বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ তিরমিজি শরিফে বর্ণিত-রোজার মাসে রাসূল সা. মাগরিবের আগে কয়েকটি ভেজা খেজুরের মাধ্যমে ইফতার করতেন। ভেজা খেজুর না থাকলে সাধারণ শুকনো খেজুর। এর ব্যতিক্রম হলে কয়েক ঢোক পানিই ছিল রাসুল সা. এর ইফতার।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবি আউফা রা. সূত্রে বর্ণিত- তিনি বলেন, রোজায় আমরা রাসুল সা. এর সফরসঙ্গী ছিলাম। সূর্যাস্তের সময় তিনি একজনকে ডেকে বললেন- ছাতু ও পানি মিশিয়ে ইফতার পরিবেশন কর। (মুসলিম শরীফ ১০৯৯)
বিশ্বনবি মুহাম্মদ সা. এর ইফতার কত সাদাসিদে ছিল। খেজুর ছাতু আর পানির ইফতার। সাদাসিদে এই ইফতারে রয়েছে তৃপ্তি। আর অপরকে ইফতার করানোর সাওয়াব।
ইফতারের ফযিলত প্রসঙ্গে রাসূল সা. এরশাদ করেন. কেউ যদি রমজান মাসে কোন রোজাদারকে ইফতার করায়, আল্লাহ তায়ালা তার গুনাহ মাফ করেন এবং জাহান্নাম থেকে মূক্তি দান করেন। ইফতার প্রদানকারী একটি রোজার সাওয়াব পাবে অথচ রোজা পালনকারীর সাওয়াব সামান্যও কমানো হবে না।
সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল সা. আমাদের এমন সামর্থ নেই যা দিয়ে আমরা কাউকে ইফতার করাতে পারি। তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা তাকেও এই সাওয়াব দিবেন, যে ব্যক্তি কোন রোজাদার ব্যক্তিকে এক ঢোক দুধ অথবা একটা শুকনো খেজুর কিংবা এক চুমুক পানি দিয়েও ইফতার করাবে। আর যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে পরিতৃপ্ত সহকারে খাওয়াবে আল্লাহ তাকে আমার হাউজে কাউসার থেকে তাকে এমনভাবে পানি পান করাবেন যার ফলে সে জান্নাতে না পৌছা পর্যন্ত আর তৃষ্ণার্ত হবে না! ( বায়হাকী, মেশকাত: ১৭৪)
হযরত সালমান ইবনে আমের আদ-দাব্বি রা. সূত্রে বর্ণিত, মহনবি সা. বলেন- তোমরা খুরমা- খেজুর দিয়ে ইফতার করবে। আর যদি সে খুরমা- খেজুর না পাও, তাহলে শুধু পানি দিয়ে ইফতার করবে। কারণ, পানি পবিত্র। ( আবু দাউদ, তিরমিজি) হযরত আবু হুরাইরা রা. হাতে বর্ণিত, রাসুল সা. ইরশাদ করেছেন- তিন ব্যক্তির দোয়া ব্যর্থ হয় না। এক. ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া। দুই. ন্যায়বিচারক বাদশাহর দোয়া। তিন. মজলুমের দোয়া। (আহমদ) রাসুল সা. এর সেহরির কথা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হারেস এভাবে বলেন, একরাতে রাসুল সা. সেহরি খাচ্ছিলেন, আর আমি তখন রাসুল সা. এর কাছে পৌছলাম। তিনি বলেন, তোমরাও সেহরি খাও। এতে রব্বে কারিম বিশেষ বরকত রেখেছেন। সেহরি পরিত্যাগ করে না। (নাসায়ি : ২১৬২)
যে ব্যক্তি কোন রোজাদার ব্যক্তিকে এক ঢোক দুধ অথবা একটা শুকনো খেজুর কিংবা এক চুমুক পানি দিয়েও ইফতার করাবে আল্লাহ তাকে রোজাদারের সমপরিমাণ সাওয়াব দিবেন । আর যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে পরিতৃপ্ত সহকারে খাওয়াবে আল্লাহ তাকে আমার হাউজে কাউসার থেকে তাকে এমনভাবে পানি পান করাবেন যার ফলে সে জান্নাতে না পৌছা পর্যন্ত আর তৃষ্ণার্ত হবে না। রাসুল সা. সেহরিতে কি খরতেন??? হযরত আনাস রা. বলেন, সেহরির সময় রাসুল সা. বললেন- আমি রোজা রাখবো, খাবার দাও। আমি রাসুল সা. এর সামনে খেজুর আর পানি পরিবেশন করলাম। সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি আবু হুরাইরা রা. বলেন, মুমিনের উত্তম সেহরি শুকনো খেজুর। (আবু দাউদ: ২৩৪৫)
রোজায় ইফতার- সেহরির মাধ্যমে মানব জাতিকে পরোপারের প্রতি অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। উৎসাহিত করা হয়েছে নিঃস্বদের দানে। প্রকৃত রোজাদার নিজে ইফতার করবে, অন্যকেও করাবে। অসহায় দুঃখিদের মুখে হাসি ফুটাবে,,,!