Saturday, November 23, 2024
No menu items!
Homeসিরাতুন নবী (সা.)ইহুদি ষড়যন্ত্রের আরেকটি উদাহরণ

ইহুদি ষড়যন্ত্রের আরেকটি উদাহরণ

ধর্মীয় সহিষ্ণুতা


মুসলমানরা খাইবরে মে সকল গনিমতের মাল পেলেন, তন্মধ্যে গনিমত স্বরূপ তাওরাতের কিছু কপি ও তারা পেয়েছিলেন। যখন তারা পরবর্তীতে সেগুলোর তালাশে এল রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাদেরকে সেগুলো দিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। বিখ্যাত ইহুদি লেখক ইসরাইল ওয়েলফেনশন এ ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে লেখেন,,

এই ঘটনার দ্বারা বুঝা যায়, তাদের কিতাবের প্রতি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু সালামের হৃদয় কতটা উচ্চ সম্মান আর মর্যাদা ছিল। তার এই সহিষ্ণুতা আরবি নম্র আচরণ ইহুদিদেরকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল। তারা একথা কোনোদিনও ভুলতে পারছিল না যে, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে পাওয়ার পরেও তাদের এ কিতাবের কোনো অপমান করেন নি।

এর বিপরীতে তাদের মনে পড়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৭০অব্দে যখন রোমানরা জেরুজালেম দখল করেছিল তখন কি আচরণই না তারা ইহুদিদের সঙ্গে করেছিল। তারা সেদিন ইহুদিদের কিতাব পুড়িয়ে ফেলে ছিল। পায়ের তলায় ফেলে পিষেছিল। একইভাবে স্পেনে ইহুদিদের ওপর নির্যাতনকারী ধর্মোন্ম খ্রিস্টানরা ইহুদীদের কিতাব তাওরাতকে আগুনে ফেলে জ্বালিয়ে দিয়েছিল। আর এটাই সেই বিশাল পার্থক্য যা আমরা সর্বত্র এসকল বিজেতা আর ইসলামের নবীর মাঝে দেখতে পাই।

জাফর বিন আবু তালেব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর আগমন


এ গাজওয়ার সময়ই রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচাতো ভাই জাফর বিন আবু তালিব ও তার সঙ্গীরা এসে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন। তাদের আগমনে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দারুণ খুশি হয়েছিলেন। তিনি তাকে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানালেন। তার ললাটে চুম্বন এঁকে দিলেন এবং বললেন, আল্লাহর শপথ! জানিনা- আজ আমি খাইবার বিজয়ে বেশি খুশি নাকি জাফরের আগমনে!!


ইহুদি ষড়যন্ত্রের আরেকটি উদাহরণ


এই গাযওয়াতেই রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে বিষ খাওয়ানো হয়েছিল। ইহুদি সাল্লাম ইবনে মিশকামের এর স্ত্রী জয়নাব বিনতে হারিস রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম সম্পর্কে লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন বকরির কোন অংশ তিনি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, রানের অংশ। তখন সে একটি ভুনা বকরির রানের মধ্যে খুব ভালো করে বিষ মাখিয়ে দরগাহে রিসালাতে পরিবেশন করে। যখন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম সেটা খেতে শুরু করলেন, তখন গোশতের টুকরাটি নিজেই বলে উঠলো- আমার মধ্যে বিষ মাখানো হয়েছে। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গে সঙ্গে মুখে নেওয়া লোকমা ফেলে দিলেন।


অতঃপর তিনি ইহুদিদেরকে এক জায়গায় ডেকে বললেন, আমি যদি তোমাদেরকে কিছু জিজ্ঞাসা করি তবে কি তোমরা আমাকে সত্য বলবে? তারা বলল, হা। তিনি বললেন, তোমরা কি এই বকরির মধ্যে বিষ মাখিয়েছো? তারা বলল, হা। তিনি বললেন, তোমরা এই কাজ কেন করলে? তারা বলল, আমরা একটা পরীক্ষার জন্য করেছি। যদি আপনি মিথ্যুক হয়ে থাকেন, তবে আপনার হাত থেকে আমরা নিষ্কৃতি পাব, আর যদি আপনি সত্যি সত্যিই নবী হয়ে থাকেন তবে এটা আপনার কোন ক্ষতিই করতে পারবেনা- এই আশায় আমরা এ কাজ করেছি। অতঃপর সেই মহিলাটিকে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর কাছে নিয়ে আসা হলে সে বলল, আমি আপনাকে হত্যা করতে চেয়েছি।

