আলোচনা-পর্যালোচনা ও মতবিনিময়
এমন সময় বুদাইল ইবনে ওয়ারাকা খুযাঈ বনু খুযাআর বেশকিছু ব্যক্তি সমভিব্যাহারে রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে এসে কথা-বার্তা শুরু করল। সে রাসূলে আকরাম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মক্কায় আসার উদ্দেশ্য জিজ্ঞাসা করলেন।
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি কারও সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য আসিনি, আমরা এসেছি ওমরা পালনের জন্য। যুদ্ধ-বিগ্রহ কোরাইশদের ঝুলি শূন্য করে ফেলেছে। তাদের পেশানিতে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। এখন যদি তারা চায় তবে তাদের সঙ্গে আমি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি করব।
তারা আমাদের পথ থেকে সরে দাঁড়াবে। আর যদি তারা চায় তবে তাতেও দাখিল হতে পারে, যাতে প্রতিদিন লোকেরা দাখিল হচ্ছে।আর যদি তারা এই দুটির কোনোটিই না নিয়ে যুদ্ধ করে সন্তুষ্ট হতে চায়, তবে ঐ সত্তার কসম যার কুদরতি হাতে আমার প্রাণ ! ততক্ষণ পর্যন্ত আমি আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করতে থাকবো, যতক্ষণ না এই পথে আমি আমার মাথা হারিয়ে ফেলবো কিংবা আল্লাহ তাআলা তাঁর দ্বীনকে বিজয় দান করবেন।
যখন বোদা এল রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বক্তব্য কুরাইশদের কাছে পেশ করল, তখন ওরা ইবনে মাসউদ শাফি বলে উঠলো, নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের কাছে একটি সুন্দর প্রস্তাব পেশ করেছেন। তোমরা এটা গ্রহণ করে নাও।আর আমাকে এখন একটু তার কাছে যেতে দাও তখন তারা বলল, ঠিক আছে তুমি যাও।
উরওয়া ইবনে মাসুদ শাকাশী তখন এসে সাবেক রামের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করল। উরওয়া গভীরভাবে লক্ষ্য করে দেখলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সাহাবায়ে কেরামের বিস্ময়কর জীবন দৃশ্য।সে দেখে অবাক হল রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর মুখ মুখ থেকে থুতু নিঃসৃত হওয়া মাত্রই সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে গায়ে মেখে নেন।
যখন মনে নির্দেশ দেন তখন তার নির্দেশ পালন জনসভা ছুটে যান ভক্তিভরে, যখন তিনি উযূ করেন তখন তার অজুর পানির জন্য নিজেদের মধ্যে কাড়াকাড়ি লেগে যাওয়ার উপক্রম হয়,আর যখন তিনি কথা বলেন তখন তার কথা শোনা জনসভায় উন্মুখ হয়ে থাকে।
ওটা মজলিস বিরাজ করে সুনসান নীরবতা, কার সম্মানের জন্য কেউ তিক্ষ দৃষ্টিতে তার প্রতি চোখ তুলে তাকায় না, উরওয়া এই দৃশ্য দেখে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে ফিরে এসে তাঁর সঙ্গীদের কে বলল হে আমার কওম আল্লাহর কসম আমি বহু রাজা-বাদশাদের দরবার ঘুরে এসেছি আমি ইসরা কায়সার আর না জার্সির দরবারে গিয়েছি আল্লাহর কসম আমি কোন রাজা বাদশা কে তাদের প্রজাকে এতটা ইজ্জত সম্মান করতে দেখিনি, যতটা সম্মান করে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সঙ্গীরা মোহাম্মদকে। পাশাপাশি উরুয়া তাদেরকে সব ঘটনা খুলে বললেন। অতঃপর সে বলল,মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদেরকে একটি সুন্দর প্রস্তাব দিয়েছে তোমরা সেটা গ্রহণ করে নাও।
সন্ধিচুক্তি
ইতোমধ্যে বনু ক্যানানার জনৈক ব্যক্তি এবং মিক্রসদ ইবনে হাবস নামক আরেকটি কোরাইশদের কাছে এসে তাদের দুজনের দেখা অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরল।অতঃপর কোরায়েশরা সোহাইল বিন আমর কে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রেরণ করল।রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম তাকে আসতে দেখে বললেন কোরাইশী রাজাকে প্রেরণ করেছে তাকে দেখে মনে হচ্ছে তারা এবার সন্ধি করতে চাচ্ছে। অতঃপর তিনি একটি চুক্তিনামা প্রস্তুত করেন নির্দেশ দিলেন।
বিনয় বিনম্রতার বিস্ময়কর উপমা
অতঃপর রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে ডেকে বললেন, তুমি লিখ বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম রহমানুর রাহিম আল্লাহর নামে শুরু করছি। তখন সোহাইল বলল, আল্লাহর কসম রহমান আবার কে ?
আমরা থাকি চিনিনা তাই আপনি লিখুন বিসমিকা আল্লাহ মাতা হে আল্লাহ আপনার নামে শুরু করছি। ঠিক যেমনটি আগে আপনি লিখতেন।তখন মুসলমান না বলে উঠলেন আমরা বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম বিদিত আর কিছু লিখব না। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন, আলী! তুমি বিসমিকা আল্লাহুম্মা লেখ। অতঃপর তিনি বললেন, এটা আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ এর পক্ষ থেকে কিছু সিদ্ধান্ত।
সোহেল তখন বলল, আল্লাহর কসম আমরা যদি মেনে নিতাম যে আপনি আল্লাহর রাসূল, তবে তো আজ আমরা আপনাকে আল্লাহর ঘর থেকে বাধা দিতাম না আর আপনার সঙ্গে যুদ্ধ ও করতাম না। তাই আপনি লিখুন মোহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ।তখন আসুন আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম বললেন তোমরা আমায় কি মিথ্যা প্রতিপন্ন করলেও আমি আল্লাহর রাসূল। আলী ! তুমি মোহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ লিখ।অতঃপর তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ মুছে ফেলার নির্দেশ দিলেন।
আলী বিদ্যালয় তুলে বলেন আল্লাহর কসম! আমি এটা মুছতে পারব না। তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোথায় লিখেছ, আমাকে দেখিয়ে দাও ! আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জায়গা দেখিয়ে দিলে তিনি নিজের হাতে তা মুছে ফেললেন।