Saturday, November 23, 2024
No menu items!
Homeসিরাতুন নবী (সা.)নবীজীর স্বপ্ন ও মুসলমানদের মক্কায় দাখিলের প্রস্তুতি

নবীজীর স্বপ্ন ও মুসলমানদের মক্কায় দাখিলের প্রস্তুতি

নবীজীর স্বপ্ন ও মুসলমানদের মক্কায় দাখিলের প্রস্তুতি

রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন স্বপ্ন দেখলেন, তিনি মক্কায় প্রবেশ করছেন, অতঃপর বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করছেন। নিঃসন্দেহে এটা ছিল একটি সত্য সপ্ন: যা পুরণ হওয়ার অবশ্যাম্ভাবি ছিল। বাকি সপ্নের মধ্যে কোনো নির্ধারিত সময়-সীমা, মাস কিংবা বছরের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল না। তিনি তখন মদিনায় ছিলেন। সাহাবায়ে কেরাম রা. কে তিনি তাঁর সপ্নের কথা খুলে বললেন। সবাই হর্ষে উদ্বেলিত হয়ে উঠলেন। খুশির জোয়ার উঠল গোটা মদিনার আনাচকানাচে। কারণ বহুদিন ধরে তারা মক্কা ও কা’বার দৃশ্য বা দেখে প্রায় ভুলতে বসেছিলেন। অথচ সেই মক্কার স্তন্য পান করেই তারা শৈশব কৈশোর পাড়ি দিয়ে বড় হয়ে উঠছিলেন।

ইসলামের যদিও তারা মক্কা থেকে তারা এই দূর দেশে চলে এসেছিলেন। কিন্তু ইসলাম তো মক্কার সঙ্গে তাদের এই সম্পর্ক আর বন্ধনকে শিথিল করেনি; বরং ইসলাম মক্কার সঙ্গে তাদের এই বন্ধনকে করেছে আরও সুদৃঢ়। আরও মজবুত। সে মক্কার প্রতি তাদের আগ্রহ, উদ্দীপনা আর দুর্বলতা বাড়িয়ে দিয়েছে আরও বহুগুণে। এ কারণে সাহাবায়ে কেরাম মক্কার একবার দর্শনের প্রতি ছিলেন আরও উদ্বুদ্ধ, উদ্দীপ্ত, উদগ্রীব।

অপরদিকে মুহাজির সাহাবায়ে কেরাম মক্কার জন্য ব্যাকুল ও পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। কেননা তারা মক্কাতেই জন্ম নিয়েছিলেন। মক্কার আলো-বাতাসে তারা বড় হয়েছিলেন। কিন্তু আজ তাদের ও তাদের সেই প্রিয় জন্মভূমির মাঝে দাড়িয়ে আছে বিশাল প্রাচীর। তাই রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুখে যখন তারা সপ্নের কথা শুনলেন, তখন অস্থির ও বেচাইন হয়ে উঠলেন। তাদের মোটেও সন্দেহ হল না- এই সপ্ন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে এ বছরেই। নবীজির এই সপ্ন তাদের হৃদয়েের গহীনে মক্কার ভালবাসার আগুন শতগুণ তেজ নিয়ে জ্বালিয়ে দিল। মনের গভীরে দাফন করা মুহাব্বত আর আবেগের টান জেগে উঠল পূর্ণ তেজে। আর তাই হাতে গনা কিছু লোক ব্যতিত আর কেউই এই মুবারক যাত্রা থেকে পিছপা হননি।

মক্কার পথে যাত্রা

হিজরী ষষ্ট বর্ষের যুলকা’দ মাসে রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উমরার নিয়তে মদিনা থেকে হুদায়বিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। যুদ্ধের কোনো ইচ্ছা তাঁর ছিল না। সঙ্গে ছিল পনেরশো মুসলমানদের মুবারক জামাত। তিনি সঙ্গে করে হাদি ( কুরবানির জন্তু) নিয়ে নিলেন। উমরার ইহরামও বেঁধে নিলেন। যাতেকরে মানুষ জানতে পারে যে, তিনি কেবল বাইতুল্লাহ যিয়ারতের উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন।

রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরাইশদের খবরাখবর জানার জন্য খুযআ গোত্রের এক ব্যক্তিকে গোয়েন্দা স্বরূপ প্রেরণ করলেন। অতঃপর যখন তিনি মুসলমানদের মুল জামাত নিয়ে উসফানে গিয়ে পৌঁছলেন, তখন সেই গোয়েন্দা এসে তার সাথে মিলিত হল। সে এসে জানাল, আমি কা’ব বিন লুয়াইকে আপনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গোত্র মিলিয়ে বিশাল এক বাহিনী প্রস্তুত করতে দেখে ছুটে এসেছি।

তারা আপনার সঙ্গে যুদ্ধ করে হলেও কা’বা ঘর থেকে আপনার গতিরোধ করে দিবে। কিন্তু রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্মুখ যাত্রা অব্যাহত রাখলেন। এক পর্যায়ে তিনি যখন সেই পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছলেন যেখান থেকে মক্কা উপত্যকা নিচে নেমে গিয়েছে, তখন তাঁর উষ্ট্রী বসে পড়ল। উষ্ট্রীর নাম ছিল কসওয়া। লোকেরা তখন বলতে শুরু করল কসওয়া বসে গেছে!! রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কসওয়া বসে যায়নি।

এটা তার স্বভাবও নয়, তবে তাকে থামিয়ে দিয়েছেন সেই সত্তা, যিনি হাতিওয়ালাদের থামিয়ে দিয়েছিলেন। ঐ সত্তার কসম- যার কুদরতি হাতে আমার প্রাণ!! যদি তারা আমার কাছে এমন কিছু প্রস্তাব করে, যা আল্লাহ তা’লার ইযযত ও সম্মানের সাথে সম্পৃক্ত তবে আমি তাদেরকে তা, দিয়ে দিবো, কিংবা তারা যদি আমার উদারতা ও মেহেরবানি দেখানোর প্রস্তাব করে, তবে আমি তাদেরকে তা খাওয়াবো।

অতঃপর উষ্ট্রীকে হাঁকালেন। উষ্ট্রী তৎক্ষনাৎ গা ঝেড়ে দাড়িয়ে গেল। রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিক পরিবর্তন করে হুদায়বিয়ার দিকে যাত্রা করলেন। এবং হুদায়বিয়ার উপকন্ঠে পৌছে যাত্রা বিরতি করলেন। সেখানে একটি কুপ ছিল। কিন্তু তাতে পানির পরিমাণ ছিল একেবারে সামান্য। লোকেরা রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বিষয়টি অবহিত করলেন। তিনি তূণীর থেকে একটি তীর বের করে তাতে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দিলেন। তীর নিয়ে নিক্ষেপ জরা মাত্রই তাতে প্রবল আবেগ আর বিপ্লব নিয়ে ঝরনাধারা উৎসারিত হতে লাগল। সবাই তা পান করে তৃপ্তির আবেশে মোহিত হলেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments