সালাম হবে স্পষ্ট ভাষায়
আবু জুরাইন হুজাইমি রাঃ বলেন, একবার আমি হুজুর সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে হাযির হয়ে আরয করলাম-
يا رسول الله عليك السلام
হে আল্লাহর রাসুল! আপনার উপর সালাম। তখন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لاتقل عليك السلام فإن عليك السلام تحيةالموتي
আলাইকাস সালামু বলো না। কেনন,এভাবে মৃতদের সালাম করা হয়ে থাকে।[ আবু দাউদ শরীফ ]
সুতরাং “আসসালামু আলাইকুম” বলা উচিৎ এবং উত্তরে বলা উচিৎ “ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ”।
সালামের প্রতিদান
একব্যক্তি রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হয়ে বলল- “আসসালামু আলাইকুম” সালামের জবাব দিয়ে রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- সে যেন এর প্রতিদান দশটি নেকি পায়। কিছুক্ষণের মাঝে দ্বিতীয় একব্যক্তি এসে বলল- “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি” জবাব দিয়ে রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- সে যেন এর প্রতিদান বিশটি নেকি পায়। ইতিমধ্যে তৃতীয় একব্যক্তি উপস্থিত হয়ে বলল- “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু” মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিয়ে বললেন- এর প্রতিদান স্বরূপ সে যেন ত্রিশটি নেকি পায়।
[আবু দাউদ শরীফ]
অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, চতুর্থ ব্যক্তি এসে বলল- “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকতুহু ওয়া মাগফিরাতুহু” উত্তর দিয়ে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- তার প্রতিদান স্বরূপ যেন সে চল্লিশটি নেকি পায়। হাদিসের ধারাবাহিকতায় একথাই প্রমাণিত হয় যে, প্রতিটি শব্দের প্রতিদানে দশটি নেকি পাওয়া যায়। হাদিসটির দ্বারা একথাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, যেমনিভাবে সালামের উত্তরদাতা “ওয়া রহমাতুল্লাহি” শব্দ যোগ করতে পারবে, তেমনিভাবে সালাম প্রদানকারীও বলতে পারবে “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি”।
সালামের উদ্দেশ্য
ব্যক্তি সম্মান বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ সালামের উদ্দেশ্য নয়; বরং একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি, তাঁর প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ও স্বকৃীতি প্রদান ইসলামের প্রধানতম উদ্দেশ্য ও লক্ষ। এজন্যই তো পথিমধ্যে অচেনা অজানা অপরিচিত ব্যক্তিকেও সালাম প্রদান করতে হয়। যদি সম্মান প্রদর্শন বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ সালামের উদ্দেশ্য হত, তাহলে অচেনা ব্যক্তিকে সালাম দেয়ার কোনো প্রশ্নই আসত না।সালামের মাধ্যমে সম্বোধিত ব্যক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করা হয়ে থাকে। তার উদ্দেশ্যে বলা হয়- আল্লাহ যেন আপনাকে শান্তিতে রাখেন, সুখে রাখেন। এমনিভাবে যদি একব্যক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করা হয়, প্রার্থনা করা হয়, তার মঙ্গল কামনা করা হয়, তাহলে নীতিগতভাবেই ঐ ব্যক্তি প্রতিপক্ষের শুকরিয়া আদায় করতে, তার প্রতি ক্ষমা ও দয়া প্রদর্শন করতে দ্বিধা করবে না। সে অবশ্য প্রতিপক্ষের মঙ্গল কামনা করে, সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে তৎক্ষণাৎ সালামের জবাবে বলবে- “ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ” আল্লাহ তা’লা আপনার উপর শান্তি বর্ষণ করুন, তার দয়ার পরশে আপনাকেও বারিত করুন। সালামের উদ্দেশ্য যদি সম্মান প্রদর্শন বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ধরে নেয়া হয়, তাহলেও তো একজনের সুখ, শান্তি সমৃদ্ধি সরাসরি মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে সালামের মাধ্যমে প্রার্থনা করাটাই কি কম কথা?
(আমাদের এই লেখাটি পাকিস্তানের সিদ্দিকী ট্রাষ্ট কর্তৃক প্রকাশিত মাওলানা মনসুরুজ্জামান সিদ্দীকীর একটি উর্দু রেসালা)
বাংলা অনুবাদ করেছেন, দেশবরেণ্য আলেমে দ্বীন
মুফতি ফজলুল হক আমিনী(রহঃ)। এই লেখাটি উৎসর্গ তার রুহের মাগফিরাত কামনায়।