তিনি বললেন, আল্লাহতায়ালা তোমাকে আমার উপর বিজয়ী করবেন না। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আমরা কি তাকে হত্যা করে দিব না? তিনি বললেন, না। অতঃপর তাকে ছেড়ে দেওয়া হল। কোন প্রকার শাস্তি তাকে দেওয়া হলো না।
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম প্রথমে তাকে ঠিকই হত্যা না করে ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে যখন তার বিষে আক্রান্ত সাহাবী বিশর বারা বিন মারূর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু শহীদ হয়ে গেলেন, তখন কিসাস স্বরূপ তাকেও হত্যা করা হলো।

গাজওয়ায়ে খাইবারের প্রভাব


গাজওয়ায়ে খাইবর ও তাতে মুসলমানদের বিজয় ছিল একটি চমৎকার বিজয়। এর দ্বারা তখনও পর্যন্ত যে সকল আরবিও কবিলা ইসলামী দাখিল হয়নি, তাদের হৃদয় ও মনে ইসলামের দারুণ প্রভাব প্রতিপত্তি সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ, এতদিন তারা খাইবারের ইহুদীদেরকে যথেষ্ট শক্তিশালী মনে করত। তারা জানত, এই ইহুদীদের কাছে রয়েছে অত্যাধুনিক সব সমরাস্ত্র আর ধনে বলে ও জনশক্তিতেও তারা ঢের শক্তিমান। সুরক্ষিত সব দুর্গঘেরা তাদের জীবন। তাই যেকোনো বহিঃশত্রুর আক্রমণ তাদের উপর খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে না। উল্টো আক্রমণকারীদের জন্য তা বিপদ ডেকে আনবে। পাশাপাশি তাদের মধ্যে রয়েছে মারহাব, হারিস আবু জয়নবের মতো নামকরা সব বীরপুরুষ।


ইহুদি লেখক ডক্টর ইজরাইল ওয়ালফেনশন লেখেন,
সন্দেহ নেই, ইসলামের পরবর্তী বিজয়গুলোর ক্ষেত্রে গাজওয়ায়ে খাইবর একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করেছিল। দিনের-পর-দিন মদিনার আনসার আর ইহুদিদের মাঝে যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত আর ঠেলাঠেলি চলছিল, সবাই অপেক্ষা করছিল কি হয় এর ফলাফল সেটা দেখার জন্য। আরবের বিভিন্ন শহর ও নগরী আর মরু সমুদ্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিভিন্ন দুশমন কবিলা গাজওয়ায়ে খাইবার নিয়ে প্রচুর স্বপ্ন দেখত‌।


পাশাপাশি এই গাজওয়ায়ে খাইবারের সুফল ( যেমনটি বলেছেন ডক্টর হোসাইন মুনির) কেবল ইউদি ষড়যন্ত্রের প্রসাদ গুঁড়িয়ে দেওয়ার মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এর দ্বারা আরো একটি ব্যাপক ফায়দা হয়েছিল ইসলাম ও মুসলমানদের- যা সেই আগের ফায়দার চেয়েও গুরুত্বের দিক দিয়ে কোন অংশে কম ছিলনা। আর তা হল- জাযীরাতুল আরবের ঠিক মাঝ বরাবর উত্তরে হিজাজ ও নজদের মাঝে বসবাসরত আরবের সর্বাপেক্ষা বড় ও বেশি হিংস্র কবিলা বনু গাতফানের শারারাতও এর মাধ্যমে শেষ করে দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সমস্ত শক্তি সামর্থ্য নিয়ে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার আগেই এ ছাড়া আর কোনো গত্যন্তরো ছিল না যে- তাকে এখনই থামিয়ে দেওয়া হোক। যাতে পরবর্তীতে সে সমস্যার সৃষ্টি না করতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments