উহুদ প্রন্তরে
অবশিষ্ট বাহিনী নিয়ে রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সামনে অগ্রসর হলেন এবং মদিনা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উহুদ পাহাড়ের পাদদেশে একটি ঘাঁটিতে অবতরণ করেন। উহুদ পাহাড়কে তিনি মুসলিম শিবিরের পেছনে রাখেন। মুসলিম বাহিনীর নির্দেশ জারি করেন- আমার পক্ষ থেকে যুদ্ধের নির্দেশ পাওয়ার আগ পর্যন্ত তোমাদের কেউ যেন লড়াই শুরু না করে দেয়! অতঃপর রাসূল সাঃ সেনাবিন্যাস করলেন।
মুসলিম বাহিনীর সংখ্যা ছিল সাতশো জন। আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর রা. এর নেতৃত্বে পঞ্চাশ জন তীরন্দাজ মুজাহিদদের একটি দল উহুদ পর্বতের ফাকা জায়গাটিতে নিযুক্ত করে তাদের প্রতি এক চরম গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিলেন- তীর দ্বারা আমাদের থেকে অশ্বারোহী বাহিনী ফিরিয়ে রাখবে। যুদ্ধে আমাদের জ্বয়-পরাজয় যা-ই হোক পেছন দিক থেকে কেউ যেন আমাদের ওপর আক্রমণ করতে না পারে।
তিনি তাদের অবস্থান শক্ত করে আঁকড়ে ধারার কঠোর নির্দেশ দান করেন। তাদরকে বলে দেন মুসলিম বাহিনীর ওপর যদি ঝাঁকে ঝাঁকে শকুন এসে ঠোকরাত থাকে তারপরও যেন এ স্থান ত্যাগ না করে। অতঃপর রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লৌহবর্ম পরিধান করেন। মুসলিম বাহিনীর ঝান্ডা অর্পণ করেন সাহাবী মুসআব বিন উমাইর রা. এর হাতে।
কমবয়সীদের মাঝে বিরল প্রতিযোগিতা
বয়সের স্বল্পতার কারণে রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উহুদের দিন বেশ কয়েকজন বালককে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে দু’জন ছিলেন সামুরা বিন জুন্দুব ও রাফে বিন খাদিজ রা.।
তাদের বয়স ছিল তখন পনেরো বছর। রাফে রা. এর পিতা রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে ছেলের জন্য সুপারিশ করেন এবং তাকে বলেন হে আল্লাহর রাসুল! আমার ছেলে তীরান্দাযিতে দারুন পটু। তখন রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাফেকে যুদ্ধের অনুমতি দেন।
ইত্যবসরে রাফের সমবয়সী সামুরা বিন জুন্দুব রা. রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকটে নিজেকে পেশ করলেন। কিন্তু তার বয়সের স্বল্পতার দরুন তাঁকে ফিরিয়ে দেন। তখন সামূরা রা. বলেন আপনি আপনি রাফেকে অনুমতি দিলেন আর আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। অথচ তার সঙ্গে কুস্তি লাগলে আমি নিমিষেই তাকে হারিয়ে দিতে পারবো। তখন তাদের মাঝে কুস্তি লাগানো হয়। কুস্তিতে সত্যি সত্যিই রাফেকে হারিয়ে দেন। তখন সামুরা রা. কেও অনুমতি দেওয়া হয় এবং সেইদিন তিনি উহুদের প্রান্তরে প্রবল বিক্রমের সঙ্গে লড়াই করেন
নোট: ইতিহাস জানার কোনো বিকল্প নাই। ইতিহাস থেকে আমরা অনেক কিছু জানি, অনেক কিছু শিখি। আবার অনেক মহা মানবের জীবন ইতিহাস পড়ে তৃপ্তির ঢেকুর ফেলি। কিন্তু আমরা কি কখনো চিন্তা করেছি যে, হয়তো আমরা সাময়িক মজা অনুভব করি কিন্তু তার থেকে কোনো ফায়দা আমাদের হচ্ছে না। কিন্তু আমরা এমন একজন মহা মানবের জীবন আলোচনা করেছি যা, ফায়দা থেকে খালি খালি নাই।
দ্বীন শিক্ষা ডট কমের পক্ষ থেকে আমরা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনি থেকে যুদ্ধের কিছু ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সংক্ষিপ্ত আকারে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যদি কোনো ধরনের ভূল-ভ্রান্তি হয় আশাকরি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
প্রিয় পাঠক আমরা রাসূলে সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এত পরিমাণ লম্বা করিনাই যাতেকরে পড়ে আপনারা বিরক্ত হন, আবার এত পরিমাণ সংক্ষিপ্তও করিনাই যাতে বিষয়টি পড়ে মনের মধ্যে তৃপ্তি না আসে। সর্বদিকে বিবেচনা করেই আমরা লেখাটাকে মধ্যম পন্থায় লিখেছি। আরও জেনে খুশি হবেন যে, আমরা এই লেখাটা যেই গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করেছি আর তা হল;
আস সিরাতুন নববীয়্যাহ
মুল লেখক:
আবুল হাসান আলী নদবী র.