সালাম উত্তর দেয়ার পদ্ধতি।
কিভাবে সালামের উত্তর দিতে হবে, এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনের সুন্দর ও সুস্পষ্ট ঘোষণা হল-
واذا حييتم بتحة فحيواباحسن منها أو ردوها
আর যখন তোমাদেরকে কেউ সালাম করে, তোমরা তার চেয়ে উৎকৃষ্ট বাক্যে (তার প্রতি উত্তরে) সালাম কর, অথবা সে শব্দটাই (উত্তরে) বলে দাও।
(সূরা নিসাঃ আয়াত-৮৬)
খোদায়ী এনিদর্শনের সারমর্ম হল- আসসালামু আলাইকুম -এর জবাবে- ওয়ালাইকুম আসসালাম -এর সাথে ‘ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু’ অতিরিক্ত বলা, এমনটি করা উত্তম। অবশ্যই শুধু ওয়ালাইকুম আসসালাম বলে উত্তর দেওয়া হলে শরীয়তের নির্দেশ পালিত হয়ে যাবে।
গৃহে প্রবেশকালে সালাম
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-
فاذادخلتم بيوتا فسلموا علي انفسكم تحية من عند الله مباركة طيبة كذالك يبين الله لكم الآيات لعلكم تعقلون
আর যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ কর, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এটা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য নিদর্শনাবলী বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা বুঝে নিতে সক্ষম হও।
(সূরা নূরঃ আয়াত-৬১)
বাসস্থান, অফিস, আদালত, দোকানপাটসহ সর্বস্থানেই গমনাগমনের সময় সালাম প্রদান করা উচিৎ। সালাম প্রদানের ব্যাপারে এই আয়াতে আল্লাহ তা’লা কোনো শ্রেণী বিন্যাস করেননি; বরং এখানে যাতায়াতকারীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সালাম প্রদান করার জন্য। যাতায়াতকারী মালিক হোক বা কর্মচারী, উর্ধ্বতন অফিসার হোক বা তৃতীয় শ্রেণির চাকর নওকর, বয়সে বড় বা ছোট।
মোটকথা, যে ব্যক্তি আসবে কিংবা যাবে, তাকেই সালাম প্রদান করতে হবে। আর সেখানে যে থাকবে সে সালামের উত্তর প্রদান করবে।
অন্যের গৃহে প্রবেশকালে সালাম
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-
يايهالذين آمنوا لا تدخلوا بيوتا غيربيوتكم حتى تستانسوا وتسلموا علي اهلها ذلكم خيرلكم لعلكم تذكرون.
হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতিত অন্যগৃহে প্রবেশ করোনা, যে পর্যন্ত আলাপ পরিচয় না কর। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম, যাতে তোমরা স্বরণ রাখ। (সূরা নূরঃ আয়াত-২৭)
অন্যের ঘরবাড়ি ও বাসস্থানে অনুমতি ব্যতিত প্রবেশ করা ঠিক নয়। অন্যের বাড়িতে প্রবেশের প্রয়োজন হলে গৃহকর্তা থেকে অনুমতি নিয়ে সালাম প্রদানের মাধ্যমে প্রবেশ করবে।
সালামের গুরুত্ব
পবিত্র কোরআনের অন্য একস্থানে ইরশাদ হয়েছে-
ولا تقولوا لمن القي اليكم الاسلام لست مؤمنا
এবং এমন ব্যক্তিকে যে তোমাদের সালাম করে, এরুপ বলোনা যে, তুমি মুসলমান নও।
(সূরা নিসাঃ আয়াত-৯৪)
মুসলমানদের পরস্পরের ঝগরা বিবাদের কারণে অথবা শরীয়তী মামুলি কোনো বিষয়ে মতপার্থক্য হওয়ার কারণে একজন অপরজনকে কাফের এবং ইসলাম বহির্ভূত মনে করা উচিৎ নয়।
কেননা মুসলমানদের মাঝে পরস্পর ইখতেলাফ হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। এপ্রসঙ্গে বরং মহানবী হজরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
اختلاف أمتي رحمة
‘আমার উম্মতের ইখতেলাফ রহমত স্বরুপ’।
অবশ্যই কথাবার্তা, কাজেকর্মে প্রকৃত অর্থেই যদি কোন ব্যক্তি কাফের বা মুশরিকে পরিণত হয়, তাহলে তার ব্যাপার হবে আলাদা। শরীয়তের কোন কোন বিষয়ে মতপার্থক্য থাকা স্বাভাবিক, এমনটা অতিতেও ছিল, বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তাই বলে কি এর উপর ভিত্তি করে কাউকে ইসলাম বহির্ভূত এবং কাফের হিসেবে আখ্যায়িত করা উচিৎ হবে? না কখনও নয়। আমরা সকলেই মুসলমান। এই আয়াতের দ্বারা সালামের গুরুত্ব এভাবে উপলব্ধি করা গেল যে, কোনো ব্যক্তি দিলেই বুঝে নিতে হবে সে মুসলমান। আল্লাহু আকবার! সালাম এমন একটি স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য যার মাধ্যমে মুসলিম অমুসলিমের পার্থক্য হয়ে যায়। এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর কি হতে পারে।
[{আমাদের এই লেখাটি পাকিস্তানের সিদ্দিকী ট্রাষ্ট কর্তৃক প্রকাশিত মাওলানা মনসুরুজ্জামান সিদ্দীকীর একটি উর্দু রেসালা]}
বাংলা অনুবাদ করেছেন, দেশবরেণ্য আলেমে দ্বীন বাতিলের কাছে আপোষহীন সিপাহসালার মুফতি ফজলুল হক আমিনী(রহঃ)। এই লেখাটি উৎসর্গ তার রুহের মাগফিরাত কামনায়।
আমাদের ফেসবুক পেজে এ যুক্ত হয়ে থাকতে পারেন এবং আমাদের কন্টেন্ট ভিডিও আকারে পেতে আমাদের ইউটিউব চ্যানেল টি সাবস্ক্রাইব করে রাখতে পারেন।