রণ-নায়কের ভূমিকায় রিসালাতের মহান নায়ক

তাদর সকল কাজ পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পাদিত

কুরাইশ বাহিনী অগ্রসর হয়ে ওয়াদীয়ে কুরার কুলে এসে অবতরণ করল। এদিকে মুসলিম বাহিনী ঐতিহাসিক বদর প্রান্তের এক পাশে অবস্থান নিল।তখন হুবাব ইবনে মুনযির রা. দরগাহে রিসালাতে আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এখানে কি আল্লাহ তা’লা আপনাকে অবতরণ করিয়েছেন? যদি তাই হয় তাহলে আমাদের এক চুল পরিমাণ সামনে কিংবা পিছনে যাওয়ার সুযোগ নাই।

নাকি এটা আপনার সিদ্ধান্ত ও রণকৌশল? তিনি বললেন এটা আমার সিদ্ধান্ত ও রণকৌশল মাত্র। হুবাব ইবনুল মুনযির রা. ছিলেন রণভিজ্ঞ ও সমরকুশলী সাহাবী। তাই তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! এটা মুসলিম বাহিনীর অবতরণের উপযুক্ত জায়গা নয়। অতঃপর তিনি উপযুক্ত একটি জায়গার প্রতি ইঙ্গিত করলেন। রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার ইঙ্গিত সম্পুর্ন সঠিক।

অতঃপর তিনি মুসলিম বাহিনী নিয়ে হুবাব ইবনুল মুনযির রা. এর ইঙ্গিত অনুযায়ী কুরাইশ বাহিনীর সর্বাপেক্ষা সন্নিকটের কূপের পাড়ে এসে অবতরণ করলেন। মাঝরাতে রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম কূপের আরও কাছে এগিয়ে গেলেন। সেখানে কয়েকটি হাউয নির্মাণ করলেন। রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফের সৈন্যদের জন্যও সেখান থেকে পানি পানের দরজা উম্মুক্ত রাখলেন।


সে রাতে আল্লাহ তা’লার নির্দেশে ঘনঘোর ধারা-সম্পাত হলো। কুদরতে কুদরতে ইলাহীর অপার কারিশমায় এটা মুশরিকদের জন্য পরিণত হলো তুমুল ভারি বর্ষণে। ফলে তাদের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হলো। অপরদিকে মুসলমানের জন্য এটা প্রমাণিত হলো আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ আর আসমানী করুণা। তাদের যমিন শক্ত ও মযবুত হয়ে গেল।ময়দানের উৎক্ষিপ্ত বালুরাশি পুরোপুরি জমে বসে গেল। কদম সুদৃঢ় ও অবিচল হল। এককথায় সবকিছুই মনের মত হয়ে সকলের রিদয়গুলো সুরক্ষিত হলো।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহর ইরশাদ- وينزل عليكم من السماء ماء ليطهر كم به ويذهب عنكم رجزالشيطان وليربط علي قلوبكم ويثبت به الأقدام অর্থাৎ আর তোমাদের উপর আকাশ থেকে পানি অবতরণ করেন, যাতে তোমাদিগকে পবিত্র করে দেন। এবং তোমাদের থেকে অপসারিত করে দেন শয়তানের অপবিত্রতা। আর যাতে করে সুরক্ষিত করে দিতে পারেন তোমাদের অন্তরসমূহকে এবং তাতে যেন সুদৃঢ় করে দিতে পারেন তোমাদের পাগুলো। সূরা আনফালঃ১১

রণ-নায়কের ভূমিকায় রিসালাতের মহান নায়ক

হিদায়ত আর আসমানী পথ-নির্দেশনার প্রকৃত ধরা-নির্ঝর রিসালাতের সুমহান বিভায় মণ্ডিত হওয়ার পাশাপাশি রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রণ-কুশলতা ও সামরিক প্রজ্ঞা ফুটে উঠেছিল এসময়কার প্রতিটি পদক্ষেপে। বাহিনী পরিচালনা, সেনা-সারি বিন্যাস, ছাত্রশিবিরের অবস্থা ও অবস্থান অবগতি, আর খতরা ও বিপদের প্রতিটি দরজা বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর অসাধারণ নিপুণতা প্রস্ফুটিত হচ্ছিল। সীরাতের বড় বড় গ্রন্থগুলোতে এর বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।

চুড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি

বদর প্রান্তরেই রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অবস্থানের জন্য একটি তাঁবু নির্মাণ জরা হলো। এখান থেকে পুরো ময়দান দেখা যেত। অতঃপর রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শান্ত পদক্ষেপে হাটতে লাগলেন আর হাত দিয়ে ইঙ্গিত দিয়ে বলতে লাগলেন, আগামীকাল এখানে অমুকে এখানে ধরাশায়ী হবে ইনশাল্লাহ! আগামীকাল এটা অমুকের মরণশয্যা হবে ইনশাল্লাহ! পরবর্তীকালে হুবহু তাই হয়েছিল। সকলেই সেই জায়গুলোতে মারা পড়েছিল।


অতঃপর আচানক ময়দানে মুশরিকদের উদয় ঘটল। উভয় বাহিনী যখন সামনাসামনি একে অপরকে দেখছিল তখন রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ! এইতো কুরাইশ বাহিনী দম্ভভরে আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছে। অহঙ্কারে ফুলে উঠে আপনার রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে এসেছে।


সাঁঝের শোনিমা ছড়িয়ে ধীরে ধীরে দ্বিতীয় হিজরীর ১৬ই রমযান বৃহস্পতিবার দিনের শেষে ১৭ই রমযান শুক্রবার রাত নেমে এলো। নিস্তব্ধ ও নিস্তরঙ্গ এই ক্ষণদার উপসংহারে যে আলোকিত ভোর অপেক্ষা করছিল সে ভোরেই জন্ম দিয়েছিল ইতিহাসের বিস্ময়কর কারিশমা।

নোট: ইতিহাস জানার কোনো বিকল্প নাই। ইতিহাস থেকে আমরা অনেক কিছু জানি, অনেক কিছু শিখি। আবার অনেক মহা মানবের জীবন ইতিহাস পড়ে তৃপ্তির ঢেকুর ফেলি। কিন্তু আমরা কি কখনো চিন্তা করেছি যে, হয়তো আমরা সাময়িক মজা অনুভব করি কিন্তু তার থেকে কোনো ফায়দা আমাদের হচ্ছে না। কিন্তু আমরা এমন একজন মহা মানবের জীবন আলোচনা করেছি যা, ফায়দা থেকে খালি খালি নাই।

দ্বীন শিক্ষা ডট কমের পক্ষ থেকে আমরা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনি থেকে যুদ্ধের কিছু ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সংক্ষিপ্ত আকারে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যদি কোনো ধরনের ভূল-ভ্রান্তি হয় আশাকরি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

প্রিয় পাঠক আমরা রাসূলে সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এত পরিমাণ লম্বা করিনাই যাতেকরে পড়ে আপনারা বিরক্ত হন, আবার এত পরিমাণ সংক্ষিপ্তও করিনাই যাতে বিষয়টি পড়ে মনের মধ্যে তৃপ্তি না আসে। সর্বদিকে বিবেচনা করেই আমরা লেখাটাকে মধ্যম পন্থায় লিখেছি। আরও জেনে খুশি হবেন যে, আমরা এই লেখাটা যেই গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করেছি আর তা হল;

আস সিরাতুন নববীয়্যাহ

মুল লেখক:
আবুল হাসান আলী নদবী র.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here