Saturday, November 16, 2024
No menu items!
Homeতালেবুল ইলমের পাতাদাওরায়ে হাদীস পরীক্ষার্থীদের জরুরী নির্দেশনা। পর্ব-২

দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষার্থীদের জরুরী নির্দেশনা। পর্ব-২

-মুফতী রফিকুল ইসলাম আল-মাদানী

দুই. পরীক্ষা সহায়িকা ও মূল কিতাবের সমন্বয় জরুরী:-

সর্বোচ্চ ফলাফলের জন্য মূল কিতাব ভালোভাবে আয়ত্ত করার বিকল্প নেই। হাইআতুল উলয়ার বর্তমান প্রশ্নের ধরন অনেকটাই সৃজনশীল। প্রতিটি প্রশ্নেই হরকত লাগানো, অনুবাদ করা ও শাব্দিক বিশ্লেষণ এবং হাদীসের মর্ম বর্ণনা করার কথা থাকে। এসব বিষয়ে পাশ নাম্বার বা এর কাছাকাছি নম্বর থাকে। এছাড়া হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও যথাযথ সমাধানের জন্য মূল কিতাব এর শরণাপন্ন হতে হয়। তবে প্রশ্ন-উত্তরের ধরন বোঝার জন্য পরীক্ষা সহায়িকা গ্রন্থের সহযোগিতাও জরুরী। এছাড়া খুঁটিনাটি প্রশ্ন পরীক্ষা সহায়িকা থেকে যেভাবে সহজে অনুধাবন করা যায়, মূল কিতাব থেকে তা বাহির করা অনেক জটিল। অতএব সর্বোচ্চ নাম্বারের জন্য মূল কিতাব ও পরীক্ষা সহায়িকা পরস্পর সম্পূরক। তবে দুর্বল ছাত্ররা যদি শুধু গাইডে নির্ভর হয়, তাদের জন্য হাদীসের অনুবাদ ও হরকত লাগানোর নীতিমালা ভালোভাবে বুঝে পড়া প্রয়োজন।

তিন. লেখা ও উপস্থাপনা চমৎকার হতে হবে:-
হাতের লেখা শিক্ষিত মানুষের অলংকার। উত্তরপত্র আরবী ভাষায় লেখা এবং সুন্দর লেখা ও সাবলীল উপস্থাপনার জন্য প্রতিটি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য নম্বর বরাদ্দ আছে। পরীক্ষকের প্রথম দৃষ্টি লেখার প্রতি হয়। এ সুবাদে গবেষকরা অনেক কথাই বলেছেন। কেউ বলেছেন, হাতের লেখা ভালো হলে পরীক্ষায় সহজেই কৃতকার্য হওয়া যায়। কেউ বা বলেছেন, হাতের লেখা ভালো হলে অনেক নম্বর পাওয়া যায়। এর কোনটাই অস্বীকার করার মতো না। পরীক্ষা এবং হাতের লেখা বিষয়ে একটা সরল হিসাব আছে। দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষায় মোট ১০টি বিষয়। প্রতিটি বিষয়ে হাতের লেখা ও পরিচ্ছন্ন উপস্থাপনের জন্য তিন তিনটি নম্বর। ১০টি বিষয়ে ৩০টি নাম্বার। হাতের লেখা ভালো নয় পরীক্ষার হলে প্রবেশের আগেই তার ৩০টি নম্বর বিয়োগ হয়ে গেল। যেখানে তিন চার নম্বরের ব্যবধানে ক্রমিক নম্বরের অনেক ব্যবধান হয়। সেখানে ৩০ এর ব্যবধানে কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে আমরা সহজেই বুঝতে পারি। তাই পরীক্ষায় মর্যাদার আসন পেতে হলে হাতের লেখা ভালো ও সুন্দর করতেই হবে।

উত্তরপত্র সুন্দর হওয়ার জন্য করণীয়:-

কয়েকটি বিষয় অনুসরণ করলে আশা করি সবার লেখাই সুন্দর দেখাবে। উত্তর পত্র আকর্ষণীয় হবে। স্বপ্নের ফলাফল পেয়ে জীবন আনন্দে হেসে উঠবে।
সে বিষয়গুলো হলো–

১. লেখার লাইন সোজা হতে হবে। লেখার লাইন আঁকাবাঁকা অথবা কোনো এক দিকে ঝুঁকে যাওয়া, তো হবে না।

১. লেখার লাইন বেশি ফাঁকা ফাঁকা অথবা খুব সরু হলে সুন্দর্য নষ্ট হয়। তাই স্বাভাবিক পরিমাণ ফাঁকা বুঝে লেখা সাজাতে হবে।

৩. লেখা যেন বেশি ছোট না হয়, অক্ষর যেন ছোট-বড় না হয়, অক্ষর একটি দেখতে যেন আরেকটির মত না হয়, সব অক্ষর যেন স্পষ্ট হয় এবং অক্ষর থেকে অক্ষর ও শব্দ থেকে শব্দের দূরত্ব যেন স্বাভাবিক পরিমাণ মত হয় তা লক্ষ্য রাখতে হবে। এসব গুণ সুন্দর লেখার অন্যতম শর্ত। লেখা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যদি দেখতে একই রকম হয়, একই নিয়মে সাজাতে হয়, তাহলে সে লেখা সহজে নজর কাড়ে। পরীক্ষক দেখে প্রতিক্রিয়াশীল হয়। আর লেখক পায় প্রাণ উৎসারিত ধন্যবাদ!
৪. আরবী ভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় উত্তরপত্র লিখলে উত্তরের ধারাবাহিক নম্বরগুলো আরবী ভাষায় লেখা আমি ভালো মনে করি। যেমন-
الجواب عن السوال الأول
তবে যে ভাষায়ই লেখো ডানে-বামে না লিখে মেডেলে তুলনামূলক বড় করে লিখবে। আর প্রশ্নের অংশগুলোও আরবীতে লিখেলে সহজেই চোখে পড়বে, ভালো দেখাবে। যেমন-
ا-ب-ج
ইত্যাদি।
তবে প্রশ্নের এসব অংশ আরবী, উর্দু উত্তরপত্রের ডান পাশে এবং বাংলা উত্তরপত্রের বাঁ পাশে হলেই ভালো।
৫. প্রতিটি ছোট ছোট বিষয় এবং শিরোনাম, উপশিরোনাম অবশ্যই প্যারা দিয়ে লিখতে হবে। লম্বা কোন বিষয়ে হলে এর বিভিন্ন অংশ ছোট ছোট শিরোনামে ভাগ করা যায়। এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্যে আমার লেখা “আরবী কি লিখব কিভাবে লিখব” বইটি পড়তে পারো। জীবনের সাথী হিসেবে সংরক্ষণ করতে পারো।

৬. উপস্থাপনা সুন্দর ও গতিশীল হওয়ার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অথবা বিগত বছরের কোন প্রশ্নত্তর মুখস্থ করে কিছুক্ষণ নীরবে চিন্তা করো কেমন আয়ত্ত হয়েছে। অতঃপর তা মুখস্ত লেখো। মনে কর তুমি পরীক্ষার হলে। নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে হবে। এরপর কিতাবের সাথে মিলিয়ে দেখো কি অবস্থা…? প্রয়োজনে নম্বর বরাদ্দ করো। এভাবে অনুশীলন করলে কাঙ্ক্ষিত সফলতা অর্জন হবেই ইনশাআল্লাহ!

৩০মিনিট আগে পরীক্ষার হলে বসতে হবে:-

প্রতিদিনের মতোই পরীক্ষার দিন ঘুম থেকে উঠবে। কোনরকম চাপ বা দুশ্চিন্তা যেন তোমার কাছে ঘেঁষতে না পারে। তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবে। কিছু সময় কোরআনে কারীম তেলাওয়াত করার চেষ্টা করবে। যেদিন যে বিষয়ের পরীক্ষা থাকবে, সেই দিন সেই বিষয়বস্তু একটু উল্টেপাল্টে দেখে নেবে। স্বাভাবিক থাকবে। খুব বেশি সিরিয়াস হওয়ার দরকার নেই। আধাঘন্টা আগে তোমাকে পরীক্ষা কক্ষে বসা প্রয়োজন। তাই হাতে সময় নিয়ে বের হবে।

