Saturday, November 16, 2024
No menu items!
Homeসিরাতুন নবী (সা.)আল্লাহর সিংহের মুখে ইহুদি বাহাদুর

আল্লাহর সিংহের মুখে ইহুদি বাহাদুর

আল্লাহর সিংহের মুখে ইহুদি বাহাদুর


আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কামুস দুর্গের কাছে চলে এলেন। তখন ইহুদিদের প্রসিদ্ধ বীরপুরুষ মারহাব বের হয়ে এলো। মুহুর্তে একে অপরের উপর ঝাপিয়ে পড়লেন। আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু দ্রুত মারহাবের মাথার উপর তরবারী চালালেন। মুহূর্তে সেরে খোদার তরবারিতে মারহাবের শিরস্ত্রাণ ভেঙ্গে মাথা চিরে সমানভাবে মাঝখান থেকে দুই ভাগ হয়ে দুই দিকে পড়ে গেল। পরিশেষে আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর হাতে কামুস দুর্গ বিজিত হয়েছিল।
মোহাম্মদ বিন মাসলামা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর বীরত্বপূর্ণ লড়াই এই গযওয়াতে ব্যাপক খ্যাতি লাভ করেছিল। তিনি একাই একাধিক প্রসিদ্ধ ইহুদি বীর পুরুষ কে জাহান্নামে পাঠিয়ে ছিলেন।

অল্প পরিশ্রমে অধিক সুফল


এক হাবশী রাখাল খাইবারের জনৈক ইহুদির গোলাম ছিল। সে তার মনিবের বকরি চরাত। যখন খাইবারের অধিবাসীদেরকে সে সমরাস্ত্র প্রস্তুত করতে দেখল, তখন সে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করল, তোমরা কী করতে যাচ্ছ? তারা বলল, আমরা সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাচ্ছি যে নিজেকে নবী বলে দাবি করে। তখন সেই গোলামের মনে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য এক ধরনের দরদ অনুভূত হল।

সে তার বকরি নিয়ে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর কাছে এসে বলল, আপনি কি বলেন? কিসের প্রতি আপনি ডাকেন? প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি ইসলামের প্রতি ডাকি। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই আর আমি আল্লাহর রাসূল। আর আমি আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত আর কারো ইবাদত করি না।

তখন সেই গোলাম বলল, যদি আমিও সাক্ষ্য দেই এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনি- তবে আমি কি পাবো? রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি সেই অবস্থার উপর তোমার মৃত্যু হয়- তবে তোমার জন্য জান্নাত রয়েছে।


অতঃপর গোলাম মুসলমান হলো। সে নবীজির সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম কে বলল, হে আল্লাহর নবী! এসকল বকরি আমার কাছে ইহুদিদের আমানত। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন, তুমি এগুলো কি নিকটবর্তী কোন ময়দানের মধ্যে ছেড়ে দাও, আল্লাহ তায়ালা সেগুলো তাদের মালিকের কাছে পৌঁছে দিবেন। গোলাম তাই করল ‌ আল্লাহর হুকুমে বকরিগুলো নিজে নিজেই সেগুলোর মালিকের কাছে গিয়ে উপস্থিত হল।

তখন ইহুদি বুঝতে পারলো যে, তার গোলাম মুসলমান হয়ে গিয়েছে। অতঃপর রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের মাঝে দাঁড়িয়ে তাদেরকে বিভিন্ন উপদেশ দিলেন ‌ জিহাদের প্রতি তাদেরকে প্রাণোউদ্দীপ্ত করে তুললেন। যখন উভয় বাহিনীর মাঝে লড়াই শুরু হল, তখন অন্যান্য আরো অনেকের সঙ্গে সেই হাবশী গোলামও শাহাদাত বরণ করলো।

মুসলমানরা তাকে বহন করে নিজেদের শিবিরে নিয়ে এলেন। অতঃপর রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তার কাছে এসে বললেন, আল্লাহতায়ালা তাঁর এই বান্দাকে সম্মানিত করেছেন। তিনি তাঁকে খাইবারে টেনে নিয়ে এসেছেন। আমি দেখেছি তার মাথার কাছে দুজন হুর বসা ছিল ‌ অথচ সীতার জিন্দেগীতে কোনদিন আল্লাহর জন্য একটি সিজদাহ দেয়নি। রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু

