Thursday, April 18, 2024
No menu items!
Homeফাজায়েল ও মাসায়েলনারীদের জন্যইহুদী-খৃষ্ট ধর্মে নারীদের মর্যাদা এবং ইসলামে নারী অধিকার

ইহুদী-খৃষ্ট ধর্মে নারীদের মর্যাদা এবং ইসলামে নারী অধিকার

ইসলাম ধর্ম ব্যতিত সকল ধর্মেই নারীকে অনিষ্টের মূল এবং সবচে’নিকৃষ্ট প্রাণী ভাবা হতো। পরিবারে মা, বোন, স্ত্রী ও কন্যা কোন নারীর মর্যাদা দাসীর চেয়ে বেশী ছিলো না। নারী ছিলো বাজারে বেচা-কেনার পণ্য। পরিবার-প্রধান যে কোন নারীকে বাজারে বিক্রি করতে পারতো। কেননা নারীকে তারা অস্থায়ী সমপদ মনে করতো।

নারীগণ পুরুষের অনুমতি ছাড়া তার সম্পত্তি ভোগ করা ও অন্য কাউকে দেয়ার অধিকার রাখতো না।

বিবাহের ক্ষেত্রে নারীর নিজস্ব কোন ইচ্ছাধিকার ছিলো না। পরিবারের প্রধান পুরুষ যাকে স্বামী নির্বাচন করতো তাকেই গ্রহণ করতে বাধ্য ছিলো।

গ্রীক ও রোমান সভ্যতার শেষ দিকে অবস্থা ভিন্ন রুপ ধারণ করলো নারীসমাজ বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মত উশৃঙ্খল হয়ে উঠলো এবং সমাজের সর্বত্র নগ্নতা ও যৌননৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়লো, যার অনিবার্য ফলরূপে গ্রীক ও রোমান সভ্যতার বিলুপ্ত  হয়।

‌‌‌‌♦ইহুদী ও খৃস্টধর্মে নারীর মর্যাদা ও অধিকার

ইহুদী ও খৃস্টধর্মে নারীকে অভিশপ্ত মনে করা হয়, কারণ তাদের ধারণা আদম আঃ কে পথভ্রষ্ট করার জন্য শয়তান হাওয়াকেই অস্ত্ররূপে ব্যবহার করেছিলো। উভয়জাতির বিশ্বাস ছিলো নারী স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না, কারণ তাদের মধ্যে মানবাত্মা নেই।

খৃস্টধর্মের প্রভাবে নারীর প্রতি পশ্চিমাদেশের আচরণ ছিলো চরম অমানবিক যা মধ্যযুগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো। এমনকি ১৮০৫ সাল পর্যন্ত বৃটিশ আইনে স্বামীর অধিকার ছিলো স্ত্রীকে বিক্রি করার। অন্যদিকে ফরাসী বিপ্লবের পরও নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করার কথা সেখানকার চিন্তানায়কদের মাথায় আসেনি। ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত ফরাসী নাগরিক আইনে অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া নারী কোন কাজে চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার অধিকার ছিল না।

হিন্দুসমাজে নারীর মর্যাদা ও অধিকার

♦হিন্দুসমাজে নারীর অবস্থা ছিলো সবচে’ করুণ। এ প্রসঙ্গে শুধু সতীদাহ-এর কথা উল্লেখ করাই যথেষ্ট, যা সংস্কারবাদী নেতা রাজা রামমোহন রায় ব্যাপক আন্দোলনের মাধ্যমে বাতিল করিয়েছেন।

আরব জাহিলিয়াতের সমাজে নারীর প্রতি নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতার ইতিহাস। শুধু  এইটুকু উল্লেখ করাই যথেষ্ট যে, কন্যাসন্তানের জন্মকে তখন মনে করা হতো চরম কলঙ্কের বিষয়।