পরীক্ষার আসনে বসে:-

পরীক্ষার আসনে বসেই কিছুক্ষণ দো’আ দরুদ পড়ে নেবে। খাতা হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত বসে বসে সম্ভাব্য বিষয়গুলো মনে মনে রিভিশন দেবে। এই সময়ে রিভিশন দেয়া কোন বিষয় পরীক্ষায় আসলে দ্রুত ও নির্ভুল ভাবে লেখা সহজ হবে। উত্তরপত্র হাতে পেয়ে এতে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ইত্যাদি যা লেখার চক থাকবে তা পূরণ করে নেবে। নির্দিষ্ট ঘরে এসব বিষয় লিখতে হবে। লেখার পর পুণরায় অবশ্যই মিলিয়ে নেবে। খেয়াল রাখবে, সব বিবরণ নির্ভুল হতে হবে। এসব কালো কালির কলম দিয়ে লিখতে হবে। সবকটি প্রশ্ন পড়ে কোনটির উত্তর তুমি দিতে পারবে, তা পেন্সিল দিয়ে শনাক্ত করে নিতে পারো। তোমার কাছে যেটা সহজ মনে হয়, সে প্রশ্নের উত্তর আগে দেবে। প্রশ্ন ভালো করে পড়ে বুঝে নিতে হবে। ঘড়ি দেখবে, সময়ের প্রতি খেয়াল রাখবে। কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে যদি সময় খুব বেশি চলে যায় তবে পরবর্তী এক বা একাধিক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। এ জন্য কোন প্রশ্নের উত্তর লিখতে কি পরিমাণ সময় লাগবে তা ভেবে নিও। নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে।

রিভিশন কমাবে ভুল:-

সময়ের প্রতি সচেতন থেকে ১০-১৫ মিনিট আগেই উত্তর শেষ করার চেষ্টা করবে। কারণ রিভিশন দিতে পারলে ভুলের পরিমাণ কমবে। জানা ছিল না এমন কিছু রিভিশনের সময় স্মরণ হতে পারে। তখন তা লিখে দিবে।
উল্লেখ্য যে সব প্রশ্নের উত্তরে যথাসাধ্য কিছু লেখার চেষ্টা করিও। এতে কিছু নাম্বার আশা করা যায়। আর কোন প্রশ্নের উত্তর যদি অসম্পূর্ণ থাকে তাহলে ভালো ফলাফলের মোটেই আশা করা যায় না। তাই সময়ের হিসাব করে যথা সময়ে সব প্রশ্নোত্তর অবশ্যই সম্পাদনা করতে হবে।

পরীক্ষা শেষ হলে:-

প্রতিদিন পরীক্ষা শেষে কে কয়টা সঠিক সঠিক উত্তর দিতে পেরেছো, কয়টা পারোনি এসব নিয়ে একদমই আলোচনার দরকার নেই। এসব মেলাতে গিয়ে যদি দেখো তোমার কিছু ভুল হয়েছে, তাতে তোমার মন খারাপ হবে, যা পরবর্তী পরীক্ষায় প্রভাব ফেলবে। হল থেকে বের হয়ে সোজা রুমে এসে হাতমুখ ধুয়ে খাওয়া-দাওয়া করে বিশ্রাম নেবে। পরের পরীক্ষার বিষয়ে মনোযোগী হবে।

মনে রেখো:-

পরীক্ষা শেষে প্রবেশপত্র এবং যেসব জিনিস পরিক্ষার হলে নিয়েছো, সব খেয়াল করে অবশ্যই নিয়ে আসবে। শুভকামনা তোমার জন্য। তোমার অনাগত ভবিষ্যৎ আরো সুন্দর হোক। হেসে উঠুক আনন্দের ঝলমলে প্রভাত।

লেখক: কলামিষ্ট, গবেষক, ইসলামিক চিন্তাবিদ ও মুহাদ্দিস ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা।

.

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments