মুসাফাহা বা হাত মিলানো সুন্নত
সালামের পর মুসাফাহা করা বা পরস্পর হাত মেলানো সুন্নত। কিন্তু বর্তমানে “করমর্দন” এর নামে একহাত মেলানোর যে পদ্ধতি চালু আছে, এটি বিধর্মীদের চালু করা একটি কুসংস্কার। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
اذا التقي المسلمان فتصافحا حمدالله واساغفراه غفرلهما
যখন দুই মুসলমান পরস্পর মিলিত হবে, তখন মুসাফাহা করে নিবে। আল্লাহ তা’লার প্রশংসা করবে এবং গুনাহের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে নিবে। (আবু দাউদ শরীফ)
আলোচনার সারমর্ম
সালাম ইসলামের এমন একটি বিধান, যার মাধ্যমে এক মুসলমান অন্য মুসলমানের জন্য দোয়া করে থাকে। অন্যান্য ধর্মের ন্যায় স্তর বিন্যাস, শ্রেণি বিন্যাস করে কাউকে অগ্রধিকার দিয়ে আবার কাউকে সম্মান দেখিয়ে এই বিধান আরোপ করা হয়নি।
মুসলমানদের অপরিহার্য দায়িত্ব ও কর্তব্য হল, সুন্নতের পুরোপুরি অনুসরণ ও অনুকরণ করা। সর্বব্যাপী সালামের প্রচলন ঘটানো। এর দ্বারা পরস্পর সুসম্পর্ক স্থাপিত হবে। মহব্বত ভালবাসা ও রিদ্যতা গড়ে উঠবে। সৌভ্রাতৃত্ব ও বন্ধত্ব গড়ে উঠবে। শুধু কি তাই ; বরং মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা অনুযায়ী দু’জনার এই সুসম্পর্ক ভালবাসা এবং মুহব্বত জান্নাতে পৌছতে সহায়তা করবে।
সালাম প্রদান মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি অন্যতম পছন্দনীয় ও সুন্নত বিষয় ছিল। তিনি সালামকে সর্বজনীন ও সর্বব্যাপী করার নির্দেশ দিয়েছেন।
আক্ষেপ ও পরিতাপের বিষয়, মুসলিম উম্মাহ্ আজ সালামের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র সুন্নতটিও ছেড়ে দিতে বসেছে। শুধু এতটুকু বালও হয়তো ঠিক নয়; তারা আজ পুরোপুরি সালামকে ছেড়ে দিয়েছে। অনককে দেখা যায় তারা সালাম প্রদান করে না। আবার কেউ কেউ প্রদান করলেও সেই সালাম সুন্নত অনুযায়ী প্রতিফলিত হচ্ছে না। তাই আসুন! এই পরিত্যাক্ত সুন্নতের প্রচলন ঘটিয়ে শত শহীদের সাওয়াবের অংশীদার হই।
ইমাম ও খতিবদের উদ্দেশ্যে জরুরী আহবান
মক্কা মদিনা যিয়ারত সৌভাগ্য যাদের হয়েছে, তারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করে থাকবেন, সেখানে জুমা এবং দুই ঈদের খুতবায় দাড়িয়ে খুতবা প্রদানের পূর্বে ইমাম সাহেব উপস্থিত মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথম সালাম প্রদান করে থাকেন। আযান এবং খুতবার পর্ব শুরু হয় এরপর। সেখানকার ওয়াজ ও বক্তব্যের পূর্বে এ পদ্ধতি অনুসৃত হয়।
আমাদের দেশে ওয়াজ এবং বক্তব্যের শুরুতে এজাতীয় দৃষ্টান্ত খুবই বিরল। এজাতীয় অনুষ্ঠান মসজিদ বা মসজিদের বাহিরে যে কোনো স্থানেই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, সর্বত্রই একই অবস্থা বিরাজ করছে। খতীব বা বক্তা এ বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেননা বলেই মনে হয়। অথচ নিয়ম হল, সকলের উদ্দেশ্যে আসসালামু আলাইকুম বলা। কেনন, মুসলমানদের একটি বিশাল অংশ খতিব বা বক্তার বয়ান শুনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকেন। তাই এই অংশটিকে প্রথমে সালামের মাধ্যমে মুসল্লী ও শ্রোতাদের সম্বোধন করা জরুরী। যেহেতু সালাম একটা দোয়া, এজন্য খুতবার সূচনা দোয়ার মাধ্যমে হলেই তা উত্তম হিসেবে বিবেচিত হবে। যদিও খুতবার মাঝে সালাম বা কথা-বার্তা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ তথাপি খুতবার আযানের পূর্বে সালাম প্রদান করাতে কোনো অসুবিধা নাই। তাই মসনূন খুতবার পূর্বে মসজিদের খতিব ও ইমামগণ সালামের প্রচলন ঘটালে এর বিরাট প্রভাব পুরো মুসলিম উম্মাহর উপর পড়বে, এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নাই।
যে অবস্থায় সালাম দেওয়া নিষেধ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ বর্ণনা করেন- একব্যক্তি মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমন অবস্থায় সালাম দিলো যখন তিনি পেশাব করার জন্য বসেছিলেন। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তির সালামের জবাব দেওয়া থেকে বিরত রইলেন। ( তিরমিজী শরীফ)
সালামের সময় সতর্কতা
হযরত মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রাঃ একটি দীর্ঘ হাদীসের অধিনে বর্ণনা করেছেন-
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলায় আসহাবে সুফফার নিকট তারীফ নিয়ে আসলেন। এখানে আগমনের পর তিনি এত নিম্নস্বরে এবং সতর্কতার সাথে সালাম প্রদান করলেন যে, নিদ্রিত ব্যক্তিদের নিদ্রা ভঙ্গ হয়নাই,আবার জাগ্রত ব্যক্তিরাও তার আওয়াজ স্বাভাবিকভাবে শুনতে অসুবিধা করে নাই। ( তিরমিজী শরীফ)
আল্লাহ তা’লা আমাদের এই আদব অনুসরণ এবং তা, প্রতিপালনের তাওফিক দান করুন। সেইসাথে সুন্নতের ইত্তবার অংশ হিসেবে “আসসালামু আলাইকুম” এর প্রচলন ঘটানো এবং যাবতীয় সুন্নতের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন!
সর্বশেষ কিছু কথা- মুলত লেখক প্রবন্ধটি আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি নামে নামকরণ করেছেন। কিন্তু সালামের ক্ষেত্রে যে অনৈসলামিক অপসংস্কৃতি চালু হয়েছে সেইদিকে বিবেচনা করে আমি তার নামকরণ করেছি, “সালামের ক্ষেত্রে অনৈসলামিক সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ” যাতে সালামের ক্ষেত্রে যে কুসংস্কার চালু হয়েছে, তা দুরবিত হয়ে যায়।
আর প্রবন্ধটি মুলত পাকিস্তানের সিদ্দিকী ট্রাষ্ট কর্তৃক প্রকাশিত মাওলানা মানসুরুজ্জামান সিদ্দিকীর একটি উর্দু রেসালা।
বাংলা অনুবাদ করেছেন দেশ বরেণ্য আলেম মরহুম মুফতি ফজলুল হক আমিনি।