Tuesday, December 3, 2024
No menu items!
Homeফাজায়েল ও মাসায়েলনারীদের জন্যশরয়ী পর্দার জন্য শর্তাবলী

শরয়ী পর্দার জন্য শর্তাবলী

এক: নারীদের জন্য তাদের সম্পূর্ণ শরীর ডেকে রাখা:

কোন কোন আলেমের মতে যদি ফিতনার আশঙ্কা না থাকে, তখন চেহারা ও কব্জিদ্বয় পর্দার অন্তর্ভুক্ত নয়। অর্থাৎ, যদি নারী সুন্দরী না হয়ে থাকে, চেহারা ও হাতে কোন সজ্জা গ্রহণ না করে, তখন কব্জিদ্বয় ও মুখ খুলে রাখাতে কোন অসুবিধা নাই। আর মহিলাটি যে সমাজে বসবাস করে সে সমাজে এমন কোন খারাপ লোক বা দুর্বৃত্ত নাই যারা মহিলাদের দিকে কুদৃষ্টি দেয়। তখন নারীদের জন্য তাদের চেহারা ও হাতের কব্জিদ্বয় খোলা রাখাতে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু যদি উল্লেখিত শর্তগুলো না পাওয়া যায়, তখন নারীদের জন্য তার চেহারা ও হাত খুলে রাখার বিষয়ে বিধান হল, তাদের চেহারা ও কব্জিদ্বয় খুলে রাখা কোনক্রমেই বৈধ নয়।

দ্বিতীয়: পর্দা করা যেন সৌন্দর্য প্রকাশ করা না হয় (যেমনটা বর্তমান হচ্ছে):

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

﴿وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ﴾  ]سورة النــور: 31[

“আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না”।

 ﴿وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى ﴾] سورة الأحزاب :[33

“আর তোমরা প্রাক জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না”।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পর্দা করার নির্দেশ দিয়েছেন যাতে নারীরা তাদের সৌন্দর্যকে গোপন করে এবং তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে। কিন্তু পর্দা যদি এমন সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়, যা দেখে পুরুষরা নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং ফিতনার সম্মুখীন হয়, তাহলে এ ধরনের পর্দার কোন অর্থই হতে পারে না। তা একপ্রকার শরীয়ত নিয়ে খেলা তামাশাই বলা চলে।

তিন. পর্দার জন্য মোটা ও ঢিলে-ঢালা কাপড় পরিধান করতে হবে যাতে করে তাদের শরীর ও সৌন্দর্য দেখা বা আন্দাজ করা না যায়:

 কারণ, এ ধরনের কাপড় ছাড়া পর্দা বাস্তবায়ন হবে না। চিকন –পাতলা- কাপড় পরিধান করলে, সৌন্দর্য পুরোপুরি গোপন করা যায় না। রাসূল সা. বলেন,

« سيكون في آخر أمتي نساء كاسيات عاريات , على رُؤوسهن كأسنمة البُخت , العنوهن فإنهن ملعونات  » [صحيح]

আমার পৃথিবীর শেষ সময়ে উম্মতদের মধ্যে এমন কতক নারীর আবির্ভাব হবে, যারা পোশাক পরিধান করলেও মূলত তারা উলঙ্গ। তাদের মাথা উটের চোটের মত উঁচু হবে। তোমরা তাদের অভিশাপ কর, কারণ, তারা অভিশপ্ত। তিনি আরও বলেন,

« لا يدخلن الجنة , ولا يجدن ريحها , وإن ريحها ليوجد من مسيرةِ كذا وكذا » [ مسلم ]

রাসূল সা. তাদের বিষয়ে আরও বলেন, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ অনেক দূর থেকেও পাওয়া যাবে। [মুসলিম]

এতে এ কথা স্পষ্ট হয়, নারীদের জন্য পাতলা ও মসৃণ কাপড় পরিধান করা মারাত্মক কবিরা গুনাহ।  যা তাদের পর্দা বা সুরক্ষা তো দূরে থাক বরং সৌন্দর্য প্রকাশে সাহায্য করে।

চার. ঢিলা-ডালা কাপড় পরিধান করতে হবে, সংকীর্ণ কাপড় পরিধান করবে না। কারণ, পর্দার উদ্দেশ্য হল, নিজে ফিতনা থেকে রক্ষা পাওয়া ও অন্যকে রক্ষা করা। কিন্তু যখন কোন নারী সংকীর্ণ কাপড় পরিধান করবে, তখন তার শরীরের গঠন একজন দর্শকের নিকট স্পষ্ট হবে। পুরুষের চোখে তা একেবারেই স্পষ্ট হবে। ফলে পুরুষরা তাদের এহেন অবস্থা দেখে ফিতনা-ফ্যাসাদের সম্মুখীন হবে। মনে কুপ্রবৃত্তির সৃষ্টি হবে। যা পর্দা না করার কারণে হয়ে থাকে। হাদীসটি দেখো, উসামা ইব্ন যায়িদ রা. বলেন,

 ] كساني رسول الله صلى الله عليه وسلم  قُبْطِيَّةً كثيفة مما أهداها له دِحْيَةُ الكلبي , فكسوتُها امرأتي , فقال: « ما لك لم تلبس القُبْطِيَّةً ؟,» قلت: ] كسوتُها امرأتي [ , فقال: « مُرها , فلتجعل تحتها غُلالة » – وهي شعار يُلْبَسُ تحت الثوب – « فإني أخاف أن تَصِفَ حجمَ عِظامِها » [ حسن ]

পাঁচ. নারীরা সুগন্ধিযুক্ত প্রসাধনী বা বডিস্প্রে মাখিয়ে রাস্তায় বের হবে না।

রাসূল সা. বলেন,

« أَيُّما امرأةٍ استعطرت , فَمَرَّتْ على قومٍ ليجدوا ريحها , فهي زانية »  [حسن]

“যদি কোন নারী খোশবু ব্যবহার করে কোন পুরুষ সম্প্রদায়ের নিকট দিয়ে অতিক্রম করে যাতে তারা তার সুগন্ধ উপলব্ধি করতে পারে। তাহলে সে নারী ব্যভিচারী”।

তবে নিজে পবিত্রতা অর্জন বা দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার জন্য ব্যবহার করা নিষেধ নয় উপরন্তু তা পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা অর্জনের এই উদ্দেশ্য তার জন্য সওয়াবের কাজ হবে। কারণ মুমীনের প্রতিটি ভালো কাজই ইবাদত সওয়াবের কারণ। আর স্বামীকে খুশী করার জন্যে তার সামনে নিজেকে যত বেশি ইচ্ছা আকর্ষণীয় করবে, এতে কোন বাঁধা নেই। কারণ তোমার এই সৌন্দর্যের একমাত্র অধিক হকদার তোমার সেই কাছের মানুষটি বা প্রাণপ্রিয় স্বামী। এছাড়া অন্য কেউ নয়।

হে প্রিয় মুসলিম মা ও বোন! তুমি তোমার সৌন্দর্য প্রদর্শন থেকে সতর্ক থাক! এটা আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত, সুতরাং এ নিয়ামতের অপব্যবহার করো না।

যখন তুমি উপর উল্লেখিত শর্তগুলি বিষয়ে চিন্তা করবে, তখন তোমার নিকট একটি বিষয় স্পষ্ট হবে, বর্তমানে অসংখ্য নারী এমন আছে, যারা পর্দার নামে বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরিধান করে থাকে, বাস্তবে তা পর্দা নয়। তারা অন্যায় করে অথচ অন্যায়কে ন্যায় বলে চালিয়ে দেয়। ফলে তারা সৌন্দর্য প্রদর্শনকে পর্দা বলে নাম রাখে আর অন্যায়কে ইবাদত বলে চালিয়ে দেয়।

ইসলামি জাগরণকে যারা সহ্য করতে পারে না এবং ইসলামি আদর্শকে যারা বরদাশত করতে পারে না, তারা ইসলামকে নির্মূল করার জন্য তাদের সর্বোচ্চ শক্তি ব্যয় করে।

আর প্রকৃত মুমিন নারী-পুরুষরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আনুগত্য ও তার হুকুমের উপর অটল ও অবিচল থাকে এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মুমিনদের তার অনুকরণের উপর অবিচল থাকার তাওফিক দেন। দুনিয়ার কোন মোহ তাদেরকে তাদের আদর্শ থেকে চুল পরিমাণও সরাতে পারে না (তাদের জন্যই জান্নাতের সুসংবাদ!)

পর্দা করা কোন গোঁড়ামি নয়, পর্দা হল এমন একটি মধ্যম পন্থা যা দ্বারা পর্দাশীল মহিলা তার প্রভুর সন্তুষ্টি লাভে সক্ষম হয়। যারা পর্দাকে আধুনিকীকরণের নামে বেপর্দার পথে হাঁটছে আর যাই হোক না কেন, তারা মুখে যাই বলুক বা দাবি করুক না কেন, বাস্তবে তারা দুটি বিপরীত বিষয়কে একত্রে ঠিক রাখতে চায় একটি সমসাময়িক পরিবেশ আর অপরটি আল্লাহর বিধান ও ইসলামী ঐতিহ্য।

বর্তমান বাজারে পর্দার নামে এমন সব কাপড়-চোপড় পাওয়া যায়, যা প্রাথমিক অবস্থায় বিরোধিতা করা হয়েছিল। অথচ এগুলো নারীদের সৌন্দর্য প্রদর্শন ও আকর্ষণ তৈরি করা ছাড়া আর কিছুই নয়। ব্যবসায়ীরা তাদের বাণিজ্যি উদ্দেশ্যে এ ধরনের পোশাক বাজারে ছাড়ে।  যেমন কোন এক কবি বলেন, ‘মনে রাখবে, তুমি যে ধরনের পর্দা ব্যবহার করছ, তাকে শরয়ী পর্দা বলা হতে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করবে, যে পর্দা করলে আল্লাহ ও তার রাসূলের সন্তুষ্টি লাভ হয়। যে ব্যক্তি তোমার এ ধরনের আমলকে ধন্যবাদ দেয়, তোমাকে সত্যিকার উপদেশ না দেয়,  তাদের কথা দ্বারা ধোঁকা পড়া হতে তোমাকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। সাবধান! তুমি ধোঁকায় পড়ে এ ধরনের কথা বলা থেকে বেঁচে থাক, বরং বলো, ‘আমি সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী নারীদের থেকে উন্নত’। কারণ, তুমি যে অবস্থার মধ্যে আছ, তা কোন আদর্শ হতে পারে না। তাও অন্যায় যেমনটি সৌন্দর্য প্রদর্শন করা অন্যায়। আর জাহান্নামের বিভিন্ন স্তর আছে যেমনি-ভাবে জান্নাতের বিভিন্ন ক্লাস আছে। তোমার করণীয় হল, তুমি সে মহিলাদের অনুকরণ করবে যারা প্রকৃত পর্দা অবলম্বন করে এবং পর্দার যাবতীয় শর্তাবলী সহ যথাযথ পর্দা পালন করে।’ 

রাসূল সা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

رُوي عن رسول الله – صلى الله عليه وسلم  – أنه قال: « انظروا إلى مَنْ هو أسفل منكم في الدنيا , وفوقَكم في الدين , فذلك أجدرُ أن لا تَزْدَرُوا »– أي تحتقروا –« نعمةَ الله عليكم »  [ضعيف] , وتلا عمر بن الخطاب – رضي الله عنه – قولَه عز وجل: ]إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسۡتَقَٰمُواْ تَتَنَزَّلُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ أَلَّا تَخَافُواْ وَلَا تَحۡزَنُواْ وَأَبۡشِرُواْ بِٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ٣٠ ﴾ [سورة فصلت : 31]

রাসূল সা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমরা দুনিয়া বিষয়ে তোমাদের থেকে যারা নিম্নে তাদের দিকে দেখবে, আর দ্বীনের ব্যাপারে যে তোমাদের চেয়ে বড় তার দিকে দেখবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নেয়ামতকে ছোট মনে না করার জন্য এটি তোমাদের উত্তম ও উপযুক্ত পদক্ষেপ। অর্থাৎ, তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর নেয়ামতসমূহকে ছোট মনে করবে না।

তারপর ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. এ আয়াত-[إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسۡتَقَٰمُواْ تَتَنَزَّلُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ أَلَّا تَخَافُواْ وَلَا تَحۡزَنُواْ وَأَبۡشِرُواْ بِٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ٣٠ ]  তিলাওয়াত করেন, “নিশ্চয় যারা বলে, ‘আল্লাহই আমাদের রব’ অত:পর অবিচল থাকে, ফেরেশতারা তাদের উপর নাযিল হয়, [এবং বলে,] ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর, তোমাদেরকে যার ওয়াদা দেয়া হয়েছিল”।

 فقال: « استقاموا والله لله بطاعَتِهِ , ولم يَرُ وغُوا رَوَغَانَ الثعالب ».

অত:পর তিনি বললেন, তোমরা অটল অবিচল থাক, আল্লাহর শপথ করে বলছি আল্লাহর আনুগত্যের অবিচল থাক। শিয়ালের মত বক্রতা অবলম্বন কর। 

 وعن الحسن رحمه الله قال: ” إذا نظر إليك الشيطان فرآك مُداوِمًا في طاعة الله , فبغاك , وبغاك- أي طلبك مرة بعد أخرى- فرآك مُداوِمًا , مَلَّكَ , ورفضك , وإذا كنت مرةً هكذا , ومرة هكذا , طَمِعَ فيك “.

হাসান রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “শয়তান যখন তোমাকে আল্লাহর বিধানের আনুগত্যের উপর অটল ও অবিচল দেখবে। তখন সে তোমাকে আল্লাহর আনুগত্য হতে বার বার সরানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু তারপরও যখন তোমাকে অবিচল দেখতে পাবে, তখন সে তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে। আর যখন শয়তান তোমাকে দুর্বল দেখতে পাবে এবং তোমার মধ্যে টালমাটাল দেখতে পাবে, তখন সে তোমার প্রতি ঝুঁকবে। তোমাকে গোমরাহ করার জন্য লালায়িত হবে”।

সুতরাং তোমরা আল্লাহর ইবাদত ও তাওহীদের উপর অটল অবিচল থাক, এদিক সেদিক করো না। আর হিদায়েতের উপর অবিচল থাক যার মধ্যে কোন গোমরাহি নাই। আর তোমরা আল্লাহর দরবারে তওবা খালেস তওবা কর, তারপর আর কোন অপরাধ করবে না।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করে বলেন,

﴿وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١﴾ [سورة النور:31 ]

“হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার”।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments