নাজমুল হাসান সাকিব;
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যত সব নেয়ামত দান করেছেন তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি নেয়ামত হচ্ছে, ভাষা বা কথা বলার শক্তি।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
خَلَقَ الْاِنْسَانَۙ. عَلَّمَهُ الْبَیَانَ.
“মানুষকে তিনি সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই তাকে মনেরভাব প্রকাশের জন্য ভাষা বা কথা বলার শক্তি দিয়েছেন।” (সূরা আর রাহমান)।
মানুষের মুক্তির পয়গাম নিয়ে পরিপূর্ণ জীবন সমস্যার কঠিন ও নির্ভুল সমাধানের নিমিত্তে যুগে যুগে মহান আল্লাহ তায়ালা যত নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন, সকলকে স্বজাতীয় ভাষায় পাণ্ডিত্য দান করে প্রেরণ করেছেন এবং সকল আসমানী কিতাবকে তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রেরণ করেছেন।
যেমন, মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا بِلِسَانِ قَوْمِهِ لِيُبَيِّنَ لَهُمْ ۖ فَيُضِلُّ اللَّهُ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي مَن يَشَاءُ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ)
“আমি দুনিয়ার বুকে যত নবী-রাসূল প্রেরণ করেছি , সকলকে সে জাতির ভাষায় অভিজ্ঞ করে পাঠিয়েছি। যাতে সুন্দর ও সহজ করে আমার বাণী মানবজাতির কাছে তুলে ধরতে পারে।” এছাড়া সুন্দর ও বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলা উন্নত ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
أنا أفصحُ العربِ
“আমি আরবের শ্রেষ্ঠ বিশুদ্ধভাষী।” (মেশকাত শরীফ)।
নবীওয়ালা কাজের দায়িত্ব যেহেতু আমাদের ওপর অর্পিত হয়েছে, তাই নিজ মাতৃভাষার অভিজ্ঞতা অর্জন করে মানুষের সামনে ইসলামের সঠিক মর্মবাণী বিশুদ্ধভাবে সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করা আমাদের উপর অবশ্যই কর্তব্য। আমরা যদি এই দায়িত্বে অবহেলা করি, তাহলে দেশবাসীর উপর অবিচার করা হবে এবং মহান প্রভুর কাছে পরকালে পাকড়াও হতে হবে আমাদেরকে।
বিশ্ব বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ আবুল হাসান আলী নদভী রহ. বাংলাদেশ সফরে এসে কিশোরগঞ্জ জামিয়া এমদাদিয়া মাদ্রাসা বলেছিলেন, “আমার কথা মনে রাখবেন! বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের নেতৃত্ব নিজেদের হাতে নিতে হবে এবং দুটি অপশক্তির হাত থেকে নেতৃত্ব ছিনিয়ে আনতে হবে।
এক. অমুসলিম শক্তির হাত থেকে।
দুই. অনৈসলামি শক্তির হাত থেকে।
অনৈসলামি শক্তি বলতে আমি সেসব নামধারী মুসলিম লেখক-সাহিত্যিকদের কথা-ই বুঝাতে চাচ্ছি, যাদের মন-মগজ, চিন্তা ও কর্ম ইসলামী নয়।”
তিনি আরো বলেন, আমার কথা আপনারা লিখে রাখুন। দীর্ঘ জীবনের লব্ধ অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, “বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন কিংবা বিমাতা সুলভ আচরণ এদেশের আলেম সমাজের জন্য জাতি হত্যার-ই নামান্তর।”
তিনি আরো বলেন, “প্রতিটি মাদ্রাসায় বাধ্যতামূলকভাবে সাহিত্য-সাংবাদিকতার উপর পাঠদান এখন সময়ের দাবি।
(দৈনিক ইনকিলাব: ২৮-০৪-২০০৪ ইং)
বাংলা ভাষা কি হিন্দুদের…?
আমার কোন কোন ভাই মনে করেন, বাংলা ভাষা হিন্দুদের। এ ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করলে মানুষ নাস্তিক হয়। এ ভাষায় কোন নূর নেই ইত্যাদি কথা।
আচ্ছা ভাই! আরবি ভাষা তো ছিল আবু জাহেল, অথবা, শাইবাদের। ফার্সি ভাষা ছিল অগ্নিপূজকদের। তাই বলে কি সে দেশের মুসলমানগন তাদের মাতৃভাষা আরবি-ফার্সি বর্জন করেছেন…? না, করেন নি। বরং তারা ইসলামী জ্ঞান দ্বারা সে ভাষার সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। ফলে সে ভাষায় নূর এসেছে এবং ইসলামী ভাষায় পরিণত হয়েছে। তেমনি বাংলাভাষার নেতৃত্বে হিন্দু নাস্তিকরা থাকার কারণে বাংলা ভাষা হিন্দুয়ানী ও নাস্তিক্য কথায় ভরপুর। এ ভাষার নেতৃত্বে যদি নূর ওয়ালা ধার্মিক মুসলমানগন আসেন তাহলে এ বাংলাভাষায়ও নূর চলে আসবে এবং ইসলামী ভাষায় পরিণত হবে। ইনশাআল্লাহ!
এছাড়া “বাংলা ভাষা হিন্দুদের” এটাও ভুল। কারণ, বাংলা ভাষা মুসলিম শাসকদের দ্বারা-ই সমৃদ্ধ লাভ করে। বিশেষ করে সুলতান ইলিয়াস শাহ- এর শাসনামলে। এজন্য তাকে বঙ্গীয় উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছিল। বাংলা সনের জন্ম হয় সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে। হিজরি সনের সাথে সামঞ্জস্য বিধান রেখে তৎকালীন রাজজ্যোতিষী মহাপন্ডিত আমির ফতেহ্ উল্লাহ সিরাজী বাংলা সালের উদ্বোধন করেন। পক্ষান্তরে বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল হিন্দুরা। কারণ, বাংলা ভাষা মুসলমানদের ভাষা। যারা বাংলা ভাষায় কথা বলতো তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হতো। হিন্দু ব্রাহ্মণরা জনগণকে ভীতি প্রদর্শন করত যে, “ভাষাং মানবঃ স্রোতা বৌরবং নরকং ব্রজ্রে।” অর্থাৎ সংস্কৃতি ভাষা ছাড়া যারা অন্য ভাষায় (বাংলা ভাষা) কথা বলবে, তাদেরকে বৌরব নামক নরকে নিক্ষেপ করা হবে। ড. দীনেশ্চন্দ্র সেন লিখেছেন, “ইতরের ভাষা বলিয়া বঙ্গ ভাষাকে পন্ডিতমন্ডলী “দূরদূর” করিয়া তাড়াইয়া দিতেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক কবিতায় লিখেছেন,
” সাত কোটি সন্তানের হে মু. জানিনা জননী
রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করোনি।”
তাহলে কি বুঝা গেল…? বাংলা ভাষা কি হিন্দুদের ভাষা…?
না, বাংলা ভাষা আমার ভাষা।
তাই আমাকে নুরওয়ালা হয়ে বাংলা ভাষাকে ইসলামের নূর দ্বারা নূরাম্নিত করে সমৃদ্ধ করতে হবে। ইনশাআল্লাহ!
লেখক: শিক্ষার্থী ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা।
ই-মেইল: [email protected]
.