Sunday, April 14, 2024
No menu items!
Homeতালেবুল ইলমের পাতাইসলামি সাহিত্যচর্চা

ইসলামি সাহিত্যচর্চা

 -মুফতি উবায়দুল হক খান 

সাহিত্য অর্থ হচ্ছে- সুশিক্ষা, শিষ্টাচার, সভ্যতা, ভদ্রতা, আপ্যায়ন ও আতিথেয়তা। সাহিত্য শব্দটির আরো অনেক অর্থ রয়েছে। প্রত্যেকটি অর্থই সুন্দর ও চমৎকার। যদি কোন জাতির রীতি-নীতি ও কাজে-কর্মে শিষ্টাচার পরিলক্ষিত হয়, তাহলে তাকে সভ্যতা বা কৃষ্টি-কালচার বলা হয়। আর যদি শিষ্টাচার ও সৌন্দর্যতা কোন ভাষার মধ্যে প্রকাশ পায়, তবে তাকে বলা হয় সাহিত্য। এ হিসেবে সুন্দরের সেবকরাই সাহিত্যিক। তাই মিথ্যা, অসুন্দর এবং অপবিত্রতা কখনও সাহিত্য নয়। তা কেবল সাহিত্যের নামে কদর্যতা। এ হিসেবে অসুন্দরের সেবকরাই কু-সাহিত্যিক।
সাহিত্য-সংস্কৃতি দেশ ও জাতির উন্নতির সোপান। কেননা, সাহিত্য মানব সমাজের বিশুদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন দর্পন। অপরদিকে যে কোন জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সভ্যতা সে জাতির সাহিত্যের আশ্রয়েই বেঁচে থাকে। তাছাড়া তীব্র প্রতিযোগিতার এই আধুনিক বিশ্বে কোন জাতির আপন ইতিহাস ও সভ্যতার অধ্যায় সাহিত্য ছাড়া টিকে থাকতে পারে না। তাই বিভিন্নভাবে সাহিত্য আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

দুই.
অনেকে আবার শিরোনাম দেখে হয়তো বলেই ফেলেছেন- ‘ইসলামি সাহিত্য’ এটা আবার কী? হ্যাঁ, এটাই বলছি। ইসলামি সাহিত্য হচ্ছে, কুরআন ও হাদিসের নির্যাস। অর্থাৎ কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতে, ইসলামি ভাবধারায় নির্মিত ও পরিচালিত সাহিত্যকে ইসলামি সাহিত্য বলা হয়।
ইসলামি সাহিত্য এমন এক উৎকৃষ্ট সাধনা যা মানুষকে উত্তম গুণে গুনান্বিত করে। অনুভূতিকে জাগ্রতকরণে ও ভাল-মন্দের দিক-নির্দেশনা প্রদানে ইসলামি সাহিত্যের ভূমিকা অপরিসীম। সম্প্রতি ইসলামের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ভিন্নমুখী ষড়যন্ত্র চলছে। যে ষড়ন্ত্রের অন্যতম নীলনকশা হচ্ছে, এদেশের মুসলিম জাতিকে বাংলা সাহিত্যের মাধ্যমে ইসলাম থেকে সরিয়ে নাস্তিক্যবাদের দিকে ধাবিত করে ধ্বংসের অতল গহবরে নিক্ষেপ করা। সেই ষড়যন্ত্রকারীদের অক্টোপাস থেকে জাতিকে সংরক্ষণ করতে বাংলাভাষায় ইসলামি সাহিত্যচর্চার বিকল্প নেই। বিশ্বব্যাপী ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় ইসলাম বিদ্বেষীদের সমুচিত জবাব দিতে, দীনের পথের কলমসৈনিক হয়ে আলেমসমাজকে এগিয়ে আসা সময়ের অপরিহার্য দাবী।
নিজ নিজ মাতৃভাষায় ইসলামি ভাবধারা সম্পন্ন সাহিত্য রচনার মাধ্যমে বিশ্বের সকল দেশের আলেমসমাজকে সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কারণ, প্রতিটি যুগ ও সময়, সম-সাময়িক লেখক-সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের দ্বারা প্রভাবিত থাকে।
আমরা যদি ইতিহাস পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখতে পাই, বাতিল শক্তি যে যুগে যে রূপ নিয়ে মানব সমাজে আগমন করেছে, আল্লাহ তাআলা সে যুগের নবী-রাসুলকেও ঠিক সে ধরনের মুজিযা দিয়ে প্রেরণ করেছেন।
আমরা জানি, হযরত মুসা আ.-এর যুগ ছিল যাদুবিদ্যার যুগ। তাই হযরত মুসা আ.-কে লাঠি সাপে পরিণত করার মুজিযা দেয়া হয়েছিল। আর আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগ ছিল সাহিত্যের সোনালি যুগ। তাই তাঁকে সাহিত্যের মুজিযা স্বরূপ দেয়া হয়েছিল মহাগ্রন্থ আল কুরআন।

তিন.
সাহিত্যের যুগ এখনো শেষ হয়ে যায়নি। সাহিত্য মানুষের মনে স্থায়ী প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে। বৃহত্তর মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যূষিত আমাদের এ প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। অথচ ইসলামের উন্নত ও নিখুঁত মতাদর্শ এদেশের শিক্ষিত তরুণ সমাজের নিকট সাহিত্যাকারে তুলে ধরতে না পারায় তারা এখন কমিউনিজম। তারা নাস্তিক্যতার খপ্পরে পতিত হয়ে চূড়ান্ত অবক্ষয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি কুরআন-হাদিসের আলোকে না হওয়ায় তাদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনাও সম্ভব হচ্ছে না। অথচ তাদের নিকট ইসলামের আদর্শবাণী পৌঁছানোর অনূকুল পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং তাদেরকে ইসলামের ছায়াতলে এনে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাঁটি সৈনিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব এদেশের আলেমসমাজের।

চার.
মুজাহিদে আযম আল্লামা শামসুল হক ফরিদপুরী রাহ. বলেন- ইসলাম বিদ্বেষীদের মোকাবেলায় আজকাল অতীতের তরবারীর চেয়ে কলমের জিহাদই মোক্ষম পন্থা। হাজার হাজার অস্ত্রধারী যা করতে পারে না, একজন দুর্বল লেখক রুদ্ধকক্ষে বসে তারচেয়েও অধিক করতে পারে।
সম্প্রতি বাতিলশক্তি তার দ্রুতগামী পাখায় ভর করে সর্বত্র বিস্তার লাভ করছে। এমতাবস্থায় হকের পক্ষের শক্তিকে অবশ্যই সুকৌশলে জোরদার করে তুলতে হবে। আর এজন্য সর্বপ্রথম মিডিয়া সন্ত্রাসের সমুচিত জবাব প্রদানের জন্য এদেশের আলেমসমাজকে স্বীয় মাতৃভাষা তথা বাংলা ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করা একান্ত কর্তব্য।
তাই মহান অল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে, দীনের প্রতি দরদ নিয়ে, বাংলা ভাষায় প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে, চলমান ইসলামি সাহিত্যের কলমযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই সম্ভব এদেশের আলেমসমাজের দায়িত্ব পালনে যথাযথ ভূমিকা পালন করা। তবেই আমরা একটি সুস্থ, সুন্দর ও আদর্শ মুসলিম জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হবো।

লেখক : মুহাদ্দিস ও সহকারী শিক্ষাসচিব, জামিআতুস সুফফাহ আল ইসলামিয়া গাজীপুর।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments