হযরত হালিমা রা. এর ঘরে নবিজী সা. -এর প্রতিপালন ও দুগ্ধ পান- পর্বঃ ১, দ্বীন শিক্ষা.কম
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম গ্রহণের পর প্রথম তিন চারদিন নবীজির মাতা বিবি আমিনা তাকে দুধ পান করান। অতঃপর হযরতের চাচা আবু লাহাবের আযাদকৃতা দাসী ছুওয়াইবা নবীজিকে দুগ্ধদান করেন।
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চাচা আবু লাহাব কে যখন সুয়াইবা নবীজির জন্ম গ্রহণের সংবাদ শোনায়, তখনই খুশিতে আত্মহারা হয়ে আবু লাহাব তার এই বাদীকে আজাদ করে দেয়। সুয়াইবা ইতিপূর্বে হুজুরের চাচা হযরত হামযা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কেও দুধ পান করেছিলেন। এভাবে হযরত হামযা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু চাচা হয়েও নবীজী সা. এর দুধভাই ছিলেন। ছুওয়াইবা এরপর হযরত আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কেও দুধ পান করায়।-(যুরকানী: ১/১৩৭)
বুখারী শরীফে উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে হাবিবা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা বর্ণনা করেন, আমি এক দফা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি শুনেছি আপনি নাকি আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এর কন্যাকে বিবাহ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন! এ কথা শুনে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে বললেন, উম্মে সালামার এ কন্যা আমার প্রতিপালনে রয়েছে। যদি সে আমার প্রতি পালনের নাও থাকতো তথাপি তাকে আমার বিবাহ করা বৈধ হত না। কেননা সে তো আমার দুধ ভাইয়ের কন্যা। আমাকে এবং দুররাহ এর পিতা আবু সালামা কে সুয়াইবা দুগ্ধ পান করিয়েছেন। ( আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ছিলেন উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা এর স্বামী। আবু সালামর ইন্তেকালের পর উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন )
হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত আছে, একবার কতক সাহাবী এর পক্ষ থেকে হযরত হামযাহ্ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর কন্যাকে বিবাহ করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রস্তাব দেওয়া হলে তিনি বললেন, সে তো আমার দুধ ভাইয়ের কন্যা।
-(বুখারী শরীফ, আবওয়াবুন নিকাহ্ ২/২৬২)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুওয়াইবাকে অত্যন্ত সম্মান ও সমাদর করতেন। তিনি হযরত খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা কে বিবাহ করার পর সুয়াইবা মাঝে মাঝে হুজুরের সমীপে উপস্থিত হতেন। হিজরতের পর ও নবীজি মদিনা থেকে মাঝে মাঝে সুওয়াইবার উদ্দেশ্যে উপঢৌকন পাঠাতেন। মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুওয়াইবা এবং তাঁর পুত্র এর খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন তারা উভয়েরই ইন্তেকাল হয়ে গেছে।এ সংবাদ শুনে নবীজী বললেন, তার আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে কেউ বেঁচে আছে কি? তাহলে তাকে কিছু আদর আপ্যায়ন করা যেত। কিন্তু সংবাদ নিয়ে জানা গেল তার কোন আত্মীয় পরিজনও বেঁচে নেই।
আবু লাহাবের মৃত্যুর পর তাকে এক ব্যক্তি স্বপ্নে দেখল, সে খুবই দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে। স্বপ্নেই তাকে জিজ্ঞাসা করলো, কেমন আছো? সে উত্তরে বলল, তোমাদের সান্নিধ্য থেকে চলে আসার পর থেকে আর কখনো সুখ -শান্তির সাক্ষাত পাইনি। কেববল সুওয়াইবাকে আযাদ করে দেওয়ার ফলশ্রুতিতে আমাকে আংগুলের অগ্রভাগ পরিমাণ পানি পান করানো হয়।-( বুখারী শরীফ)
আবু লাহাব যে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে তাকে আযাদ করেছিল সে আংগুলের অগ্রভাগ পরিমাণ পানি পান করতে দেওয়া হয়।
-( এ স্বপ্ন দেখেছিলেন হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু। তিনি আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর ঐ স্বপ্নটি দেখেছিলেন। -আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া২/৭৩)
আল্লামা সুহাইলী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, একদা হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু আবু লাহাব কে স্বপ্নে অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় দেখলেন। আবু লাহাব বলল, আমি তোমাদের নিকট থেকে আসার পর থেকেই আমার ভাগ্যে কোন আরাম নেই। কেবল প্রতি সোমবার আমার আযাবে কিছু কমতি করা হয়।
-(ফতহুল বারী: ৯/১২৪)
সুয়াইবা এরপর হালিমা সাদিয়া রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুধ পান করান। আরবে এই প্রথা প্রচলিত ছিল যে, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ তাদের দুগ্ধপোষ্য ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর লালন-পালনের সূচনাতেই গ্রাম এলাকায় পাঠিয়ে দিতেন। গ্রামের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আবহাওয়ায় বাচ্চারা বেড়ে উঠুক, বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জল ভাষা আয়ত্তে আসুক এবং আরব ভূমির মৌলিক বৈশিষ্ট্য ও সভ্যতা সংস্কৃতি তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন না হয়ে থাক।- এই ছিল তাদের গ্রাম এলাকার পাঠানোর উদ্দেশ্য। হযরত উমর রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু এ প্রসঙ্গে বলেন-
تمعددوا وتمعزروا واخشوشنوا-
তোমরা মা’দ ইবনে আদনানের আকৃতি-প্রকৃতি গ্রহণ করো। অনারব লোকদের পোশাক-পরিচ্ছদ চালচলন ইত্যাদি গ্রহণ করো না। বিপদে আপদে ধৈর্য্য ধারণ কর এবং মোটা পোশাক পরিধান করো। বিলাসিতা ও চাকচিক্যের মোহে পড়ো না। -( হাফেজ ইবনে আছীর হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর কথাটির এই অর্থই করেছেন, যা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, হযরত ওমরের এই উক্তিটি তাবারানী শরীফে আবু হায়দার আসলামী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর পক্ষ হতে মারফু ভাবে বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ মূল উক্তিটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের।
-( নিহায়া)
একবার হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার ভাষা খুবই প্রাঞ্জল সুন্দর। জবাবে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রথমতঃ আমি হলাম কুরাইশ বংশের লোক, তাছাড়া বনু সা’দ গোত্রে ( হালিমা সাদিয়া রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা এর গোত্র) আমি দুধ পান করেছি।
-( আর রাউযুল উনুফ ১/১০৯)