আমি এজন্য আপনার কাছে আসেনি


ইতোমধ্যে এক বেদুঈন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর কাছে এসে ঈমান এনে মুসলমান হয়ে গেল। অতঃপর সে বলল, আমি আপনার সঙ্গে এই অভিযানে শরিক হতে চাই। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় সাহাবীকে লোকটি দেখাশোনা করতে বললেন। যখন গাজওয়ায়ে খাইবর সংঘটিত হলো, সেই বেদুঈন লোকটি তখন মুসলমানদের বকরি চরাতে দূরে কোথাও চলে গিয়েছিল।

মুসলমানরা বিজয় লাভ করার পরে, গনিমতের মাল থেকে তার জন্য একটি অংশ রেখে দিলেন‌। সে আসার পরে যখন তাকে তার অংশ দেওয়া হলো, তখন সে বলল, এটা কি? তখন সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার জন্য এই অংশ বন্টন করে রেখেছেন। তখন সে তার প্রাপ্ত অংশ নিয়ে সোজা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে চলে এলো।

এসে বলল, ইয়া রাসুল আল্লাহ! এটা কি? তিনি বললেন, এটা আমি তোমার অংশ; তোমার জন্য আমি বন্টন করে রেখেছি। বেদুইন লোকটি বলল, কিন্তু আমি এই জন্য আপনার কাছে আসেনি। বরং আমি আপনার কাছে এসেছি যাতে আমার এখানে- সে গলার দিকে ইঙ্গিত করল- এসে একটি তীর বিদ্ধ হয়। অতঃপর আমি শহীদ হয়ে জান্নাতে দাখিল হতে চাই। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন, যদি তুমি আল্লাহর কাছে সত্য হয়ে থাকো, তবে আল্লাহ তোমার ব্যাপারে সত্য হবেন।


অতঃপর মুসলিম বাহিনী যুদ্ধের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। যুদ্ধের পরে তাকে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর কাছে আনা হলো। সে ততক্ষণে শাহাদাত বরণ করেছে। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ কি সেই ব্যক্তি? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হাঁ। তিনি বললেন, সে আল্লাহর সঙ্গে সত্য ছিল তাই আল্লাহ তা’আলা তাঁর ইচ্ছাকে পূর্ণ করেছেন। অতঃপর রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাকে নিজ জুব্বা দ্বারা কাফন দিলেন এবং নিজে তার জানাজার নামাজের ইমামতি করলেন। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম তার জন্য দোয়া করেছিলেন, হে আল্লাহ! আপনার এই বান্দা মুহাজির হিসাবে আপনার রাস্তায় বের হয়েছে। অতঃপর আপনার পথে সে শাহাদাত বরণ করেছে। আর আমি তার ওপর সাক্ষী রইলাম।

খাইবারে বসবাসের শর্ত


যুদ্ধ ও অবরোধের পরে একটির পর একটি দুর্গ মুসলমানদের পদানত হতে লাগলো। এভাবে কেটে গেল বেশ কিছুদিন। এক পর্যায়ে ইহুদিরা বাধ্য হয়ে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর কাছে সন্ধির প্রস্তাব পেশ করল। কিন্তু রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইচ্ছা ছিল তাদেরকে খাইবর থেকে নির্বাসিত করে দেওয়া। বাকি তারা বলল মোহাম্মদ! আমাদেরকে এখানে থাকতে দিন- আমরা এখানে জমিজমা দেখাশোনা ও চাষাবাদ করব। আর এখানকার অবস্থা সম্পর্কে আমরাই আপনাদের অপেক্ষা অধিক অবগত। অপরদিকে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিংবা সাহাবায়ে কেরামের এমন সন্তান-সন্ততি কিংবা লোক ছিল না যারা এগুলো দেখাশোনা করবে। পাশাপাশি তাদের নিজেদেরও এগুলোর পেছনে সময় দেওয়ার মতো অবস্থা ও পরিবেশ ছিল না।

তাই সবকিছু ভেবেচিন্তে পরিশেষে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে তাদের হাতে ছেড়ে দিলেন- এই শর্তে যে, এখানে উৎপাদিত সমস্ত ফল-ফসলের অর্ধেক পাবে তারা, আর বাকি অর্ধেক শপে দিবে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যতদিন ইচ্ছা, ততদিন তারা এখানে থাকতে পারবে। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে তাদের কাছে প্রেরণ করতেন আর তিনি উৎপাদিত সবকিছু সমান দুই ভাগে ভাগ করতেন। অতঃপর ইহুদীদেরকে যেকোনো একভাগ আগে বেছে নিতে বলতেন। তারা বলত, এর ওপরে দাঁড়িয়ে আছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments