Thursday, May 2, 2024
No menu items!
Homeসিরাতুন নবী (সা.)আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার

আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার

আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার
হুদায়বিয়া তে বাইয়াতে রিদওয়ান এর সময় যে সমস্ত মুসলমান নিজেদের নফসের সিদ্ধান্তের বিপরীতে, বাহ্যিক সমস্ত যুক্তিতর্কের দোহাই না দিয়েই আল্লাহ ও তার রাসুলের আদেশের সামনে মাথা নত করে দিয়েছিলেন, তাদেরকে আল্লাহ তা’আলা একটি নিকটবর্তী বিশাল বিজয় আর অনেক গনিমতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন:


আরে সকল বিজয় ও গনিমতের সূচনা ছিল গাজওয়ায়ে খাইবর। খাইবুর ছিল মূলত একটি ইহুদি জনপদ। অনেকগুলো দুর্গ নিয়ে গড়ে উঠেছিল এই জনপদটি। পাশাপাশি এটা ছিল তাদের সময় শিবির। এখানে পাহাড়ের উপর গড়ে ওঠা এসকল দুর্গ ছিল দুর্ভেদ্য ও পরম সুরক্ষিত। এটা ছিল গোটা জাজিরাতুল আরবের বুকে তাদের সর্বশেষ কেল্লাহ আশ্রয়স্থল। এখানে বসে তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত ৎষড়যন্ত্রের জাল বুনত। কারণ তারা তাদের স্বজাতীয় ভাইদের দুঃখজনক ইতিহাস এখনো ভুলতে পেরেছিল না।

পাশাপাশি তাদের এটাও ভয়ের ছিল- না জানি কখন আবার তাদের উপরও নেমে আসে সেই বিপদ‌। তারা এখানে বসে বনু গাতফানের সঙ্গে মিলে মদিনার উপর আক্রমণের ফন্দি আঁটছিল। তাই রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম চাইছিলেন এর সুরাহা হওয়া দরকার। মুসলমানদের জন্য তাদের পক্ষ থেকে একটা স্থায়ী নিরাপত্তার’ বন্দোবস্ত করা দরকার। এটা ছিল মদিনার উত্তর-পূর্বদিকে ১১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

নবীজির নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী
হুদায়বিয়া থেকে ফিরে এসে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরো জিলহজ্ব মাসের কয়েকদিন মদিনায় অবস্থান করলেন। অতঃপর হিজরী সপ্তম বর্ষের মহররম মাসের হাতে কয়েকদিন বাকি থাকতেই মদিনা থেকে খায়বরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবী আকোয়া সফরকালে নিম্নোক্ত কবিতাগুলো আবৃত্তি করছিলেন:

অর্থাৎ আল্লাহর শপথ! যদি আল্লাহতালা না হতেন, তবে আমরা হেদায়েত পেতাম না; আমরা দান-সদকা করতাম না; আমরা সালাত কায়েম করতাম না। আমরা সেই লোক যখন আমাদের ওপর তারা জুলুম করেছে, কিংবা আমাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করেছে- আমরা নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছি। তাই আপনি আমাদের ওপর সাকিনা নাযিল করুন‌। যখন আমরা তাদের মুখোমুখি হব- তখন আপনি আমাদেরকে হিরো কদম রাখুন।


রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হলেন। তাদের সংখ্যা ছিল চৌদ্দশ। তাদের মধ্যে দুু’শ ছিল অশ্বারোহী। তবে হুদাইবিয়া থেকে পেছনে রয়ে গিয়েছিল, এমন কাউকে গজোয়ায়ে খাইবারে শরিক হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল না। অসুস্থ ও আহতদের সেবা-শুশ্রূষা, পানি ও খাবার ইত্যাদি প্রস্তুত করার নিমিত্তে সাহাবায়ে কেরামের স্ত্রীদের মধ্য থেকে বিশ জন নারীও এই যুদ্ধে শরিক হয়েছিলেন।


মুসলিম বাহিনী অগ্রসর হয়ে ইহুদী ও গাতফানের মধ্যবর্তী প্রজি নামক স্থানে এসে অবতরণ করল। যাতে করে বনু গাতফানের কাছ থেকে ইহুদীরা কোন রকমের সাহায্য সহযোগিতা না পায়। কারণ তারা আজ থেকেই সর্বদা ইহুদিদের পাশে ছিল। এভাবে এবার আর ইহুদীরা তাদের পক্ষ থেকে কোন প্রকারের কোন সাহায্য সহযোগিতা পেল না।


রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফেলার জন্য খাদ্য তৈরীর নির্দেশ দিলেন। কিন্তু ছাতু ব্যতীত আর কিছুই পাওয়া গেল না। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশে সেটা দিয়ে খাদ্য তৈরি করা হলো এবং মুসলমানরা তা খেলেন। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট খাইবারের দৃশ্য ভেসে ওঠা মাত্রই তিনি আল্লাহ তাআলার সমীপে দোয়া ও মুনাজাতে বিভোর হয়ে গেলেন। মহান আল্লাহর কাছে তিনি যাবতীয় কল্যাণ এর প্রার্থনা করলেন। আর খায়বরের ও তার অধিবাসীদের যাবতীয় অকল্যাণ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করলেন। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিয়ম ছিল- রাতের বেলা তিনি কোন কওমের উপর আক্রমণ করতেন না। বরং রাত কেটে ভোর হওয়ার অপেক্ষা করতেন।

যদি মহল্লা থেকে আযানের আওয়াজ পেতেন তাহলে আক্রমণ থেকে বিরত থাকতেন। এখানেও রাসুল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রিযাপন করলেন। কিন্তু মহল্লা থেকে আজানের কোন আওয়াজ পেলেন না। তখন তিনি সওয়ারিতে আরোহন করলে অন্যান্য সবাই তৈরি হয়ে গেল। মুসলমানরা যখন খাইবারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তখন সকাল-সকাল খাইবারের সাধারণ দিনমজুররা তাদের কাস্তে কোদাল আর ঝুড়ি নিয়ে কাজে বের হচ্ছিল। মুসলিম বাহিনী দেখা মাত্রই তারা উল্টো দিকে চেঁচাতে চেঁচাতে ভাবতে লাগলো: মোহাম্মদ ও তার বাহিনী এসে গেছে! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহু আকবার! খাইবার বিরান হয়ে গেছে!! আমরা যখন কোন কওমের উপর অবতরণ করি, তখন ঐ সকল লোকের প্রভাত অমঙ্গল হয়- যাদের কি ইতোপূর্বে ভীত প্রদর্শন করা হয়েছিল।

বিজয়ী সিপাহসালার
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাইবারের দুর্গ গুলোর একেবারে কাছে চলে এলেন। এরপর একটি একটি করে সেগুলো জয় করতে লাগলেন। সর্বপ্রথম তার হস্তগত হয়েছিল নায়েম দুর্গ। খাইবারের একটি দুর্গে নাম ছিল কামুস। এই কামুস দুর্গা জয় করতে মুসলমানদেরকে ঘাম ঝরাতে হয়েছিল। আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তখন চক্ষু প্রদাহে আক্রান্ত ছিলেন।

রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামীকাল এমন এক ব্যক্তির পতাকা হাতে তুলে নিবে যাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মহব্বত করেন। তার হাতেই কামুস দুর্গের পতন হবে। তখন প্রথম সারির বড় বড় ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ঘাড় লম্বা করে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু ইসলামের দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রয়াস পাচ্ছিলেন। কারণ প্রত্যেকের আশা ছিল- তিনি যেন হন সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তি যাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালোবাসেন। অতঃপর তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে ডাকলেন।

আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর তখন চোখের রোগে আক্রান্ত ছিলেন। আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এলে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম নিজের সামান্য থুথু মোবারক তার চোখে দিলেন এবং তার জন্য দোয়া করলেন। আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তৎক্ষণাৎ সুস্থ হয়ে উঠলেন। যেন তার কোনদিন চোখে কোন ব্যথাই ছিল না। অতঃপর তার হাতে পতাকা তুলে দিলেন।

আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন, আমরা কি ততক্ষণ যুদ্ধ করব-: যতক্ষণ না তারা আমাদের মত হয়ে যায়? রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন, তুমি স্বাভাবিকভাবে তাদের কাছে যাবে। অতঃপর তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিবে এবং আল্লাহ তাআলার যে অধিকার রয়েছে তাদের উপর সেগুলো তাদেরকে বুঝিয়ে দিবে। মনে রেখো- আল্লাহ তা’আলা যদি তোমার দ্বারা মাত্র এক ব্যক্তিকে হেদায়েত দান করেন, তবে সেটা তোমার জন্য লালকুঠির চেয়েও অধিক দামি আর মূল্যবান সম্পদ হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments