শাহাদাতের অগ্রপথিক
তখন উমাইর ইবনুল হুমাম আনসারী রা. দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জান্নাতের প্রশস্ততা কি আসমান ও যমিনের সমান? তিনি বললেন, হ্যা। তখন উমাইর রা. বললেন, বাহ! বাহ!! রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি বাহ বাহ কেন বলছো? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে বলিনি, আমার তো আশা কেবল সেই জান্নাতের একজন বাসিন্দা হওয়া। রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তবে তুমিও জান্নাতের একজন বাসিন্দা।
তখন তিনি পুটঁলি থেকে কয়েকটি খেজুর বের করে খেতে লাগলেন। পরক্ষণে নিজেই বললেন, যাবে এই খেজুরগুলো শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি বেঁচে থাকি তবে এতো বড় লম্বা জীবন! তাই রয়ে যাওয়া খেজুরগুলো দূরে ছুড়ে ফেলে ক্ষুধাতুর নেকড়ের মত ঝাপিয়ে পড়লেন রণাঙ্গনে। একসময় বরণ করলেন শাহাদাতের অমিয়সুধা। তিনিই ছিলেন বদর প্রান্তের সর্বপ্রথম শহীদ।
মুসলিম মুজাহিদগণ আপন আপন জায়গায় দাড়িঁয়ে জিহাদের অপুর্ব কারিশমা দেখিয়ে চলছিলেন। তাদের সকলের দেহ-মন থেকে ঠিকরে ধৈর্য পড়ছিল অবিচলতার দীপ্তি। মুখ থেকে সতত ভেসে আসছিল আপন সুমহান রবের জিকিরের গুঞ্জরণে। রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেদিন ছিলেন বদর প্রান্তের সবশ্রেষ্ঠ মুজাহিদ। দুশমনের সবচেয়ে কাছে ছিলেন সেদিন এই সাহসী সিপাহসালার।
অভাবিতপূর্ব রণকৌশল আর ঠিক জায়গা দেখে আঘাত হানার ক্ষেত্রে সেদিন তার ধারে কাছেও কেউ ছিলনা। আর ঠিক তখনি আল্লাহর সাহায্য তাদের সঙ্গী হয়েছিল। নীল আসমানের বাতায়ন খুলে দলে দলে নেমে এসেছিল ফেরেশতারা। আকাশের বাহাদুরদের সামনে মাটির শিরক-পুজারি কাপুরুষদের কোনো পাত্তা ছিলনা।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’লা ইরশাদ করেন-
إذ يوحي ربك إلي الملائكة أني معكم فثبتوا الذين آمنوا سألقي في قلواب الذين كفروا الرعب فاضربوا فوق الأعناق واضربوا منهم كل بنات
অর্থাৎ যখন নির্দেশ দান করেন ফিরিশতাদিগকে তোমাদের পরওয়ারদিগার যে, আমি সাথে রয়েছি তোমাদের, সুতরাং তোমরা মুসলমানদের চিত্তসমুহকে ধীরস্থির করে রাখ। আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দিবো। কাজেই গর্দানের উপর আঘাত হানো এবং তাদেরকে কাটো জুড়ায় জুড়ায়।[ সূরা আনফালঃ১২]
ইতিহাসের এক বিরল প্রতিযোগিতা
শাহাদাতের সুপেয় শরাব পান করে তিয়াসাতুর প্রাণকে শীতল করার জন্য মুজাহিদরা একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছিলেন। সৌভাগ্যের সেই অধরা বিহঙ্গকে এবার সামনে সামনে উড়তে দেখে সেটা হাতে পাওয়ার জন্য তারা উদগ্রীব হয়ে উঠছিলেন। সহোদর ভাইয়ে ভাইয়ে, আর প্রণ-প্রতীম বন্ধুতে বন্ধুতে সেদিন বদর প্রান্তরে পৃথিবীর এক নতুন ও ভিন্ন মাত্রিক প্রতিযোগিতার দৃশ্য তার জনমে সর্বপ্রথম অবলোকন করেছিল।
আব্দুর রহমান বিন আউফ রা. বলেন, আমি বদর যুদ্ধের সেনাসাড়িতে দাড়িঁয়ে ছিলাম। অচমকা আমি আমার ডানে ও বামে তাকিয়ে অল্প বয়সের দুজন কিশোরকে দেখতে পেলাম। স্বভাবতই আমার ভিতরে খানিকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। আমার মন তাদের উপর পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারলনা। ঠিক এ মুহুর্তে তাদের একজন অপরজনের থেকে লুকিয়ে চুপিসারে বলল, চাচাজান!
আবু জাহেলকে একটু দেখিয়ে দিননা আমায়! আমি বললাম, ভতিজা! তুমি আবু জেহেলকে দিয়ে কি করবে? আমাকে অবাক করে সে বলল, আমি আল্লাহর সঙ্গে ওয়াদা করেছি- আজ তাকে দখতে পেলে হয় তাকে মারবো নয় নিজে মরবো!
এরপর দ্বিতীয়জনও প্রথম জনের কথাগুলোই হুবহু বলল। আব্দুর রহমান রা. বলেন, তখন তাদের এ কথা শুনার পর আমি এতটা আশ্বস্তবোধ করলাম যে, বড় দুই মুজাহিদের মাঝখানে থেকেও বোধ করতামনা। তখন ইঙ্গিতে তাদের আমি আবু জাহেলকে দেখিয়ে দিলাম। পলকে দুই কিশোর বাজপাখির মত আবু জাহেলের উপর ঝাপিয়ে পড়ে তাকে ঠান্ডা করে দিল।তারা আফরার দুই সন্তান। আবু জাহলের নিহত হওয়ার সংবাদ পেয়ে রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, এই আবু জাহেল ছিল এ উম্মতের ফেরাউন
নোট: ইতিহাস জানার কোনো বিকল্প নাই। ইতিহাস থেকে আমরা অনেক কিছু জানি, অনেক কিছু শিখি। আবার অনেক মহা মানবের জীবন ইতিহাস পড়ে তৃপ্তির ঢেকুর ফেলি। কিন্তু আমরা কি কখনো চিন্তা করেছি যে, হয়তো আমরা সাময়িক মজা অনুভব করি কিন্তু তার থেকে কোনো ফায়দা আমাদের হচ্ছে না। কিন্তু আমরা এমন একজন মহা মানবের জীবন আলোচনা করেছি যা, ফায়দা থেকে খালি খালি নাই।
দ্বীন শিক্ষা ডট কমের পক্ষ থেকে আমরা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনি থেকে যুদ্ধের কিছু ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সংক্ষিপ্ত আকারে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যদি কোনো ধরনের ভূল-ভ্রান্তি হয় আশাকরি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
প্রিয় পাঠক আমরা রাসূলে সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এত পরিমাণ লম্বা করিনাই যাতেকরে পড়ে আপনারা বিরক্ত হন, আবার এত পরিমাণ সংক্ষিপ্তও করিনাই যাতে বিষয়টি পড়ে মনের মধ্যে তৃপ্তি না আসে। সর্বদিকে বিবেচনা করেই আমরা লেখাটাকে মধ্যম পন্থায় লিখেছি। আরও জেনে খুশি হবেন যে, আমরা এই লেখাটা যেই গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করেছি আর তা হল;
আস সিরাতুন নববীয়্যাহ
মুল লেখক:
আবুল হাসান আলী নদবী র.