জাহেলি অহমিকা ও বিকৃত প্রতিশোধ
কুরাইশের বাছা বোয়াল আর নেতৃত্বের মাথাগুলো খুইয়ে যখন অবশিষ্টরা ভোতা ঢাল-তলোয়ারগুলো কুচঁকিতে বেঁধে মক্কায় উপনীত হলো- বিরহ বেদনা আর বিচ্ছেদ শোকের এক ভয়াল কালো রাত্রি তাদের ওপর নেমে এলো। কলিজার টুকরা বাপ-বেটা আর ভাইদের হারিয়ে একদল সোজা আবু সুফিয়ান ও তাঁর বানিজ্যিক কাফেলার অংশীদারদের সঙ্গে কথা বলল।
তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আর্থিক সহায়তার আবেদন জানাল। দেখতে না দেখতো এক বিশাল বাহিনী রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য রাতারাতি প্রস্তুত হয়ে গেল। এ ক্ষেত্রে কবিদের বড় ভূমিকা ছিল। তারা লোকদের মধ্য আত্মমর্যাদাবোধ ও অহমিকা জাগ্রত করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে তীব্র উত্তেজনার মদ গিলিয়ে উন্মাদ করে ফেলল।
তৃতীয় হিজরীর শাওয়াল মাসের মাঝামাঝি সময়ে কুরাইশরা তাদের সবকিছু গুছিয়ে মক্কা থেকে বের হল। সঙ্গে তাদের ছেলে-সন্তান, নারীরা ও আরবের অন্যান্য কবিলাও ছিল। উদ্দেশ্য ছিল, নিদেনপক্ষে তাদের জন্য হলেও যেন তারা ভেগে যাওয়া থেকে নিবৃত্ত থাকে।নেতৃস্থানীয় কুরাইশরা তাদের স্ত্রীদের নিয়ে বের হল। এভাবে তারা মদিনার কাছাকাছি পৌঁছে শিবির স্থাপন করল।
রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ইচ্ছা ছিল মুসলমানেরা মদিনার ভিতরেই অবস্থান করবে। অতঃপর তারা যখন মদিনায় ঢুকবে তখন মদিনা সীমান্তের ভিতরেই তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবে। তিনি মদিনা থেকে মোটেও বের হতে চাচ্ছিলেন না। রঈসুল মুনাফিকীন আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইর মতও ছিল এটাই। কিন্তু যে সকল মুসলমান বদর যুদ্ধে শরীক হতে পেরে ছিলেন না তারা এসে বলতে লাগলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাদের দুশমন পর্যন্ত নিয়ে যান! যাতে তারা আমাদের ভিরু ও কাপুরুষ মনে না করে।
যেন তারা না ভাবে যে আমরা দুর্বল হয়ে পড়েছি। তাদের এই পিড়াপিড়িতে রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষমেশ নিজের হুজরায় ঢুকে রণসাজে সজ্জিত হলেন। ইতোমধ্যে তারা আপন কৃতকর্মের ওপর লজ্জিত হয়ে আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনাকে বের হতে বাধ্য করেছি। কিন্তু এটা আমাদের কখনো উচিত হয়নি। তাই আপনি যদি তবে মদিনার ভেতরই থাকুন। আল্লাহ আপনার ওপর রহম করবেন।
তখন রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, যখন কোনো নবী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন তখন আর তার জন্য দুশমনের সঙ্গে মুকাবেলার আগ পর্যন্ত বসে থাকা সমীচীন নয়।
একহাজার সাহাবীর একটি বাহিনী নিয়ে রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনা থেকে বের হলেন। অতঃপর যখন তিনি মদিনা ও ওহুদের মাঝখানে শাওত নামক স্থানে পৌছলেন তখন মুনাফিক আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এক তৃতীয়াংশ লোক নিয়ে মুসলিম বাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। এ ক্ষেত্রে সে অজুহাত দেখাল- তিনি তাদের প্রস্তাব কবুল করেছেন আর আমার ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন
নোট: ইতিহাস জানার কোনো বিকল্প নাই। ইতিহাস থেকে আমরা অনেক কিছু জানি, অনেক কিছু শিখি। আবার অনেক মহা মানবের জীবন ইতিহাস পড়ে তৃপ্তির ঢেকুর ফেলি। কিন্তু আমরা কি কখনো চিন্তা করেছি যে, হয়তো আমরা সাময়িক মজা অনুভব করি কিন্তু তার থেকে কোনো ফায়দা আমাদের হচ্ছে না। কিন্তু আমরা এমন একজন মহা মানবের জীবন আলোচনা করেছি যা, ফায়দা থেকে খালি খালি নাই।
দ্বীন শিক্ষা ডট কমের পক্ষ থেকে আমরা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনি থেকে যুদ্ধের কিছু ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সংক্ষিপ্ত আকারে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যদি কোনো ধরনের ভূল-ভ্রান্তি হয় আশাকরি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
প্রিয় পাঠক আমরা রাসূলে সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এত পরিমাণ লম্বা করিনাই যাতেকরে পড়ে আপনারা বিরক্ত হন, আবার এত পরিমাণ সংক্ষিপ্তও করিনাই যাতে বিষয়টি পড়ে মনের মধ্যে তৃপ্তি না আসে। সর্বদিকে বিবেচনা করেই আমরা লেখাটাকে মধ্যম পন্থায় লিখেছি। আরও জেনে খুশি হবেন যে, আমরা এই লেখাটা যেই গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করেছি আর তা হল;
আস সিরাতুন নববীয়্যাহ
মুল লেখক:
আবুল হাসান আলী নদবী র.