মুসলমানেরা ফিরে পেল তাদের হারানো বিশ্বাস
রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জীবিত ও সুস্থ দেখতে পেয়ে মুসলিম মুজাহিদরা জেগে উঠলেন। তাদের শিরায় শিরায় অনুপ্রেরণা আর উন্মাদনার এক তাজা খুন বিদ্যুৎ তরঙ্গ বেগ নিয়ে ছড়িয়ে পড়ল। এক নয়া যিন্দেগীর অম্লান স্বাদে তারা লাফিয়ে উঠলেন। তিনি তাদেরকে নিয়ে মুসলিম শিবিরের দিকে ফিরে যেতে লাগলেন। ইত্যবসরে উবাই বিন খলফ তাদের পিছু নিলো।
সে বলতে লাগলো হে মুহাম্মদ! ( সাঃ) যদি তুমি আজ বেচে যাও, তবে আমাকে তো নিশ্চিত ধ্বংসের মুখোমুখি হতে হবে!! রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম কে বললেন, তোমরা তাকে কিছু বলো না! কিন্তু সে যখন রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আরও কাছে চলে এলো তখন তিনি এক সাহাবীর হাতের বর্শাটি নিজের হাতে তুলে নিলেন।
অতঃপর উবাইর দিকে ফিরে তিনি সেটা তার ঘাড়ে ছুড়ে মারলেন। আঘাতের প্রচন্ডতায় উবাই ঘোড়ার পিঠ থেকে উল্টে মাটিতে পড়ে গেল। ঘাঁটিতে ফিরে যাওয়ার পরে আলী ইবনে আবি তালিব রা. স্বীয় মশক ভরে পানি নিয়ে এলেন এবং নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চেহারা মোবারক থেকে রক্ত ধুয়ে দিলেন।
নবী নন্দিনী ফাতেমা রা. তাঁর চেহারা মোবারক থেকে রক্ত ধুয়ে দিচ্ছিলেন আর আলী ইবনে আবি তালিব রা. একটি ঢাল দ্বারা পানি ঢালছিলেন। কিন্তু ফাতেমা রা. লক্ষ করলেন, পানির প্রবাহে শোণিতধারা বরং বেড়েই চলছিল। তাই তিনি তখন পানি ঢালা বন্ধ করে একটি চাটাই পুড়িয়ে রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এট ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলেন। এতে করে রক্তধারা বন্ধ হলো।
উম্মুল মুনিন আয়েশা রা. ও উম্মে সুলাইম রা. তাদের পিঠে পানি বহন করে এনে আহতদের পান করাচ্ছিলেন। মশক খালি হয়ে গেলে আবার তা ভরে নিয়ে আসতেন। আর উম্মে সুলাইম রা. তাদেরকে পানি ভরে এনে দিতেন।
ওদিকে হিন্দা বিনতে উতবা অন্যান্য মুশরিক নারীদেরকে নিয়ে মুসলিম মুজাহিদদের অঙ্গ বিকৃতির শয়তানিতে লেগে গিয়ে ছিল। তারা শহীদদের নাক, কান কেটে নিতে লাগলো। এক পর্যায়ে হিন্দা সাইয়েদুশ শুহাদা হামযা রা. এর পেট চিরে কলিজা বের করে ফেলল। অতঃপর তা মুখ দিয়ে চিবাতে লাগলো। কিন্তু গিলতে না পেরে উদগীরণ করে ঢেলে দিল।
যখন মক্কী বাহিনীর সরদার আবু সুফিয়ান বাহিনী নিয়ে ফিরে যেতে উদ্যত হলেন, তখন তিনি পাহাড়ের ওপর আরোহন করে গুরুগম্ভীর কন্ঠে হাঁক ছাড়লেন- যুদ্ধে জয়-পরাজয় একটি অনিশ্চিত বিষয়। কখনো একদল জয়ী হয় তো কখনো আবার দ্বিতীয় দল জয়ী হয়। হোবলের জয় হোক! হোবলের জয় হোক! রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, উমর তুমি দাড়িয়ে তার জবাব দাও!
তুমি তাকে বলো, আল্লাহর জয় হোক! আল্লাহু আকবার!! আল্লাহ সর্বমহান!!! তোমরা আমরা কখনোই সমান নই; আমাদের নিহতরা জান্নাতে আর তোমাদের নিহতরা জাহান্নামে। তখন আবু সুফিয়ান বললেন আমাদের উযযা আছে। আর তোমাদের কোনো উযযা নাই। রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম এর উদ্দেশ্যে বললেন,
তোমরা তার কথার জবাব দাও!তারা বললেন আমরা কি জবাব দিবো? তিনি বললেন, তোমরা বলো- আল্লাহ আমাদের মাওলা; আর তোমাদের কোনো মাওলা নাই। উহুদের ময়দান থেকে প্রস্থানের আগে আবু সুফিয়ান মুসলমানদেরকে লক্ষ করে বললেন, আগামী বছর আমরা আবার বদর প্রান্তরে মিলিত হবো। তখন রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন নিশ্চয়ই! সেটা আমাদের আর তোমাদের মাঝো প্রতিশ্রুতি রইলো।
মুসলমানদের হৃদয় আকাশ তখনো বেদনার নীল মেঘে ছেয়ে ছিল। তারা নিহতদের মাঝে নিজেদের লোকদেরকে খুঁজে খুঁজে বের করে চিরদিনের মতো মাটির বুকে সঁপে দিচ্ছেলেন। রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেদনায় নীল হয়ে গিয়েছিলেন। প্রাণ প্রিয় চাচা ও দুধ ভাই হামাযা রা. এর শাহাদাত তার সচ্ছ ও সুনির্মল হৃদয়ে মুকুরে বিষাক্ত কামড় বসিয়ে দিয়ে যন্ত্রণাগার বানিয়ে দিয়েছিল। কারণ জীবদ্দশায় তিনি ছিলেন রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শক্তি ও ক্ষমতার এক মহা উৎস; সান্ত্বনার এক জীবন্ত জগত।