Sunday, November 24, 2024
No menu items!
Homeসিরাতুন নবী (সা.)নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা হল

নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা হল

গনিমতের মাল
গাজওয়ায়ে খাইবার বিজিত হওয়ার পরে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিদাকের দিকে মনোযোগী হলেন। তখন ফিদাকের ইহুদিরা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে প্রস্তাব পাঠালো- যেন তিনি তাদেরকে উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক প্রদানের শর্তে সেখানে বহাল রাখেন। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করে নিলেন। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম ফিদাক থেকে প্রাপ্ত অর্থ তার নিজের ও মুসলমানদের কল্যাণের কাজে ব্যয় করতেন।


অতঃপর তিনি ওয়াদিয়ে কুরার দিকে অগ্রসর হলেন। এটা ছিল খাইবর আর তাইমার মধ্যবর্তী কতগুলো গ্রামের সমষ্টি‌। ইসলামের পূর্বে এটা ছিল ইহুদিদের উপনিবেশ। পরবর্তীতে সেখানে বেশ কিছু আরব কবিলা গিয়ে বসবাস করতে থাকে এবং এক সময় এটি পরিণত হয় একটি সমৃদ্ধ শহরে। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহ্বান করলেন। তিনি তাদেরকে বললেন, যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে তবে তাদের জানমালের নিরাপদ থাকবে। আর তাদের হিসাবের জিম্মাদারী থাকবে আল্লাহর উপর।


এই গাজওয়াতে বেশকিছু লড়াই সংঘটিত হয়েছিল। আর জুবায়ের ইবনুল আওয়াম রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু ছিলেন সেগুলোর মহানায়ক। মুসলমানরা এই যুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক পরের দিনই ইহুদীরা তাদের হাতের সবকিছু মুসলমানদের হাতে তুলে দেয়। এ যুদ্ধে মুসলমানরা প্রচুর পরিমানের গনিমতের মাল লাভ করেন। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে বসেই সাহাবায়ে কেরামের মাঝে গনিমতের মাল বন্টন করে দিলেন। আর সেখানকার জমিজমা ও খেজুরের বাগান বর্গা হিসেবে তুলে দিলেন ইহুদিদের হাতে।


যখন তাইমার ইহুদীদের কাছে খাইবর, ফিদাক ও ওয়াদিয়ে কুরার ইহুদিদের পরিণতি একে একে গিয়ে পৌঁছলো তখন তারা খুব দ্রুত কোন লম্বা চিন্তাভাবনা ছাড়াই রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর কাছে শান্তির প্রস্তাব পাঠালো। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করলেন। তাদের জমিজমা ও ধন-সম্পদ তাদের হাতে রেখে মদিনার পথে রওনা হলেন

মুহাজিরদের উদারতা
গাজওয়ায়ে খবর থেকে ফিরে এসে মুহাজির সাহাবায়ে কেরাম তাদের আনসার ভাইদেরকে সেই সমস্ত জায়গা জমি ও খেজুরের বাগান ফিরিয়ে দিতে লাগলেন যেগুলো অভাবের সময় আনসার ভাইয়েরা তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। কারণ খাইবারে প্রাপ্ত গনিমতের মাধ্যমে তাদের অভাবের বড় অংশটুকু মোচন হয়ে গিয়েছিল। আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর মাতা উম্মে সুলাইম রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে বেশকিছু খেজুর গাছ দিয়েছিলেন, যেগুলো নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার আজাদকৃতদাসী উম্মে আইমান এর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে এখন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম উম্মে সুলাইম কে তার খেজুর গাছ গুলো ফিরিয়ে দেন আর উম্মে আয়মান কে প্রতিটি খেজুর গাছের বদলে দেন দশটি খেজুর গাছ।


গাজওয়ায়ে ফাইবারের পরে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশ কিছু সারিয়া এদিক-সেদিক প্রেরণ করেন। এবং তাতে বড় বড় সাহাবীকে তিনি আমির নিযুক্ত করেন। তন্মধ্যে কতগুলোতে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল আর কতগুলো তে হয়নি।

উমরাতুল কাযা
পরবর্তী বছর অর্থাৎ হিজরতের সপ্তম বছর পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। কুরাইশরা তাদের ও মক্কার মাঝখান থেকে সরে গেল। তারা তাদের ঘরবাড়ি বিরান করে দিয়ে কুআইকিআন পাহাড়ের উপর উঠে মুসলমানদের অবস্থা প্রত্যক্ষ করতে লাগলো। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় তিন দিন অবস্থান করলেন এবং ওমরা পালন করলেন।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন,

অর্থাৎ আল্লাহ তাঁর রাসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আল্লাহ চান তো তোমরা অবশ্যই মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে মস্তক মন্ডিত অবস্থায় এবং কেশ কর্তিত অবস্থায়। তোমরা কাউকে ভয় করবে না। অতঃপর তিনি জানেন যা তোমরা জানো না। এছাড়াও তিনি দিয়েছেন তোমাদেরকে একটি আসন্ন বিজয়। [সুরা ফাতহ: ২৭]

নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা হল
ইসলামের প্রভাবে মানুষের মন ও মগজে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বড় ইনকেলাব ও এক সারা জাগানিয়া রেনেসাঁ চলে এসেছিল। যার ফলে কন্যা সন্তান যাকে জাহিলি আরবরা সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করত এবং যার জন্মের লজ্জায় তাকে বেড়ে ওঠার আগেই নির্মমভাবে মাটির বুকে জীবন্ত দাফন করে ফেলা হতো এখন মহাব্বত আর ভালবাসার পাত্রে পরিণত হল। মুসলমানরা এখন তাদের লালন পালনের জন্য পরস্পরে প্রতিযোগিতা করতে লাগলেন।


নারী ও পুরুষ সমস্ত মুসলমান এক সমান। তাদের সবার সমান সমান অধিকার। নৈতিকতা ও সৎকর্মে যে বেশি অগ্রসর সেই সর্বোত্তম এটা ছিল মূলনীতি। এছাড়া অন্য কিছুতে কেউ কারো চেয়ে বেশী হকদার কিংবা শ্রেষ্ঠ ছিল না। যখন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম মক্কা থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন হামজা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর মেয়ে তাকে ডাকতে ডাকতে দৌড়ে এলো- চাচা। চাচা! আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তাকে কোলে তুলে ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর হাতে দিয়ে বললেন, ওর দেখাশোনা করবে।

তখন জায়েদ ও জাফর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তারাও এই বাচ্চার অভিভাবকত্ব দাবি করলেন। আলী রাযিআল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন, আমি তাকে সবার আগে তুলে নিয়েছি; তাছাড়া সে আমার চাচার সন্তান। জাফর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন, একদিকে আমারও চাচার সন্তান অপরদিকে তার খালা আমার স্ত্রী। জায়েদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন, সে আমার ভাইয়ের মেয়ে।

রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাকে তার খালার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, খালা মায়ের মতই। অতঃপর আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কি বললেন, তুমি আমার আর আমি তোমার। আর জাফর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন, তুমি সুরত ও সিরাত উভয় দিক দিয়েই আমার মত হয়েছে। আর জায়েদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন, তুমি আমাদের ভাই এবং আত্মীয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments