বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন সম্পর্কে বিখ্যাত মুফাসসির শাইখুল হাদিস আল্লামা হারুন বুখারীর নসিহত
যে কোন প্রাণীর মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ছবি, ফটো বানানো, তুলা ও তাকে সম্মান করা টাঙ্গানো এবং কোথাও স্থাপন করা ইসলামিক শরিয়া’য় কঠিন ভাবে নিষিদ্ধ। এর অসংখ্য দালায়েল রয়েছে।
এগুলোকে পূজা করা, পূজার নিয়তে বানানো, স্থাপন ও বেচা -কেনা, শিরক ও কুফরী। এতে কোন আলেমের দ্বিমত নেই।
বিনা প্রয়োজনে আনন্দ করে, সম্মান করে, স্মৃতি রক্ষার কথা বলে এগুলোর ব্যবহার কবিরা গুনাহ, মহাপাপ ও অভিসম্পাতের কাজ। আল্লাহ রাসূলকে কষ্ট দেওয়ার কাজ। শিরকের উপকরণ বা প্রবেশপথ। অর্থ ও সময়ের অপচয়। অনর্থক বিষয় ও হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি। রাসূল সা. এবং সাহাবী ও খলীফাগণ কোন প্রাণীর মূর্তি বা ভাস্কর্য স্থাপন করেন নি। বরং পুরাতনগুলো ভেঙেছেন। হযরত সুলাইমান আ. এর যুগের ভাস্কর্যটি প্রাণীর ছিলনা, তাছাড়া সেটা ছিল আগেকার ধর্মের, আর ইসলাম ধর্মে তা রহিত হয়েছে। ইসলামে শিরকও নিষিদ্ধ, এবং শিরকের প্রবেশ পথও নিষিদ্ধ।
আগেকার ধর্মে শিরক নিষিদ্ধ ছিল তবে শিরকের প্রবেশপথ নিয়ে তেমন কড়াকড়ি ছিল না। যেমন :-
১. বেপরদেগী এটা সরাসরি যিনা নয়, তবে যিনার প্রবেশপথ। ইসলাম যিনাকে হারাম করেছে এবং তার প্রবেশপথও হারাম করেছে। তাই পর্দাকে ফরজ করে দেওয়া হয়েছে। অন্য ধর্ম ইসলামের মতো পর্দার প্রতি এত কড়াকড়ি ছিলনা।
২. গাইরুল্লাহর জন্য সম্মানের সেজদা ইবাদতের সিজদার প্রবেশপথ। তাই ইসলাম সম্মানের সিজদা হারাম করেছে, অন্য ধর্মে তা হারাম নয়।
এভাবেই ভাস্কর্য স্থাপন ও সরাসরি শিরক নয়, তবে শিরকের উপকরণ। তাই ইসলাম এই উপকরণকেও হারাম করেছে। অন্য ধর্মে এ নিয়ে এত কড়াকড়ি নেই।
এটা’ই ইসলামের বৈশিষ্ট্য।
আর হযরত আয়েশা রা. এর পুতুলটির চেহারা পরিস্কার ছিলনা। যেটি নিষিদ্ধ ছবির অন্তর্ভুক্ত নয়। তাছাড়া হতে পারে এটি ছবি ঘরে রাখা হারাম হওয়ার আগের ঘটনা।
সুতরাং হযরত সুলাইমান আ. এর যুগের তিমসাল বা ভাস্কর্য স্থাপন এবং হযরত আয়েশা রা. এর পুতুলের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা কে বাহানা করে একটি মহলের পক্ষে ইসলামে ভাস্কর্য স্থাপন জায়েজ ফতোয়া দেওয়া ইলমি দীনতা ও মূর্তি পূজকদের দালালি করে নিজের আখেরাত বরবাদ ও উলামায়ে সূ’ অসৎ আলেমদের কাতারে শামিল হওয়া ছাড়া আর কি…?
মোদ্দাকথা, ভাস্কর্য স্থাপন, পূজার নিয়তে না হলে শিরক নয় তা ঠিক, তবে ইসলামের দৃষ্টিতে এটা তো কোন পুন্যের কাজ নয় বরং নানা কারণে এটা মহাপাপ।
ক) এটা অগণিত হাদিসের মাধ্যমে নিষিদ্ধ।
খ) শিরক বা মূর্তিপূজার প্রবেশপথ ও উপকরণ।
গ) লানতের কাজ।
ঘ) এটা জাহান্নামীদের কাজ।
ঙ) পোত্তলিকদের সাদৃস্য।
চ) রহমতের ফেরেশতাদের ঘৃণার পাত্র।
ছ) আল্লাহর রাসুলের কষ্টের কারণ।
জ) আল্লাহর সৃষ্টির সাথে মুকাবেলা করার সাদৃস্য।
ঝ) অর্থ ও সময়ের অপচয়ের বিষয়।
ইত্যাদি ইত্যাদি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্থপতি। বাংলাদেশের উপর তার অনেক অবদান আছে। তাই তার হিতাকাঙ্খিদের উচিত, তার জন্যে এমন কিছু কাজ করা যা তার পরকালে উপকারে আসবে।
যেমন:- তার নামে মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, হাসপাতাল, মিনার ইত্যাদি স্থাপন করা। তা হবে সদকায়ে জারিয়া।
আর এমন কিছু না করা যা দ্বারা কবরে আজাব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ও দেশের অধিকাংশ নাগরিক এবং আলেম-উলামা নারাজ হন।
তাকে সর্বজনশ্রদ্ধেয় নেতার পরিবর্তে শ্রেণী বিশেষের নেতার কাতারের নিয়ে যাওয়ার সন্দেহ হয়। এমনকি স্বাধীন রাষ্ট্রটিকে কোন পরা শক্তির অধিনে পরিচালিত হওয়ারও সন্দেহ হয়।
আশা করি সরকার উক্ত পরামর্শ মেনে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত হিতাকাঙ্খির পরিচয় দিবে এবং এদেশের তৌহীদি জনতার সাথে সংঘর্ষে যাবেনা।
এটাই আমার কামনা।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: গোনাহের কাজ গুনাহ মনে করে করা অপরাধ, আর তা গোনাহ মনে না করে করা ডবল অপরাধ। বহু ক্ষেত্রে বেঈমান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
উল্লেখ্য যে, ভাল মানুষদের ভাস্কর্য স্থাপন থেকে’ই ধীরে ধীরে মূর্তি পূজার প্রচলন হয়েছিল। এটাই কুরআন সুন্নাহ ও ইসলামী ইতিহাস প্রমান করে।
দেখুন, সূরা নূহ ২৩,২৪ নম্বার আয়াত ও তার ব্যখ্যায় বর্ণিত বুখারী শরীফের হাদিস।
শাইখুল হাদিস আল্লামা হারুন বুখারী
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মোহাম্মদপুর দারুল কুরআন মাদরাসা ও এতিমখানা সেনবাগ, নোয়াখালী, বাংলাদেশ।