Sunday, November 17, 2024
No menu items!
Homeসিরাতুন নবী (সা.)রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কয়েকটি মুজিযা

রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কয়েকটি মুজিযা

দুর্ভাবনার ঘনঘোর অন্ধকারে আলোকিত ভবিষ্যতেের হাতছানি

পরিখা খননের ধারাবাহিকতায় সাহাবায়ে কেরামের সামনে একটি বিশাল শক্ত পাথর বাঁধা হয়ে দাঁড়াল। অনেক চেষ্টা-প্রচেষ্টার পরও সাহাবায়ে কেরাম সেটা ভাঙতে ব্যর্থ হলেন। তারা যত জোরেই সেটার ওপর আঘাত হানছিলেন ঠিক ততটা গতি তাদের কোদাল ফিরে আসছিল। রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সম্পর্কে জানতে পেরে তিনি পরিখার অভ্যন্তরে অবতরণ করেন এবং হাতে কোদাল নিয়ে সেই পাথরটির ওপর এতটা জোরে আঘাত হানেন যে, মুহুর্তে সেই পাথরখানার এক তৃতীয়াংশ ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে যায়।

আর তখন রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যবান মোবারক থেকে বেরিয়ে আসে একটি সোনালী ভবিষ্যতদ্বাণী: আল্লহু আকবার! সিরিয়ার চাবিগুলো আমার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে! অতঃপর তিনি পাথরটির ওপর দ্বিতীয় আঘাত হানলেন আর তাতে পাথরের দুই তৃতীয়াংশ এবার ভেঙে টুকরা টুকরা হয়ে গেল। আর তখন তিনি ইরশাদ করলেন, আল্লাহু আকবার! পারস্যের চাবিগুলো আমার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে!!

আল্লাহর কসম! আমি এখান থেকে মাদয়ানের গগনচুম্বী দুর্গগুলো সুস্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তৃতীয় আঘাতে পাথরটির তৃতীয় ও সর্বশেষ অংশটিও ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। আর তখন তার মোবারক যবান থেকে বেরিয়ে এলো- আল্লহু আকবার! ইয়েমেনের চাবিগুলো আমার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে! আল্লাহর কসম! এখান থেকে খুব ভাল করেই আমি সানার রাজ তোরণ দেখতে পাচ্ছি।


মনে রাখতে হবে, এই ভবিষ্যতদ্বাণীটি করা হয়েছিল এমন এক নাযুক মুহুর্তে, এমন এক চরম বিব্রতঘন পরিস্থিতিতে যখন এর বাস্তবায়নের চেয়ে বড় আশ্চর্যের বিষয় পৃথিবীর বুকে আর কিছু সম্ভব ছিল না। এটা ছিল তখন কল্পনার সীমারেখার বাইরে। বাহ্যত এটা ছিল এমন এক দিবাস্বপ্ন যা কোনোদিন সত্য হওয়ার মত ছিলনা। কনকনে শীতে, বিদঘুটে প্রতিকূল আবহাওয়া তখন মুসলমানদেরকে সাপের মত পেঁচিয়ে ধরেছিল।

খাদ্য আর পানাহারের মন্বন্তর তখন তাদের জীবনে নিত্যউপাদানে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। তাদের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছিল দানবীয় এক বিশাল বাহিনী যার মোকাবিলা ছিল তাদের সাধ্যের বাইরে। জীবন আর মৃত্যুর উম্মাতাল নাগরদোলায় এখানকার নগরবাসীরা নিয়মিত দোল খাচ্ছিল।

রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কয়েকটি মুজিযা

পরিখা খনন কালে সাহাবায়ে কেরাম রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর থেকে বেশ কয়েকটি মুজিযা অবলোকন করার সৌভাগ্য হয়েছিল। যখনই কোনো দল পরিখা খননের ক্ষেত্রে বিশাল কোনো পাথরের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হতেন কিংবা সেটা দূরে সরিয়ে ফেলা তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়াত তখনই তারা ছুটে আসতেন দরগাহে রিসালাতে।

রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন তাদেরকে পানি নিয়ে আসতে বলতেন। শুরুতে নিজের সামান্য লালা মোবারক পাথরটির কোনো স্থানে লাগাতেন। অতঃপর আল্লাহর কাছে নুসরাত ও সাহায্যের জন্য দোয়া করতেন। দোয়ার পর তার নির্দেশে সেই পাথরটির ওপর সেই পানি ছিটিয়ে দিতেন।
কখনো কখনো সামান্য কিছু খাবারও এক বিশাল সংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম কিংবা তিন হাজার কর্মীর পুরো বাহিনীর জন্য যথেষ্ট হত।


জাবির বিন আব্দুল্লাহ রা. বর্ণনা করেন, পরিখা খনন কালে এক সময় আমাদের সামনে একটি বিশাল বড় পাথর বাঁধা হয়ে দাঁড়াল। তখন লোকেরা রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে গিয়ে এ সম্পর্কে অবহিত করল যে, একটি বিশাল পাথর আমাদের কাজের পথে অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছে। তখন উঠে দাঁড়ালেন। মদিনার এই বাদশা বললেন, আমাকে সেথায় নিয়ে চলো! অথচ তাঁর পেটে তখনো একটি পাথর বাঁধা ছিল।

কারণ তখন তিনদিন পর্যন্ত আমাদের কেউ কোনো খাবার স্পর্শ করতে পারেনি। রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি কোদাল হাতে তুলে নিলেন এবং পাথরটির গায়ে সজোরে আঘাত হানলেন। এতে শক্ত পাথরটি চোখের পলকে উৎক্ষিপ্ত বালুকণার মত ঝরতে লাগল। অতঃপর আমি রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বাড়ি চলে গেলাম।

স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলাম, খাওয়ার মত কিছু আছে কি? সে জানাল, হ্যা সামান্য কিছু যব এবং একটি বকরি আছে। আমি বকরিটি যবাই করলাম। আর আর ওদিকে আমার স্ত্রী সবগুলো পেষণ করল। অতঃপর বকরির গোশত রান্না করতে লাগলাম রুটি ও গোশত প্রস্তুত হয়ে গেলে আমি সোজা রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে চলে গেলাম।

সকলের অলক্ষিতে তাঁর কাছে নিবেদন করলাম যে, আমি তাঁর জন্য সামান্য কিছু জিনিস তৈরি করেছি। এখন তিনি যেন একজন বা দু’জন সঙ্গী নিয়ে আমার বাড়িতে তাশরিফ আনেন। তিনি আমাকে খাবারের কথা জিজ্ঞাসা করলে আমি তাকে সবিস্তারে সবকিছু খুলে বললাম। রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, বাহ! এতো দারুণ যথেষ্ট পরিমাণ খাবার!!

অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, বাড়িতে গিয়ে তোমার স্ত্রীকে বলো আমি আসার আগ পর্যন্ত যেন সে উনুনের ওপর থেকে গোশতের পাত্র না নামায় এবং রুটি না সেঁকে। অতঃপর তিনি আনসার ও মুহাজির সকল সাহাবায়ে কেরামকে ডাকলেন । আমি দ্রুত বাড়ি গিয়ে স্ত্রীকে জানালাম যে, রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমস্ত আনসার ও মুহাজির সাহাবায়ে কেরামকে দাওয়াত করেছেন এবং সেখানে উপস্থিত সবাই তাঁর সঙ্গে আসছেন। সে আমাকে জিজ্ঞাসা করল,

রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি আপনাকে খাবারের পরিমাণ সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করেছিলেন? আমি হ্যা সূচক জবাব দিলাম। কিছুক্ষণ পরে রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এলেন এবং সবাইকে ঘরে ঢুকতে বললেন। তিনি কয়েকটি রুটি হাতে নিলেন এবং কয়েক টুকরো গোশত তার ওপর রাখলেন। এরপর একজনের পর একজন প্রত্যেককে দিতে লাগলেন।

গোশত ও রুটির পাত্র তখন একটি কাপর দিয়ে তিনি ঢেকে রেখেছিলেন। এভাবে তিনি প্রত্যেককে দিয়ে শেষ করলেন। অতঃপর তিনি আমাকে এবং আমার স্ত্রীকেও তা থেকে খেতে এবং পরিবারের অন্যান্যদেরকে দিতে বললেন। কারণ আজ কয়েকদিন পর্যন্ত আমরাও সবাই না খেয়ে ছিলাম।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments