, ফেতনা-ফাসাদের মূল হোতা। তাদের এ দুর্নীতি ও ফিতনা-ফাসাদ তাদেরকে জালেম-সন্ত্রাসীদের কাতারে দাঁড় করিয়েছে।
তবুও তাদের জীবনের আঁচল ইনসাফ-ন্যায়পরায়নতার নীতি-আদর্শ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত নয়। তাদের থেকেও মাঝেমধ্যে ভালো কাজের প্রকাশ ঘটতে পারে।
যেভাবে নেককার ও পুণ্যবানদের অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ভুল-ত্রুটি ও মানবিক ঘাটতির কারণে তাঁদের জীবনের সকল নেককাজ ও সঠিক অবদানের উপর বাতিল করনের রেখা টেনে দিয়ে, তাঁদের সকল ভালকাজ ও প্রশংসনীয় অবদানকে অস্বীকার করে, জালেম-সন্ত্রাসীদের কাতারে দাড় করিয়ে দেওয়া সম্পূর্ণ ভুল।
তদ্রুপভাবে জালেম ও সন্ত্রাসীদের হাতেগোনা কিছু ভালকাজের কারণে, তাদের জীবনের সকল কালো অধ্যায়কে আড়াল করে, নেককার-পুণ্যবানদের জামাতে শামিল করে দেয়াও সম্পূর্ণ ভুল।
হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা হতে বর্ণিত তিনি বলেন:-
أمَرَنا رسولُ اللّٰہ صلی اللّٰہ علیہ وسلم أن نُنْزِلَ الناسَ مَنازِلَہم
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিটি মানুষকে তার যথাস্থানে রেখে সম্মান করতে।
কুরআনে কারীমে রয়েছে:-
یا أیہا الذین آمنوا إنْ جائکم فاسِقٌ بِنَبَائٍ فَتَبَیَّنُوا
অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ, কোন ফাছেক যদি তোমাদের কাছে সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমার এর তাহকীক করে নাও।
অতএব হযরত সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমের শান-সম্মান ও মান-মর্যাদা নিয়ে লেখালেখি ও কথাবার্তার জন্য শুধু ঐতিহাসিক বর্ণনা যথেষ্ট নয়। ঐতিহাসিক বর্ণনায় পূর্ণাঙ্গ ভরসা ও সীমাবদ্ধতা একজন লেখককে সহজ সরল পথ ও সঠিক রাস্তা থেকে সরে দিতে পারে। কারণ ঐতিহাসিক কোন বর্ণনা কুরআন-সুন্নাহের সর্বস্বীকৃত বিষয়ের বিপরীতে আদৌ দলিল হতে পারে না।
হযরত সাহাবায়ে কেরামই (রাদিঃ) রসুল (সা.) ও তাঁর উম্মতের মধ্যে প্রথম মধ্যসূত্র। পরবর্তী উম্মত আল্লাহর কালাম পবিত্র কোরআন, কোরআনের ব্যাখ্যা, আল্লাহর রসুলের পরিচয়, তাঁর শিক্ষা, আদর্শ, মোটকথা দীনের সব কিছুই একমাত্র তাঁদেরই সূত্রে, তাঁদেরই মাধ্যমে জানতে পেরেছেন।
তাঁরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের সাথী, তাঁর বানী ও শিক্ষাকে সারাবিশ্বে পৌঁছেছেন। তাদের এ দাওয়াতী কাজের বর্ণনা আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে কারীমে দিয়েছেন:-
قُلْ ہٰذِہٖ سَبِیْلِیْ اَدْعُوْا إِلَی اللّٰہِ عَلیٰ بَصِیْرَۃٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِیْ
অর্থাৎ আপনি বলে দিন, এটা আমার রাস্তা, আমি ও আমার সাহাবায়ে কেরাম বুঝে শুনে আল্লাহর দিকে আহবান করছি।
কোন অন্ধ অনুকরণের জন্য নয়, বরং দলিল-প্রমাণের মাধ্যমে বুঝে-শুনে, স্বজ্ঞানে আমি ও আমার সাহাবায়ে কেরাম দ্বীনে তাওহিদের দিকে আহবান করছি।
আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অন্তর্দৃষ্টি ও অভিজ্ঞতার যে, জ্যোতি দান করেছিলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংশ্রব ও সাহচর্যের বরকতে সকল সাহাবায়ে কেরামের দিলোদেমাগ আলোকিত ছিল।
তাঁরা স্বজ্ঞানে বুঝে-শুনে আল্লাহর পথে আহ্বান করার ক্ষেত্রে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহকর্মী ছিলেন। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন (ما أنا عليه واصحابي) অর্থাৎ “আমি এবং আমার সাহাবী যে পথে আছি” বলে সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) এর, এ উচ্চ মর্যাদার বর্ণনা দিয়েছেন। কারণ প্রকৃতপক্ষে সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) এর আদর্শ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শেরই অংশবিশেষ।
এজন্য শুধু ঐতিহাসিক বর্ণনার ভিত্তিতে তাঁদের মাপা যাবে না, বরং তাঁদেরকে মাপতে হবে কুরআন-সুন্নাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের কষ্টিপাথরে।
কাজী ঈয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন:-
من توقیرہ صلی اللّٰہ علیہ وسلم توقیر اصحابہ وبرہم معرفۃ حقہم والاقتداء بہم وحسن الثناء علیہم والاستغفار لہم والإمساک عما شجر بینہم ومعاداۃ من عاداہم والاضراب عن أخبار المؤرخین وجہلۃ الرواۃ۔ (الاسالیب البدیعۃ ص۸)
অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) এর সম্মান করা, তাঁদের সাথে ভালো ব্যবহার করা, তাঁদের যথাযথ অনুসরণ করা, তাঁদের প্রশংসা করা, আল্লাহর কাছে তাঁদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা,পরস্পরে তাঁদের মত বিরোধ নিয়ে আলোচনা করা থেকে বিরত থাকা, তাদের শত্রুদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করা ও ঐতিহাসিক অজ্ঞতাপূর্ণ (সাহাবাগণের শান বিরোধী) বিবৃতি বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্মান প্রদর্শন করার শামিল। (আল্ আছালিবুল বাদীআ’হ পৃ নং ০৮,)
শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানি (রাহঃ) বলেন, হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) এর শানে নাযিলকৃত আয়াতগুলো হচ্ছে (ক্বাতয়ী) অকাট্য এবং তাদের শানে বর্ণিত হাদিস গুলো যদিও জন্নী, কিন্তু সনদ খুবই মজবুত। যার সামনে ঐতিহাসিক বিবৃতিগুলো একেবারেই মূল্যহীন। তাই কোরআন-হাদিসের সঙ্গে ঐতিহাসিক কোনো বিবৃতির সংঘর্ষ হলে, ঐতিহাসিক বিবৃতিটিই ভুল ও মিথ্যা সাব্যস্ত হবে।
(মাকতুবাতে শাইখুল ইসলাম ১/২১২, মাকতুব নং ৮৮)
হযরত সাহাবায়ে কেরামের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য কোন ব্যক্তি বিশেষ বা কোন দল উপদলের পক্ষ থেকে নয় বরং সাহাবায়ে কেরামের এই উচ্চ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে প্রদানকৃত। এর প্রমাণ হিসেবে নিচে কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করা হলো।

১.
کنتم خیر أمۃٍ أخرجت للناس تأمرون بالمعروف وتنہون عن المنکر وتؤمنون باللّٰہ۔

অর্থাৎ তোমারা সর্বোত্তম উম্মত, তোমাদেরকে মানুষের কল্যাণে সৃষ্টি করা হয়েছে, তোমরা সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে বারণ করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন করবে। (সূরা আল ইমরান, আয়াত নং ১১০)
হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এ আয়াত পাঠ করে বলেন যদি আল্লাহ তাআলা كنتم خير أمة না বলে, انتم خير أمة বলতেন, তবে গোটা উম্মতে মহাম্মদী উক্ত আয়াতের সম্বর্ধিত ব্যক্তিবর্গের মাঝে সরাসরিভাবে শামিল হতেন। কিন্তু كنتم خير أمة বলে হযরত ছাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) কে সরাসরি সম্বন্ধিত ব্যক্তিবর্গ হিসেবে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। আর অবশিষ্ট উম্মত তাদের ন্যায় আমল করলে, তারাও উক্ত আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবেন।
হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হযরত সাহাবায়ে কেরামকে উক্ত আয়াতের সম্বন্ধিত ব্যক্তিবর্গের মাঝে প্রথম সারিতে রেখেছেন। আর অবশিষ্ট উম্মতের মধ্য থেকে, যারা উক্ত আয়াতে বর্ণিত গুনগুনের উপর আমল করবেন, তাদের উক্ত আয়াতের মাঝে শামিল করেছেন দ্বিতীয় পর্যায়ে।
এবং আরবি ভাষার গ্রামার অনুপাতে কথাটিকে এভাবে বুঝিয়েছেন যে, انتم خير أمة এটা جملہ اسمیہ যার দ্বারা সম্বোধন হয়ে থাকে ব্যাপক, এ ব্যাপকতা-প্রশস্থতায় উপস্থিত-অনুপস্থিত সবাই শামিল। কিন্তু کنتم خیر امۃ হচ্ছে جملہِ فعلیہ যার সম্বোধিত ব্যক্তিবর্গ হচ্ছেন শুধু উপস্থিত সকল।
অর্থাৎ আয়াত নাযিল হওয়ার সময় যারা উপস্থিত ছিলেন তারা হলো এ আয়াতের প্রথম সারির সম্বোধিত ব্যক্তিবর্গ। তাই এ আয়াত থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, আম্বিয়ায়ে কেরাম (আঃ) এর পর সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ হচ্ছেন হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ)।
এখন হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) সম্পর্ক ঐতিহাসিক কোন বর্ণনায় যদি আপত্তি করা হয়, যা কুরআনে কারিমের এ অকাট্য আয়াত বিরোধী হয়, তবে ঐতিহাসিক বর্ণনাটিই প্রত্যাখ্যাত হবে।

২. لا یستوی منکم من انفق من قبل الفتح وقاتل اولٰئک اعظم درجۃ من الذین انفقوا من بعد وقاتلوا وکلا وعد اللّٰہ الحسنٰی۔
অর্থাৎ যারা মক্কা বিজয়ের পূর্বে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেছে এবং জেহাদ করেছে, তাঁদের মর্যাদা সমান নয়, তাঁদের মর্যাদা বড়। যারা মক্কা বিজয়ের পর আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেছে এবং জেহাদ করেছে তাঁদের অপেক্ষা। তবে আল্লাহ তাআলা (যারা মক্কা বিজয়ের পূর্বে এবং মক্কা বিজয়ের পর আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করেছেন ও জেহাদ করেছেন)উভয়ের জন্য (الحسنی) জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। (সূরা হাদীদ আয়াত নং ১০)
এ আয়াত থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) এর মাঝে পারস্পরিক মর্যাদায় তারতম্য থাকলেও সকলেই জান্নাতি।

৩. وَالسَّابِقُونَ الأَوَّلُونَ مِنَ الْمُہَاجِرِینَ وَالأَنصَارِ وَالَّذِینَ اتَّبَعُوہُم بِإِحْسَانٍ رَّضِیَ اللّٰہُ عَنْہُمْ وَرَضُواْ عَنْہُ وَأَعَدَّ لَہُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِی تَحْتَہَا الأَنْہَارُ خَالِدِینَ فِیہَا أَبَدًا ذَلِکَ الْفَوْزُ الْعَظِیمُ
অর্থাৎ মুহাজির এবং আনসার সাহাবায়ে কেরামের মাঝে যারা সর্বপ্রথম ও অগ্রগামী এবং যারা তাঁদের অনুসরণ করেছেন, আল্লাহ তায়ালা তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহ তায়ালার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। আর আল্লাহ তায়ালা তাঁদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে নহরসমূহ। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই মহান কৃতকার্যতা।(সূরা তওবা আয়াত নং ১০০)
এ আয়াতে হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) কে দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে (ক) প্রথম সারির ঈমান গ্রহণে অগ্রগামী সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) (খ) তাদের পরবর্তী অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ)। উভয় শ্রেণীর ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন رضى الله عنهم ورضوا عنه অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহ তায়ালার প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। জান্নাতে তাঁদের বসবাস হবে চিরকাল।
হযরত শাহ আব্দুল আজিজ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লিখেছেন যাদেরকে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা চিরস্থায়ী জান্নাতবাসী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন তাদের নিয়ে যত আপত্তি রয়েছে সবগুলো প্রত্যাখ্যাত সম্পূর্ণ মূল্যহীন। কারণ আল্লাহ তাআলা আলিমুল গায়েব। কে কখন ভালো-মন্দ কি করবে? আল্লাহ তাআলা ভালো করে জানেন। তা সত্ত্বেও যখন আল্লাহ তায়ালা নিজেই ঘোষণা করেছেন, জান্নাতে তাঁদের বসবাস হবে চিরকাল। এটা এ কথার ইঙ্গিত বহন করে যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁদের ভুল-ত্রুটি মাফ করে দিয়েছেন।
তাই এ ক্ষমাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ব্যাপারে আপত্তি করা মানে হল আল্লাহ তায়ালার উপর আপত্তি করা।
তাঁদের সমালোচনা করা মানে এ কথা বলা যে, আল্লাহ তা’আলা তাঁদেরকে জান্নাতবাসী হিসেবে নিযুক্ত করলেন কিভাবে? (নাউজুবিল্লাহ)
(ফাজায়েলে সাহাবা ওয়া আহলে বাইত পৃ নং ২০)
আল্লামা ইবনে তাইমিয়াহ (রহঃ) কাজী আবু ইয়া’লা (রহঃ) এর বরাত দিয়ে লিখেন:- সন্তুষ্ট হওয়া আল্লাহ তায়ালার একটি অনাদি সিফাত বা গুণ। তিনি শুধু ঐসকল বান্দাদের জন্য স্বীয় সন্তুষ্টির ঘোষণা করেন, যাদের ব্যাপারে ভালো করে জানেন যে, তাঁদের মরণ আল্লাহর সন্তুষ্টির উপর হবে। সুতরাং কুরআন-সুন্নাহর বিপরীতে কোন ঐতিহাসিক বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়।(তাফসীরে মারেফুল কোরআন ৮/১০)

৪. هوالَّذِیَ أَیَّدَکَ بِنَصْرِہِ وَبِالْمُؤْمِنِینَ وَأَلَّفَ بَیْنَ قُلُوبِہِمْ لَوْ أَنفَقْتَ مَا فِی الأَرْضِ جَمِیعًا مَّا أَلَّفْتَ بَیْنَ قُلُوبِہِمْ وَلٰـکِنَّ اللّہَ أَلَّفَ بَیْنَہُمْ إِنَّہُ عَزِیزٌ حَکِیم
অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলাই আপনাকে শক্তি জুগিয়েছেন নিজ সাহায্য ও মুমিনদের মাধ্যমে। আর মুমিনদের অন্তরে পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতি সৃষ্টি করেছেন। জমিনের বুকে যা কিছু রয়েছে সেসব যদি আপনি ব্যায় করে ফেলতেন, তবুও তাদের অন্তরে ভালোবাসা-সম্প্রীতি সৃষ্টি করতে পারতেন না। আল্লাহ তাআলা তাঁদের মনে ভালবাসা-মহব্বত সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী, সুকৌশলে।(সূরা আনফাল আয়াত নং ৬২)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন যে, হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) এর মনের মাঝে ভালোবাসা-সম্প্রীতি সৃষ্টি করেছেন।

৫. وَاذْکُرُواْ نِعْمَتَ اللّہِ عَلَیْکُمْ إِذْ کُنتُمْ أَعْدَآئً فَأَلَّفَ بَیْنَ قُلُوبِکُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِہِ إِخْوَاناً۔

অর্থাৎ স্মরণ করো, সে নেয়ামতের কথা, যা আল্লাহ তায়ালা তোমাদেরকে দান করেছেন। তোমরা পরস্পরের শত্রু ছিলে, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের মনের মাঝে ভালোবাসা-সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহে পরস্পর ভাই-ভাই হয়েছো।(সূরা আল ইমরান আয়াত নং ১০৩)
এ আয়াত থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) পরস্পর ভাই-ভাই ছিলেন। তাঁদের অন্তরে ছিল আল্লাহ প্রদত্ত ভালোবাসা-সম্প্রীতি। অতএব এ সকল আয়াতের বিপরীতে ঐতিহাসিক বর্ণনার মাধ্যমে যদি প্রমাণিত হয় যে, সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) এর দিলে পরস্পরে ঘৃণা বিদ্বেষ ছিল, একে অপরকে গালমন্দ করতেন ও শত্রুতা পোষণ করতেন।
তাহলে সেই ঐতিহাসিক বর্ণনাটি মিথ্যাচার ও বানোয়াট হিসেবে সাব্যস্ত হবে।

৬. لَا تَجِدُ قَوْماً یُؤْمِنُونَ بِاللَّہِ وَالْیَوْمِ الآخِرِ یُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللّٰہَ وَرَسُولَہٗ وَلَوْ کَانُوا آبَائَہُمْ أَوْ أَبْنَائَہُمْ أَوْ إِخْوَانَہُمْ أَوْ عَشِیرَتَہُمْ أُوْلَئِکَ کَتَبَ فِی قُلُوبِہِمُ الإِیمَانَ وَأَیَّدَہُم بِرُوحٍ مِّنْہُ

অর্থাৎ যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে, আখেরাতের উপর ঈমান এনেছে তাঁদেরকে আপনি আল্লাহ তাআলা ও তার রসুলের বিরুদ্ধাচরণকারী কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব ও আন্তরিকতা সম্পর্ক রাখে না, যদিও সেই কাফের তাঁদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা নিকটাত্মীয়ও হয়। তাঁদের দিলে আল্লাহ তাআলা ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন স্বীয় অদৃশ্য শক্তি দ্বারা।(সূরা মুজাদালা আয়াত নং ২২)
মুফতি শফি (রহঃ) তাফসীরে মারেফুল কুরআনে লিখেছেন হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) সবারই এই অবস্থা ছিল। অর্থাৎ এই আয়াতের প্রথম মেছদাক্ব হচ্ছেন হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ)।(তাফসীরে মারেফুল কুরআন খন্ড নং ৮, পৃষ্ঠা নং )
এখন এই কুরআনী ঘোষণার বিপরীতে ইতিহাসের পাতায় কেউ যদি একথা লেখে যে, হযরত সাহাবায়ে কেরাম (রাদিঃ) কুরআন-সুন্নাহর বিপরীতে নিজেদের ছেলে, ভাই ও নিকট আত্মীয় স্বজনদের প্রাধান্য দিতেন। তবে এই ঐতিহাসিক বর্ণনা প্রত্যাখ্যাত, আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।

মুফতি মুজাম্মেল হক রাহমানী
মদিনাতুল উলূম বসুন্ধরা, ঢাকা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments