তারুণ্যের জিহাদ ও শাহাদাতের প্রতিযােগিতা

যখন মুসলিম বাহিনী মদিনা থেকে বদরের পথে যাত্রা করলেন তখন তাদের সঙ্গে অল্প বয়সের তরুণ সাহাবী উমাইর বিন আবি ওয়াক্কাসও বের হয়েছিলেন। তার বয়স ছিল তখন ষােলাে বছর। কিন্তু তার ভয় ছিল- যেন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দেখে না ফেলেন। কেননা বয়সে তিনি তখনাে ছােট ছিলেন। এ কারণে তিনি সকলের অগােচরে লুকিয়ে


লুকিয়ে মুসলিম বাহিনীর সঙ্গে সামনে বাড়ার চেষ্টা করছিলেন। তখন তাঁর জ্যেষ্ঠ সহােদর সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাস রা. তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জবাব দেন, যুদ্ধে যেতে আমার প্রচণ্ড সাধ; কিন্তু আমার ভয় হয় না জানি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ফিরিয়ে দেন। হায় আল্লাহ তাআলা যদি আমার কপালে শাহাদাত জুটিয়ে দিতেন! অতঃপর সত্যি সত্যিই


তিনি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চোখে পড়ে গেলেন। বয়সে যুদ্ধের অনুপােযুক্ত হওয়ার কারণে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা করলেন। উমাইর তখন আবেগে
চোখের অশ্রু মানিয়ে রাখতে পারলেন না। প্রবল কান্নায় ভেঙে পড়লেন। তাঁর কান্নার এ করুণ দৃশ্য রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মানস-সমুদ্রে স্নেহ আর ভালােবাসার জোয়ার ডেকে আনল। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। স্রষ্টার দরবারে উমাইর রা. এর হৃদয়ের আকুতির বড় দাম
ছিল। তাই তিনি বদর প্রান্তরে তার অধরে তুলে দিয়েছিলেন শাহাদাতের পেয়ালা।

মুসলমান আর মুশরিকদের অস্ত্রবল ও জনবলের ফারাক।

তিন শ’ তেরাে জন সাহাবী নিয়ে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্রুত বের হয়ে এলেন মদীনা থেকে। বলতে গেলে ইসলামের ইতিহাসের সর্বপ্রথম এই বৃহত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ গাওয়াতে মুসলিম বাহিনী ছিল ভাঙাচুরা।


জোড়াতালি দেওয়া। পুরাে বাহিনীতে নামে মাত্র দুটি ঘােড়া ছিল । সর্বসাকুল্যে উট ছিল সত্তরটি। একটি উটের পিঠে দু’জন তিনজন করে একজনের পর একজন ধারাবাহিকভাবে উঠতেন। এ ছিল সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত যেখানে ইসলামের সাম্যের অশ্রুত ও অদৃষ্টপূর্ব দৃশ্য আরেকবার পৃথিবী দেখতে
পেয়েছিল। যেখানে একজন সাধারণ সেনা ও সিপাহসালারের মাঝে কোনাে ব্যধান ছিল না। যেখানে অগ্রগামী ও অনুগামী, অনুসারী ও অনুসৃতের মাঝে কোনাে ফারাক ছিল না। এভাবে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং আবু বকর রাঃ ও উমর রা. এর মতাে বড় বড় সাহাবায়ে কিরামও অপর একজন সাধারণ সেনার মতাে অধিকার লাভ করেছিলেন। পুরাে মুসলিম বাহিনীর বড় ও মূল ঝাণ্ডাটি দেওয়া হলাে মুসআব বিন উমাইর রা. কে । মুহাজির ও আনসারদের পতাকা ছিল যথাক্রমে আলী ইবনে


আবী তালিব ও সা’দ বিন মুয়ায রা. এর হাতে ।
যখন আবু সুফিয়ান মুসলমানদের বের হওয়ার সংবাদ পেলেন তৎক্ষণাৎ তিনি চুপিসারে মক্কাগামী মূলপথ ছেড়ে উপকূলের পথ ধরে কাফেলা নিয়ে দ্রুত অগ্রসর হতে লাগলেন। পরক্ষণে বিপদসীমান্ত পেরিয়ে যখন তিনি কাফেলার সুরক্ষা সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হলেন তখন কুরাইশের কাছে পত্র পাঠিয়ে তাদেরকে মক্কায় ফিরে যেতে বললেন। তাদেরকে তিনি লিখলেন, তােমরা ফিরে যাও!


কারণ তােমরা তাে এসেছিলে তােমাদের কাফেলা রক্ষা করতে । আবু সুফিয়ানের এ পত্র পেয়ে সবাই ফিরে যেতে মনােস্থ করল । কিন্তু বাধ সাধল কেবল
ইতরপ্রাণ আবু জাহল । কুরাইশদের সংখ্যা ছিল এক হাজারের চেয়ে কিছুটা বেশি। এ বাহিনীতে ছিল তাদের বড় বড় সরদার আর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ ।
কুরাইশদের বড় বড় বীর আর তাদের মাথাগুলির কেউই অনুপস্থিত ছিল না। সেখানে তখন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এই তাে মক্কা এবার তােমাদের সামনে তার কলিজার টুকরােগুলাে পেশ করেছে’।

নোট: ইতিহাস জানার কোনো বিকল্প নাই। ইতিহাস থেকে আমরা অনেক কিছু জানি, অনেক কিছু শিখি। আবার অনেক মহা মানবের জীবন ইতিহাস পড়ে তৃপ্তির ঢেকুর ফেলি। কিন্তু আমরা কি কখনো চিন্তা করেছি যে, হয়তো আমরা সাময়িক মজা অনুভব করি কিন্তু তার থেকে কোনো ফায়দা আমাদের হচ্ছে না। কিন্তু আমরা এমন একজন মহা মানবের জীবন আলোচনা করেছি যা, ফায়দা থেকে খালি খালি নাই।

দ্বীন শিক্ষা ডট কমের পক্ষ থেকে আমরা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনি থেকে যুদ্ধের কিছু ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সংক্ষিপ্ত আকারে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যদি কোনো ধরনের ভূল-ভ্রান্তি হয় আশাকরি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

প্রিয় পাঠক আমরা রাসূলে সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এত পরিমাণ লম্বা করিনাই যাতেকরে পড়ে আপনারা বিরক্ত হন, আবার এত পরিমাণ সংক্ষিপ্তও করিনাই যাতে বিষয়টি পড়ে মনের মধ্যে তৃপ্তি না আসে। সর্বদিকে বিবেচনা করেই আমরা লেখাটাকে মধ্যম পন্থায় লিখেছি। আরও জেনে খুশি হবেন যে, আমরা এই লেখাটা যেই গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করেছি আর তা হল;

আস সিরাতুন নববীয়্যাহ

মুল লেখক:
আবুল হাসান আলী নদবী র.

অনুবাদ করেছেন :
মীযান বিন হারুন দামাত বারকাতুহুম

খুব সুন্দর এবং জাদুকরী লেখা। যখন পড়া শুরু করবেন আশাকরি ভালো লাগবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here