Friday, April 26, 2024
No menu items!
Homeসিরাতুন নবী (সা.)নবিজী সা. এর জন্মের পূর্বের অলৌকিক ঘটনা

নবিজী সা. এর জন্মের পূর্বের অলৌকিক ঘটনা

আসহাবে ফীল (হস্তি বাহিনী)
দ্বীন শিক্ষা.কম- নবিজী সা. এর জন্মের পূর্বের অলৌকিক ঘটনা পর্ব-০১

রাসূলুল্লাহ্ সা. – এর জন্মগ্রহণের পঞ্চাশ- পঞ্চান্ন দিন পূর্বে আসহাবে ফীল এর ঘটনা সংঘটিত হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনে এবং ইতিহাসে এই ঘটনাটি বেশ পরিচিত ও প্রসিদ্ধ। পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে সূরা “ফীল” নামে এক বিশিষ্ট সূরাও অবতীর্ণ হয়েছে। বিস্তারিত ঘটনা তাফসীর গ্রন্থাদিতে বিদ্যমান, এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে দ্বীন শিক্ষা.কম এর পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছেঃ


ইয়ামান সে সময় হাবশা ( যার পরবর্তী নাম আবিসিনিয়া) এর বাদশা নাজ্জাশীর অধীনস্থ ছিল। নাজ্জাশী কতৃক নিযুক্ত এ এলাকার প্রশাসক ছিল আবরাহা নামীয় এক খৃষ্টান। সে যখন দেখলো, সমগ্র আরবের লোকজন হজ্জ উপলক্ষে পবিত্র মক্কা নগরীতে যায় এবং সেখানে কাবা ঘর তাওয়াফ করে। তখন সে ভাবল, খ্রিস্টান ধর্মের বিরাট বিশাল অট্টালিকা তৈরি করবে যা হবে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ, সুসজ্জিত এবং আকর্ষণীয়। তাহলে আরবের লোকেরা সাদাসিধা কাবাঘর বর্জন করে জমকালো কাবার কাবা ঘর তাওয়াফ করতে শুরু করবে।আবরাহা তার এই ভাবনা অনুসারে ইয়ামানের রাজধানী সানআ শহরে চাকচিক্যপূর্ণ এক গির্জা নির্মাণ করল।

আরবভূমিতে যখন এ সংবাদ প্রচারিত হলো, তখন কিনানাহ গোত্রের এক ব্যক্তি এসে এ নবনির্মিত গির্জাগৃহে মলত্যাগ করে পালিয়ে গেল। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এ তথ্য প্রদান করেছেন। অপর কতজন বর্ণনা করেছেন, আরবের কতিপয় যুবক এ গির্জার নিকটে আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করে। খোলা ময়দানে বাতাস তা উড়িয়ে নিয়ে ফেলে, ফলে আগুন ধরে যায় এবং ভষ্মিভূত হয়ে যায়।
আবরাহা এটি দেখে ক্রোধে অন্ধ হয়ে প্রতিজ্ঞা করে, কাবা ঘর ভেঙ্গে নির্মূল ও নিশ্চিত করে তবেই সে থামবে, এর কোন ব্যত্যয় হবেনা। এ উদ্দেশ্যে সেনাদল নিয়ে আরব অভিমুখে যাত্রা করল। পথে যে কোন গোত্র বা গোষ্ঠী পেল, সকলকে তরকারির শিকার করে এগিয়ে যেতে লাগল। এভাবে সে মক্কা নগরীতে এসে পৌঁছল,


আর সাথে তখন রয়েছে বিশাল সেনাদল এবং রয়েছে হাতের বহরও। সে সময় মক্কার আশেপাশের উন্মুক্ত প্রান্তর ও উপত্যকায় মক্কাবাসীদের জীবজন্তু চরাতো। আবরাহার সৈন্যদল এ সকল জানোয়ার ধরে নিয়ে গেল। ধৃত এ সকল জন্তুর মাঝে আবদুল মুত্তালিবেরও ছিল দুই শত উট।
সে সময় কুরাইশদের সর্দার এবং কাবাঘরের মোতাওয়াল্লী ও তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দাদা আবদুল মুত্তালিব। তিনি যখন আবরাহার আগমন সংবাদ পেলেন, তখন কুরাইশদের সকলকে একত্র করে বললেন, তোমরা মোটেই ঘাবড়াবে না, সকলে মক্কা শহর শূন্য করে অন্যত্র চলে যাও। কাবা ঘর কেউ ধ্বংস করতে পারবে না, এটি আল্লাহর ঘর, তিনিই এর হেফাজত করবেন।


এরপর আব্দুল মুত্তালিব কুরাইশের আরো কতক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি সহকারে আবরাহার সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলেন। আবরাহাকে তাদের আগমন সম্পর্কে অবহিত করা হলে সে আব্দুল মুত্তালিব কে খুব জাঁকজমকপূর্ণভাবে অভ্যর্থনা জানায়। আল্লাহ তায়ালা আব্দুল মুত্তালিব কে এমন অতুলনীয় সৌন্দর্য ও সুষমা, বিস্ময়কর সম্মান ও মর্যাদা, গাম্ভীর্য ও প্রভাব-প্রতিপত্তি দান করেছিলেন যে, যে কেউ তাকে দেখামাত্র অভিভূত হয়ে যেত। আবরাহার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। সেও আব্দুল মুত্তালিব কে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল, তাকে অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদার সাথে গ্রহণ করে। কাউকে নিজের রাজ আসনে নিজের বরাবরে বসানো যদিও আবরাহা যথার্থ বলে মনে করেনি, কিন্তু তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন পূর্বক সে নিজের আসন ছেড়ে আব্দুল মুত্তালিবের বরাবরে বসে যায়।


আলাপ -আলোচনার এক পর্যায়ে আব্দুল মুত্তালিব আবরাহার নিকট আটকে রাখা উটগুলো ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানান। আবরাহা তার আবেদনে খুবই বিস্ময় বোধ করেন। বলে উঠে আশ্চর্য! আপনি আমার নিকট আপনার উটগুলো গুলো ছেড়ে দেওয়ার আবেদন করলেন, অথচ কাবাঘর হচ্ছে আপনার ও আপনার পিতা -পিতৃপুরুষের ধর্মেন্দ্র, তার কোনো আবেদন করলেন না। আব্দুল মুত্তালিব এর জবাবে বললেন,
أنا رب الإبل — وللبيت رب يمنعه-
আমি হলাম উটের মালিক, তাই আমি উট ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন করছি। আর কাবাঘরেরও একজন মালিক বা রব আছেন, তিনিই তার হেফাযত করবেন। আবরাহা কিছুক্ষণ পর্যন্ত নির্বাক হয়ে থাকার পর আব্দুল মুত্তালিবের উটগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ প্রদান করে।


আব্দুল মুত্তালিব তার উটগুলো নিয়ে চলে আসার পর কুরাইশদের সকলের প্রতি মক্কা থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। অতঃপর তিনি সকল উট কাবাঘরের উদ্দেশে সদকা করে দিলেন এবং কতক ব্যক্তি কে সাথে নিয়ে কাবা ঘরের দরজায় এসে উপস্থিত হলেন। সকলেই খুব কান্নাকাটি করে আল্লাহর সমীপে দোয়া করলেন। আব্দুল মুত্তালিব এ সময় নিম্নোক্ত কবিতার মাধ্যমে দোয়া করেন-


لا هم ان المرء يمنع ☆ رحله فامنع رحالك
হে মহামহিম আল্লাহ! প্রত্যেকে আপন আপন স্থানের হেফাজত করে, আপনিও আপনার ঘরের হেফাজত করুন।
وانصر على آل الصليب ☆ وعابديه اليوم الك
ক্রুশ ও ক্রুশের পূজারিদের মোকাবেলায় আজ আপনি আপনার অনুসারীদের সাহায্য ও বিজয় দান করুন।
لا يغلبن صليبهم ☆ ومحالهم ابدا محالك
অবশ্যই তাদের ক্রুশ ও তাদের কোন কৌশলীই আপনার কৌশলের উপর বিজয়ী হতে পারবে না।
جر وجميع بلادهم ☆ والفيل كي يسبوا عيالك
তারা বিপুল সেনাবাহিনী ও হাতির বহর নিয়ে এসেছে আপনার ঘরের লোকজনকে বন্দি করার লক্ষ্যে,
عمدوا حماك بكيدهم ☆ جهلا وما رقبوا جلالك
তারা আপনার অসীম ক্ষমতা ও মর্যাদা সম্পর্কে বেখবর। আপনার সম্পর্কে তারা কোন ধারণাই রাখে না। তাই আপনার এই হারাম শরীফ ও পবিত্র স্থান ধ্বংস করার মানসে তারা এখানে এসেছে।


আব্দুল মুত্তালিবের দোয়া সমাপ্তির পর সঙ্গী লোকজনসহ পাহাড়ের উপর উঠে গেলেন। আবরাহা তার সেনাদল নিয়ে কাবা ঘর ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে এগিয়ে গেল। দেখা গেল আল্লাহর আদেশে ক্ষুদ্রাকৃতির এক পাখির দল ঝাঁকে ঝাঁকে এসে উপস্থিত। প্রত্যেকটি পাখির ঠোঁটে এবং পায়ের পাঞ্জায় দুটি করে কংকর। পাখিগুলো একযোগে কংকর ছুঁড়ে মারল। আল্লাহর অসীম কুদরতে কঙ্করগুলো গুলির ন্যায় পতিত হলো। প্রতিটি সৈনিকের মাথায় কংকর পড়ে তা শরীরের নিম্নাঙ্গ দিয়ে বের হয়ে গেল। কংকরগুলো কারো মাথায় পড়ছিল, আবার সে ব্যক্তি অন্তিমদশায় উপনীত হচ্ছিল। এভাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই অাবরাহার বাহিনী একেবারে নির্মূল ও নিঃশেষ হয়ে যায়।


আবরাহার শরীরে বসন্তের গুটি উঠে ভরে গেল, ফলে সারা শরীর বিকৃত হয়ে যেতে থাকলো, পেট থেকে পূজ রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগল। পরবর্তীতে একের পর এক অঙ্গ শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে যেতে থাকে এবং একসময় বুক বিদীর্ণ হয়ে হৃদপিণ্ড বের হয়ে যায় এবং অন্তিম শ্বাস প্রশ্বাসে জীবনের ইতি ঘটে। অতঃপর মহান আল্লাহ এক ঢল প্রবাহিত করলেন যা সকল মরদেহ ভাসিয়ে নদিতে নিয়ে যায়। এভাবে আবরাহার অভিযানের পরিসমাপ্তি ঘটে।
-(যুরকানী ১/৩৮৩;৩৯০)


فقطع دابر القوم الذين ظلموا والحمد لله رب العالمين
অত্যাচারী সম্প্রদায়ের মূলোচ্ছেদ করা হয়েছে, তাই রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তার জন্য অগণিত প্রশংসা।
-(সূরা আনআম ৪৫)

তথ্যসূত্রঃ সিরাতে মুস্তফা: খন্ড ০১, পৃষ্ঠা ৫৮

মুফতি নাজমুল হাসান সাকিব
মুফতি নাজমুল হাসান সাকিব
নাম: নাজমুল হাসান সাকিব পিতা: মুজিবুর রহমান স্থায়ী ঠিকানা: বাহেরবালী, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ। বর্তমান ঠিকানা: বসুন্ধরা, বারিধারা, ঢাকা ১২২৯ পড়াশোনাঃ- বাহেরবালী দারুল উলূম নূমানিয়া মাদরাসা, বাজিতপুর, কিশোরগঞ্জ। (নূরানী টু হেদায়াতুন্নাহ্) জামিয়াতুস সালাম মদিনাবাগ, মুগদা, সবুজবাগ, ঢাকা। (কাফিয়া-শরহে বেকায়া) মারকাজুল উলূম আল-ইসলামিয়া মান্ডা, মুগদা, সবুজবাগ, ঢাকা। (আরবী স্নাতক ৪র্থ বর্ষ) মদিনাতুল উলূম বসুন্ধরা মাদরাসা ( হেদায়া) মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা। (এম এ- মাস্টার্স) আল মারকাজুল ইসলামী বাংলাদেশ। (ইসলামি আইন ও গবেষণা বিভাগ) পেশা: লেখালেখি ও পড়াশোনা। (ভবিষ্যত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এখনো অধ্যায়ণরত)।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular

Recent Comments