আরব সমাজে নারীর জন্মগ্রহণই ছিলো অপরাধ , আর বেঁচে থাকা ছিলো তার চেয়ে বড় অপরাধ। তাই অধিকাংশ সময় জন্মদাতা পিতা কন্যাসন্তানকে মায়ের বুক থেকে কেড়ে নিয়ে নিজের হাতে জ্যান্ত দাফন করে ফেলতো। অসহায় মায়ের বাধা দেয়ার কোন অধিকার ছিলো না। তাই কন্যাসন্তান জন্ম দেয়ার আশঙ্কায় মা ভুলে যেতো তার প্রসববেদনা। অস্থির পেরেশান হয়ে শুধু ভাবতো পিতার নিষ্ঠুরতা থেকে কীভাবে সে বাঁচাবে তার সন্তানকে কোথায় কীভাবে লুকাবে তার কলিজার টুকরাকে কোরআনে এই নিষ্ঠুর প্রথার নিন্দা করে বলা হয়েছে-

وإذا الموؤودة سئلت0 بأي ذنب قتلت0

আর যখন জ্যান্ত দাফনকৃত কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে কোন অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিলো (তখন কী জবাব দেবে তোমরা?) (সূরা আত-তাকভীর : ৮ ও ৯)

                  ইসলামে নারীর মর্যাদা

♦ইসলামে নারীর মর্যাদার ক্ষেত্রে দ্বীন ধর্ম ও যাবতীয় কর্মের ক্ষেত্রে ইসলাম নারীকে পুরুষের সমমর্যাদা দান করেছে।
হাদীস শরীফে নারীর মর্যাদা সম্পর্কে নবীজি ইরশাদ করেছেন-
إنما النساء شقائق الرجال
অর্থাৎ নারীরা হলো পুরুষের সমতুল্য। (সুনানে আবু দাউদ ১/৩১)

ধর্মীয় যাবতীয় কাজে কর্মে নারী ও পুরুষের সমমর্যাদা সম্পর্কে নবীজি এরশাদ করেন

و من عمل صلحا من ذكر أو أنثى و هو مؤمن فأؤلئك يدخلون الجنة يرزقون فيها بغير حساب

কোনো পুরুষ বা নারী নেক কাজ করে, তারা মুমিন হলে, জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং সেখানে তাদেরকে বেহিসাব রিযিক দান করা হবে। (সূরা মুমিন : ৪০)

নারী-পুরুষের যতগুলো সম্পর্ক হতে পারে প্রতিটি সম্পর্ককে ইসলাম অনন্য মর্যাদা ও মহিমায় অধিষ্ঠিত করেছে। এক্ষেত্রে নারীকে শুধু সমমর্যাদা নয়,বরং অগ্রমর্যাদা দান করেছে।

     ♦ইসলামে মা হিসেবে নারীর মর্যাদা,

প্রথমত মা হিসেবে মর্যাদা, ইসলাম ও তার নবীর কাছে মায়ের যে মর্যাদা তা পৃথিবীর কোন ধর্ম ও সভ্যতায় এমনকি আধুনিক সভ্যতাও কল্পনা করতে পারেনি। যেমন কোরআনের সূরা আহকাফ : ১৫ নং আয়াতে এরশাদ হয়েছে-

ووصينا الانسان بوالديه احسانا حملته امه كرها ووضعته كرها
আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচারের আদেশ করেছি, কারন তার মা তাকে কষ্টের সঙ্গে গর্ভে ধারণ করেছে এবং কষ্টের সঙ্গে প্রসব করেছে।’

উল্লেখিত আয়াতে পিতা-মাতা উভয়ের সঙ্গে সদাচারন করার কথা বলা হয়েছে কেন করতে হবে তার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে পিতার কোন অবদানের কথা বলা হয়নি, শুধু মায়ের ত্যাগ ও কষ্টের কথা বলা হয়েছে। এদিকে ইঙ্গিত করে যে, মাতার ত্যাগ ও কষ্টের তুলনায় পিতার ত্যাগ ও কষ্ট খুবই সামান্য।

