বায়‘আতে কুবরা সম্পন্ন হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নির্যাতিত মুসলমানদের ইয়াছরিবে হিজরতের অনুমতি দিলেন। মক্কার কাফেররা ইয়াছরিবে(মদিনার পূর্বের নাম) হিজরতে বাধা দিতে থাকল। ইসলামের প্রসার বৃদ্ধিতে বাধা দেওয়া ছাড়াও এর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক।
অর্থনৈতিক কারণ ছিল এই যে, মক্কা থেকে মদিনা হয়ে সিরিয়ায় তাদের গ্রীষ্মকালীন ব্যবসা পরিচালিত হত। এ সময় সিরিয়ায় তাদের বার্ষিক ব্যবসার আর্থিক মূল্য ছিল প্রায় আড়াই লক্ষ দীনার। এছাড়াও ছিল ত্বায়েফ-এর ব্যবসা। উভয় ব্যবসার জন্য যাতায়াতের পথ ছিল ইয়াছরিব। আল্লাহ পাক এমন এক স্থানে নির্যাতিত মুসলমানদের হিজরতের ব্যবস্থা করেন, যা হয়ে ওঠে এক অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় ভূমি।
এই হিজরতের রাজনৈতিক গুরুত্ব ছিল এই যে, মদিনায় মুহাজিরগণের অবস্থান সুদৃঢ় এবং ইয়াছরিববাসীগণ ইসলামের পক্ষে অবস্থান নিলে তা মক্কার মুশরিকদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিবে। ফলে তা মক্কাবাসীদের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। যাতে তাদের জান-মাল ও ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছু হুমকির মধ্যে পড়বে। হযরত আবুবকর (রাঃ) হিজরতের মনস্থ করেছিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে নিষেধ করে বলেন, ‘থেমে যাও! আমি আশা করছি যে, আমাকেও অনুমতি দেওয়া হবে’। এভাবে রাসূল, আবুবকর ও আলী ব্যতীত মক্কায় আর কোন মুসলমান অবশিষ্ট থাকলেন না।
রাসূল (সাঃ)-কে হত্যার ষড়যন্ত্র কুরাইশ নেতারা বায়‘আতে কুবরা-র প্রায় আড়াই মাস পর চতুর্দশ নববী বর্ষের ২৬শে ছফর মোতাবেক ১২ই সেপ্টেম্বর ৬২২ খৃষ্টাব্দ বৃহস্পতিবার দিনের প্রথম ভাগে তাদের অবিসংবাদিত সাবেক কুরাইশ নেতা কুছাই বিন কিলাব প্রতিষ্ঠিত বৈঠক ঘর দারুন নাদওয়াতে কুরাইশ -এর অধিকাংশ গোত্রনেতাদের এক যরূরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য যে, এই বৈঠকে রাসূলের গোত্র বনু হাশেম ও বনু মুত্ত্বালিবকে ডাকা হয়নি। কুরাইশ সাত গোত্রের ১৪ জন নেতা দারুন নাদওয়াতে পূর্বাহ্নে বসে আলোচনা শুরু করে। আবু জা প্রস্তাব দিয়ে বলল, প্রতি গোত্র থেকে একজন করে সুঠামদেহী যুবক বাছাই করে তাদেরকে তরবারি দেওয়া হউক। অতঃপর তারা এসে একসাথে আঘাত করে তাকে শেষ করে দিক। এতে তিনটা লাভ হবে।
এক- আমরা তার হাত থেকে বেঁচে যাব।
দুই- তার গোত্র আমাদের সব গোত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহস করবে না।
তিন- একজনের রক্তমূল্য বাবদ একশত উট আমরা সব গোত্র ভাগ করে দিয়ে দেব। যা কারু জন্য কষ্টকর হবে না’।
আবু জাহেল এই প্রস্তাবকে সকলে সানন্দে কবুল করল এবং এর উপরেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সবাই নিষ্ক্রান্ত হ’ল।
ষড়যন্ত্রকারী ১৪ জন নেতার পরিণতি :
উপরোক্ত ১৪ জন নেতার মধ্যে ১১ জন মাত্র দু’বছর পরে ২য় হিজরীর ১৭ রামাযানে সংঘটিত বদরের যুদ্ধে একদিনেই নিহত হয়। বাকী তিনজন জুবায়ের বিন মুত্ব‘ইম, হাকীম বিন হেযাম ও আবু সুফিয়ান ইবনু হারব পরবর্তীতে মুসলমান হয়ে যান। আল্লাহ বলেন,
إِنَّهُمْ يَكِيدُوْنَ كَيْداً، وَأَكِيدُ كَيْداً-
‘তারা জোরালো কৌশল করেছিল। আর আমিও কৌশল করি’। ‘অতএব কাফেরদের … কিছুদিনের জন্য অবকাশ দিন’ (ত্বারেক ৮৬/১৫-১৭)।