প্রাণের চেয়ে প্রিয়
হিজরী তৃতীয় বর্ষে আযল ও কারা এই দুইটি কবিলা রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট মুসলমানদের একটি জামাত তাদের কাছে পাঠানোর জন্য আবেদন জানায়- যাতে করে তারা তাদেরকে ইসলামের তালীম তরবিয়ত শিক্ষা দিতে পারে।
তখন রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের আবেদনে ছয়জন বিজ্ঞ সাহাবীকে তাদের কাছে প্রেরণ করেন। তাদের মধ্যে আসেম বিন সাবেত, খুবাইব ইবনে আদি ও যায়েদ বিন দাসিন্না রা. এর মতো বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন।
মক্কা ও উসফানের মধ্যবর্তী রজি নামক স্থানে পৌঁছলে সেই দুই কবিলা বিশ্বাস ঘাতকতা করে তাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। তারা সাহাবায়ে কেরামকে বলল, আমরা তোমাদেরকে আল্লাহর নামে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি- তোমাদেরকে আমরা হত্যা করবো না। তখন সাহাবায়ে কেরামের তিনজন বললেন, মুশরিকদের থেকে কোনো ধরনের চুক্তি কিংবা প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করবো না। অতঃপর তারা যুদ্ধ করতে করতে এক সময় শহীদ হয়ে গেলেন। আর বাকি তিনজন যায়েদ বিন দাসিন্না, খুবাইব বিন আদি ও আব্দুল্লাহ বিন তারিক রা. আত্মসমর্পণ করলেন।
মুশরিকরা তাদের বন্দী করে নিল এবং আব্দুল্লাহ বিন তারিককে আবারও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে পথেই হত্যা করে ফেলল। আর খুবাইব ও যায়েদকে নিয়ে মক্কায় নিয়ে কোরাইশদের হাতে বিক্রি করে দিল। খুবাইব রা. কে কিনেছিল জুহাইর ইবনে আবি ইহাব তার বাপের বদলে হত্যা করার জন্য ; আর যায়েদ বিন দাসিন্নাকে কিনেছিল সফওয়ান বিন উমাইয়া তার বাপ উমাইয়া বিন খলফের বদলে হত্যা করার জন্য। যায়েদ রা. কে হত্যা করার জন্য তারা তাকে হারাম থেকে বাইরে নিয়ে আসে এবং তার চারপাশে বহু লোকের সমাবেশ ঘটে। তাদের মধ্যে আবু সুফিয়ান বিন হরবও ছিলেন।
আবু সুফিয়ান তাকে বললেন, যায়েদ! তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, যদি তুমি এখন তোমার ঘরে তোমার পরিবার-পরিজনের মধ্যে থাকো আর তোমার জায়গায় এখন মুহাম্মদ [সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ] থাকে তবে এটা তোমার কতখানি ভালো লাগবে? নবী প্রেমের জয়গানে তখন পৃথিবী আরেকবার মেতে উঠেছিল। মানবতার সৌভাগ্য কপালে আরেকবার প্রদিপ্ত হয়ে উঠেছিল। আসমান নেচে উঠেছিল মাটির মানুষের কীর্তির নিরুপম বাহার দেখে।
গুরুগম্ভীর কন্ঠে যায়েদ রা. এর মুখে বেরিয়ে এলো শান্ত অথচ পরম ভারি কয়েকটি শব্দ; আমি আমার ঘরে থাকব আর মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দেহ মোবারকে একটি কাটা বিদ্ব হবে- তাও আমি কোনোদিনও সহ্য করব না। তখন আবু সুফিয়ান বললেন মুহাম্মদ এর সঙ্গীরা মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যতটা ভালবাসে পৃথিবীর আর কোনো মানুষকে কাউকে ভালবাসতে দেখিনি। অতঃপর যায়েদ রা. কে শহীদ করে দেওয়া হল।
অপরদিকে খুবাইব রা. কে যখন তারা শূলিকাষ্ঠে চড়ানোর জন্য নিয়ে এলো তখন তিনি তাদেরকে বললেন, যদি তোমরা আমাকে দু’রাকাআত নামায পড়ার সুযোগ দিতে! তখন তারা তাকে সুযোগ দিল। তিনি সুন্দর করে জীবনের শেষ দু’রাকাআত নামায পড়ে নিলেন। সুমহান প্রভূ ও সর্বোত্তম বন্ধুর সঙ্গে গভীর মিতালির সাগরে সামান্য সময়ের জন্য ডুব দিয়ে আখেরী নিবেদনটুকু পেশ করলেন তাঁর দরবারে। নামায শেষ করে তিনি মুশরিকদের দিকে ফিরে বললেন, আল্লাহর কসম! যদি তোমরা না ভাবতে যে, মৃত্যুর ভয়ে আমি নামায লম্বা করেছি তবে আমি আমার প্রভূকে আরও কিছু সময় ডেকে নিতাম।
তখন তিনি দুটি পঙক্তি আবৃত্তি করলেন:
যখন আমি ইসলামের উপর মৃত্যুবরণ করছি তখন আর আমার পেরেশানি নেই, কী অবস্থায় আমার মৃত্যু হচ্ছে। আর সবকিছু আমার সুমহান মাবুদের জন্য; যদি তিনি চান আমার এই টুকরো টুকরো গোশতপিন্ডগুলির মধ্যেও বরকত দান করবেন।
নোট: একেই বলে রাসূলের প্রতি ভালবাসার অবিশ্বাস্য দাস্তান। মৃত্যুর মুখোমুখি দাড়িয়েও আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ভালবাসার জয়োগান গেয়ে গেছে। জান্নাত তারা পাবে না তো আমরা পাবো?
আমার হাবিবের গায়ে কাটা বিঁধবে তা আমি সহ্য করবো! আল্লাহু আকবার! আল্লাহু আকবা! অথচ বর্তমানে রাসূলকে নিয়ে নাস্তিক্যবাদীরা কতরকমের কটুক্তি করেছে কিন্তু রাসূলের প্রতি আমাদের প্রেম জাগে না, অথচ আমরা আমাদেরকে রাসূলের প্রকৃত প্রেমিক বলে দাবি করি। আমরা কি কখনো রাসূলের ভালবাসায় রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছি দুশমনেে রাসূলের বিরুদ্ধে?
মনে রাখবেন আল্লাহর রাসূল আমাকে আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে। সে দিনের জন্য আপনি তৈরী তো? তাই আসুন শুধু মখে নয়, দুশমনে রাসূলের বিরুদ্ধে যখনই আহবান করা হবে তখনই আমরা প্রতিবাদের অগ্নিমশাল নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ি প্রয়োজনেে শাহাদাত বরণ করি। আল্লাহপাক আমাদেরকে রাসূলের প্রকৃত প্রেমিক হওয়ার তওফিক দান করুক। আমিন। আমাদের দিলকে কলূষতা মুক্ত করুক। আমিন।।