   স্ত্রী হিসেবে নারীর মর্যাদা

♦দ্বিতীয়ত স্ত্রী হিসেবে নারীর মর্যাদা এ সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ তা‘আলার আদেশ-

و عاشروهن بالمعروف, فإن كرهتموهن فعسى أن تكرهوا شيأ و يجعل الله فيه خيرا كثيرا

আর তোমরা স্ত্রীলোকদের সঙ্গে বসবাস করো সদাচারের সাথে। আর যদি কোন কারনে তোমরা তাদেরকে অপছন্দ করো তাহলে হতে পারে যে, তোমরা এমন কোন কিছুকে অপছন্দ করলে, আর আল্লাহ তাতে প্রচুর কল্যাণ রেখে দিলেন। (সূরা নিসা : ১৯)

এ বিষয়ে হাদীছ শরীফে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে বলেছেন,কোন মুমিন পুরুষ কোন মুমিন নারীকে যেন সম্পূর্ণ অপছন্দ না করে। কারণ তার একটি স্বভাব অপছন্দ হলে, আরেকটি স্বভাব অবশ্যই পছন্দনীয় হবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৪৬৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৯৭৯)

এখানে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারী-পুরুষের দাম্পত্যজীবনের এমন একটি মূলনীতি বর্ণনা করেছেন যার উপর আমল করলে এখনই আমাদের সংসার ‘জান্নাত-নযীর’ হয়ে যেতে পারে।

দু’জন নারী-পুরুষ যখন একত্রে ঘর-সংসার করবে তখন একজনের সবকিছু অপরজনের ভালো লাগবে এটা হতেই পারে না। কিছু আচরণ ভালো লাগবে, কিছু মন্দ লাগবে, এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে পুরুষের করণীয় হলো, স্ত্রীর ভালো গুণগুলোর দিকে লক্ষ্য করে আল্লাহর শোকর আদায় করা আলহামদু লিল্লাহ আমার স্ত্রীর মধ্যে এই ভালো গুণ তো আছে!

আল্লাহর শোকর আদায় করবে, আবার আন্তরিকভাবে স্ত্রীর প্রশংসা করবে। তখন হয়তো আল্লাহ তার মন্দ স্বভাবগুলো দূর করে দেবেন।

সুতরাং পুরুষের কর্তব্য হলো স্ত্রীর ত্রুটিগুলোকে ক্ষমা নজরে দেখা আর ভালো গুণগুলোর কদর করা। কারণ পূর্ণতা তো কোন মানুষেরই নেই। না নারীর, না পুরুষের। নবীজি সাঃ এরশাদ করেছেন-

و عاشروهن بالمعروف, فإن كرهتموهن فعسى أن تكرهوا شيأ و يجعل الله فيه خيرا كثيرا

তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে-ই যে তার স্ত্রীদের জন্য তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম, আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের জন্য সর্বোত্তম। (সুনানে ইবনে মাজাহ, পৃ. ১৪২; জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৬২)

এক হাদীছে নবীজি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
استوصوا بالنساء خيرا

আমি তোমাদেরকে স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণের উপদেশ দিচ্ছি; তোমরা আমার উপদেশ গ্রহণ করো। (জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৬৩)

♦কন্যা ও বোন হিসেবে নারীর অধিকার ও মর্যাদা

কন্যা ও বোন হিসেবে নারীর অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে নবীজি (সাঃ) এরশাদ করেন কারো ঘরে যদি তিনজন বা দুজন কন্যা বা বোন থাকে, আর সে তাদের উত্তম শিক্ষাদান করে, তারপর তাদেরকে উত্তম পাত্রে বিবাহ দেয় তাহলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (বুখারী ও মুসলিম) কোন কোন বর্ণনায় আছে, তার উপর জাহান্নাম হারাম হয়ে যাবে। এক হাদীসে নবীজি (সাঃ) এরশাদ করেন।

