মুফতী উবায়দুল হক খান: নামায ফার্সী শব্দ। এর আরবি হলো সালাত। নামায বা সালাত কায়েম করা প্রত্যেক বয়স্ক ও বুদ্ধিমান মুসলমানের জন্য ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য। নামায এক প্রকারের নিয়ামত। এটা সর্বাপেক্ষা উত্তম দোয়া বা প্রার্থনা। মানুষের জন্য এ প্রার্থনার বিধান দান করে আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রতি অশেষ অনুগ্রহ করেছেন। নামাযের মাধ্যমে আমরা আমাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করতে পারি; পাপ হতে মুক্তি লাভ করতে পারি।
নামায মানুষকে খারাপ কাজ, খারাপ কথা-বার্তা, লজ্জাহীনতা, অশ্লীলতা, বিদ্রুহ প্রভৃতি হতে রক্ষা করে। নামায বিশ্বাসীদের আধ্যাত্মিক উন্নতির পাথেয়, মুমিনদের মেরাজ। নামায জান্নাতের চাবি। নামায ইসলামের অন্যতম এক স্তম্ভ।
আল্লাহ তাআলা কুরআন কারিমে ইরশাদ করেন- নিশ্চয় নামায [নামাযীকে] অশ্লীলতা এবং মন্দকাজ থেকে মুক্ত করে। -সুরা আনকাবুত : ৪৬
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- তুমি তোমার পরিবারবর্গকে নামাযের তাগিদ করতে থাকো। আমরা তোমার নিকট কোন রিযিক চাই না; বরং আমরাই তোমাকে রিযিক দিচ্ছি। বস্তুত তাকওয়া অবলম্বনকারীদের জন্যই উত্তম পরিণাম। -সুরা ত্বাহা : ১৩৩
আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক পরিমাণে রাত্রি জাগরণ করে নামায পড়তেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক জানেন, তুমি দাঁড়িয়ে থাকো রাত্রের দুই-তৃতীয়াংশের কিছু কম এবং কখনো অর্ধেকাংশ এবং কখনো বা এক তৃতীয়াংশ এবং [দাঁড়িয়ে থাকে] তাদের এক দলও যারা তোমার সাথে রয়েছে। -সুরা মুজ্জাম্মিল : ২১
ফরজ নামায জামাতে পড়তে হবে। কারণ তাতে শুধু ব্যক্তিগত কল্যাণই নয়, সামগ্রিক কল্যাণ লাভ করা যায়। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- জামাতে নামায আদায় করলে সাতাশ গুণ সাওয়াব হয়।
মানুষ সামাজিক জীব, তাই সমাজের সামগ্রিক কল্যাণের মাঝেই শান্তি নিহিত। ফরজ ছাড়া অন্যান্য নামায ব্যক্তিগতভাবে একা পড়তে হয়। ঈদের নামাযও জামাতে পড়তে হয়। এরূপে নামায আমাদেরকে আল্লাহ সমীপে ব্যক্তিগতভাবে এবং সম্মিলিতভাবে উপস্থিত করে। বছরে দুবার ঈদের নামায, প্রতি সপ্তাহে একবার জুমআর নামায, প্রত্যহ পাঁচবার ফরজ নামায, গভীর রাত্রে তাহাজ্জুদের নামায- এ সকল উপাসনার মাধ্যমে ব্যক্তি, সমাজ এবং জাতি নৈতিক এবং আধ্যাত্মিকভাবে সংশোধিত হতে পারে এবং সত্যিকার অর্থে শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
সর্বোপরি বলা যায়, নামাযের মাধ্যমে আজ্ঞানুবর্তিতার শিক্ষা লাভ করা যায়। তাছাড়া নেতার অধীনে চলা, সময়ানুবর্তিতা, সামাজিক সাম্য, একতা ও ভ্রাতৃত্ব, দৈহিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক বিশুদ্ধতা, একাগ্রচিত্ততা, পাপবর্জন এবং পুণ্যার্জন, আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ এবং নিদর্শন লাভ করা, সামাজিক কদাচার পরিহার, শান্তি ও সুস্থির মনোভাব, কষ্ট-সহিষ্ণুতা এবং সময়ের সদ্ব্যবহার প্রভৃতি বিষয়ে নামাযে বহু শিক্ষা রয়েছে।
সর্বোপরি নামাযের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করা যায়। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, সিজদা করো কাছে আসো। এ আয়াত থেকে বুঝা যায়, যে যত বেশি সিজদা করবে সে তত বেশি আল্লাহ তাআলার কাছে যাবে অর্থাৎ নৈকট্য লাভ করবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিকভাবে নামায কায়েম করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিআতুস সুফফাহ আল ইসলামিয়া গাজীপুর