لا تكرهوا البنات, فإنهن المؤنسات الغاليات

তোমরা মেয়েদের অপছন্দ করো না। কারণ তারা অন্তরঙ্গতা পোষণকারী মূল্যবান সম্পদ। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৭৩০৬)

♦নারীদের প্রতি নবীজি সাঃ এর অনুভূতি

নারী সমাজের প্রতি নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুভূতি কেমন ছিলো এবং তাদের কষ্ট ও সুবিধা-অসুবিধার প্রতি তিনি কত সজাগ ছিলেন এবং তাদের বিচক্ষণতা ও বুদ্ধিমত্তার প্রতি তাঁর কিরূপ আস্থা ছিলো তা নীচের বর্ণনাগুলো থেকে পরিষ্কাররূপে বোঝা যাবে। তিনি ইরশাদ করেছেন-

حبب إلي من دنياكم الطيب و النساء و جعلت قرة عيني في الصلوة

পৃথিবীতে সুগন্ধি ও নারীকে আমার কাছে প্রিয় করা হয়েছে, আর আমার চোখের শীতলতা রাখা হয়েছে নামাযে মাঝে।  মুসনাদে আহমদ হাদীস : ১২২৩৩

উল্লেখিত হাদিসে সুগন্ধি ও নারীকে একত্র উল্লেখ দ্বারা পুতিয়মান হয় স্বভাব ফিতরত এবং সৃষ্টিগত দিক থেকে নারী সুগন্ধির মতই পুত পবিত্র। সুগন্ধি যেমন হৃদয়ে মস্তিষ্কে কোমল ও স্নিগ্ধ অনুভূতি সৃষ্টি করে, নারীর সংস্পর্শও তেমনি কোমলতা স্নিগ্ধ ও পবিত্রতার অনুভূতি সৃষ্টি করে।

♦নারীদের সুবিধা-অসুবিধা

নারীদের সুবিধা-অসুবিধার প্রতি তিনি সদা সচেতন ছিলেন একবার নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে নামায পড়াচ্ছিলেন। তখন পিছন থেকে শিশুর কান্নার আওয়াজ পেয়ে নামায সংক্ষিপ্ত করে সালাম ফেরালেন, আর বললেন, আমি নামায সংক্ষিপ্ত করেছি, যাতে ঐ মা তার সন্তানের কারণে পেরেশান না হয়। (সহীহ বুখারী, সালাত অধ্যায়)

একবার সফররত অবস্থায় নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখলেন, আনজাশা নামে এক ছাহাবী উট দ্রুত হাঁকিয়ে নিচ্ছেন। ঐ উটের আরোহী ছিলো একজন নারী। তখন তিনি ছাহাবীকে ধীর গতিতে ও কোমল ভাবে উট চালাতে বললেন।

رويدك يا أنجشة, رفقا بالقوارير

ধীরে হে আনজাশা! কাচের পাত্রগুলোর প্রতি কোমল হও। (বুখারী ও মুসলিম)

উল্লেখিত হাদিসে নারীকে কাচের পাত্রের সাথে উপমা প্রদান করা কত যে প্রজ্ঞাপূর্ণ তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এই একটি উপমা দ্বারাই উম্মতকে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, নারীর স্বভাব ও প্রকৃতি কত কোমল এবং তাদের প্রতি আচরণের ক্ষেত্রে পুরুষকে কত সতর্কতা ও সাবধানী হওয়া উচিত তা উল্লেখিত হাদিস দ্বারা বুঝা যায়।

♦বর্তমান সময়ে খুব অল্প সংখক এমন সুপুরুষ পাওয়া যাবে যারা নবীর মূল্যবান উপদেশের প্রতি যত্নবান হয়ে ঘরে ও সফরে নারীদের সুযোগ সুবিধার প্রতি যত্নবান হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments